বাস্তবতার নিরিখে পর্ব -২ || 10% beneficiary to @shy-fox.

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

হ্যালো আমার বাংলাব্লগের বন্ধুরা আসসালামু আলাইকুম/আদাব। সবাই ভালো আছেন এবং সুস্থ আছেন আশা করছি। আমিও ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ। সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে আমার ব্লগ লেখা শুরু করছি।

20220523_225637.jpg

প্রথম পর্ব

ইসমাইল ভাইয়ের সঙ্গে নৌকা যোগে নদী পার হয়ে চরের মধ্যে প্রবেশ করার পর আমার চোখ কপালে উঠে গেল। বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে প্রচুর সবজি চাষাবাদ দেখে আমার খুব ভালো লাগলো। সেখানে বসে আমি অনেকক্ষণ এই সবজি নিয়ে সবজির বাগান নিয়ে কিভাবে নদীভাঙ্গন হয়েছে তা বিস্তারিত জানার চেষ্টা করলাম। নদী ভাঙ্গনের কথা শুনে আমার খুব খারাপ লাগলো। আমরা যেখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম আজ থেকে কয়েক বছর আগেও সেখানে তার ভাষ্যমতে ২৫০-৩০০ পরিবারের বসবাস ছিল। এক বছরের মধ্যে নিমিষেই ধরলার প্রবল স্রোতে সব ঘরবাড়ি সহ আবাদি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়।

নদী ভাঙ্গনের ফলে সেই এলাকার লোকজন সর্বস্ব হারিয়ে অনেকে অন্যত্র বাড়ি করেছে। আবার অনেকের কোন খোঁজ খবরই পাওয়া যায়নি তারা জীবিকার সন্ধানে হয়তো অন্য কোথাও পাড়ি জমিয়েছে। আমরা যেখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম সেখান থেকেই বর্তমান যে নদী পাড় সেটা আনুমানিক ৫ কিলোমিটার হতে পারে। এত বড় এলাকা ঘরবাড়িসহ সমস্ত আবাদি জমি এখন নদী গর্ভে। ইসমাইলের কথা শুনে যেটা জানতে পারলাম নদী ভাঙ্গনের ফলে তাদের যেরকম ক্ষতি হয়েছে। অন্যদিকে আবার কিছুটা ভালোও হয়েছে যেমন এই জমিতে এখন তারা সবজিসহ বেশ কয়েক প্রকার ফসল ফলাতে পারছে। অথচ নদী ভাঙ্গনের পূর্বে তাদের এই জমিগুলো প্রায় অনাবাদি ছিল। জমিগুলোতে পলিমাটির তুলনায় বালুর পরিমান বেশী ছিল তাই জমি গুলোতে তেমন চাষাবাদ করতে পারেনি।

20220523_224550.jpg

নদী তীরবর্তী মানুষদের জন্য নদী একদিকে যেমন অভিশাপ অন্যদিকে নদি আবার তাদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে আসে। নদী ভাঙ্গনের পূর্বে তাদের জমিগুলো একদম অনাবাদি ছিল। এখন নদী ভাঙ্গনের ফলে মাঝখানে যে চর জেগে উঠেছিল সেই চরগুলোতে এখন প্রচুর পলিমাটি জমেছে। এই উর্বর জমিতে তারা এখন বিভিন্ন প্রকার সবজি সহ ধান, পাট এবং ধনছে নামে এক প্রকারের খড়ি চাষবাদ করে। আমার সঙ্গে কথা বলতে বলতে এক পর্যায়ে ইসমাইল ভাই তার লাগানো পটলের ক্ষেতের মধ্যে ঢুকে পড়ল। এবং এই পটল চাষ নিয়ে আমার সাথে বিভিন্ন প্রকারের সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে আলোচনা করতে লাগলো। আজকে সকালে তার পটলের ক্ষেত থেকে কয়েক মন পটল তুলেছে বিক্রি করার জন্য। কিন্তু কয়েকদিন থেকে বৃষ্টিপাতের কারণে আশানুরূপ মূল্য না পাওয়ায় তার মনটা একটু খারাপ। কথা বলতে বলতে এক পর্যায়ে ব্যাগের মধ্যে বেশকিছু পটল তুলে নিয়ে আমার হাতে ধরিয়ে দিল।

20220523_224630.jpg
20220523_224656.jpg

আসলে নদীর মতই বিশাল এদের মন আমার সাথে কথা বলতে বলতে পটলের ব্যাগটা হাতে ধরিয়ে দিয়ে। আবার করলার ক্ষেতে ঢুকলো করলা তোলার জন্য। এবং আমাকে বলতে লাগল আমার লাগানো দেশি করলা খেয়ে দেখবেন অনেক সুস্বাদু। আমি তাকে ডেকে বললাম ইসমাইল ভাই আমার এসব প্রয়োজন নেই। আপনি আমাকে দেখতে নিয়ে এসেছেন এটাই আমার জন্য যথেষ্ট দেখে আমার খুব ভালো লাগলো আপনার জীবন যুদ্ধের কর্মকান্ড দেখে। সেসব শোনার পাত্র সে নয় করলা তুলতে লাগলো এবং আমাকেও ডাকলো আসেন একসঙ্গে করলা উঠাই। আমি লক্ষ্য করলাম ছোট ছোট করলা তুলতে অনেক সময় লাগছে তাই এই রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে থেকে কষ্ট না করে আমিও তার সঙ্গে তুলতে লাগলাম।

20220522_154622.jpg
20220522_224341.jpg
20220522_224414.jpg

কয়েকদিন বৃষ্টি হওয়ার পর আবার আজকে সকালেও এক পশলা বৃষ্টি হয়েছে। তারপরেই রৌদ্রোজ্জ্বল চকচকে আবহাওয়া সকালে বাড়ি থেকে বের হতেই আমি সেই রোদের তেজ অনুভব করছিলাম। এমনিতে অনেকক্ষণ থেকে রোদের মধ্যে হেঁটেছি তারপর নদীর চরে যেখানে কোন প্রকার গাছ নেই। শুধু মনে হচ্ছে মাথার দুই হাত উপর থেকে রৌদ্রের তাপ ছড়াচ্ছে প্রচণ্ড গরমে যা ঘামতে ঘামতে আমার ডিহাইড্রেশন হওয়ার অবস্থা। কেমন যেন মাথা ঘুরতে লাগলো এমতাবস্থায় এখানে আমার পানি খাওয়ার কোন উপায় নেই। যা দেখা যাচ্ছে শুধু নদীর পানি সেটা আমার পক্ষে খাওয়া সম্ভব নয়। আমি বুঝতে পারলাম যেভাবে গা ঘামছে কিছু না খেলে হয়তো আমি অজ্ঞান হয়ে যাব তাই আমার কিছু খাওয়া দরকার। এদিক ওদিক তাকাতে হঠাৎ করে আমার এই গাছটি চোখে পড়লো। ছোটবেলায় যখন গ্রামের বাড়িতে যেতাম সেখানে কাজিনদের সঙ্গে নদীতে মাছ ধরতে যেতাম। সেই সময় এই গাছ গুলো চিবিয়ে রস খেতাম। রসগুলো খেতে খুব মিষ্টি আখের রসের মত। সেই গাছ গুলো তুলে চিবিয়ে রস খেতে লাগলাম খুব দ্রুতই আমার শরীরে এনার্জি ফিরে আসলো।

20220523_225727.jpg

নদীর যেহেতু খুব সন্নিকটে ছিলাম তাই মনে হল নদীর পানিতে একটু মাথাটা ভিজিয়ে নিলে ভালো হবে। তাই বেশি কিছু চিন্তা না করে নদীর পানিতে নেমে হাতমুখ ধুয়ে নীলা। প্রচন্ড রোদের মধ্যেও পানি গুলো বেশ ঠান্ডা হাত মুখ ধোয়ার পরে আমার বেশ ভালই লাগলো। আমার শরীর বেশি খারাপ লাগার কারণে ইসমাইল ভাইয়ের দেয়া পটল ও করলা কিছুটা কমিয়ে ব্যাগটা ছোট করে নিলাম। কারণ প্রচন্ড রোদের মধ্যে এই ভারী ব্যাগ বহন করার ক্ষমতা এখন আমার নেই।

চলমান।

বন্ধুরা আজকের জন্য এখানেই শেষ করছি। খুব শীঘ্রই পরবর্তী পর্ব নিয়ে আবার আপনাদের সামনে হাজির হবো ইনশাল্লাহ। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন।

ডিভাইসস্যামসাং গ্যালাক্সি A-10
ফটো@mayedul
লোকেশনw3w location

Logo-1.png

3DLAmCsuTe3bV13dhrdWmiiTzq9WMPZDTkYuSGyZVu3GHrVMeaaa5zs2PBqZqSpD3mqpsYSX3wFfZZ5QwCBBzTwH9RFzqAQeqnQ3KuAvy8Nj1ZK1uL8xwsKK6MgDT8xwdHqPK76Y63rPyW9N4QaubxdwM3GV2pD.gif

Sort:  
 2 years ago 

রোদে অনেকটা অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন শেষে বুঝতে পারলাম। নদীর পানিতে হাত মুখ ধুয়ে ভাল করেছেন তা না হলে খারাপ আরও বেশি লাগত। আর এত বিশাল একটা নদী সেখানকার পানি একটু স্পর্শ করবেন না নদি পাড়ে গিয়ে তা কি হয় নাকি? ভাল ছিল আজকের লেখা। পরবর্তী লেখার জন্য অপেক্ষায় রইলাম

 2 years ago 

নদীতে হাত মুখ ধোয়ার আগে যদি আমি ওই গাছের রস চিবিয়ে না খেতাম তাহলে মনে হয় সেন্সলেস হয়ে পড়তাম।

গতকালের জেরে ,আজকের ছবি গুলো আরও এক মাত্রা সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে সহায়ক হয়েছে বলে আমার মনে হয়। চালিয়ে যান পর্ব ।দেখতে থাকি আপনার ছবি।

 2 years ago 

ধন্যবাদ ভাই
সুন্দর মন্তব্য করে উৎসাহ দেয়ার জন্য।

আমার লেখায় আপনি উৎসাহ পেয়ে থাকলে সেটা আমার বোনাস প্রাপ্তি ।দোয়া করবেন।

 2 years ago 

নদীর পারে হাটতে কিংবা নদী দেখতে আমার খুব ভালো লাগে।আসলে নদী ভাঙ্গনে অনেকেরই ক্ষতি হয়। আর যখন নদীতে চড় জাগে তখন কিন্তু মানুষ এতে অনেক ফসল দিয়ে খেয়ে থাকে আজকে আপনি সেরকমই কিছু দৃশ্য আমাদের সাথে শেয়ার করেছেন খুব ভালো লাগছে আপনার লেখাগুলো এবং ফটোগ্রাফি গুলো ধন্যবাদ আপনাকে।

 2 years ago 

নদী ভাঙ্গন কারো জন্য অভিশাপ আবার কারো জন্য জীবিকার সহায়ক হয়।
ধন্যবাদ আপনাকে আমার পোস্টে এসে সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।

 2 years ago 

আসলেই নদীর পাড়ের মানুষ জনের মন নদীর মতোই বিশাল হয়। তা না হলে বৃষ্টিপাতের কারণে সবজির আশানুরূপ মূল্য না পাওয়া সত্বেও তাজা তাজা সবজি গুলো তোমাকে দিত না। এসব লতাপাতাও‌ মে চিবিয়ে খাওয়া যায় সেটা তো আগে জানতাম না।
আজকের লেখাটা পড়ে অনেক ভালো লাগলো। ধন্যবাদ তোমাকে শেয়ার করার জন্য। শুভকামনা রইল।

Coin Marketplace

STEEM 0.32
TRX 0.11
JST 0.034
BTC 66569.64
ETH 3235.92
USDT 1.00
SBD 4.31