ফিরে দেখা সেইসব দিনগুলি - পর্ব ৩ // ১০% প্রিয় লাজুক খ্যাকের জন্য।

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

হ্যালো আমার বাংলাব্লগের বন্ধুরা আসসালামু আলাইকুম/আদাব। সবাই ভালো আছেন এবং সুস্থ আছেন আশা করছি। আমিও ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ।

দ্বিতীয় পর্ব: ফিরে দেখা সেইসব দিনগুলি - পর্ব ২

রংপুর বিনোদন উদ্যান থেকে বের হয়ে আমরা কিছু খেয়ে ঘাঘট নদীর পাড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। এটা অবশ্য আমাদের পূর্ব পরিকল্পনা ছিল। তাই পরিকল্পনামতো একটা অটো নিয়ে চলে গেলাম ঘাঘট নদীর পাড়ে অবস্থিত সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে সেনা বিনোদন পার্ক। যেমনটা ভেবেছিলাম তারচেয়ে অনেক বেশি সুন্দর দেখে তেমন মনে হয়না কৃত্তিম ভাবে সাজানো। রংপুর শহর থেকে কিছুটা দূরে কোলাহলমুক্ত এলাকায় ঘাঘট নদীর পারে বদরগঞ্জ রোডে সেনা বিনোদন পার্টি অবস্থিত। প্রকৃতির সান্নিধ্যে এসে যে কেউ এখানে কিছুটা প্রশান্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারবে।

Picsart_22-02-20_14-26-33-840.jpg

একই সাথে সেখানে এখানে নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করা যাবে এবং পাহাড়ের মত উঁচু জায়গা আছে, আবার কোথাও বনের সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে পারবো। এখানে মনোরঞ্জনের সমস্ত ব্যবস্থা করা আছে সবাই এসে মনে প্রশান্তি নিয়ে ফিরে যেতে পারবে। মোটামুটি অনেক বড় এলাকা জুড়ে সেনা বিনোদন পার্ক টি প্রস্তুত করা হয়েছে। এটি সব সময় সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে থাকে তাই সব সময় পরিপাটি করে রাখা হয়।

20220220_140603.jpg

এখানে কিছুটা বরেন্দ্র অঞ্চলের মতো বাঁশের তৈরি ঘর করা আছে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে এইসব ঘর। ঘর গুলো দেখতে খুব চমৎকার লাগছিলো মনে হচ্ছিলো কোনো এক বরেন্দ্র অঞ্চলে আছি। আমাদের অঞ্চলে সাধারণত এরকম ঘর চোখে পড়ে না আমরা এরকম জায়গায় ঘুরতে গেলে দেখতে পাই। কিরকম যেন বান্দরবানে ঘুরে বেড়ানোর মত অনুভুতি হচ্ছে।

20220220_140659.jpg

বাসের সিঁড়ি ভেঙ্গে উপরে উঠে কিছুক্ষণ সময় কাটালাম সবাই মিলে অনেকক্ষন আড্ডা দিলাম। পাহাড়ের মত রাস্তা ধরে টং ঘরে উঠতে হয় উপরে উঠে চারদিকের পরিবেশ টা খুব ভালো লাগলো। শহরের কোলাহল ছেড়ে একটু দূরে এরকম পরিবেশে বাঁশের তৈরি করে ওঠে একটু অন্যরকম অনুভূতি নিয়ে নেমে আসলাম।

20220220_140904.jpg

নদীর পাশে তীর ঘেঁষে পাহাড়ের মতো উঁচু করে বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে এই বাঁধের উপর দিয়ে হাঁটতে খুব ভালো লাগে। মনে হচ্ছিল যেন পাহাড়ের উপর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি। এখানে কলসি কাঁধে নিয়ে একটি মেয়ে দাড়িয়ে আছে ভাস্কর্যটিতে মেয়েটি নদিতে পানি আনতে যাচ্ছে এমন মনে হচ্ছিল।

20220220_140923.jpg

আমার ছোট সোনাটা ভাস্কর্য টি দেখে ভয়ে কাদতে লাগলো। আমি চেষ্টা করলাম ভাস্কর্যটির পাশে নিয়ে ওদের একটা ফটোগ্রাফি নিবো। কিন্তু সেগুরে বালি আমি কোলে করে নিয়ে অনেক চেষ্টা করে ওর কান্না থামাতে পারলামনা।

20220220_141031.jpg
20220220_141106.jpg

প্রকৃতির সান্নিধ্যে এসে এমন নজরকাড়া সৌন্দর্য দেখে কার না ভালো লাগে। এখানে নদীর শোভা বর্ধনের জন্য অনেক ব্যবস্থা আছে নদীর তীরে সুন্দর পাহাড়ের মত বাধ। সেই বাঁধের উপর অনেক কারুকার্য খচিত ভাস্কর্য আমার খুব ভালো লাগলো। আমি এই ভালোলাগা গুলোকে ক্যামেরাবন্দি করার জন্য নদী, বাঁধ এবং সেই কলসি কাঁধে নেয়া রমনীর কয়েকটি ফটোগ্রাফি নিলাম।

20220220_141334.jpg
20220220_141402.jpg

বাঁধের উপর থেকে নেমে আমরা সামনের দিকে হাঁটতে লাগলাম হাঁটতে হাঁটতে নিচের দিকে শিশুপার্ক লক্ষ্য করলাম। শিশু পার্কের মধ্যে অনেক ছোট ছোট বাচ্চারা খেলাধুলা করছিল আমার নিচের দিকে নামতে ইচ্ছে করছিল না কিন্তু মেয়ের যাওয়ার ইচ্ছা দেখে আমি নামতে বাধ্য হলাম। মেয়ের ইচ্ছে পূরণের জন্য হাসিখুশি মুখ দেখার উদ্দেশ্য এত দূর আসা। তাই এত টুকুর জন্য আর মন খারাপ করে দিতে ইচ্ছা করল না।

20220220_141609.jpg
20220220_141639.jpg

পার্কে নেমে কিছুক্ষণ খেলাধুলা করে দোলনায় দোলার পর ওর ভয় ভেঙে গেল তাই পাশেই একটি জোকারের ভাস্কর্য দেখে তার ফটোগ্রাফি নিতে ইচ্ছে করলো। কিন্তু ওখানে লেখা ছিল গায়ে হাত দিবেন না তাই আমি ফটোগ্রাফি নিতে চাইনি পরবর্তীতে ইচ্ছা পূরণের জন্য কয়েকটা ফটোগ্রাফি নিতে হলো। সব মিলিয়ে এখানে সময় কাটানোর জন্য পর্যাপ্ত জায়গা আছে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বসে থাকলেও আপনার কাছে খারাপ লাগবে না। বিশেষ করে প্রকৃতির সৌন্দর্য লীলা আপনাকে বারবার টেনে নিয়ে আসবে।

20220220_141739.jpg
20220220_141759.jpg

যাক অনেক ঘোরাঘুরি হলো এবার এখান থেকে বেরিয়ে যাবার পালা আমরা উপরে উঠে ঘাঘট নদী পাহাড়ি বাধ দিয়ে যে রাস্তা করা হয়েছে সে পথে হাঁটা শুরু করলাম। হাঁটতে হাঁটতে একটি সুন্দর ফুলের বাগান চোখে পড়লো সেখানে দোয়েল পাখি সহ আরো কয়েকটি ভাস্কর্য আছে। তাই ইচ্ছা হল শেষের দিকের এই জায়গাটা সঙ্গে ফ্রেমবন্দি করে নিয়ে যাই।

20220220_141454.jpg
ডিভাইসস্যামসাং গ্যালাক্সি E- 7
লোকেশনw3w location
ফটোগ্রাফারমাইদুল ইসলাম

একদম বাইরে বেরিয়ে যাওয়ার পথে হঠাৎ করে লক্ষ্য করলাম অনেক বড় একটা ঈগল পাখি আমার দিকে উড়ে আসছে দেখে খুব ভালো লাগলো। এখানে এসে প্রকৃতির এই সৌন্দর্যের মিলন মেলা দেখে আমার একদমই যেতে মন চাইছিলো না। নদীকে কেন্দ্র করে এখানে প্রকৃতির রূপ-সৌন্দর্য কে অনেকটা বাড়িয়ে তোলার জন্য যে প্রচেষ্টা করা হয়েছে আমার মনে হয় সেখানে কোনো কমতি নেই।

সেনা বিনোদন পার্কে এসে আমার অন্যরকম একটি অভিজ্ঞতা হয়ে গেল এখানকার পরিবেশ এত চমৎকার লেগেছে যেন বারবার এখানে ফিরে আসি। পরিবারকে নিয়ে সময় কাটানোর উদ্দেশ্যে কয়েক দিনের অবকাশযাপন সেটা মনে হয় আমার সার্থক হয়েছে। সেখান থেকে বেরিয়ে এসে শহরে ঢুকে খাওয়ার পাট চুকিয়ে হালকা কিছু কেনাকাটা করে বাড়ী ফিরলাম। রাত্রে ঘুমানোর আগে পরের দিনের পরিকল্পনা করে নিলাম।

বন্ধুরা আজ আর লিখছিনা। অন্য কোনদিন অন্যকিছু অভিজ্ঞতা আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে আসবো। আজকের জন্য বিদায় নিচ্ছি। সবার জন্য শুভকামনা। আল্লাহ হাফেজ।

Sort:  
 2 years ago 

ভাই আপনি পারিবারিকভাবে অনেক সুন্দর সময় উপভোগ করেছেন।আপনাদের সুন্দর মুহূর্ত উপভোগের মুহূর্তের ছবিগুলো অনেক সুন্দর হয়েছে।আপনার সুন্দর মুহূর্ত আমাদের সঙ্গে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই।

 2 years ago 

ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্য করার জন্য। শুভকামনা রইল।

 2 years ago 

এভাবে পাশে থেকে সহযোগিতা করার জন্য ধন্যবাদ।

 2 years ago 

পরিবারের সাথে কাটানো কিছু সুন্দর মুহূর্ত আমাদের মাঝে তুলে ধরেছেন। ছবি দেখে মনে হচ্ছে জায়গাটা বেশ সুন্দর। তাছাড়াও ছবিগুলো বেশ পরিষ্কার যার জন্য আরো ভালোভাবে জায়গাটা ফুটে উঠেছে। আপনাদের জন্য শুভকামনা রইলো ভাইয়া।

 2 years ago 

ধন্যবাদ ধন্যবাদ অনেক সুন্দর মন্তব্যের জন্য ।শুভকামনা রইল।

পরিবার নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার অনুভূতিটা সত্যিই অন্য রকম।আপনাকে দেখে বোঝা যাচ্ছে অনেক সুন্দর একটি দিন কাটিয়েছেন আপনি। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ভাই আপনার কাটানো সুন্দর সময় গুলো আমাদের সাথে শেয়ার করে নেওয়ার জন্য।শুভকামনা রইল আপনার জন্য

 2 years ago 

আমার পোস্টে এসে মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে শুভকামনা রইল।

 2 years ago 

আমি রংপুরের বেশ কয়েক বছর ছিলাম। কিন্তু কখনোই এই ঘাঘট নদীর পাড়ে যাওয়া হয়নি। আপনার নদীর পাড়ের ছবিগুলো দেখে মনে হচ্ছে যে খুবই চমৎকার পরিবেশ। খুব সুন্দর একটি সময় কাটিয়েছেন সারাদিন পরিবারের সঙ্গে। দেখে খুবই ভালো লাগলো। শুভকামনা রইল আপনার এবং আপনার পরিবারের জন্য।

 2 years ago 

যেতে পারতেন সময় কাটানোর জন্য খুব ভালো একটি জায়গা শহুরে কোলাহলের বাইরে। ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যের জন্য শুভকামনা রইল।

 2 years ago 

সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে থাকা পার্কটিতে চমৎকার সময় কাটিয়েছেন আপনারা। আপনাদের ছবিগুলো দেখে বোঝা যাচ্ছে সেটি। পার্কটিকে খুব সুন্দর করে সাজিয়ে গুছিয়ে তৈরি করা হয়েছে। এই ধরনের পার্ক সময় কাটানোর জন্য একটি উপযুক্ত জায়গা। ধন্যবাদ আপনাকে।

 2 years ago 

শহর থেকে খানিকটা দূরে ঘাঘট নদীর তীরে একদম কোলাহলমুক্ত জায়গা সময় কাটানোর জন্য বেশ ভালো। ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর মন্তব্যের জন্য।

 2 years ago 

ঘাঘট নদীর পাড়ে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে সেনা বিনোদন পার্কটি দেখতে অনেক সুন্দর লাগলো। মনে হচ্ছে সামনাসামনি এই পার্কটি আরো বেশি সুন্দর। পার্কের অনেক সুন্দর সময় কাটিয়েছেন দেখলাম। বিশেষ করে কলসি কাঁধে একটি মহিলার ভাস্কর্য অসাধারণ লাগলো ‌‌। মনে হচ্ছিল জানো সত্যি কারের কোন মহিলা কলসি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এরকম একটা মুহূর্ত আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য অনেক ধন্যবাদ।

 2 years ago 

আসলেই সামনাসামনি ছবির থেকে অনেক বেশি সুন্দর ।ধন্যবাদ আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য শুভকামনা রইল।

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.14
JST 0.030
BTC 58679.35
ETH 3155.04
USDT 1.00
SBD 2.44