আমার স্মৃতির পাতা থেকে দুঃসাহসী এক অভিযান ||নবম পর্ব||
হ্যালো আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা আসসালামু আলাইকুম/আদাব। সবাই ভালো আছেন এবং সুস্থ আছেন আশা করছি। আমিও আল্লাহর অশেষ রহমতে ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ। সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে আমার ব্লগ লেখা শুরু করছি।
যাইহোক সময় মতো বাসস্ট্যান্ডে চলে এসেছিলাম। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর গাড়ি ছেড়ে দিল। ঘন্টাখানেকের মধ্যে আমাদের বাস পাহাড়ি অঞ্চলে প্রবেশ করলো। মেঘালয় অংশে আমরা প্রবেশ করতেই মনে হল অন্য আরেকটি রাজ্যে পৌঁছে গিয়েছি। আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ দিয়ে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। কিছুক্ষণ পর পর বিভিন্ন স্টপে বাস থামছে আর বিভিন্ন রকম উপজাতি গাড়িতে উঠানামা করছে। উপজাতিদের দেখে মনে হচ্ছে আমরা অন্য একটি রাষ্ট্রে চলে এসেছি। তবে মেঘালয়ের বাজারগুলোতে রাস্তার দুই ধারে গারো উপজাতি মেয়েদের ফলের ঝুড়ি নিয়ে বসে থাকা দৃশ্যগুলো খুব ভালো লাগলো। গাছ থেকে টাটকা ছেঁড়া কমলা, আপেল সহ বিভিন্ন রকম ফল আমি কখনো স্বচক্ষে দেখিনি। ফলগুলোর সঙ্গে তখনো তাজা পাতা ও ডাল লেগে আছে। টাটকা ফলমুলের সতেজতা আমাকে মুগ্ধ করেছে। ফরমালিনমুক্ত টাটকা ফল দেখে আমার তখনই খেতে ইচ্ছা করলো।
আমি বাজারে নেমে টাটকা কিছু ফলমূল কিনতে চাইলাম। কিন্তু আমার সাথে বসা মিনিকা আমাকে নিষেধ করল। সে বলল সামনে আমরা যে বাজারে নাস্তা করতে নামবো সেখানে এর চেয়ে ভালো মানের ফল পাওয়া যাবে। ওহো আপনাদের তো বলাই হয়নি আমরা সফরসঙ্গী চারজন ছিলাম। প্রথমদিকে অবশ্য পরিকল্পনা ছিল কামরুল, আমি আর বাপ্পি ঘূরতে যাব। পরে মিনিকাও আমাদের সঙ্গে যেতে চাইলো। মনে মনে ভাবলাম চারজন হলে ভালই হবে ঘুরতে গেলে দল যত ভারি হবে ততই বেশি মজা। বেশ কিছুক্ষণ সম্ভবত ৩০ থেকে ৪০ মিনিট গাড়ি চলার পর আমরা একটি বাজারে নাস্তা করার জন্য নামলাম। কারণ ভোরবেলা গাড়ি ছেড়ে দিয়েছিল ঠিকমতো কেউ নাস্তা করে বেরোতে পারেনি। তাই এখানে প্রতিনিয়ত নাস্তার বিরতি দেয়া হয়।
আমরা যে হোটেলে নাস্তা করলাম সেই হোটেলটি একটি গারো মহিলা ক্যাশ টেবিলে বসেছিল। মেঘালয় রাজ্যে এসে এই জিনিসটাই বেশি চোখে পড়ছে। সমস্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও দোকানে শুধু মহিলারাই দায়িত্ব পালন করে। এর আগে এই বিষয়টা তোর আমি লিখেছিলাম যে গারোরা নারী প্রধান পরিবার। এদের পরিবারের সমস্ত দায়-দায়িত্ব নারীদের উপর তারা পুরুষদের বিয়ে করে বাড়িতে নিয়ে আসে। শপিং মল থেকে শুরু করে চটি দোকান সব জায়গাতেই গারো নারীদের দেখতে পেয়েছি। আমরা হোটেল থেকে নাস্তা খেয়ে বেরিয়ে আসলাম, আমি টাটকা ফলের লোভ সামলাতে পারলাম না। টাটকা কিছু আপেল ও কমলা কিনলাম খেতে কিন্তু দারুণ মজা পেয়েছিলাম।
বাংলাদেশে আসার পর যখন মামাদের সামনে ইন্ডিয়ার বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ানোর গল্প করলাম তখন মামা ওই হোটেলের কথা আমাকে বলল। আমি বললাম হ্যাঁ আমরা ওই হোটেলেই নাস্তা করেছি। কি আশ্চর্য ব্যাপার মামার কাছ থেকে জানতে পারলাম সেই গারো মহিলা নাকি আমার নানি হয়। আমার মায়ের নানা বাড়ি ইন্ডিয়ার গোয়ালপাড়ায় শুধু আমার নানি বাংলাদেশে আছে আর সমস্ত আত্মীয় স্বজন ইন্ডিয়াতে আমার মায়ের মামা একজন গারো মহিলাকে বিয়ে করেছেন যিনি ওই হোটেলের মালিক। আমি মনে মনে একটু আফসোস করলাম আগে যদি জানতে পারতাম তাহলে অনেক মজা হত। গারো নানি পেয়ে একটু মজা ও খুনসুটি করা যেত। কি আর করা এখন আফসোস করা ছাড়া কিছু করার নেই।
দূরত্ব অল্প হলেও পাহাড়ি পথ বেয়ে আঁকাবাঁকা রাস্তায় গাড়ি চলতে অনেক সমস্যা হয়। তাই পৌঁছতে অনেকটা সময় লেগে গিয়েছিল। আমার ধারনা ছিল হয়তো দুই ঘণ্টার মধ্যেই পৌঁছে যাব কিন্তু তিন ঘন্টার অধিক সময় লেগেছিল। তুরা পাহাড়ে বাসস্ট্যান্ডে এসে গাড়ি পার্কিং করার দৃশ্য দেখে আমার ভয় লেগে গেল। পাহাড়ি অঞ্চলে সমতল ভূমি পাওয়া অত্যন্ত কষ্টসাধ্য ব্যাপার। তাই বাসস্ট্যান্ড গুলোও সমতল ভূমিতে করা সম্ভব হয়নি। বাসের সামনের অংশ থেকে পেছনের অংশ অনেক নিচুতে। তাই বাসগুলো আটকে রাখার জন্য পেছনে বড় কাঠের টুকরো চাকার নিচে দিয়ে রাখা হয়।
মেঘালয় রাজ্যের পশ্চিম গারো পাহাড় জেলায় তুরা একটি শহর এবং পৌরসভা। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে তুরার উচ্চতা প্রায় ১২০০ ফুট। এখানে ছোট বড় অনেকগুলো ঝরনা আছে। তুরার প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছি। পাহাড়গুলো দেখে মনে হচ্ছিল একটার পর একটা সারিবদ্ধভাবে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। আর মাথার উপর মেঘ যেন প্রতিনিয়ত আমাদের সঙ্গে খেলা করছিল। একটু দূরে উঁচু পাহাড়ের যে টিলা আছে সেখানে গাছগুলো কালো মেঘে ঢেকেছিল। উঁচু এই ধরনের পাহাড়ে যখন তখন বৃষ্টি হয় আবার কিছুক্ষণ পরেই চনমনে রোদ।
স্ট্যান্ডের পাশেই একটি সুন্দর চিড়িয়াখানা আছে। চিড়িয়াখানায় ঘুরে আমরা বাপ্পির এক ফুপাতো ভাইয়ের বাসায় যাব। বাপির ফুফাতো ভাই তুরায় সরকারি জব করে। চিড়িয়াখানা থেকে কিছুটা দূরে ভাইয়ের বাসা পায়ে হাঁটা পথ তাই বের হয়ে হাঁটতে শুরু করলাম। প্রচন্ড রোদে ঘেমে গিয়েছিলাম, তারপর হঠাৎ করে মুষলধারে বৃষ্টি একদম কাকভেজা হয়ে গেলাম। ১০ মিনিটের মত মুষলধারে বৃষ্টি হওয়ার পর মেঘগুলো সরে গেল তারপর আবারো রোদ। হাঁটতে হাঁটতেই প্রায় গা শুকিয়ে গিয়েছিল প্রচন্ড রোদে। বাপ্পির ফুফাতো ভাইয়ের বাসার পাশেই অনেক বড় একটি ঝর্ণার পানি প্রবাহিত যাওয়ার নদী। দেখে খুব ভালো লাগলো।
বন্ধুরা আজ আর লিখছিনা। অন্য কোনদিন অন্যকিছু অভিজ্ঞতা আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে আসবো। আজকের জন্য বিদায় নিচ্ছি। সবার জন্য শুভকামনা। আল্লাহ হাফেজ।
সত্যি বলেছেন ভাইয়া মেঘালয়ের বাজারগুলোতে রাস্তার দুই ধারে গারো উপজাতি মেয়েদের ফলের ঝুড়ি নিয়ে বসে থাকা দৃশ্যগুলো খুব ভালো লেগেছে আপনার জেনে অনেক ভালো লাগল । আসলে ভাইয়া পাহাড়ি অঞ্চলে সমতল ভূমি পাওয়া অত্যন্ত কষ্টসাধ্য ব্যাপার। তুরার প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখে আপনি মুগ্ধ হয়েছেন জেনে অনেক ভালো লাগল। আমার স্মৃতির পাতা থেকে দুঃসাহসী এক অভিযান গল্প পড়ে অনেক ভালো লাগল।
আপনার বর্ণনা অনেক সুন্দর।আপনার বর্ণনার গুণে মনে হচ্ছে আমি আপনার সাথে মেঘালয়ে যাচ্ছি।অসাধারণ ভাবে লিখেছেন। আর চিন্তা করুন কতটা কাকতালীয় ব্যাপার,আপনি অজান্তেই সেখানে একজন আত্মীয়র সাথে মিলিত হয়েছেন,যদিও জানতেন না উনি আপনাদের আত্মীয়। অনেক ভাল লাগল আপনার ভ্রমণ অভিজ্ঞতা।পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।