প্রথমেই একটা বিষয় জানিয়ে রাখি আজকে থেকে দুই তিনটা দিন আমি বন্যা কবলিত এলাকায় কাজ করব। সে কারণে কয়েকটা দিন মাঝে মাঝে নেটওয়ার্কের বাইরে থাকতে হবে। আবার হয়তো ফিরে আসবো নেটওয়ার্কের মধ্যে। এভাবেই যাওয়া আসার মধ্য দিয়েই দুই তিনটা দিন পার করব। তাই আশঙ্কা করছি আমার অ্যাক্টিভিটিস কিছুটা কম হতে পারে। তবে এখানকার কাজের মাঝেই দিনশেষে ঘুরে বেড়ানোর কিছু দৃশ্য আমি কমিউনিটিতে শেয়ার করার চেষ্টা করব।
কর্মসূত্রেই বন্যা কবলিত এই অঞ্চলগুলোতে আমাকে যেতে হয়েছে। বিশেষ করে ওই অঞ্চলের আমার যে দুজন কলিগ রয়েছে তাদের সমস্যার কারণে আমি জুন মাসের এখন পর্যন্ত ক্লোজিং করতে পারিনি। তাই বাধ্য হয়েই দুই তিনটা দিন মার্কেটে থেকে একটু ড্রাইভ দেওয়ার চেষ্টা আরকি। আসলেই আমার এলাকায় এবারের বন্যা পরিস্থিতি বেশ ভয়াবহ। ইতিমধ্যে মাঝখানে ৫-৭ বিরতি দিয়ে দ্বিতীয় বারের মতো বন্যা আঘাত আনে।
প্রচুর বৃষ্টিপাত উজানের ঢল আসলে এগুলো সবই অজুহাত। বন্যা পরিস্থিতি এতটা খারাপ হওয়ার পেছনে আমার মানুষেরাই প্রত্যক্ষভাবে দায়ী। আমরা নির্বিচারে বৃক্ষ কর্তন করে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করছি। অপরদিকে নদ-নদী গুলোর সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত না করার কারণে নদীর গভীরতা একদম কমে গিয়েছে। ফলে নদীর পানি প্রবাহ এবং ধারণ ক্ষমতা একেবারেই শূন্যের কোঠায়। তাই বর্ষা মৌসুমে সামান্য বৃষ্টিপাতের কারণে নদীর নাব্যতা না থাকায় নিম্নঞ্চল গুলো খুব দ্রুতই প্লাবিত হয়ে যায়।
ঠিক আছে এখন এসব কথা থাক নৌকা ঘাটে চলে এসেছি এখন আমার গন্তব্যের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করি। খুব ভয়ে ভয়ে ছিলাম অটোতে উঠার পরপরই বৃষ্টি শুরু হয়েছিল। যদি এরকম বৃষ্টি অব্যাহত থাকে তাহলে নৌকা পার হওয়া খুবই দুষ্কর হয়ে যাবে। যাক শেষ পর্যন্ত অটো থেকে নামার সময় বৃষ্টি বেশ খানিকটা কমে গিয়েছিল। কিন্তু তখনো গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। তাই নৌকা ঘাটে চায়ের দোকানে বসে চা খাচ্ছি আর ওপাশ থেকে নৌকা আসার জন্য অপেক্ষা করছি। কিছুক্ষণ বৃষ্টি হওয়ার দরুন নৌকা চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কারণ খেয়া ঘাটের এই নৌকা গুলোতে ছাদ থাকে না।
যে চায়ের দোকানে বসে চা খাচ্ছিলাম ঠিক নদীর উপরেই এবং নদীর দিকে আলাদা একটি দরজা আছে। আমি সেই দরজায় দাঁড়িয়ে চায়ের কাপ হাতে নিয়ে মাছ ধরা দেখছি। কতদিন এইভাবে মাছ ধরা দেখি না এইভাবে মাছ ধরা প্রচলন প্রায় উঠেই গিয়েছে খুব একটা চোখে পড়ে না। এখানে দাঁড়িয়ে লক্ষ্য করলাম এইভাবে মাচ ধরা বেশ কষ্টকর। হঠাৎ করে একবার উপরে বাঁধা বাঁশটা খুলে গিয়েছিল পড়ে দেখলাম উপরে উঠে একাই সেটা বেঁধে নিল। নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে এই লোকগুলোর কর্মচাঞ্চল্য দেখে বেশ মজা লাগছিল।
আমার মত অনেকেই নদী পার হওয়ার জন্য নৌকার অপেক্ষা করছে। এরকম বন্যা পরিস্থিতিতে সর্বস্তরের লোকজনের বেশ কষ্ট হয়। স্কুলগামী ছেলে মেয়েরাও সকাল বিকাল এই নৌকা পার হয়ে যাওয়া আসা করে। আমরা সবাই যেখানে দাঁড়িয়ে খেয়া নৌকার জন্য অপেক্ষা করছি গত বছর রাস্তা সহ এই জায়গাটা নদী ভাঙ্গনের ফলে নষ্ট হয়ে যায়। যার কারনে পুরা বন্যা মৌসুমে এখানকার লোকজন খেয়া নৌকায় যাতায়াত করে।
অবশেষে বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর নৌকা চলে আসলো। অপরদিকে যে নৌকা দেখা যাচ্ছে সেই নৌকাটি গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ থানার যাওয়ার জন্য প্রস্তুত। সবাই মিলে নৌকায় উঠে যাত্রা শুরু করলাম। নৌকা পার হয়ে দ্রুত আমার কাজগুলো সেরে নেওয়ার জন্য চেষ্টা করতে হবে। কারণ নদী এলাকার যাতায়াত এই সময় আমার খুব একটা ভালো লাগে না কারন যখন তখন বৃষ্টি শুরু হয়। তাছাড়া আমি আবার সাঁতার জানিনা হা হা হা।
বন্ধুরা আজ আর লিখছিনা। অন্য কোনদিন অন্যকিছু অভিজ্ঞতা আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে আসবো। আজকের জন্য বিদায় নিচ্ছি। সবার জন্য শুভকামনা। আল্লাহ হাফেজ।
চলমান...।
![Logo-1.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmbZYNxy7yACEKsx9y5jEoHEvabbVJuaPaTqiEciHLh398/Logo-1.png)
![3DLAmCsuTe3bV13dhrdWmiiTzq9WMPZDTkYuSGyZVu3GHrVMeaaa5zs2PBqZqSpD3mqpsYSX3wFfZZ5QwCBBzTwH9RFzqAQeqnQ3KuAvy8Nj1ZK1uL8xwsKK6MgDT8xwdHqPK76Y63rPyW9N4QaubxdwM3GV2pD.gif](https://steemitimages.com/0x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmeNW8WGqB2SscxBbm243ErNeLe1aTY8yLYdZGXGZgGfeS/3DLAmCsuTe3bV13dhrdWmiiTzq9WMPZDTkYuSGyZVu3GHrVMeaaa5zs2PBqZqSpD3mqpsYSX3wFfZZ5QwCBBzTwH9RFzqAQeqnQ3KuAvy8Nj1ZK1uL8xwsKK6MgDT8xwdHqPK76Y63rPyW9N4QaubxdwM3GV2pD.gif)
আপনার এই পোস্ট দেখেই বোঝা যাচ্ছে বন্যাকবলিত এলাকায় অনেক ঘুরাঘুরি করেছেন আপনি খুব কাছ থেকে তাদের দুঃখ দুর্দশা দেখেছেন এটা জেনে খুবই ভালো লাগলো। সেই সাথে কিছু সুন্দর ফটোগ্রাফিও তুলে ধরেছেন ধন্যবাদ আপনাকে আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
এই সময়টাতে তারা আসলেই খুব কষ্টের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। অনেকেই বাড়িঘর ছেড়ে বাঁধের উপরে এসে আশ্রয় নিয়েছে।
বন্যাকবলিত এলাকায় না গেলেও আপনার তুলা আলোকচিত্রে কিছুটা উপলব্ধি করতে পারছি। বন্যা এমন একটি প্রাকৃতিক দূর্যোগ যা মানুষকে এক মুহুর্তে নিঃস্ব করে দিতে পারে। এই পরিস্থিতি থেকে যেন তার খুব তাড়াতাড়ি মুক্তি পান দোয়া করি।
একদম ঠিক বলেছেন গত বছর বন্যার সময় এই সমস্ত এলাকায় প্রচুর নদী ভাঙ্গনের দেখা দিয়েছিল। নিমিষেই ঘরবাড়ি সহ অসংখ্য ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়।