আমার স্মৃতির পাতা থেকে দুঃসাহসী এক অভিযান ||ষষ্ঠ পর্ব||
হ্যালো আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা আসসালামু আলাইকুম/আদাব। সবাই ভালো আছেন এবং সুস্থ আছেন আশা করছি। আমিও ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ। সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে আমার ব্লগ লেখা শুরু করছি।
মিনিকার বাবা অর্থাৎ খালু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। শুধুমাত্র আমাদের দেশেই শিক্ষকদের জন্য অতিরিক্ত বেতন স্কেল নেই। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ইন্ডিয়াতেও শিক্ষকতা পেশা অত্যন্ত মর্যাদাশীল এবং উচ্চ বেতনের। যাইহোক আমরা বাসায় প্রবেশ করলাম। বাসায় ঢুকতেই রাস্তার পাশ দিয়ে লক্ষ্য করলাম অনেক বড় পুকুর। পুকুরে বাঁধানো ঘাট পাশ দিয়ে হাঁটতে বুঝতে পারলাম প্রচুর মাছ রয়েছে পুকুরে।
মিনিকাদের বাসা কাঠের দোতলা অনেক সুন্দর করে সাজানো দেখে বেশ ভালই লাগলো। কিন্তু দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকতেই আমি একটু আশ্চর্য হয়ে তাকালাম। লক্ষ্য করলাম কাঠের তৈরি শক্ত সামর্থ্য একটি বড় দরজার পাশাপাশি বাজারের দোকানের মত শক্ত কেচিগেট। আমি বেশ আগ্রহ নিয়ে এই সম্বন্ধে বিস্তারিত একটু জানতে চাইলাম। সবকিছু শুনে আমার রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেল। এদিকে নাকি ডাকাতির অনেক বেশি তোড়জোড়। আসামের স্বাধীনতাকামী জঙ্গি সংগঠন উলফা।
এই উলফা বাহিনী সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের বাড়িতে নাকি প্রায়ই ডাকাতি করে। আবার লোকজনদের অপহরণ করে মোটা অংকের মুক্তিপণ দাবি করে। উলফা বাহিনীর এই ধরনের কর্মকাণ্ডের কথা শুনে আমি মনে মনে অনেক ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। আমি নানা বাড়ি বেড়াতে এসে বাবা মাকে না জানিয়ে চোরাই পথে ইন্ডিয়া এসেছি। নিশ্চয়ই এই খবর বাসায় শুনে অনেক দুশ্চিন্তায় আছে। এখন যদি কোনভাবে এদিকে এসে উলফা বাহিনীর খপ্পরে পরে যাই তাহলে তো জীবন শেষ।
এদিকে বাসায় ফিরে গল্প গুজব করে খাওয়া দাওয়া শেষ করতে অনেক রাত হয়ে গিয়েছিল। এখন আর দেরি না করে ঘুমাতে হবে। কাঠের দোতলায় সিড়ি বেয়ে আমি উপরে উঠলাম। উপরে উঠে দেখি মিনীকা আমাদের জন্য বিছানা তৈরি করছে। কামরুল নিচে খালা খালুর সঙ্গে বাংলাদেশের অনেক কথা নিয়ে বসেছে। দোতালায় দুটো রুম এক রুমে মিনিকা থাকত আর অন্য রুমে বাপ্পি। আমাদের শোবার জায়গা বাপ্পির রুমে করা হয়েছিল। আমি অনেক ক্লান্ত ছিলাম প্রচন্ড ঘুম পাচ্ছিল কিন্তু কামরুলের অপেক্ষায় আছি সে আসলে ঘুমিয়ে পড়বো।
কামরুলের আসতে দেরি হচ্ছে দেখে আমি আর মিনীকা বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম। অনেকক্ষণ হয়ে গেল এখন অবশ্য আমার আর ক্লান্তি লাগছে না। আমরা অনেক ধরনের গল্প নিয়ে মেতে উঠেছিলাম। সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং গল্প ছিল ক্রামবোর্ড খেলা নিয়ে। মিনীকা তার স্কুলে নাকি চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল আর এই খেলায় আমিও কম জাই না। লাস্ট কবে আমি গেম খেয়েছি এখনো খেয়াল করে বলতে পারব না। তাই আমরা দুজনে বাজি ধরলাম কে কাকে হারাতে পারে। গল্প করতে করতেই কামরুল উপরে চলে আসলো, আর মিনীকাও পাশের রুমে চলে গেল।
কিছুক্ষণ আগে মিনীকার সঙ্গে কথা বলতে একটি লোমহর্ষক ঘটনা জানতে পেরেছিলাম। বাপ্পি ও মিনীকা ছাড়াও ওদের এক বড় ভাই ছিল। সে ব্যবসা করত ব্যবসা করে কিছুদিনের মধ্যে ভালো উন্নতি করতে পেরেছিল। এই বিষয়টা উলফা বাহিনীর নজরে চলে আসে। তারা সমাজের বিত্তবান লোকদের সব সময় খুঁজে বেড়ায়। একদিন উলফা বাহিনী বাপ্পির বড় ভাই সুমনকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। সুমনকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়ার পর স্কুল শিক্ষক তার বাবার কাছে মোটা অংকের মুক্তিপণ দাবি করে। স্কুল শিক্ষক বাবা কিছু জমিজমা বিক্রি করে মুক্তিপণের বেশ কিছু টাকা দিয়ে দেয়।
কিন্তু তারপরেও সুমনকে আর মুক্তি দেয়া হয় না। তারা এটাও জানে না তাদের সন্তান বেঁচে আছে কিনা। এখনো নাকি ছেলেকে ফিরিয়ে দেবার পরিশ্রুতি দিয়ে মাঝে মাঝে রাতের বেলা তাদের বাড়িতে হানা দেয়। রাতে যখন শুয়ে পড়লাম ঘুমানোর জন্য কিন্তু কিছুতেই ঘুম আসছিল না। মনের মধ্যে একটা দুশ্চিন্তা কাজ করছে যদি আজকে রাতেও উলফার দস্যু বাহিনী চলে আসে। মধ্য রাতের দিকে হঠাৎ করে কয়েকটা গাড়ির আওয়াজ কানে আসলো। আমি জানালা খুলে দেখি বাড়ির সামনে কয়েকটা গাড়ি। ওরে বাপরে এটা কি দেখছি !!
বন্ধুরা আজ আর লিখছিনা। অন্য কোনদিন অন্যকিছু অভিজ্ঞতা আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে আসবো। আজকের জন্য বিদায় নিচ্ছি। সবার জন্য শুভকামনা। আল্লাহ হাফেজ।
Very concerning condition! this means all rich people will always be in big trouble. It's a very touching but scary story.