আমার স্মৃতির পাতা থেকে দুঃসাহসী এক অভিযান ||শেষ পর্ব||

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

হ্যালো আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা আসসালামু আলাইকুম/আদাব। সবাই ভালো আছেন এবং সুস্থ আছেন আশা করছি। আমিও মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ। সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে আমার ব্লগ লেখা শুরু করছি।

দশম পর্ব

customs-douane-5230450_1920.jpg

ব্রিজের উপর দাঁড়িয়ে প্রবাহমান ঝর্ণা দেখতে দেখতে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছিল। অতঃপর বাসায় ফিরে সন্ধ্যায় হালকা নাস্তা করে বাইরে বেরিয়ে পড়লাম তুরা শহর ঘুরে দেখার জন্য। তোরা খুব বড় শহর নয় কিন্তু আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ হওয়ার কারণে ঘুরতে অনেকটা সময় লেগেছিল। তুরায় দুই পাহাড়ের মধ্যবর্তী স্থানে অনেক বড় একটি শপিংমল হয়েছিল। মলটি দেখতে অনেক চমৎকার ছিল। বিশেষ করে বড় বড় দুই পাহাড়ের মধ্যবর্তী স্থানে হওয়ার কারণে অন্য রকম এক সৌন্দর্যের সৃষ্টি করেছে। শপিংমলে হালকা কিছু কেনাকাটা করলাম কিন্তু দুঃখের বিষয় তাদের কোন ভাষা আমি বুঝতে পারিনি। ভাগ্যিস সাথে যে বড় ভাইকে নিয়ে গিয়েছিলাম সে গারোদের ভাষা বুঝতে ও বলতে পারে।

একটা পাহাড় পরেই অন্যরকম একটি বাজারের সন্ধান পেলাম। নামটাও একটু বিচিত্র রকমের "নাখাম বাজার" সেই বাজারের নাম। অনেক বড় এলাকা জুড়ে নাখাম বাজারের অবস্থান। তবে আশ্চর্যের বিষয় পুরো বাজার জুড়ে শুধু শুটকির দোকান। এখানে শুটকি ছাড়া অন্য আর কিছুই পাওয়া যায় না। আমরা সাধারণত শুটকির বাজারগুলোতে গেলে হালকা গন্ধ পাই। কিন্তু নাখাম বাজারে প্রবেশ করার সাথে সাথেই শুটকির দুর্গন্ধে আমার বমি হওয়ার উপক্রম। গারোদের শুটকি যত গন্ধ বেশি হবে ততই নাকি তাদের কাছে বেশি প্রিয় হয়। যাইহোক আমি আর বেশিক্ষণ এই পরিবেশে থাকতে পারি নাই। খুব দ্রুত সেখান থেকে বেরিয়ে অন্যদিকে চলে এলাম।

রাতের বেলা তুরা পাহাড়ে ঘুরতে খুব ভালো লাগলো। লাইটের আলোয় অন্যরকম এক সৌন্দর্য সৃষ্টি করেছিল। দূরে পাহাড়ের ঢালে বাড়ি ও দোকান পাটগুলোর মিটিমিটি আলো দেখে মনে হচ্ছিল এক ঝাক জোনাকির দল ঘুরে বেড়াচ্ছে। এরকম দৃশ্য সাধারণত আমরা দেখতে অভ্যস্ত নই। তাই আমার কাছে এত বেশি ভালো লাগলো যে আমি অনেকটা সময় দাঁড়িয়ে সেই সৌন্দর্য উপভোগ করেছি। খুব অল্প সময়ের মধ্যে শহরে অনেকটা জায়গা ঘুরে দেখা হয়েছিল। পরের দিন সকালে খুব ভোরবেলা পাহাড়ের উঁচু টিলায় ঘুরতে যাব। সেখানে পুরোটা পথ পায়ে হেঁটে উপরে উঠতে হবে। তাই রাত্রে বাইরে আর বেশি সময় নষ্ট না করে বাসায় ফিরে এসেছিলাম।

অতঃপর রাতে তাড়াতাড়ি খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম খুব ভোরবেলা উঠতে হবে যে। সকালবেলা নাস্তা খেয়ে পাহাড়ে উঠার জন্য বেরিয়ে পড়লাম। সঙ্গে আরও তিন জন ছিল, মেয়ে মানুষ নিয়ে গেলে রিস্ক হতে পারে তাই মিনিকাকে সঙ্গে নেয়ার ঝুঁকি নিলাম না। সঙ্গে কিছু খাবার ও পানি নিয়েছিলাম। পাহাড়ের টিলায় উঠতে অনেক সময় লেগে যাবে তাই হালকা কিছু খাবার ও পানি নেয়া আবশ্যক। যেহেতু অনেকটা পথ উপরে উঠতে হবে তাই ভারী কিছু নেয়া সম্ভব ছিল না। যাইহোক পাহাড়ে উঠতে শুরু করলাম। কিন্তু ঘন্টাখানেক হাঁটার পর আমি আর পায়ে কোন শক্তি পাচ্ছিলাম না। অর্ধেকটা পথ গিয়ে লাঠি কিনে নিলাম চারজনের জন্য চারটা। লাঠি বেয়ে উঠতে অনেকটা স্বাচ্ছন্দ বোধ করেছিলেন, কিন্তু তারপরেও বেশ কষ্ট হয়েছিল।

পাহাড়ের চূড়ায় উঠে সমস্ত কষ্ট নিমিষেই ভুলে গেলাম, হাতের কাছে মেঘ স্পর্শ করা যাচ্ছিল। চোখের সামনেই যে গাছ দেখতে পাচ্ছিলাম সে গাছগুলোতে মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছিল। মনে হয় সামনে হাত বাড়ালেই ধরা যাবে। ঘন্টাখানেকের বেশি সেখানে বসে প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করলাম। চারিদিকে তাকাতেই মনে হচ্ছিল পাহাড়গুলো একটার পর একটা সাজিয়ে রাখা। সবুজের মাঝে অসাধারণ এক সৌন্দর্যের সৃষ্টি করেছে। মনে হচ্ছিল পৃথিবীর সমস্ত সৌন্দর্য যেন এখানেই নিহিত আছে। আর বেশি দেরি করা সম্ভব ছিল না, আর একটু দেরি করলে পৌছতে পৌঁছতে সন্ধ্যা হয়ে যাবে। সেই ভয়ে তাড়াতাড়ি রওনা দিয়েছিলাম। তবুও নিচে পৌঁছাতে সন্ধ্যা প্রায় হয়ে আসছিল।

আমরা পরের দিনই তুরা থেকে ফিরে এসেছিলাম। শিলং যাওয়ার খুব ইচ্ছা ছিল কিন্তু সময় স্বল্পতার কারণে আর যাওয়া সম্ভব হয়নি। যদিও আমার খুব ইচ্ছা ছিল কিন্তু যাদের সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলাম তাদের ব্যস্ততার কারণে হয়নি। তাছাড়া তাড়াতাড়ি বাংলাদেশে ফিরে আসতে হবে এটাও মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল। কারণ বাড়িতে সবাইকে না বলে চোরাকারবারিদের সঙ্গে ইন্ডিয়া চলে এসেছিলাম। তাই আর বেশি সময় নষ্ট করা ঠিক হবে না। তুরা থেকে ফেরার দুদিন পরেই চোরাকারবারীদের সঙ্গেই আবার বাংলাদেশে প্রবেশ করি। ফেরার সময় তেমন অসুবিধা হয়নি সেদিন লাইন ঠিকমতো পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু সেই একই রকম বিপত্তি, গলা পর্যন্ত পানির যে ক্যানেল ছিল সে দিক দিয়েই ফিরতে হয়েছিল। অবশেষে জীবনকে বাজি রেখে অন্যরকম এক অভিজ্ঞতা নিয়ে বাংলাদেশে সুস্থভাবে ফিরতে পেরেছিলাম।

বন্ধুরা আজ আর লিখছিনা। অন্য কোনদিন অন্যকিছু অভিজ্ঞতা আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে আসবো। আজকের জন্য বিদায় নিচ্ছি। সবার জন্য শুভকামনা। আল্লাহ হাফেজ।

Logo.png

3DLAmCsuTe3bV13dhrdWmiiTzq9WMPZDTkYuSGyZVu3GHrVMeaaa5zs2PBqZqSpD3mqpsYSX3wFfZZ5QwCBBzTwH9RFzqAQeqnQ3KuAvy8Nj1ZK1uL8xwsKK6MgDT8xwdHqPK76Y63rPyW9N4QaubxdwM3GV2pD.gif

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.15
JST 0.029
BTC 60752.38
ETH 2453.49
USDT 1.00
SBD 2.63