সেই দিনগুলিও ছিল ভীষণ বন্যাকবলিত || পর্ব -১ ||
হ্যালো আমার বাংলাব্লগের বন্ধুরা আসসালামু আলাইকুম/আদাব। সবাই ভালো আছেন এবং সুস্থ আছেন আশা করছি। আমিও ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ। সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে আমার ব্লগ লেখা শুরু করছি।
ঘটনাচক্রে শহরের বাইরে এই দিকটায় আমার আজ কাজ পড়েছিল। শহর থেকে যখন বাইরের দিকে চলে আসলাম তখন ঘটনার আকস্মিকতা দেখে আমি রীতিমত হতবাক। প্রত্যেকটা বাড়িতে দেখলাম রীতিমত পানি উঠেছে। যোগাযোগব্যবস্থা একেবারে বিচ্ছিন্ন সব দিকে যাওয়ার জন্য নৌকা ছাড়া কোন মাধ্যম নেই। শহরের পূর্বদিকে এই অঞ্চল দিয়ে বেশ কয়েকটি নদী প্রবাহিত হয়। তারমধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য ব্রহ্মপুত্র নদ ও ধরলা নদী। প্রতিবছর এই অঞ্চলে প্রচুর বন্যা হয় এবং দীর্ঘদিন এ অঞ্চলের লোক গুলো বন্যার পানিতে কষ্ট ভোগ করে। মানুষের পাশাপাশি গবাদি পশুদের অনেক কষ্ট হয় চারিদিকে বন্যায় তলিয়ে যাওয়ার কারণে তাদের খাদ্যের যোগান দেওয়া অনেক কষ্টকর হয়ে পরে। নিম্নাঞ্চলের সমস্ত লোকজন ও গবাদি পশুর আশ্রয়ের একমাত্র স্থান সেই একমাত্র উচুঁ বাঁধটি।
আজকেও সকালে কিছুটা আকাশ পরিষ্কার দেখে মনে মনে একটু খুশি হলাম। মনে হচ্ছিল কাল থেকে হয়তো নদীর পানি কমতে শুরু করবে। কিন্তু আমার ধারণা কে মিথ্যা করে দিয়ে বিকাল থেকে আবারও মুষলধারে বৃষ্টি পড়া শুরু হয়েছে। সেইসাথে খোঁজ নিয়ে দেখলাম নদীর পানিও দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখন মনের মধ্যে একটা ভয় কাজ করছে এরকম ভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকলে আবারও সেই আগের মতো পরিস্থিতি তৈরি হবে কিনা। কয়েক বছর আগের সেই দিনগুলি আকস্মিক বন্যার কারণে এদিকে রাস্তাঘাট গুলো একেবারেই পানিতে ডুবে গিয়েছিল। সড়ক যোগাযোগ বেশকিছুদিন বিচ্ছিন্ন ছিল রাস্তার উপর দিয়ে বাস ও অটো রিক্সার বদলে নৌকা চলত।
সময়টা ছিল ২০১৭ সাল ওই সময়ে অনেক বড় বন্যা হয়েছিল।বন্যার সময় কালও অনেক দীর্ঘায়িত ছিল। যতটা না বৃষ্টিপাতের কারণে বন্যা পরিস্থিতি খারাপ হয় তার চেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে উজানের ঢল। সেই দিনগুলিতে বন্যা পরিস্থিতি এতটাই খারাপ ছিল যে আমি নিজেও অনেক ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। আমার শহরের কাছাকাছি শশুর বাড়ি দুই মেয়ের বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর তারা বাড়িতে একাই থাকেন। কয়েকদিন থেকে অনবরত মুষলধারে বৃষ্টি এবং উজানের ঢলের কারণে নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে থাকে। বন্যা অবশ্যম্ভাবী ভেবে শ্বশুর-শাশুড়ির খবর নেওয়ার উদ্দেশ্যে আমার স্ত্রী সন্তানদের সেখানে নামিয়ে দিয়ে আমি আমার কাজে চলে যাই। যাবার সময় বলে যাই দুপুরে খেতে আসবো না একেবারে সন্ধ্যার পর দেখা হবে। কিন্তু তখনও কি আর জানতাম অবস্থা এরকম ভয়াবহ হবে।
সবেমাত্র আমি জোহরের নামাজ আদায় করে মসজিদ থেকে বের হয়েছি। আর ভাবছি লাঞ্চটা করে নিয়ে বাকি কাজগুলো যত দ্রুত সম্ভব সম্পন্ন করে বাসায় ফিরব। ঠিক সেই সময় বাসা থেকে একটি রিং আসলো। আমি মোবাইল ফোনটা রিসিভ করতেই ওদিক থেকে যে শব্দগুলো শুনলাম সেটার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। ফোনের ওপাশের কথাগুলো আমাকে বেশ চিন্তিত করে তুলল। আমি আর লাঞ্চ করতে বসলাম না দ্রুত বাসার দিকে রওনা দিলাম মানে আমার শ্বশুর বাড়ির দিকে।
নদীর পানি সকাল থেকে নাকি খুব দ্রুত গতিতে বেড়ে চলেছে। আর শহর রক্ষার একমাত্র যে বাঁধ সেই বাঁধে ফাটল ধরেছে। এই বাঁধ ভেঙ্গে গেলে এর ভয়াবহতা কি হতে পারে সেটা ভেবেই আমার গা শিউরে উঠছিল। আমার শশুর বাড়ি থেকে অল্প কিছু দূরে সেই বাঁধ এর অবস্থান। এই বাঁধ ভেঙে গেলে বাড়িতে পানি উঠবে কিনা ? আর বাড়িতে যাওয়ার রাস্তায় পানি হলে আমি যেতে পারব তো ? এই ধরনের আরো নানান রকমের প্রশ্ন আমার মাথায় ঘুরপাক খেতে লাগল। প্রশ্নগুলো নিয়ে নাড়াচাড়া করতে করতে খুব দ্রুত বাড়ির দিকে রওনা দিলাম। এই বিষয় গুলো আমি পরবর্তী পর্বে তুলে ধরার চেষ্টা করব।
বন্ধুরা আজ আর লিখছিনা। অন্য কোনদিন অন্যকিছু অভিজ্ঞতা আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে আসবো। আজকের জন্য বিদায় নিচ্ছি। সবার জন্য শুভকামনা। আল্লাহ হাফেজ।
ডিভাইস | স্যামসাং গ্যালাক্সি A-10 |
---|---|
ফটো | @mayedul |
লোকেশন | w3w location |
বন্যা আসলে বলে কয়ে আসে না। 2017 সালের বন্যার কথা আপনি এখানে উল্লেখ করেছেন। তখন এত বন্যা ছিল আমি আসলে সেটা বুঝতে পারিনি। আপনার পোস্টটি দেখে আন্দাজ করতে পারলাম। তবে বন্যার মধ্যে সকল হোক ভালো থাকুক সুস্থ থাকুক এই দোয়াই করি
২০১৭ সালে আকস্মিক বন্যায় অনেকেরই ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল মাত্র এক রাতেই এত পানি হয়েছিল যে প্রধান সড়কগুলোতে নৌকা চলছিল।
এই সময়টা আমাদের প্রস্তুতির সাথে মোকাবেলা করতে হবে ভাই। এই সময় একদম হতাশ হবেন না , ইনশাআল্লাহ উপওয়ালা সব ঠিক করে দিবে । প্রতি বছরে বন্যায় অনেক মানুষ তার শেষ সম্বল হাড়িয়ছে । আমরা সবাই সিলেট এবং দেশের অন্যান্য বন্যা কবলিত এলাকা গুলোর জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা যানাই , যাতে তিনি সব কিছু আগের মত স্বাভাবিক করে দেয়। নিজের পরিবারের সদ্যসদের খেয়ারল রাখবেন ।
বন্যার্ত অসহায় মানুষদের সাহায্যার্থে আমাদের সকলের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ প্রয়োজন।
আপনার গল্প শুনে রীতিমত অবাক হয়ে গেলাম। জানি না আল্লাহ তাআলা কার কোপালে কি লিখে রেখেছেন। তবে আপনার গল্পটি পড়ে শিউরে উঠে, আষাঢ় মাসের আজকে ৫ তারিখ,এই পর্যন্ত বৃষ্টির দেখা পেলাম না। গত দুইদিন ধরে হালকা বৃষ্টি দেখেছি কিন্তু আতঙ্ক এবং কি সিলেটের ভয়াবহতা মিডিয়াগুলোতে দেখে শরীর শিউরে উঠছে। আর আমরা এদিকে গরমে শরীর জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে। গত দুইদিন থেকে আমাদের এখানে আবহাওয়া একটু শীতল। তবে আপনার কথা অনুযায়ী আপনাদের এলাকার যেভাবে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে এবং উজানের পানি মানুষকে বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছে সত্যিই আমি অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। আমি বন্যা দেখেছিলাম সেটা হচ্ছে ১৯৯১ এর বন্যা, যেটা সারা বাংলাদেশে মানুষের ঘরবাড়ি বাসস্থান গৃহপালিত পশু সব তলিয়ে গিয়েছিল। এছাড়া আমি এই পর্যন্ত আর কোন বন্যা দেখি নাই। তবে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বন্যা কবলিত মানুষদের চিত্রগুলো দেখেছিলাম। আর আফসোস করেছিলাম আল্লাহ তাদেরকে হেফাজত করুন। আপনার পরবর্তী গল্পের আশায় রইলাম, আশা করি আল্লাহ তা'আলা ভালো রাখেন এবং সুস্থ থাকবেন। আমাদের পাশে থাকবেন, আপনার প্রতি রইল ভালোবাসা অবিরাম।
বন্যার সময় মানুষের পাশাপাশি গৃহপালিত পশুরও অনেক কষ্ট হয়। গত কালকে দেখলাম বাঁধের উপর মানুষ এবং গরু-ছাগল একসঙ্গে রাত্রি যাপন করছে।
ছোট থেকেই দেখেছি মা বন্যা দেখলে খুবই ভয় পেত। সেই থেকে আসলে মার কাছ থেকেই মনে হয় যে ভয়টা টা শেখা। যেকোনো বন্যা দেখলেই খুবই ভয় লাগে সেটা হোক অনেক বেশি বৃষ্টি কিংবা বাতাস এছাড়াও অনেক বেশি পানি বন্যা। শুধু এটুকু দোয়া করতে পারি যে আল্লাহ সকলকে বন্যা থেকে হেফাজত রাখুক।
বন্যার সময় আসলে অনেক ভয় কাজ করে। আজকেও দুপুরের দিকে দুইটা ছোট বাচ্চা পানিতে পড়ে গিয়েছিলো। শুনলাম হাসপাতালে নিয়েছে কি যে হয় আল্লাহ জানে।
বন্যার কথা শুনলে আমার কাছে ভীষণ ভয় লাগে। বর্তমানে সিলেটের বন্যার বিষয়টা একদম অনন্য সাড়া ফেলছে। মানুষ যে কতটা কষ্টে আছে তা না দেখলে বোঝা সম্ভব নয়। আপনার আজকের বন্যার বিষয়টি শুনেও ভীষণ খারাপ লাগলো। কিন্তু সবথেকে বেশি খারাপ লাগলো আপনি লঞ্চ না করে ফোন পেয়ে আপনার শ্বশুর বাড়িতে চলে গেলেন। কিন্তু সেখানে কি হয়েছে তা জানার খুবই আগ্রহ রয়েছে। নিশ্চয়ই আপনার পরবর্তী পোষ্টের মাধ্যমে জানতে পারবো।
আসলে হঠাৎ করে এত পানি হওয়াতে বেশ সাড়া ফেলেছে। অথচ আমার অঞ্চলে প্রতিবছরই অনেক বন্যা হয়। প্রতিবছর হয় তো তাই লোকচক্ষুর আড়ালেই থেকে যায়।
বন্যা কবলিত এলাকা ছিলো, আপনি ঠিকই বলেছেন পুরাতন রেকর্ডে ভেঙে নতুন করে রেকর্ড তৈরি করছে এবারের বন্যা, জানি না সামনে কেমন হবে। আল্লাহ্ আমাদের হেফাজত করুন, -আমিন
বন্যা কবলিত সকল মানুষদের আল্লাহতালা যেন হেফাজত করেন এই প্রার্থনা করি।