আমার স্মৃতির পাতা থেকে দুঃসাহসী এক অভিযান ||দ্বিতীয় পর্ব||
হ্যালো আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা আসসালামু আলাইকুম/আদাব। সবাই ভালো আছেন এবং সুস্থ আছেন আশা করছি। আমিও ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ। সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে আমার ব্লগ লেখা শুরু করছি।
এই কথা শুনে কামরুল লাফ দিয়ে বিছানা থেকে থেকে নেমে আগে জুতাগুলো যত্ন সহকারে অন্য একটি ব্যাগে ঢুকিয়ে নিল। প্রশ্ন উঠতে পারে জুতা ব্যাকে কেন? জুতা পায়ে না দিয়ে ব্যাগে করে নেয়ার যথেষ্ট কারণ আছে। প্রথমত আমাদের যেতে হবে চোরাই পথে তাই সেখানে কাদা, পানি ও আরো অনেক কিছু থাকতে পারে। সেটা অবশ্য আমরা আগেই শুনে নিয়েছিলাম। আমাদের পানি পার হয়ে কিছুটা সুরঙ্গ পথ দিয়ে যেতে হবে।
যাই হোক আমরা ভোরবেলা ফ্রেশ হয়ে কিছু খেয়ে নিলাম। কারণ বর্ডার পার হয়ে কখন যে খেতে পারব তা তো জানিনা। আবার খেতে পারব কিনা তাও আমাদের জানা নেই। হয়তো বিএসএফের হাতে ধরাও পড়তে পারি। আমাদের উঠতি বয়স সব সময় নতুন কিছু জয় করার উচ্চাকাঙ্ক্ষা মনের ভেতর থাকে। তাই অতসব চিন্তা না করে অজানা আগামীর পথে পা বাড়িয়ে দিলাম। যেমনটা শুনেছিলাম ঠিক তেমনি প্রথমেই সামনে বিশাল জলরাশি তবে পানির গভীরতা খুব অল্প।
পানিগুলো একদম অপরিষ্কার নামতেই আমার গা ছমছম করছে। অনেক জঙ্গলের মাঝে অল্প পানিতে এগিয়ে চলছি। আবার যখন শুনতে পেলাম পানিতে জোক থাকতে পারে তখন আমাকে আর পায় কে আমি একটা দৌড় দিলাম। কিন্তু পেছন থেকে একজন আমাকে টেনে ধরল। সে বলল কোন প্রকার শব্দ করা যাবে না গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যেতে হবে। আমি বাবা ভয়ে একদম জড়োসড় হয়ে গেলাম। একে তো জোঁকের ভয়ে আমার হাড় মাংস সব এক হয়ে যাচ্ছে অন্যদিকে চোরা কারবারীদের ভয়।
শুনেছিলাম এরা নাকি নিজেরা বাঁচতে অপরকে মেরে দিয়ে চলে যায়। সব মিলিয়ে জীবনের উপর অনেকটা ঝুঁকি নিয়ে বেরিয়ে পড়েছি। এখন ধীরে ধীরে বুঝতে পারলাম এতটা ঝুঁকি নেওয়া মনে হয় ঠিক হয়নি। এখানে যদি মরে পড়ে থাকি তাহলে আমার লাশটাও হয়তো বাবা-মা দেখতে পারবেনা। এইসব কথা ভাবতে ভাবতে পানির গভীরতা বেড়ে গেল পানি এখন গলা পর্যন্ত চলে এসেছে। আমি আবার সাঁতার জানিনা তাই আমার দুশ্চিন্তা অনেক বেশি। এটা অবশ্য আমি আগেই বলে নিয়েছিলাম। তারা আমাকে আশ্বস্ত করেছিল পানির গভীরতা অনেক কম।
চোরা কারবারীরা সাধারণত যে দিক দিয়ে যায় সেদিকে লাইন দেয়া থাকে। লাইনের বিষয়টা বিস্তারিত বলে রাখা ভালো। এরা যে অঞ্চল দিয়ে ব্যবসা করে সেদিকে বিএসএফ এবং বর্ডার গার্ড কে টাকা দিয়ে রাস্তা ক্লিয়ার রাখে। ওদের ভাষা এটাকে লাইন বলে। তাই আজকে লাইন ক্লিয়ার না থাকায় আমাদের একটু অন্য পথে যেতে হয়েছে। তাই এই দিক দিয়ে পানির গভীরতা একটু বেশি। তবে আমি এটা জেনে আশ্বস্ত হলাম গলার উপরে পানি উঠবে না। মনে মনে বলতে লাগলাম মেজর সাহেব আসার আর সময় পেল না।
মাথার উপর ব্যাগ নিয়ে বেশ কিছুদূর পানিপথ অতিক্রম করলাম। কিছুদূর সামনেই কাঁটাতার দেখতে পাচ্ছি, আর কাঁটাতারের ওপাশে রাস্তা দিয়ে বিএসএফ টহল দিচ্ছে। এখনো ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেনি। তাই হয়তো আমরা দেখতে পেলেও টহলরত বিএসএফরা আমাদের দেখতে পাচ্ছে না। ওই যে আগেই বলেছিলাম লাইন ক্লিয়ার না থাকায় আমাদের ভিন্ন রাস্তা দিয়ে আসতে হয়েছিল। আমার মনের মধ্যে ভয়ে ধুকধুক করছে। ভয় পাওয়াটাই স্বাভাবিক জীবনে প্রথমবার চোরাকারবারিদের সাথে বর্ডার ক্রস করতে এসেছি।
সবচেয়ে বেশি ভয়ের কারণ হচ্ছে বিএসএফরা ঘুণাক্ষরেও যদি বুঝতে পারে তাহলে সরাসরি গুলি করে দিবে। এইতো কিছুদিন আগে জঙ্গলের মধ্যে শেয়াল দৌড়ে যাচ্ছিল। আর বিএসএফরা চোরাকারবারী গুলি করে মেরে দিয়েছিল। এই ধরনের দুশ্চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল। আর ভয়ে আমার হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। এরকমটা হবে জানলে কখনোই এই পথে পা রাখতাম না। আগেই শুনেছিলাম লাইন ক্লিয়ার থাকলে যেতে কোন সমস্যা হয় না। আর আজকে হঠাৎ করে সকালবেলা মেজর সাহেব আসবে এটা কে জানতো।
যাইহোক দুশ্চিন্তা করে আর কোন লাভ নেই এতদূর রাস্তা যখন এসে পড়েছি আর পিছনে ফিরে যাওয়ার কোন উপায় নাই। জিরো পয়েন্ট পার হয়ে অনেক দূর চলে এসেছিলাম এখন ফিরতে গেলেও ধরা পড়ে যাব। তাই অপেক্ষা করছি কিভাবে কাটাতার অতিক্রম করা যায়। কিছুক্ষণ পর যখন বিএসএফ দূরে সরে গেল তখন চোরাকারবারিরা কাঁটাতার কাটতে শুরু করল। এরা চোরাই পথে যে লাইনে ব্যবসা করে সেদিকে কাঁটাতার আগে থেকেই কাটা থাকে। আজকে ভিন্ন পথে এসেছি তাই নতুন করে সবকিছু করতে হচ্ছে। এখন এটাই দেখার বিষয় চোরা কারবারীরা কাঁটাতার কেটে নতুন পথ তৈরি করতে পারে কিনা ? নাকি আবার কাটতে গিয়ে বিএসএফের হাতে ধরা খেয়ে ছিলাম ?
চলমান.........।
বন্ধুরা আজ আর লিখছিনা। অন্য কোনদিন অন্যকিছু অভিজ্ঞতা আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে আসবো। আজকের জন্য বিদায় নিচ্ছি। সবার জন্য শুভকামনা। আল্লাহ হাফেজ।
বেশ দুঃসাহসিক অভিযান মনে হলো আমার কাছে। বেশ জীবন বাজি রেখে গলা সমান পানিতে নেমে গেলেন। সত্যিই দুঃসাহসী অভিযান বলবো আমি এটাকে।
জীবনে প্রথমবার ইন্ডিয়া গিয়েছিলাম তাও আবার চোরাই পথে। সেই ঘটনাগুলো যখন মাঝে মাঝে মনে পড়ে এখনো ভয় পেয়ে যাই। সেই সময় না বুঝেই এই কাজটি করেছিলাম।
ভাই আসলে আমি আপনার দ্বিতীয় পর্বটি প্রথমে পড়েছিলাম পুরোটি বুঝতে না পেরে ঘটনাটি কার ঘটেছে বা চোরাই পথে কারা ইন্ডিয়া বর্ডার ক্রস করছে আসলে বুঝতে পারছিলাম না তাই আপনার প্রথম পর্বে গিয়ে প্রথম পর্বটি পড়ে কমেন্ট করে আসলাম। যাই হোক পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
প্রথমবার বিদেশের মাটিতে পা দিয়েছিলাম চোরাই পথে। অনেক রোমাঞ্চকর ছিল আমার সেই ভ্রমণ কাহিনী।
ভাইয়া আপনার পোস্টটি পড়ে মনে হচ্ছে আপনি খুবই দূর সাহসীকে একটি কাজ করেছিলেন তাও আবার চোরাই পথে। গলা সমান পানিতে নামার দুঃসাহসিকতা জানতে পেরে আমি সত্যিই মুগ্ধ হয়ে গেলাম। ভাইয়া আপনার অভিযানের তৃতীয় পর্বটি পড়ার অপেক্ষায় রইলাম।
আরো বেশি ভয়ের কারণ ছিল কাঁটাতারের ওপাশেই সশস্ত্র বিএসএফ টহল দিচ্ছিল।