আমার স্মৃতির পাতা থেকে দুঃসাহসী এক অভিযান ||অষ্টম পর্ব||
হ্যালো আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা আসসালামু আলাইকুম/আদাব। সবাই ভালো আছেন এবং সুস্থ আছেন আশা করছি। আমিও ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ। সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে আমার ব্লগ লেখা শুরু করছি।
যাইহোক চা চলে আসলো, খেয়ে দেখলাম আসলেই অনেক ভালো হয়েছে খেতে। আমার এভাবে ঘরে বসে থাকলে পোষাচ্ছে না। বাইরে গিয়ে ঘুরতে মন ছটফট করছে। কামরুল কিছুটা ভীতু টাইপের ছেলে তাই ঘুরতে যাওয়ার ইচ্ছা খুব কম। আমার বাইরে যাওয়ার ইচ্ছা দেখে মিনিকা আমার সঙ্গে যেতে যেতে রাজি হলো। এক্ষেত্রে বাইরে ঘুরতে এসে মিনিকার সঙ্গ আমার খারাপ লাগলো না। এই দিকটায় আসাম ও মেঘালয় রাজ্য খুব কাছাকাছি। পূর্ব দিকে সম্ভবত এক কিলোমিটার গেলেই মেঘালয় রাজ্য পাওয়া যায়।
আমরা যেদিকটায় গিয়েছিলাম গারো পাহাড়ের পাশে ছোট্ট একটি ঝর্ণা প্রবাহিত হচ্ছে। ছোট পাহাড় তাই ঝর্ণার পানি প্রবাহ কম। পাহাড় যত বড় হয় ঝর্ণাও তত বড় দেখতে পাওয়া যায়। আমরা অনেকক্ষণ ঝর্ণার পাশে বসে গল্প করতে থাকলাম। আস্তে আস্তে আমাদের মধ্যে একটি সুন্দর সম্পর্ক গড়ে উঠতে লাগলো। বেশ ভালো সময় অতিবাহিত করলাম। অনেকটা সময় পেরিয়ে গিয়েছে কিছুক্ষণ পর সন্ধ্যা নেমে আসবে। তাই আর দেরি না করে বাড়ির দিকে রওনা দিলাম।
শহরে এসে একটু চা খেতে চাইলাম তাই মিনিকা আমাকে ওদের বাজারের পাশে একটি স্টলে নিয়ে গেল। বুন্দিয়া ও ভুজিয়া খেয়ে চা অর্ডার করলাম। মাটির পেয়ালায় চা চলে আসলো। আমার জীবনে প্রথম মাটির পেয়ালায় চা খাওয়া। খেতে ভালো লাগলো কিন্তু অন্যরকম একটি স্বাদ, আমরা বাসায় যেরকম দুধ চা খাই তার থেকে স্বাদ একটু ভিন্ন। মিনিকাকে জিজ্ঞাসা করলাম রহস্য কি, সে আমাকে বলল এটা আমুলের চা। সবকিছু মাথার উপর দিয়ে চলে গেল শুধু হ্যা সূচক মন্তব্য করলাম।
বাসায় ফিরে রাতের খাওয়া দাওয়ার পর ঘুমাতে যাওয়ার জন্য উপরের ঘরে চলে গেলাম। পরের দিন বিএসএফের বিয়ে খাওয়ার জন্য যেতে হবে। অনেক দূরের পথ তাই বাসা থেকে বলল তাড়াতাড়ি বের হতে হবে। এদিকে কামরুল বাপ্পির সঙ্গে বাইরে কোথায় যেন গিয়েছিল। আমি আর কামরুলের জন্য অপেক্ষা না করে ঘুমাতে গেলাম। বিছানার শোয়ার কিছুক্ষণ পর মিনিকা আমার রুমে চলে আসলো গল্প করার জন্য। কাঠের দোতলা বাড়ি উপর তলায় দুটি রুম আমি যে রুমে থাকি তার পাশের রুমেই মিনিকা থাকে।
মিনিকাকে দেখে আমি প্রথমে একটু অপ্রস্তুত হয়ে গিয়েছিলাম। পরে অবশ্য গল্প করতে ভালই লাগছিল, একা একা কামরুলের জন্য অপেক্ষা করার চেয়ে গল্প করাই ভালো। কিন্তু আশ্চর্য গল্প করতে করতে মিনিকা আমার মাথার কাছে এসে বসলো। আপনার আবার বিষয়টা অন্যভাবে নিয়েন না ও আসলেই অনেক ভালো মেয়ে ছিল। তবে আমার প্রতি একটু দুর্বলতা লক্ষ্য করেছিলাম। কিছুক্ষণ পর বাপ্পি ও কামরুল বাইরে থেকে চলে আসলো। আমরা সবাই একসঙ্গে মিলে বিয়ে বাড়িতে যাওয়ার পরিকল্পনা করতে লাগলাম।
পরের দিন সকালবেলা তাড়াতাড়ি উঠে বিয়ে বাড়িতে যাওয়ার জন্য তৈরি করে নিলাম। আমার এই গল্পের শুরুতে বলেছিলাম আমরা চোরাই পথে বাংলাদেশ থেকে ইন্ডিয়া আসার পথে জুতা জোড়া ভুলে রেখে এসেছিলাম। কিন্তু এখন বিয়ে বাড়িতে যাওয়ার জন্য ভালো জুতা তো লাগবেই। সেটা অবশ্য আমাদের কিনতে হয়নি খালু আমাদের বাজারে নিয়ে গিয়ে দুজনকে দুই জোড়া জুতা কিনে দিলেন। আমরা সবাই মিলে বিয়েবাড়িতে পৌঁছে গেলাম। মানকারচর থেকে গোয়ালপাড়া মোটামুটি চার ঘন্টার রাস্তা। দূরত্ব হিসেবে সময় একটু বেশি লাগে কারন মাঝে অনেকটা পাহাড়ি পথ।
আমি যেরকমটা ভয় পেয়েছিলাম সেরকম কিছু ঘটেনি বিয়ে বাড়িতে। টেবিলে যখন খেতে বসলাম তখন আমাদের সঙ্গে বেশ কিছু বিএসএফ সদস্য বসে ছিলেন। ডেকোরেশন খুব ভালো ছিল কিন্তু আমার কাছে একটু আশ্চর্য লেগেছে। আশ্চর্যের বিষয় ছিল পাতার প্লেট, খুব সুন্দর করে শুকনা পাতা দিয়ে প্লেট তৈরি করা হয়েছিল। কৌতুহল নিয়ে জানতে চেয়েছিলাম এগুলো কিসের পাতা কিন্তু এখন আর সেটা মনে নেই। যাইহোক খুব ভালোভাবেই বিয়ে শেষ করে বাসায় ফিরে এসেছিলাম।
পরের দিন খুব ভোরে উঠতে হবে ফজরের আযানের পরপরই রওনা দেয়ার কথা। গন্তব্য অনেক দূর মেঘালয় রাজ্যে ঘুরতে যাওয়া। তুরা পাহাড় ছাড়াও ইচ্ছা আছে মেঘালয় রাজধানী শিলং পর্যন্ত ঘুরে আসার। পরবর্তী পর্বে তুরা ও মেঘালয়ের রাজধানী শিলং যাওয়ার অভিজ্ঞতা শেয়ার করব।
বন্ধুরা আজ আর লিখছিনা। অন্য কোনদিন অন্যকিছু অভিজ্ঞতা আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে আসবো। আজকের জন্য বিদায় নিচ্ছি। সবার জন্য শুভকামনা। আল্লাহ হাফেজ।
আপনার আমার স্মৃতির পাতা থেকে দুঃসাহসী এক অভিযানের প্রতিটি পর্ব পড়তে সত্যি খুব ভালো লাগে। আজকে অষ্টম পর্ব আমাদের মাঝে উপস্থাপন করেছেন। আগামী পর্বের জন্য অপেক্ষা রইলাম। আশা করি মেঘালয় এবং শিলং
যাওয়ার অভিজ্ঞতা খুবই চমৎকারভাবে আমাদের মাঝে শেয়ার করবেন। আপনার অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই।
দুঃসাহসী বলছি এই কারণে, পাসপোর্ট ছাড়া চোরাই পথে ইন্ডিয়া গিয়েছিলাম। চোরাকারবারিদের সাথে তবে সম্ভাব্য কোন জায়গায় ঘুরতে বাদ রাখিনি। একটা দিনও বাসায় বসে থাকি।
বাহ্ দারুন তো, আমি হয়তো কিছু পর্ব মিস করে গেলাম। সত্যিই বেশ দুঃসাহসিক অভিযানের গল্প এটা । তবে মিনিকা কিন্তু হেরে গিয়ে গুরু দন্ড পেয়ে বেশ খুশি ছিল। চা বেশ ভালই তৈরি করে বলছিলেন।
সামনের পর্বে মেঘালয় রাজ্যের গল্পটা আশাকরি পড়তে দারুন লাগবে। চেষ্টা করবো পরবর্তী পর্ব পড়ার।
আসলেই চোরাই পথে ইন্ডিয়া ভ্রমণ বেশ দুঃসাহসিক অভিযান ছিল আমার। এখন তো এরকমটা কল্পনাই করতে পারিনা। আসলে বয়স কম থাকলে বিপদের ভয় থাকেনা। তবে ঘুরেছিলাম কিন্তু অনেক জায়গায়, সম্ভবত ১২ দিন ছিলাম।
আমার মামাবাড়ি আসামে।তাই মানিকাচর, গোয়ালপাড়া নামগুলো বেশ চেনা। যদিও যাওয়া হয় নি। আপনার গল্পের সব পর্ব যদিও পড়ি নি। এটা পড়েই বেশ ইন্টারেস্টিং লাগলো।
চোরাকারবারিদের সঙ্গে লুকিয়ে সেবার ইন্ডিয়ায় গিয়ে বেশ ভালোই করেছিলাম। তখন বয়স কম ছিল তাই সম্ভাব্য বিপদের কথা মাথায় আসেনি। এখন সেই সময় গুলোর কথা মনে করতেই গা শিউরে উঠে।