আমার স্মৃতির পাতা থেকে দুঃসাহসী এক অভিযান ||তৃতীয় পর্ব||

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

হ্যালো আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা আসসালামু আলাইকুম/আদাব। সবাই ভালো আছেন এবং সুস্থ আছেন আশা করছি। আমিও ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ। সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে আমার ব্লগ লেখা শুরু করছি।

দ্বিতীয় পর্ব

customs-douane-5230450_1920.jpg

এরা যখন বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ে তখন প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ব্যাগের মধ্যে করে নিয়ে আসে। যদি কখনো কাজে লাগে সেই আশায়। যেমনটি আজকে হয়েছে যে দিকে লাইন ছিল সে দিক দিয়ে যেতে না পারে আমরা এখন ভিন্ন পথে যাচ্ছি। আর তাই যন্ত্রগুলো আজকে কাজে লেগে গেল। তারা বিশেষ ধরনের একটি কাঁটার ব্যবহার করে। যার সাহায্যে দ্রুতই কাঁটাতারের সুরক্ষা বেষ্টনী ছিন্নভিন্ন করে দেয়া যায়। যাইহোক চোরাকারবারীরা খুব দ্রুতই ওপারে যাবার পথ তৈরি করতে লাগলো। কিছুক্ষণ পরেই ভোরের আলো ফুটে উঠবে। তখন যাওয়া কোনভাবেই সম্ভব হবে না।

কাঁটাতার কেটে যাবার পথ প্রায় তৈরি হয়ে আসছিল। ঠিক সেই মুহূর্তে দূর থেকে একটি গাড়ির হেডলাইটের আলো আমাদের দিকে ছুটে আসছে। আমরা তৎক্ষণাৎ সেখান থেকে দূরে সরে আসলাম। আবারো পানিতে নেমে কিছুটা জঙ্গলের মত একটি জায়গায় আত্মগোপন করলাম। আমরা যে জায়গায় আছি সেখান থেকে ক্যাম্প অনেক দূরে। আশার কথা এই যে টহল দেয়া ভ্যানটি চলে গেলে পুনরায় এদিকে আসতে অনেক সময় নেবে। এবার এই সুযোগে আমরা বর্ডার ক্রস করে অপরদিকে যেতে পারবো।

এবার পরিকল্পনা মতই কাজ চলছে দ্রুত কাঁটাতারের মধ্য দিয়ে একটি সুরঙ্গ পথ তৈরি করা গেল। কাঁটাতারে সম্ভবত এক ফুট অন্তর অন্তর অসংখ্য ধারালো ব্লেড সংযুক্ত করা আছে। তাই চোরাকারবারীরা সতর্ক করে দিল খুব সাবধানে আমাদের ভেতর দিয়ে পার হয়ে যেতে হবে। সবাই আমাদের সামনে দিয়ে খুব ভালোভাবেই কাঁটাতারের বেষ্টনী পেড়িয়ে গেল। আমরাও খুব সাবধানতার সহিত এগিয়ে যেতে থাকলাম। হঠাৎ করে পেছন থেকে একটা গোঙ্গানো আওয়াজ টের পেলাম। পেছনে ফিরে দেখি কামরুলের পায়ে বেশ কিছুটা কেটে গিয়েছে ধারালো ব্লেড দিয়ে।

এই অবস্থায় কিছুই করার নেই, রক্তাক্ত পায়ে আমরা বর্ডার ক্রস করে নিরাপদ জায়গায় পৌঁছে গেলাম। আমি মনে মনে অনেক দুশ্চিন্তায় ছিলাম। ইন্ডিয়ার বর্ডার পার হয়ে আমরা কোথায় গিয়ে উঠবো। নিরাপদ কোন জায়গা যদি না পাই তাহলে কিভাবে পরনের ভেজা কাপড় চেঞ্জ করবো। কিন্তু অবাক হয়ে লক্ষ করলাম এদের সাহায্য করার জন্য এদিকে অসংখ্য লোক রয়েছে। এই লোকগুলো এদের মতো ব্যবসায়ী, এরা একে অপরের কাছে পণ্য কেনাবেচা করে। ভদ্র ভাষায় বলতে গেলে এরা সবাই স্মাগলার।

ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে আর কোথাও কালক্ষেপণ করা যাবে না। আমরা দ্রুত উপায়ে এদের সাহায্যকারী একটি বাড়িতে গিয়ে উঠলাম। প্রথমেই ভেজা কাপড় চেঞ্জ করে কামরুলের পায়ে দুবলা ঘাস চিবিয়ে ব্যান্ডেজ করে দিলাম। এর থেকে কোনো ভালো ব্যবস্থা আর এখানে করা গেল না। যেহেতু পুরনো ব্লেড গায়ে মরিচা লেগে আছে তাই টিটেনাস দিতেই হবে। পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছি। যখন মহল্লার লোকজন কাজে বেরিয়ে পড়বে তাদের ভিড়ে আমরাও চলে যাব।

কাছাকাছি কামরুলের খালাতো বোনের বাড়ি আছে। চোরাকারবারীর দল সেই বাড়ি চেনে তারাই আমাদের পথ চিনিয়ে নিয়ে গেল। বোনের বাড়ি যাওয়ার আগে কামরুলে কেটে যাওয়া পায়ে ড্রেসিং করতে হবে। তারপর আবার টিটেনাস ইনজেকশন তো দিতেই হবে। আরো কিছু কাজ আছে, আমরা বাংলাদেশ থেকে কিছু টাকা সাথে নিয়ে এসেছিলাম। এখন সেই টাকাগুলো এক্সচেঞ্জ করতে হবে। এটা অনেক বড় ঝামেলা কাজ কারন আমরা প্রকাশ্যে কিছু করতে পারছি না।

পরবর্তীতে স্থানীয় কিছু লোকের সহায়তায় টাকাগুলো এক্সচেঞ্জ করতে পেরেছিলাম। টাকা এক্সচেঞ্জ করা হয়ে গেল কিন্তু টিটেনাস ইনজেকশন দেওয়ার মতো এখনো কাউকে খুঁজে পাওয়া গেল না। কারণ অত সকালে বাজারে কোন দোকানপাটই খোলা ছিল না। আরো কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর আস্তে আস্তে দোকানপাট খুলতে শুরু করলো। তারপরে একটি ডিসপেন্সারি খুজে বের করলাম। এবং কামরুলের চিকিৎসা শেষ করে ওর খালাতো বোনের বাসায় চলে গেলাম।
ওহ হো মাঝখানে একটি আশ্চর্যজনক ঘটনা বলতে ভুলেই গিয়েছি। আমার সেই স্বপ্নটা কিন্তু সত্যি হয়েছিল।

বন্ধুরা আজ আর লিখছিনা। অন্য কোনদিন অন্যকিছু অভিজ্ঞতা আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে আসবো। আজকের জন্য বিদায় নিচ্ছি। সবার জন্য শুভকামনা। আল্লাহ হাফেজ।

Logo-1.png

3DLAmCsuTe3bV13dhrdWmiiTzq9WMPZDTkYuSGyZVu3GHrVMeaaa5zs2PBqZqSpD3mqpsYSX3wFfZZ5QwCBBzTwH9RFzqAQeqnQ3KuAvy8Nj1ZK1uL8xwsKK6MgDT8xwdHqPK76Y63rPyW9N4QaubxdwM3GV2pD.gif

Sort:  
 2 years ago 

কারো কিছু হলো না সবাই পার হতে পারলো কামরুলের পায়ে ব্যাথাটা পেল। অভিযাত্রি দলের মাঝে দুই একজনের এমন ঘটনা ঘটেই। যাক পরের পর্ব কি আসে দেখি।

 2 years ago 

কোনো রকম বিপদ ছাড়া পাড় হতে পেরেছি এটাই বড় পাওয়া।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.14
JST 0.028
BTC 59401.87
ETH 2615.39
USDT 1.00
SBD 2.40