আমার স্মৃতির পাতা থেকে দুঃসাহসী এক অভিযান ||দশম পর্ব||steemCreated with Sketch.

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

হ্যালো আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা আসসালামু আলাইকুম/আদাব। সবাই ভালো আছেন এবং সুস্থ আছেন আশা করছি। আমিও আল্লাহর অশেষ রহমতে ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ। সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে আমার ব্লগ লেখা শুরু করছি।

নবম পর্ব

customs-douane-5230450_1920.jpg

আমরা চারজন চিড়িয়াখানায় কিছুক্ষণ ঘুরে বাপ্পির ফুফাতো ভাইয়ের বাসায় চলে গেলাম। অনেক ক্লান্ত লাগছিল তাই দুপুরে খাবার পর বিশ্রাম নেয়ার জন্য শুয়ে পড়লাম। বাসার ঠিক পাশ দিয়েই ঝর্ণাধারা প্রবাহিত হচ্ছে। সরু নদী কিন্তু প্রচন্ড স্রোত বিছানায় শুয়ে পানির কল কল শব্দ শুনতে পাচ্ছি। এরকম পরিবেশে কিছুতেই ঘরের মধ্যে মনকে আটকে রাখতে পারছি না। প্রকৃতির টানে বাইরে বেরিয়ে পড়লাম। কিন্তু সবাই এতটাই ক্লান্ত যে কেউ আমার সঙ্গী হতে চাইলো না। মনে পড়ে গেল সেই মহামূল্যবান একটি লাইন "যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলো রে"। আমিও একলা চলো নীতি অনুসরণ করে বাইরে বেরিয়ে পড়লাম।

এত কাছে থেকে ঝর্না আমার কখনো দেখা হয়নি। কি যে ভালো লাগছিল সেটা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। প্রকৃতির এই রূপ সৌন্দর্যে অনেকটা সময় মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলাম। নদীটির প্রশস্ত এখানে অনেক কম ৫০ ফুট হবে কিনা আমার সন্দেহ আছে। ঠিকমত স্মরণ করতে পারছি না। ব্রিজের উপর দাঁড়িয়ে ঝর্ণার পানি প্রবাহিত হয়ে যাওয়ার সৌন্দর্য উপভোগ করছি। হ্যাঁ এটারও অনেক সৌন্দর্য আছে। সরু নদীটি যেদিকে পাহাড় থেকে নেমে এসেছে সে দিকটায় অনেক দূর পর্যন্ত পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছি। দুই পাশে বড় বড় প্রস্তরখন্ড সারিবদ্ধ ভাবে সাজানো দেখে মনে হবে কেউ হয়তো নিজ হাতে সাজিয়ে রেখেছে। আর তলদেশে পানির স্রোতের নিচে সাজানো পাথরের সারি।

যেরকমভাবে কংক্রিটের ড্রেন তৈরি করা হয় ঠিক সেরকমভাবেই এই নদীটি প্রবাহিত হচ্ছে। নদীতে দুই পাশে এবং তলদেশে অনেক বড় বড় পাথর দিয়ে সাজানো। প্রকৃতির অপরূপ লীলা সাজানো-গোছানো এই নদীটি অত্যন্ত সুন্দর। ব্রিজের উপর দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে আমার মাথায় দুঃসাহসী এক চিন্তা চলে আসলো। মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম এই পাথরের উপর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে নদীর উৎপত্তি কোথায় সেটা দেখা যাক। আমার ধারণা ছিল ঝর্না খুব কাছেই হবে, কারণ যেভাবে পাথরের ভাজে নদী পরিবাহিত হচ্ছে তাতে খুব একটা দূরে হওয়ার কথা নয়। সেটা অবশ্য টিভিতে বিভিন্ন প্রোগ্রাম দেখে ধারণা করেছিলাম।

তাই ব্রীজ থেকে নেমে নদীর পাশ দিয়ে পাথরের উপর হাঁটতে শুরু করলাম। দু এক পা হাঁটতেই পেছন থেকে আমার নাম ধরে ডাকার আওয়াজ পেলাম। ঘুরে দেখি মিনিকা আমার দিকে ছুটে আসছে। এসে বলল আমিও যাব, আমি মনে মনে সঙ্গ পেয়ে একটু খুশি হলাম। অচেনা জায়গা আবার পাহাড়ি পথ নদীর পাশ দিয়ে হাটছি একটু গা ছমছম করছিল। কিন্তু বয়সটা ছিল সেই রকম, সকল প্রতিকূলতাকে অতিক্রম করে নতুন কিছু আবিষ্কার করা। নদীর উৎপত্তি ঝর্ণা আবিষ্কার করতে সামনে এগিয়ে যাচ্ছি। যতই সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি ততই যেন সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাচ্ছে।

ধীরে ধীরে বনভূমি গভীর হতে লাগলো। যতই গভীরে যাচ্ছি নদী ও নদীর তীরে পাথরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। মাঝে মাঝে পাথরগুলো অনেক পিচ্ছিল ছিল। যেদিক দিয়ে পানি প্রবাহিত হয় সেদিকের পাথরগুলো অনেক স্বচ্ছ। আমরা একে অপরের সাহায্য নিয়ে হাত ধরে অনেকদূর এগিয়ে গিয়েছিলাম। পাহাড়ি অঞ্চলে বন্য জীবজন্তুর ভয় থাকতে পারে। সঙ্গে জোক ও সাপের ভয় তো আছেই। তখন এই জিনিসগুলো মাথায় ছিল ঠিকই কিন্তু অজানাকে খুঁজে পাওয়ার ইচ্ছা ছিল প্রবল। হাঁটতে হাঁটতে সম্ভবত ২ কিলোমিটার পথ চলে এসেছিলাম। কিন্তু নদীর উৎপত্তি সেই ঝর্ণার খোঁজ পাচ্ছিলাম না। সেটা হয়তো আরো অনেক দূরে হবে।

আমি আরো যেতে চাইলাম কিন্তু মিনিকা আমাকে আর যেতে দিতে চাইল না। আমি হয়তো সম্ভাব্য বিপদ কি হতে পারে সেটা জানতাম না। কিন্তু মনিকা এ বিষয়ে আমার থেকে অনেক বেশি জানত তাই ওর কথার গুরুত্ব না দিয়ে পারলাম না। আমরা এতদূর থেকে এই বিষয়গুলো জানার কথা নয়। মিনিকা আমাকে বলল এরকমটা করতে গিয়ে এর আগে কি বিপদ হয়েছিল। সেই দিকে আমি আজকে যাচ্ছি না। ও অবশ্য আমাকে এই কাজগুলো থেকে প্রতিহত করার জন্যই এসেছিল। যাইহোক আমি আর কথা না বাড়িয়ে নদীর পথ ধরে উল্টো পথে ফিরে আসলাম। মিনিকা আর আমি ঝর্ণার উৎপত্তি খুঁজতে গিয়ে সেদিন অনেক রোমাঞ্চকর মুহূর্ত কাটিয়েছি।

ফেরার সময় অনেক বড় একটি পাহাড়ি সাপের সামনে পড়েছিলাম। এই একটাই প্রাণী যেটাকে দূর থেকে দেখলেও আমি খুব ভয় পাই। খাঁচায় বন্দি থাকা বাঘ দেখলেও আমি ভয় পাই না কিন্তু টিভিতে সাপ দেখলেও আমার ভয় লাগে। আমি ভয় পেয়ে দুহাতে বড় একটি পাথর তুলে সাপের দিকে ছুড়ে মারলাম। এটা দেখে সাপ জঙ্গলের ভেতর পালিয়ে গেল। আমরা খুব সাবধানে নদীর পাড় ধরে হেঁটে চলে আসলাম। ব্রিজের উপর দাঁড়িয়ে আবারও অনেকক্ষণ ঝর্নার সৌন্দর্য উপভোগ করেছিলাম। এখান থেকে কিছুতেই যেতে ইচ্ছা করছিল না

ব্রিজের উপর দাঁড়িয়ে থাকতেই হঠাৎ করে উল্টো দিকে তুরার উচু একটি টিলার দিকে চোখ পড়লো। অনেক উঁচু পাহাড় সেখানে জনবসতি গড়ে ওঠেনি সব সময় পাহাড়ি গাছ গাছালির মধ্যে মেঘমালা বিরাজ করে। খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম সেখানে যেতে চাইলে অনেক সকালে রওনা দিতে হয়। কারণ উঁচুতে উঠতেই তিন থেকে চার ঘন্টা লেগে যায়। এই বিকাল বেলা রওনা দিয়ে আর কোনভাবেই ফিরে আসা সম্ভব নয়। তাই আমি সেদিন যাওয়ার চিন্তা ছেড়ে দিয়েছিলাম। তবে পরের দিন উচুটিলায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। সে কারণেই ওই দিনে কার সঙ্গে যাব পরিকল্পনা করা হয়েছিল। অতঃপর পরের দিনের জন্য অপেক্ষা।

বন্ধুরা আজ আর লিখছিনা। অন্য কোনদিন অন্যকিছু অভিজ্ঞতা আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে আসবো। আজকের জন্য বিদায় নিচ্ছি। সবার জন্য শুভকামনা। আল্লাহ হাফেজ।

Logo.png

3DLAmCsuTe3bV13dhrdWmiiTzq9WMPZDTkYuSGyZVu3GHrVMeaaa5zs2PBqZqSpD3mqpsYSX3wFfZZ5QwCBBzTwH9RFzqAQeqnQ3KuAvy8Nj1ZK1uL8xwsKK6MgDT8xwdHqPK76Y63rPyW9N4QaubxdwM3GV2pD.gif

Sort:  
 2 years ago 

আপনার স্মৃতির পাতার দুঃসাহসিক অভিযান গল্পটি বেশ দারুন ছিল। মনে হয় সামনে আরো মজা অপেক্ষা করছে। তবে এই অভিযান গুলোর মধ্যে বিপদে হয় অনেক বড়। অনেক সাবধানতার সাথে পথ চলতে হয়। আপনি সাপ দেখে ভয় পেয়ে গেছেন, তবে আপনাকে যে আক্রমণ করেনি আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি। তবে এসব অভিযানে সঙ্গী বিহীন না যাওয়াটাই সবচেয়ে ভালো। অপেক্ষায় থাকলাম আগামী পর্বের জন্য, শুভেচ্ছা রইল ভাইয়া।

 2 years ago 

আসলে বয়স কম থাকলে তখন মনে নান রকম ইচ্ছা জাগে, অসাধ্যকে সাধন করতে মন চায়। যারা প্রকৃতি প্রেমিক তাদের কাছে পাহাড় , নদী ভালো লাগবে এটাই স্বাভাবিক। আপনাদের সাথে আমি থাকলে হয়ত আমিও যোগ দিতাম। তবে আপনার মত আমিও সাপ দেখে খুব ভয় পাই। ঘেন্না লাগে এই প্রাণিটা দেখলে। পরবিরতি পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।

 2 years ago 

ভাইয়া, আপনি একাই প্রকৃতির টানে বেরিয়ে এলেন ঘর থেকে এটা কিন্তু সত্যিই বেশ ভালো লেগেছে আমার।ঝর্ণার কলকল ধ্বনি মনে শীতলতা দান করে।তবুও আপনি একজন সঙ্গী পেলেন, অচেনা জায়গায় সাবধানে থাকাই ভালো।তাছাড়া ঝর্ণার পাথরগুলো বেশ পিচ্ছিল হয়।সাপকেও আমিও খুব ভয় পাই,আপনার লেখা পড়ে ভালো লাগলো।ধন্যবাদ ভাইয়া।

Coin Marketplace

STEEM 0.16
TRX 0.16
JST 0.028
BTC 68431.46
ETH 2457.08
USDT 1.00
SBD 2.60