আমার স্মৃতির পাতা থেকে দুঃসাহসী এক অভিযান ||সপ্তম পর্ব||steemCreated with Sketch.

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

হ্যালো আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা আসসালামু আলাইকুম/আদাব। সবাই ভালো আছেন এবং সুস্থ আছেন আশা করছি। আমিও ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ। সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে আমার ব্লগ লেখা শুরু করছি।

ষষ্ঠ পর্ব

customs-douane-5230450_1920.jpg

রাতের বেলা ঘুমাতে যাওয়ার সময় মনের মধ্যে অনেক দুশ্চিন্তা ও ভয় নিয়ে বিছানায় গিয়েছিলাম। হঠাৎ কয়েকটি গাড়ির শব্দ শুনে ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে গেলাম। দোতলার জানালা দিয়ে বাইরে স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছিল। জানালায় উঁকি দিয়ে যেটা দেখতে পেলাম তাতে উল্কা বাহিনীর দস্যুর চেয়ে বেশি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। বাইরে দেখলাম কয়েকজন বিএসএফ সদস্য। প্রায় প্রত্যেকজনেই ইউনিফর্ম পরা ছিল তার মধ্যে দুইজন সিভিল ড্রেসে এসেছিল। খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম এই ভেবে যে আমাদের ধরতে এসেছে কিনা।

ভয় পাবারই কথা এত রাত্রে বিএসএফ সদস্য কেন বাসায় আসবে। অনেক রকম দুশ্চিন্তা মনে উকি দিতে লাগলো। ভাবলাম আর মনে হয় বাবা-মায়ের মুখ দেখা হবে না। আসার সময় একটিবার বলে আসারও সুযোগ হয়নি। যদি আমাদের গ্রেফতার করে নিয়ে যায় তাহলে কি হতে পারে। আমরা কি আদৌ কখনো বাংলাদেশে ফিরে আসতে পারবো। যখন এত কিছু ভেবে চোখে পানি আসার উপক্রম হয়েছিল। ঠিক তখনই কানে ভেসে আসলো নিচে থেকে একজন বাপ্পির নাম ধরে ডাকছে।

বাপ্পির নাম ধরে ডাকার শব্দ শুনে ভয় কিছুটা কমে গেল। কিন্তু যখন দেখলাম তারা বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করছে তখন ভয়ে গা ছমছম করতে লাগলো। নিচের ড্রয়িং রুমে তাদের বসতে দিয়েছে কি কথা বলছে উপর থেকে ঠিকমতো শোনা যাচ্ছিল না। যাকগে কি কথা বলে বলুক আগে নিজের জান বাঁচাই। আমি এবং কামরুল বাঁচার তাগিদে জানালার বাইরে কিছুক্ষণ ঝুলে থাকলাম। ভাগ্যিস দোতলার জানালায় গ্রিল ছিল না। কিছুক্ষণ পর সবাইকে বাইরে চলে আসতে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম।

বিএসএফ সদস্যরা চলে যাওয়ার পর বাপ্পি উপরে চলে আসলো। বাপ্পিদের এক নিকট আত্মীয় বিএসএফের সদস্য। তিনি এক মাসের ছুটিতে এসেছেন এক মহান কার্য সম্পন্ন করতে। সেটা হচ্ছে আগামী পরশুদিন তার বিয়ের অনুষ্ঠান, তাই পার্শ্ববর্তী ক্যাম্পে সবাইকে দাওয়াত করতে এসেছিলেন। তাই এদিকে শেষ মুহূর্তের কিছু আলোচনা করতে বাপ্পির বাবার সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন। সবকিছু শুনে আমি মনে মনে তাদের অনেক গালি দিতে লাগলাম। কামরুল কে বললাম তারা আসার আর সময় পেল না। আর একটু দেরি করলেই আমরা আর ঝুলে থাকতে পারতাম না হয়তো পড়েই যেতাম।

যাইহোক সবাই যার যার মত ঘুমিয়ে পড়ল আমি এবং কামরুল বিছানায় চলে গেলাম। সারাদিন অনেক অনেক দুশ্চিন্তায় ছিলাম বিশেষ করে রাতের বেলায়। তাই এখন অনেক ক্লান্তি লাগছে ঘুমানোর চেষ্টা করছি কিন্তু কিছুতেই ঘুম আসছে না। অনেকক্ষণ জেগে থাকার পরে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম বুঝতে পারিনি। রাতে ঘুমের মধ্যে অনেক খারাপ খারাপ স্বপ্ন দেখেছি। ভয়ের স্বপ্ন, দেখলাম আমরা পুলিশের হাতে ধরা পড়েছি। অনেকদিন জেলে থেকে অত্যাচার সহ্য করেছি অবশেষে একদিন ছাড়া পেয়েছিলাম। এই ধরনের অনেক হিন্দি মুভি দেখতে দেখতে মনের মধ্যে একটি গল্প তৈরি হয়ে গিয়েছিল।

হঠাৎ স্বপ্ন দেখার মাঝে কারো ডাকে ঘুম থেকে জেগে উঠলাম। উঠে দেখি মিনিকা বিছানার পাশে দাঁড়িয়ে আছে, বলছে নিচে নাস্তা খেতে ডাকছে। আমরা তাড়াতাড়ি উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তার টেবিলে এসে বসলাম। নাস্তা শেষ করে কালকের বাজির বিষয় নিয়ে আলোচনা হল। প্রথমে চেয়েছিলাম আমি এবং মিনিকা ক্রাম বোর্ড খেলার প্রতিযোগিতায় নামবো। কিন্তু পরবর্তীতে বাপ্পি ও কামরুল খেলার ইচ্ছা পোষণ করলো। তাই বাংলাদেশ এবং ইন্ডিয়া টিম করে নিলাম। আমি এবং কামরুল একদিকে অন্যদিকে বাপ্পি এবং মিনিকা। ব্যাস শুরু হয়ে গেল প্রতিযোগিতা বাংলাদেশ বনাম ইন্ডিয়া।

খেলা শুরু করতেই আমরা অনেক প্রতিবন্ধকতায় পড়ে গেলাম। বাংলাদেশে আমরা সাধারণত বড় স্ট্রাইক দিয়ে খেলি। কিন্তু এখানে স্ট্রাইক অনেক ছোট, খেলতে এদিক-ওদিক হলে স্ট্রাইক পকেটে ঢুকে যায়। আর স্ট্রাইক পকেটে ঢুকলে পেনাল্টি স্বরূপ একটি গুটি উপরে তুলে দেয়া হয়। এখানে এডজাস্ট হতে অনেক সময় লাগলো কিন্তু তার মধ্যে দুটো গেম খেয়ে ফেলেছি। তারপর যখন মোটামুটি অভ্যস্ত হয়ে গেলাম আর কে পায় আমাদের সাথে। দুটো পরিশোধ করে উল্টো আরো দুটো গেম দিয়ে দিলাম। তারপর কামরুল ও বাপ্পি খেলায় বিরতি দিয়ে উপরে চলে গেল।

আমি আর মিনিকা সিঙ্গেল গেম খেলা আরম্ভ করলাম। এবারও আমি অনেক দাপটের সঙ্গে জয়ী হলাম সে আমার সামনে টিকতেই পারলো না। পরবর্তী গেম শুরু করলাম শেষ না হতেই মাঝামাঝি সময়ে বাপ্পি এসে একটি দুঃসংবাদ দিল আমার জন্য। রাত্রে ওদের যে রিলেটিভ এসেছিল বিএসএফের কর্মকর্তা, তার বিয়ের অনুষ্ঠানে যেতে হবে। প্রথমে আমি এক কথায় না করে দিলাম কারন অনেক রিস্ক হয়ে যায়। পরে যখন জানতে পারলাম বাড়ির সকল সদস্য চলে যাবে তখন আর না যে উপায় নেই। কিন্তু মনের মধ্যে কু গাইছে সেখানে অনেক সামরিক লোক থাকবে। এত লোকের ভিড়ে যদি ধরা খেয়ে যাই তাহলে কি হবে ??

বন্ধুরা আজ আর লিখছিনা। অন্য কোনদিন অন্যকিছু অভিজ্ঞতা আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে আসবো। আজকের জন্য বিদায় নিচ্ছি। সবার জন্য শুভকামনা। আল্লাহ হাফেজ।

Coin Marketplace

STEEM 0.19
TRX 0.16
JST 0.034
BTC 64333.84
ETH 2760.35
USDT 1.00
SBD 2.65