বন্যা কবলিত এলাকায় কয়েকটা দিন || পর্ব - শেষ ||
হ্যালো আমার বাংলাব্লগের বন্ধুরা আসসালামু আলাইকুম/আদাব। সবাই ভালো আছেন এবং সুস্থ আছেন আশা করছি। আমিও ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ। সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে আমার ব্লগ লেখা শুরু করছি।
আমার ফোনটা রিসিভ করতেই সে আমাকে যেটা বলল সেটা আমার জন্য অপ্রত্যাশিত ছিল। জানতে পারলাম স্রোতের কারণে তার বাড়ি ভিটে নাকি ভাঙ্গন ধরেছে। তাই লোকজন নিয়ে সেখানে বস্তা ফেলে শেষ রক্ষা করার চেষ্টা করছে। এই দুর্ঘটনার খবর দিয়ে যেতে পারবে না বলে দুঃখ প্রকাশ করল। এদিকে আমার হেড অফিসের প্রচন্ড চাপ ক্লোজিং করতেই হবে। আমার কাজের সিডিউল যেহেতু আজকে এইদিকেই তাই আমিও মনে মনে একটা চিন্তা করলাম। বন্যা দুর্গত এলাকার কিছু ফটোগ্রাফি করে একটা রিপোর্ট করব হেড অফিসে।
যাইহোক এই ভেবেই শুরু করলাম আমার যাত্রা প্রথমেই সরাসরি চলে গেলাম নৌকা ঘাটে। যেহেতু নৌকা দিয়েই শুরু করতে হবে বর্তমানে এইদিকে নৌকা ছাড়া চলাচলের কোন বিকল্প পথ নেই। অন্যদিনের তুলনায় আজকে একটু বেশি ভিড় দেখলাম। সম্ভবত কোরবানি ঈদের কারণে বিভিন্ন জায়গায় গরুর হাট বসে তাই এত ভিড়। আর এই দিকে একটা বড় হাট আছে। ঈদের যেহেতু আর খুব একটা দেরি নেই তাই মানুষ যত দ্রুত সম্ভব প্রয়োজনীয় কাজগুলো শেষ করতে চাচ্ছে।
প্রথমেই খেয়া নৌকা পার হওয়ার পর সামনে গিয়ে আবার ইঞ্জিন চালিত নৌকায় বেশ কিছুদুর পথ যেতে হবে। এই রাস্তা দিয়ে প্রচুর লোক যাতায়াত করে বলতে গেলে জেলা সদরের এক তৃতীয়াংশ লোকের যাতায়াত। খেয়া নৌকার উপর চাপ কিছুটা কমানোর জন্য অভিনব কায়দা একটি ভাসমান ব্রিজ তৈরি করা হচ্ছে। সারিবদ্ধ ভাবে অনেকগুলো প্লাস্টিকের ড্রাম বেঁধে তারপর বাসের চাটাই দিয়ে চলাচলের পথ তৈরি হবে। প্রয়োজনের সময় তাৎক্ষণিক এই সিদ্ধান্তগুলো দেখতে ভালই লাগে।
বর্তমানে এদিকে সমস্ত কাজ নৌকা যোগেই করতে হয় একজন পশু চিকিৎসককে দেখলাম প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে চিকিৎসা করে নৌকা থেকে নামছে। আবার কোথাও বন্যার নতুন পানিতে নতুন জাল বানিয়ে মাছ ধরার প্রচেষ্টা চলছে। দৃশ্যগুলো বেশ ভালই লাগলো।
কিছু দূরে আবার সেই খারাপ লাগার দৃশ্য। এরকম ভাবেই প্রত্যেকটা বাড়িতে পানি উঠে গেছে। আসলে বন্যার সময় নিম্ন অঞ্চলের এই সমস্ত লোকদের কষ্টের সীমা থাকেনা। আমরা যারা নদী অঞ্চল থেকে কিছুটা দূরে আছি তারা অনেক সময় সচক্ষে না দেখলে এই কষ্টের মুহূর্তগুলো উপলব্ধি করতে পারে না। তাই আমি আজকে কিছুটা বাধ্য হয়েই বাস্তব চিত্রগুলো হেড অফিসে তুলে ধরার জন্য ফটোগ্রাফি করছি। ফটোগ্রাফি করা দেখে অনেকেই নিছক কৌতুহল মনে করতে পারে।
কষ্টের সীমা আর কতদূর পর্যন্ত যেতে পারে আমার জানা নেই। এরকম মানবেতর জীবন যাপন দেখে কারো ভালো লাগার কথা নয়। আমার তো একদমই ভালো লাগেনি। বন্যা দুর্গত এলাকায় নিম্ন অঞ্চলের প্রত্যেকটা বাড়িতে পানি উঠে যাওয়ার ফলে তাদের আশ্রয় এখন এই উচুঁ বাঁধের উপর। এখানেই জীবন রক্ষার তাগিদে মানুষ ও গবাদি পশু বন্যার পানি শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত একসঙ্গে থাকবে। আসলে প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে সামান্য বৃষ্টিপাত ও উজানের ঢলে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে যায়। তখন এখানকার লোকজনের কষ্টের সীমা থাকে না।
আজকে আমি যে উদ্দেশ্যে এসেছিলাম সেটা ছিল আমার এখানকার কলিগকে সাথে নিয়ে তার মার্কেটটা পর্যবেক্ষণ করা। যেহেতু বন্যার কারণে তার বসতভিটায় ভাঙন ধরেছে তাই মানবিক দিক বিবেচনা করে তাকে জোর করলাম না। সে কারণেই বন্যা দুর্গত এলাকাগুলো নিজেই ঘুরে ঘুরে কিছু ফটোগ্রাফি করলাম। উদ্দেশ্য তাদের প্রকৃতির সাথে লড়াই করে বেঁচে থাকার এই জীবন যুদ্ধের সাক্ষী হতে পারি।
বন্ধুরা আজ আর লিখছিনা। অন্য কোনদিন অন্যকিছু অভিজ্ঞতা আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে আসবো। আজকের জন্য বিদায় নিচ্ছি। সবার জন্য শুভকামনা। আল্লাহ হাফেজ।
ডিভাইস | স্যামসাং গ্যালাক্সি A-10 |
---|---|
ফটো | @mayedul |
লোকেশন | w3w location |
আসলে বন্যার কারণে মানুষের দুর্ভোগের দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে। এসব দেখে আসলে অনেক বেশি খারাপ লাগছে। আপনি কিছু ফটোগ্রাফি শেয়ার করেছেন সেখানে দেখা যাচ্ছে যে বন্যা পানি অনেকটা বেশি উঠে গেছে। কিছুই আমাদের করার নেই তবে আল্লাহর কাছে অনেক বেশি দোয়া করি যেন আল্লাহ তাদেরকে খুব তাড়াতাড়ি বিপদ মুক্ত হয়।
আসলেই আমাদের অবস্থান থেকে খুব বেশি কিছু করার নেই।
আমরা শুধু প্রার্থনা করতে পারি।
আসলে বন্যায় কবলিত এলাকায় মানুষের দুর্দশা শেষ নেই। আপনার ফটোগ্রাফির মাধ্যমে আরো কিছু লাইভ পটোচিত্র দেখতে পেলাম ধন্যবাদ আপনাকে।
বন্যা কবলিত এলাকার মানুষদের সাহায্যার্থে আমাদের সকলকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে আসা উচিত।
আপনার সাথে আমি ও একমত ভাই, ধন্যবাদ আপনাকে ভালো থাকবেন।
আপনার 'বন্যা কবলিত এলাকায় কয়েকটা দিন' লেখার প্রতিটি পর্বই পড়ে আসলাম। প্রতিটি পর্ব খুব সুন্দর ভাবে বর্ণনা করেছেন। নতুন করে বলার কছুই নেই। শুধু দোয়া করি সেসব মানুষ জন ভালো থাকুক, সুস্থ থাকুক।
আশা করছি সবাই খুব দ্রুতই তাদের এই সমস্যা থেকে কাটিয়ে উঠতে পারবেন।