আগেই বলে রেখেছিলাম কয়েকটা দিন বন্যা কবলিত এলাকায় কাজ করব। প্রথম দিন অনেকটা ঝামেলা মুক্তভাবেই কাজ সম্পন্ন করতে পেরেছিলাম। কিন্তু দ্বিতীয় দিন এসে সকালবেলাতেই ভীষণ অসুবিধায় পড়ে গেলাম। প্রতিদিনকার মতো স্বাভাবিক নিয়মেই সকালে রেডি হয়ে সমস্ত কলিগদের রিপোর্টিং সম্পন্ন করলাম। সবশেষে যে এলাকায় কাজ করতে যাব সেই কলিগকে ফোন দিলাম। আমাকে আশ্চর্য করে দিয়ে তার ফোনটি সুইচড অফ পেলাম। বেশ কয়েকবার চেষ্টা করার পরেও কোনভাবেই আর কথা বলা সম্ভব না। শেষ পর্যন্ত কোন উপায় না পেয়ে তার বাসায় যাওয়ার জন্য মনস্থির করলাম।
আজকে ট্যুর খুব একটা দূরে নয় শহরের পাশেই কিন্তু সেদিকেও বন্যার পানি প্রচুর বৃদ্ধি পেয়েছে। যেতে বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার। প্রথমেই একটি অটো রিক্সার মধ্যে উঠে পড়লাম। ধরলা ব্রিজ পার হয়ে সেখান থেকে নৌকা যোগে যেতে হবে আমার সেই কলিগের বাসায়। কারণ ওই অঞ্চলের সমস্ত রাস্তাঘাট পানির নিচে তলিয়ে গেছে। আমি অটো রিক্সা থেকে নেমে নৌকা পেয়ে গেলাম ঠিকই কিন্তু যাত্রী শুধুমাত্র আমি একা। যেহেতু দূরত্ব অনেক বেশি তাই একা যাওয়া সম্ভব নয় অপেক্ষা করতে লাগলাম কয়েকজন যাত্রী হওয়ার জন্য।
বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পরেও যখন কাঙ্খিত যাত্রী পাওয়া গেল না আমি বেশ চিন্তায় করে গেলাম। খুব তাড়াতাড়ি তার বাসায় না গেলে হয়তো আর দেখা পাওয়া যাবে না। এমনিতেই আমার কাজ সাধারণত চোর পুলিশ খেলার মত। সব সময় তাদের ফাঁকিবাজি ও ভুল ত্রুটি শুধু খুঁজে বেড়াতে হয়। আমি আগেই বলেছিলাম জুনের ক্লোজিং সম্পন্ন না হওয়ার কারণে আমি বেশ ঝামেলায় আছি। আর এই দুই তিনটা দিন টুর রেখেছি যে অঞ্চলগুলোতে ক্লোজিং হয়নি। তাহলে বুঝতেই পারছেন কেমন চোর ধরতে যাচ্ছি হা হা হা।
এদের দোষ দেওয়াটা খুব একটা যুক্তি সঙ্গত নয়। কারণ এবার বন্যা প্রস্তুতি এতটাই খারাপ হয়েছিল যে এদের মার্কেটে বেশিরভাগ দোকানে পানি উঠে গিয়েছিল। সেটা অবশ্য আশেপাশের পানির অবস্থা দেখে কিছুটা আন্দাজ করতে পারবেন। আমরা যে এলাকায় নৌকায় করে যাচ্ছি এই সম্পূর্ণ জায়গাটা দুই এক মাস আগেও ধান ছিল। মানুষ পায়ে হেঁটে যাতায়াত করতো আর এখন শুধুই পানি।
কাজে এসে অসাধারণ নৌকো ভ্রমণের আনন্দ উপভোগ করলাম। ভালোলাগার বেশ কিছু কারণ আছে একদিক দিয়ে আবহাওয়া ছিল অনেক চমৎকার। অন্যদিকে নৌকা ভ্রমণের সময় চারিদিকে দৃশ্য গুলো আমার খুব ভালো লেগেছিল। মাঝে মাঝে মাছ ধরার জন্য বিভিন্ন জায়গায় অনেক ধরনের ব্যবস্থা করে রাখা আছে। দৃশ্যগুলো এই অঞ্চলে না আসলে দেখা যেত না। আবার কিছু খারাপ লাগার অনুভূতি ও আছে। প্রচন্ড বৃষ্টিপাত ও বন্যার কারণে নিম্নাঞ্চলের লোক গুলো অনেক কষ্ট করে তাদের দিন কাটাচ্ছে। লক্ষ্য করে দেখতে পারবেন বেশিরভাগ বাড়িতে পানি উঠে গেছে। তাতে কষ্ট দেখে আসলেই খারাপ না লাগে কোন উপায় নেই।
![20220703_225153.jpg](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmR9iVdwQPQnTA6KaYyBtq5pUwyJpht2bjGCPjvFPERt98/20220703_225153.jpg) |
![20220703_224912.jpg](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmX1LDQd6CS1FUzMVtCi1WyeHMLD1zL6Sm8Yd8K4XZN456/20220703_224912.jpg) |
![20220703_224641.jpg](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmai9cFeTbGzsff5MnqVJUxnPKez5MKB1Rqw4dmKgVhesw/20220703_224641.jpg) |
![20220703_224603.jpg](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmT3Bnu2z4A9mJT1h9Ptd3ABVe9sD7BwmbMQq4xY7WNHSz/20220703_224603.jpg) |
![20220703_224234.jpg](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmTNUvYq4AYQTffCL9KaPqC1zGgfTPkqaGzhbGrV9ut3kq/20220703_224234.jpg) |
৩০ মিনিটের মতো নৌকা চলার পর আমার কলিগের বাসার সামনে চলে আসলাম। আশেপাশের পানির অবস্থা দেখে আমিও বেশি চিন্তায় পড়ে গেলাম। তার ঘরের একেবারে পাশ দিয়ে পানির স্রোত বইছে। যেকোনো মুহূর্তে ভাঙ্গন দেখা দিতে পারে। নৌকা থেকে নেমে তার বাসায় গিয়ে তার সঙ্গে অনেক কথা বললাম। ফোন বন্ধ থাকার কারণ হিসেবে জানতে পারলাম গত রাত্রে প্রচন্ড বৃষ্টিপাতের কারণে আর বিদ্যুতের দেখা পায়নি। বাড়িভিটা ভেঙ্গে যাওয়ার সংখ্যায় সে বেশ দুশ্চিন্তাগ্রস্থ। বেশ কিছু কথা বলে তাকে সান্ত্বনা দিয়ে পানি কিছুটা কমে আসলে দ্রুত ক্লোজিং সম্পন্ন করার কথা বলে বলে শেষ করলাম। তার সাথে কথা শেষ করে নৌকার জন্য অপেক্ষা করছি।
![20220703_224818.jpg](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmbUQbEGEft7dCQvtjFUUzr3NPC7F2DCPCegszCkweNZvx/20220703_224818.jpg) |
![20220703_224749.jpg](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmdmmfBSkpM2ZBJojUhZdrBtaW4XJmsP5fhDHV4BQvp9GY/20220703_224749.jpg) |
আসলে এরকম পরিস্থিতি দেখে আমি আর বেশি খারাপ ব্যবহার করতে পারলাম না। বন্যা পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয়ে গিয়েছিল যে তার বসতভিটা রক্ষা করাই এখন প্রধান লক্ষ্য। এরকমটা ভাবতে ভাবতেই দূর থেকে নৌকা আসছে লক্ষ্য করলাম। হাত তুলে অনেকক্ষণ ইশারা করে ডাকার পর আমার দিকে তার দৃষ্টি পড়লো। নৌকার গতি কমিয়ে আমার দিকে ঘুরতে দেখে নিশ্চিত হলাম আমাকে নেয়ার জন্য তীরে আসছে। আমার নৌকা ভ্রমণের ভাগ্যটা আজকে খুব ভালো মনে হচ্ছে। আসার সময় পুরো নৌকায় আমি একাই ছিলাম আবার যাবার সময়ও একাই যাচ্ছি গান শুনতে শুনতে। ভালো সময় গুলো যেন খুব দ্রুতই ফুরিয়ে যায়। আমি চাচ্ছিলাম আরো কিছুক্ষন নৌকায় থাকতে। কিন্তু আজ মনে হল খুব দ্রুতই ঘাটে এসে পৌঁছে গেলাম। কি আর করা নৌকা থেকে নামতেই হবে এখন বাড়ির উদ্দেশ্যে যাবার পালা।
বন্ধুরা আজ আর লিখছিনা। অন্য কোনদিন অন্যকিছু অভিজ্ঞতা আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে আসবো। আজকের জন্য বিদায় নিচ্ছি। সবার জন্য শুভকামনা। আল্লাহ হাফেজ।
![Logo-1.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmbZYNxy7yACEKsx9y5jEoHEvabbVJuaPaTqiEciHLh398/Logo-1.png)
![3DLAmCsuTe3bV13dhrdWmiiTzq9WMPZDTkYuSGyZVu3GHrVMeaaa5zs2PBqZqSpD3mqpsYSX3wFfZZ5QwCBBzTwH9RFzqAQeqnQ3KuAvy8Nj1ZK1uL8xwsKK6MgDT8xwdHqPK76Y63rPyW9N4QaubxdwM3GV2pD.gif](https://steemitimages.com/0x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmeNW8WGqB2SscxBbm243ErNeLe1aTY8yLYdZGXGZgGfeS/3DLAmCsuTe3bV13dhrdWmiiTzq9WMPZDTkYuSGyZVu3GHrVMeaaa5zs2PBqZqSpD3mqpsYSX3wFfZZ5QwCBBzTwH9RFzqAQeqnQ3KuAvy8Nj1ZK1uL8xwsKK6MgDT8xwdHqPK76Y63rPyW9N4QaubxdwM3GV2pD.gif)
your hashtag has been upvoted on @upvoteandresteem
আপনি যে পোস্টটি শেয়ার করেছেন তা থেকে অনেক কিছুই জানতে পারলাম। যেসব এলাকা বন্যার পানিতে ডুবিয়ে থাকে শুধু সেই এলাকার লোকজনই জানে কত কষ্ট। আপনার শেয়ার করা ফটোগুলো দেখেই অনেকটা আন্দাজ করা যায়। বন্যা কবলিত এলাকার ফটোগুলো দেখে আমারও অনেক কষ্ট লাগলো। আল্লাহ যেন দ্রুত তাদের সমস্যার সমাধান করে দেন। আমিন।
ঠিক বলেছেন ভাই নিম্ন অঞ্চলের লোকজন বর্ষা মৌসুমে অনেক কষ্টে দিন যাপন করে।
আপনার বন্যা কবলিত এলাকায় কাজে যাবার গল্পটা পড়লাম আর মানুষগুলোর কথা চিন্তা করছিলাম। সত্যিই তারা খুব কষ্টে রয়েছে। এমন অবস্থায় ক্লোজিং করতে পারবেনা। যাক আপনিও মানবিক হয়ে সময় দিয়েছেন এটাই বড় বিষয়। ধন্যবাদ ভাই।।।
আসলেই ভাই স্বচক্ষে না দেখলে দূর থেকে পুরো বিষয়টা ধারণা করা যায় না।
কোম্পানির চাকরিগুলো একটু জটিল হয়। কারণ সে পাই পাই করে হিসাব গুলো নিয়ে নেয়। তবে আপনি যে বন্যা কবলিত এলাকায় গিয়েছেন এবং সহকর্মীর ফোন বন্ধ থাকায় তার বাড়ি পর্যন্ত। এ ফাঁকে নিজের মনের মত কিছু ফটোগ্রাফি করেছেন সহকর্মীর বাড়িতে গিয়ে দেখেন তার বাড়ি ভাঙ্গনের উপক্রম। এখন তার বাড়ির রক্ষা হয় কিনা সেই দুশ্চিন্তায় সে মরে। তবে অসাধারণ ছিল আপনার ফটোগ্রাফি গুলো এবং অনুভূতিগুলো। তবে কাজের চাপ সেটা থাকবে যতটা সম্ভব হিসাবটা ক্লিয়ার করে ফেলুন। আপনার মঙ্গল কামনা করছি শুভেচ্ছা রইলো আপনার জন্য।
এইটাই ভাই আমাদের শত সমস্যার মাঝেও কোম্পানি তাদের হিসাব ঠিক রাখতে ব্যস্ত। আমরা হচ্ছি বলির পাঠা।
কম্পানিতে চাকরি করা খুবই টাফ ব্যাপার। তবে এর সাথে নতুন একটি অভিজ্ঞতাও অর্জন করা হয়ে যায়। সাথে কোন কূলের মানুষ কেমন জীবন যাপর করছে সে সম্পর্কে একটি ধারণার সৃষ্টি হয়। ভালো থাকুক বন্যাকবলিত এলাকার মানুষ জন। খুব তাড়াতাড়ি এই পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পাক।
একদম ঠিক বলেছেন চাকরি করতে এসে অনেক মানুষ চিনলাম।