ছোটবেলার দুরন্তপনা

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

হ্যালো আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা আসসালামু আলাইকুম/আদাব। সবাই ভালো আছেন এবং সুস্থ আছেন আশা করছি। আমিও মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ। সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে আমার ব্লগ লেখা শুরু করছি।

children-gc681e5747_1920.jpg

Source

বেশ কিছুদিন আগে নদী ভাঙ্গনের ফলে সর্বস্ব হারিয়ে যাওয়া ইসমাইল ভাইকে নিয়ে আমি কয়েকটি পর্ব লিখেছিলাম। তখন হঠাৎ করে একদিন তার সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। তারপর বিভিন্নভাবে বেশ কয়েকবার দেখা হয়েছিল। আস্তে আস্তে আমাদের মধ্যে খুব ভালো সম্পর্ক তৈরি হয়ে যায়। পরবর্তীতে তার বাসায় কয়েকবার গিয়েছিলাম। শুধু তাই নয় নদী ভাঙ্গনের ফলে জেগে উঠা চরে ইসমাইল ভাই বিভিন্ন রকম সবজি চাষাবাদ করতেন। সেখানেও আমাকে নিয়ে গিয়েছিলেন সবজি ক্ষেত দেখানোর জন্য। অবশ্য ফেরার পথে ব্যাগ ভর্তি করে সবজি দিয়েছিলেন আমাকে।

যাইহোক আমিও মন থেকে চেয়েছিলাম ইসমাইল ভাইকে সাহায্য করতে। সেই ইচ্ছা থেকে পরবর্তীতে আমি আমার কর্মরত কোম্পানিতে চাকরির ব্যবস্থা করে দিয়েছিলাম। তাতে ইসমাইল ও তার পরিবার আমার উপর ভীষণ খুশি। এখন প্রায় সময়ই আমাকে ওই দিকটায় যেতে হয়। ইসমাইলের বাড়ি একদম নদীর কিনারায়, বাড়ি উঠান থেকে নামলেই পানি। আজকেও গিয়েছিলাম তার বাসায়। নদীর পানিতে ইসমাইলের ছেলের লাফালাফি করতে দেখে আমি অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম। মনের অজান্তেই ছোটবেলায় আমার সেই দুরন্তপনার স্মৃতিগুলো ঘুরপাক করতে লাগলো।

বাবার চাকরি সূত্রে জন্মের পর থেকেই বিভিন্ন শহরে থাকতাম। যখন বুঝতে শিখলাম তখন থেকে স্থায়ীভাবে আমাদের জেলা সদরের নতুন বাড়িতে থাকতে শুরু করি। কিন্তু স্কুল ছুটি হলেই বছরে দুই একবার গ্রামে যাওয়া হতো। বিশেষ করে বন্যার সময় ও ডিসেম্বরে ফাইনাল পরীক্ষার পর যেতাম। বর্ষাকালে আমার কাছে বেশি আনন্দ হতো গ্রামে গিয়ে। শহরে থাকতে থাকতে এমন অবস্থা হয়েছে এখন পর্যন্ত সাঁতার শিখতে পারিনি। শহরে সেরকম ভাবে পুকুরের দেখা মেলেনি, তাই আর সাঁতার শেখাও হয়নি। ঠিক এই কারণেই বন্যার সময় গ্রামে গেলে বেশি আনন্দ হতো আমার।

আমার ছোটবেলায় বন্যার সময় বাড়ির আশেপাশের সমস্ত রাস্তাঘাট তলিয়ে যেত। আমার গ্রামের বাড়ি কুড়িগ্রাম জেলা শহরের রৌমারী উপজেলায়। এই উপজেলার পাশেই ইন্ডিয়ার আসাম রাজ্যের বর্ডার। ইন্ডিয়া থেকে জিঞ্জিরাম নদী আঁকাবাঁকা পথে বাংলাদেশ ঘুরে প্রবাহিত হয়েছে। এই নদীতে আগে কোন বাঁধ দেয়া ছিল না। তাই বর্ষা মৌসুমে নদীর পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আমাদের পুরো এলাকা প্লাবিত হতো। বন্যার সময় প্রায় প্রত্যেক বাড়িতেই নৌকা অথবা কলা গাছের ভেলা দিয়ে চলাচল করত। আমরা ছোটরা সবাই মিলে বানের পানিতে লাফালাফি হইহুল্লোড় করার জন্য আশেপাশের বিভিন্ন বাড়ি থেকে কলা গাছ চুরি করে আনতাম।

সেই কলা গাছের ভেলা বানিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়িয়েছি। আর দোকান থেকে বরশি কিনে এনে বাঁশের কঞ্চির সাথে সুতো দিয়ে বেঁধে মাছ ধরতে বেরিয়ে পারতাম। কলা গাছের ভেলা নিয়ে অবশ্য খুব দূরে যাওয়া হতো না। একে তো আমি সাঁতার জানিনা তার উপর নতুন বন্যার পানিতে স্রোত থাকতো প্রচুর। একদিন দাদা বাড়ির সামনে ধানের জমিতে শুধুমাত্র বন্যার পানি প্রবেশ করছে। দুপুরের মধ্যেই হাটু পর্যন্ত পানি হয়ে গেল। ওই সময় বন্যার পানিতে প্রচুর মাছ পাওয়া যেত। তাই আমরা কয়েকজন মিলে বড়শি নিয়ে সেই জায়গায় মাছ ধরতে গিয়েছিলাম। কিছুক্ষণ পর লক্ষ করলাম ধানের গাছগুলো নড়েচড়ে কি যেন আসছে।

আমরা একটু সাবধান হয়ে গেলাম, চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি। দেখলাম অনেক বড় একটা বোয়াল মাছ, কি করব বুঝতে পারছিলাম না। ছোট মানুষ তো তাই একটু ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। ভয় পেয়ে একটু বোকামি করে ফেলেছিলাম। আমরা ৩-৪ জন ছিলাম চেষ্টা করলে মাছটা ধরতেও পারতাম। তা না করে বাড়ির ভিতরে দৌড় দিলাম বড়দের ডাকার জন্য আর ফিরে এসে দেখি মাছ উধাও। পরে চাচা আমাকে বলল মাছ কি এক জায়গা থাকার জিনিস। তোমাদের পায়ের শব্দে মাছ ভয় পেয়ে পালিয়ে গেছে। মনে মনে ভাবলাম ঠিকই তো আমরা দৌড়ানোর ফলে পানিতে অনেক শব্দ হয়েছিল।

বন্যার সময় বেশি মজা হত যখন আমারা নিজেও ভিজতাম আবার অন্যদেরও ভিজাতাম। গ্রাম থেকে বাজারে যাওয়ার সময় একমাত্র অবলম্বন ছিল নৌকা। ওই সময় যে রাস্তা দিয়ে বাজারে যাওয়া হতো সেই রাস্তার উপরে প্রায় গলা পর্যন্ত পানি। আমরা বিকালে দল বেঁধে সবাই নৌকা চেপে বাজারে যেতাম আর ফেরার সময় দুষ্টুমি করে নৌকা ডুবিয়ে দিতাম। সেজন্য আমরা সব ভাইয়েরা যখন নৌকায় উঠতাম, আস্তে আস্তে ওই নৌকায় সবাই ওটা বন্ধ করে দিত দেখে বেশ মজাই লাগতো।

একদিন হয়ে গেল হিতে বিপরীত বাজার থেকে ফেরার সময় নৌকা দোলানো শুরু করলাম। নৌকা দুলতে দুলতে পানি উঠতে লাগলো এবং কিছুক্ষণ পর নৌকা ডুবে গেল। কিন্তু সেদিন একটু ভুল করে ফেলেছিলাম, সব সময় নৌকা ডুবাতাম রাস্তার উপরে যেখানে গলা পর্যন্ত পানি। এবার নৌকা চলতে চলতে ডুবে গেল রাস্তার নিচে। যেখানে পানির গভীরতা ১২-১৫ ফুট। আমি তো ভাই সাঁতার জানিনা এখন আমাকে কে বাঁচায় ? কিছুটা পানিও খেয়ে ফেলেছিলাম নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম। এমন সময় চাচাতো ভাইদের মধ্যে একজন আমাকে টেনে রাস্তার উপরে যেখানে গলা পর্যন্ত পানি সেখানে নিয়ে দাঁড় করালো। তারা সবাই জানত আমি সাঁতার জানতাম না তাই এযাত্রায় রক্ষা পেলাম। আমাকে দেখে সবাই হাসতে হাসতে শেষ।

আমিও আজকে ইসমাইল সাহেবের ছেলের নদীর পানিতে লাফালাফি করতে দেখে মনে মনে হাসছি আর সেই ঘটনাগুলো মনে করছি। সেদিন আমি বুঝতে পেরেছিলাম মানুষকে বিপদে ফেলতে গেলে নিজেকেও বিপদে পড়তে হয়। যদিও আমরা খেলার ছলেই এই কাজগুলো করতাম। তবুও সেই ঘটনার পর থেকে আর কোনদিন বাজারে যাওয়া আসার সময় নৌকা ডুবাতাম না। এই ভেবে যে, যদি আমার মত আরো কেউ থাকে যে সাঁতার জানে না তাহলে তার কি হবে ???

বন্ধুরা আজ আর লিখছিনা। অন্য কোনদিন অন্যকিছু অভিজ্ঞতা আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে আসবো। আজকের জন্য বিদায় নিচ্ছি। সবার জন্য শুভকামনা। আল্লাহ হাফেজ।

3DLAmCsuTe3bV13dhrdWmiiTzq9WMPZDTkYuSGyZVu3GHrVMeaaa5zs2PBqZqSpD3mqpsYSX3wFfZZ5QwCBBzTwH9RFzqAQeqnQ3KuAvy8Nj1ZK1uL8xwsKK6MgDT8xwdHqPK76Y63rPyW9N4QaubxdwM3GV2pD.gif


আমাদের উইটনেসকে সাপোর্ট করুন

"Please support Bangla Witness"


https://steemitwallet.com/~witnesses




VOTE @bangla.witness as witness
witness_proxy_vote.png
OR

SET @rme as your proxy

witness_vote.png

Sort:  
 2 years ago 

ছোটবেলার একটি মজার ঘটনার মধ্যে একটি হল সাঁতার কাটা। বৃষ্টির দিনে আমরা অনেকক্ষণ পর্যন্ত ভিজতাম তারপরে পুকুরে গিয়ে সবাই মিলে একসাথে গোসল করতাম। সমবয়সী সবার সাথে একসাথে এরকম ভাবে সাঁতার কাটার মজাটাই ছিল আলাদা। আমরা কেউ একজন যদি একটি মাছ কোথাও দেখতে পেতাম সবাই মিলে একসাথে ধরতে চলে যেতাম। ছোটবেলাটাই ছিল খুবই মজার যার স্মৃতি গুলো মনে পড়লে এখনো ভীষণ ভালো লাগে। আপনার গল্পটি পড়ে আমার কাছে ভীষণ ভালো লেগেছে। পড়ে ভীষণ ভালোই লাগলো।

 2 years ago 

আমিও একবার পুকুরে গোসল করতে যেয়ে পানিতে ডুবে গিয়েছিলাম,পানি ও খেয়েছি অনেক, পরে এক আন্টি দেখে তাড়াতাড়ি উঠিয়েছিলাম।তা না হলে ঐ দিনেই ছিলো শেষ। যাই হোক আপনার বোয়াল মাছের কাহিনি পড়ে বেশ মজা লাগলো।আসলো ছোটবেলার কিছু কিছু স্মৃতি অনেক মনে পরে যায়।আপনার পোস্ট পড়ে আমি ও যে ছোটবেলায় আমার দাদার সাথে বড়শি দিয়ে মাছ ধরতাম তাই মনে পড়ে গেলো।ধন্যবাদ

 2 years ago 

আপনার ছোটবেলার গল্প পড়ে আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে। আসলে আমরা যারা শহরে থাকি তারা এগুলো দেখার সৌভাগ্য হয় না। তাও যখন দুই একবার নানু বাড়ি গিয়েছিলাম। এমনি নৌকাতে উঠেছি বন্যার পরিস্থিতি আমি কখনো সরাসরি দেখিনি আসলে আপনার ছোটবেলার ঘটনাগুলো অনেক মজার ছিল। বোয়াল মাছের কাহিনী তো আরো বেশি মজার। আমি এখনো বাড়িতে গেলে পুকুরে নেমে গোসল করি না । কারণ আমি সাঁতার জানিনা। আপনার দুরন্তপনা গল্পটি পড়ে ভালো লাগলো।

 2 years ago 

আপনি যেহেতু ছোটবেলা থেকেই শহরে বড় হয়েছেন তাই তো সাঁতার শেখা হয়ে ওঠেনি। আসলে সাঁতার শেখা খুব একটা কঠিন কাজ নয়। তবে চেষ্টা যদি করতেন তাহলে অবশ্যই পারতেন। যাই হোক ভাইয়া আপনি ইসমাইল ভাইকে সাহায্য করেছেন জেনে ভালো লাগলো। আপনার লেখাটি পড়ে অনেক ভালো লাগলো। আসলে কিছু কিছু স্মৃতি আছে যেগুলো কখনোই ভোলার মতো নয়। এখন চাইলেও কিন্তু সাঁতার শিখে নিতে পারেন। বিপদ কখন চলে আসে আমরা কেউ জানি না।

 2 years ago 

ছোটবেলায় অনেক মজা করতাম। যেগুলো এখন মনে পড়লে ভীষণ ভালো লাগে। ছোটবেলার অনেক স্মৃতি আমাদের সবারই মাঝে জড়িয়ে আছে। কিছু কিছু স্মৃতি আছে সুখের আবার কিছু কিছু স্মৃতি আছে কষ্টের। সুখের স্মৃতিগুলো যত বেশি মনে পড়ে ততই ভালো লাগে। আর কষ্টের স্মৃতিগুলো যত কম পারি ততই মনে করার চেষ্টা করি। আপনার বোয়াল মাছের কাহিনীটি পড়ে আমার কাছে ভীষণ ভালো লেগেছে। এরকম মজার মজার গল্প গুলো পড়তে ভীষণ ভালো লাগে। আপনার এই পোস্টের কারণে অনেক স্মৃতি মনে পড়ে গেল ছোটবেলার। গোসল করার মুহূর্তগুলো একটু বেশি ভালো ছিল।

Coin Marketplace

STEEM 0.19
TRX 0.16
JST 0.033
BTC 63862.88
ETH 2754.56
USDT 1.00
SBD 2.64