বাস্তবতার নিরিখে - শেষ পর্ব || 10% beneficiary to @shy-fox.
হ্যালো আমার বাংলাব্লগের বন্ধুরা আসসালামু আলাইকুম/আদাব। সবাই ভালো আছেন এবং সুস্থ আছেন আশা করছি। আমিও ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ। সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে আমার ব্লগ লেখা শুরু করছি।
এখানে এসে মধ্যে জেগে ওঠা চরে ইসমাইল ভাইয়ের সবজির বাগান এবং পর্যায়ক্রমে অন্যান্য ফসলের মার দেখে আমার ভিতরে একটা ভালোলাগা কাজ করছিল। প্রতিবছর বন্যার পর এই জমি গুলোতে প্রচুর পলিমাটি জমা হয়। এটা তাদের জন্য আশীর্বাদ স্বরূপ। এই জমিতে তারা ধান ও পাটের পাশাপাশি প্রচুর পরিমানে সবজি চাষ করে। নদীর মাঝখানে জেগে ওঠা চরে এই ধরনের চাষাবাদ করেই মোটামুটি তাদের জীবিকা নির্বাহের যোগান হয়।
এখানকার লোকজন স্থানীয়ভাবে এই গাছটিকে ধনচে বলে। এই গাছটি পাট খড়ির চেয়ে অনেক মোটা ও শক্ত তাই চরের লোকজন প্রচুর পরিমাণে ধনচে চাষ করে। ইসমাইল ভাইয়ের কাছে তথ্য নিয়ে জানতে পারলাম এই জমিগুলোতে সবজি উঠানোর পর ধনচের বীজ লাগানো হয়। আমি যে জমিতে দাঁড়িয়ে আছি সেখানে কাঁচামরিচ ও করলার গাছ ছিল। কাঁচামরিচ ও করলার গাছ নষ্ট হয়ে যাওয়ার পর এখানে ধনচে লাগানো হয়েছে। এই জমির ধনচে গুলো দিয়ে তাদের সারা বছরের খড়ির যোগান হয়। খড়ির ব্যবস্থা হওয়ার পাশাপাশি এগুলো বিক্রি করে বেশ ভালো পরিমাণে অর্থ ঘরে আসে।
নদীতে জেগে ওঠা চরে চাষাবাদ করে তারা এখন মোটামুটি খেয়ে পরে বাঁচতে পারছে। ইসমাইলের সঙ্গে কথা বলে তার জীবনে অনেক কষ্টের কথা জানতে পারি। এই অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি খুব বেশিদিনের নয়। তারা মূলত সবজি চাষের উপরেই বেশি মনোযোগী। তার ভাষ্যমতে সবজি চাষের টাকা যার পকেটে গেছে সে বুঝতে পারে এর মজা কোথায়। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়ার পূর্বে ৫০ থেকে ৬০ কেজি ওজনের ভার কাঁধে করে নিয়ে তারা শহরে আসতো বিক্রি করার জন্য। এখনো তোদের বাড়ি অব্দি কোন গাড়ি আসে না ৪-৫ কিলোমিটার দূরে গিয়ে তারপর গাড়িতে করে শহরে আসতে হয়। সব মিলিয়ে তাদের কষ্টের শুরু হয়েছিল কিন্তু এখন পর্যন্ত কষ্টের শেষ দেখতে পেলাম না।
চরের এই জমিগুলোতে চাষাবাদ করে একদিকে যেমন তারা এখানে ধান মাড়াই করা এবং ধানের খড় শুকানোর সুন্দর জায়গা পায়। ঠিক তেমনি বাড়ি থেকে অনেক দূরে হওয়ার কারণে বৃষ্টি আসলে অনেক বিপদের সম্মুখীন হতে হয়। কারণ গাছপালা বিহীন চরের এই ফাঁকা জায়গা গুলোতে বৃষ্টি ও ঝড়ের তান্ডব থেকে রক্ষা পাওয়ার কোন উপায় নেই। পাশাপাশি চরের এই জমি গুলোতে প্রচুর ঘাস জন্মে তাই গবাদিপশুর খাওয়ানোর জন্য পর্যাপ্ত ঘাসের যোগান পায়।
ইসমাইলের সঙ্গে সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত অনেকক্ষণ সময় কাটিয়ে তার জমি থেকে পটল করলা নিয়ে আমি বাড়ির দিকে রওনা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। এখন কোন পথে যাব এইটা নিয়েই আমি বেশ চিন্তিত। এখান থেকে বাড়ি যাওয়ার দুইটা পথ আছে। একটা আমি যেদিক দিয়ে এসেছিলাম নৌকা পাড় হয়ে আবার অনেক দূর হেটে যাওয়া। আরেকটা পথ নদীর তীর ঘেঁষে সোজা হেঁটে যাওয়া। যেহেতু নদীর পানি এখনও খুব একটা বৃদ্ধি পায়নি তাই সামনে কোথাও পানি পাওয়া যাবে না এইভেবে নদীর তীর ঘেঁষে হেঁটে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম।
ডিভাইস | স্যামসাং গ্যালাক্সি A-10 |
---|---|
ফটো | @mayedul |
লোকেশন | w3w location |
ইসমাইল ভাইয়ের সঙ্গে কুশল বিনিময় করে তার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আমি হাটা শুরু করলাম। নদীর তীর ঘেঁষে হাঁটতে হাঁটতে রাস্তা যেন শেষই হচ্ছিল না। প্রচন্ড রোদের তেজ সূর্য যেন মাথার উপর থেকে আমাকে তাপ দিচ্ছে সেকারণে হাঁটতে আমার বেশ ক্লান্তি লেগে গেল। কিছুক্ষণ হাঁটার পর রাস্তা শেষ হয়ে গেল সামনে বিশাল ঝাউবন। হঠাৎ করে মনে হল আমি সুন্দরবন এসে পৌঁছে গেলাম নাকি। এমনিতেই বিশাল চর একা একা হাটছি তারমধ্যে সামনে এত বড় ঝাউবন দেখে আমার বেশ ভয় লেগে গেল। এখানে এসে আমার গত বছরের সেই কথাটি মনে পড়ে গেল এই চরে নাকি একটি চিতাবাঘ পাওয়া গিয়েছিল জঙ্গলের মধ্যে সে একটি ছোট আকারের গরু খেয়ে ফেলেছিল।
মনের মধ্যে ভয় উৎকন্ঠা নিয়ে আমিতো দ্রুতগতিতে আসা শুরু করলাম যতই কাছে যাচ্ছি আমার বুকটা ভয়ে কাপতে লাগলো। এমনিতেই ভয় পেয়ে আমার পা এগোচ্ছে না তার উপর ঝাউবনের কাছে এসে আমি রাস্তা খুঁজে পাচ্ছিনা কেমন লাগে বলেন তো। অতিরিক্ত তাড়াহুড়ার কারণে আমি রাস্তা হারিয়ে ফেলেছি অনেকক্ষণ খোঁজাখুঁজি করার পর সরু একটি রাস্তা চোখে পড়লো। আমি সেই রাস্তা ধরে হাঁটতে শুরু করলাম। কিছুক্ষণ দ্রুতবেগে হাঁটার পর মাঝামাঝি এসে কেমন যেন একটা শব্দ আমার কানে এল ভয়ে আমার গায়ের লোম খাড়া হয়ে গেল। আমি আরো দ্রুতবেগে হাঁটা শুরু করলাম পরে দেখলাম পটলের ক্ষেতে কীটনাশক স্প্রে করার জন্য একটি লোক ঘাড়ে স্প্রে মেশিন নিয়ে আসছে। লোকটিকে দেখে আমি কিছুটা স্বস্তি ফিরে পেলাম তার সঙ্গে কথা বলতে বলতে ঝাউবন পার হয়ে গেলাম।
ঝাউ বনের ভিতর হাঁটতে-হাঁটতে লোকমুখে শোনা চিতাবাঘের গল্পটি জানতে চাইলাম। তার মুখে ঘটনাটি শুনে মনে মনে আমি হাসতে লাগলাম গুজব কিভাবে ছড়িয়ে যায় শিয়াল লোকমুখে ঘুরতে ঘুরতে চিতাবাঘ হয়ে গেল। যে গল্পটা আমি শুনেছিলাম সেটা একেবারেই গুজব গত বছর এখানে বেশকিছু শিয়াল ছিল শেয়ালগুলো কয়েকটা ছাগল খেয়ে ফেলেছিল। যাই হোক অবশেষে আমি বাড়ি ফেরার পথ খুঁজে পেলাম। ইসমাইল ভাই এবং তার পরিবারের নদীর সঙ্গে সঙ্গে তাদের জীবনের উজান ভাটির কথা শুনে আমার মনের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। আমি যতটুকু জানতে পেরেছি আপনাদের মাঝে শেয়ার করার চেষ্টা করলাম। লেখা গুলো পড়ে আপনাদের কেমন লাগলো মূল্যবান মন্তব্যের মাধ্যমে জানাবেন আশা করছি।
বন্ধুরা আজ আর লিখছিনা। অন্য কোনদিন অন্যকিছু অভিজ্ঞতা আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে আসবো। আজকের জন্য বিদায় নিচ্ছি। সবার জন্য শুভকামনা। আল্লাহ হাফেজ।
ভালই বলেছেন লোকের মুখে মুখে শেয়াল বাঘ হয়ে যায়। চর এলাকায় এমন ঝাউবন অনেক দেখেছি। আমার কাছে কিন্তু এধরনের ঝাউবন দেখতে দারুন লাগে। আপনি যদি বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় হতেন তাহলে দারুন কিছু কথাসাহিত্য তৈরি হয়ে যেত। ধন্যবাদ ভাই অনুভূতি গুলো শেয়ার করার জন্য।
কথা সাহিত্যিক হতে পারলে কি আর ভাই জীবনের এই পর্যায়ে পড়ে থাকি।
যাই হোক ওই সময় ঝাউবনের ভিতরটায় হাঁটতে খুব ভয় করছিল কিন্তু ভালো লাগার অনুভূতিটা এখন হচ্ছে।
ধন্যবাদ আপনাকে।
চমৎকার ভাবে গুছিয়ে লিখেছেন। ইসমাইলদের কষ্টের শেষ নেই। এত কষ্ট করে তারা সবজি উৎপন্ন করে। কিন্তু সবজির ন্যায্যমূল্য পায়না তারা।আগে থেকে যদিও যোগাযোগ ব্যবস্থার বেশ উন্নতি হয়েছে দেশে। তারপরে এখনো এই ধরনের জায়গা রয়ে গিয়েছে যেখান থেকে লোকালয়ে আসতে অনেক কষ্ট করতে হয়। ঘন ঝাউবন দেখলে এমনিতেই ভয় করে। আমার কাছে সবসময় মনে হয় এর ভিতর সাপ থাকতে পারে। এজন্যই এ সমস্ত জায়গা আমি সব সময় এড়িয়ে চলি। আপনি তো অনেক সাহস করে এর ভেতর দিয়েই গিয়েছেন। সব কিছু মিলিয়ে বেশ ভালো ছিলো। ধন্যবাদ আপনাকে।
ভাইয়া আমার মনে আছে আপনি" ইসমাইলের আত্মহত্যা" পোস্টটি পড়ে ছিলেন। সেদিন থেকে উনার সাথে আমার খুব ভালো একটা সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। নদীর জেগে ওঠা চরে যে সবজি চাষাবাদ করেছে আমাকে সেখানে নিয়ে গিয়ে ব্যাগ ভর্তি করে পটল ও করলা তুলে দিয়েছেন। কি বলবো সেগুলো খেতে অত্যন্ত সুস্বাদু ছিল।
গ্রামীণ জীবনের কিছু ফটোগ্রাফি দেখে সত্যি অনেক ভালো লাগলো। আর ছবির সাথে কথাগুলো খুব গুছিয়ে লিখেছেন। আর কাশফুলের নতুন নাম শুনলাম😁
ওইটা কাশফুলের নতুন নাম না ভাই। গাছ গুলো দেখতে একইরকম কিন্তু কাযাইয়ের রস আখের রসের মতো সুস্বাদু। চরাঞ্চলে এই কাযাইয়ের গাছগুলো পাওয়া যায়।
ধন্যবাদ আপনাকে।
ধনচে গাছের বেশ চাহিদা রয়েছে আমাদের এদিকে। স্থানটির প্রেমে পরে গেলাম। চলে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে। গাছের মাঝ খান দিয়ে মেঠো পথ চলে গেছে। সুন্দর বর্ননা দিয়েছেন লেখার মাধ্যমে। এমন জায়গায় ভয় লাগাটা স্বাভাবিক। আপনার লেখা পড়তে পড়তে মনে হচ্ছিল আমি ঠিক ঐ জায়গায় চলে গেছি। দারুন ছিল ছবি গুলো। ভাল থাকবেন ভাই ধন্যবাদ।
অনেকদিন পর নদীর মাঝে জেগে ওঠা চরে ঝাউবনে কিছুক্ষন সময় পার করে আমার খুব ভাল লেগেছিল। ঝাউবনের ভেতর দিয়ে হাঁটতে আমার বেশ ভয় করছিল কিন্তু ভালোলাগার অনুভূতি গুলো এখন হচ্ছে।
ধন্যবাদ আপনাকে।
ইসমাইল ভাইয়ের সবজি বাগান দেখে খুবই ভালো লাগছে। আর আপনি খুব সুন্দর করে অনেক কথা গুছিয়ে লিখেছেন খুব ভালো লাগছে আপনার পোস্টটি। তবে ধনচে গাছ আসলে আগে দেখেছি কিন্তু এটার নাম আগে হয়তো জানা ছিল না। কিন্তু আপনার পোস্টের মাধ্যমে জানা হলো খুবই ভালো লাগছে। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে
ধনচে গাছ হয়তো আপনার এলাকায় অন্য নাম থাকতে পারে। আমাদের এইদিকে খড়ির জন্য চরাঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে ধনচে চাষ হয়।
আজকের পোস্ট খুব ইউনিক ছিল এবং আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে। আর আমার কাছে ঝাউবন দেখতে দারুন লাগে। আর এরকম ফটোগ্রাফি দেখতে সত্যি খুব ভালো লাগে। সর্বশেষে যেটা বলবো ইসমাইল ভাইয়ের সবজি বাগান দেখে খুবই ভালো লাগলো। অসংখ্য ধন্যবাদ আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য। আপনার জন্য শুভকামনা রইল।
আসলেই আমার কাছে এইটা অন্যরকম এক অনুভূতি ছিল। নদী ভাঙ্গনের ফলে ইসমাইল ভাইয়ের দুঃখ দুর্দশার কথা শুনে খারাপ লেগেছিল। পাশাপাশি নদীকে কেন্দ্র করে তাদের জীবিকা নির্বাহের পথ তৈরি হয় এটা দেখে খুব ভালো লেগেছে।
বাস্তবতার নিরিখেগল্পটি আমার কাছে বেশ ভালো লাগলো। পুরো গল্পটি কৃষকের বাস্তবতার ওপর ভিত্তি করে। শুভকামনা আপনার জন্য।
প্রখর রৌদ্রে কষ্ট করে আমি শুধু দেখার জন্যই নৌকায় পার হয়ে সেই চরে চলে গিয়েছিলাম।
এই সিরিজের সবগুলো পর্ব ই আমি পড়েছি। আসলে ইসমাইল দের কষ্টের শেষ নেই। তবুও তারা কত বড় মনের মানুষ।
ঝাউ বনের ভেতরে খুব ভালোই ভয় পেয়েছিলে বুঝলাম। আর শেয়ালের চিতাবাঘ হয়ে যাওয়ার ঘটনাটি শুনে খুব মজা লাগলো। তবে শেয়াল ও কিন্তু কামড় দেয়।
খুব সুন্দর উপস্থাপনা ছিল। ধন্যবাদ এই নদীর চরের এই ঘটনাগুলো আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।
ভয় নিয়ে ঝাউ বনের ভেতর হাঁটার পর যখন ঐ লোকটির দেখা পেলাম তার মুখে সত্য ঘটনা জানার পর মনে মনে আমার অনেক হাসি পাচ্ছিল। এটা আমিও ভাবছিলাম শিয়াল লোকমুখে ঘুরতে ঘুরতে কিভাবে চিতাবাঘ হয়ে গেল।