অসুস্থ্যতা ও ভোগান্তির জীবন

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

আসসালামু আলাইকুম

কেমন আছেন বন্ধুরা ? আশা করি সবাই বেশ ভালই আছেন। আমিও আল্লাহর রহমতে বেশ ভালই আছি। তবে পারিবারিক কিছু সমস্যার কারনে মনটা বেশ খারাপ। আর এরই মধ্যে মাঝে মাঝে আপনাদের কাছে চলে আসি মনের কষ্ট গুলোকে ভাগাভাগি করে নিতে।


বেশ কয়েকদিন হলো ছোট ভাই একটু অসুস্থ্য । আর আমাদের দেশের ডাক্তারদের যে অবস্থা তাতে এক ডাক্তারের উপর ভরসা করা যায় না। তাই একজন ভাল ডাক্তারের সন্ধ্যান পেয়ে চলে গেলাম ধানমন্ডি। সেখানে একজন নাম করা প্রফেসার কে দেখাবো। কারন এই প্রফেসারের কাছে অপারেশন করিয়ে আমার মেঝ আপা আজ সুস্থ্য। তো বন্ধুরা সেদিন প্রফেসর সাহেব কে দেখাতে যেয়ে আমাদের কি বিরম্ভনা হয়েছে আজ আমি আপনাদের সাথে কিছুটা শেয়ার করবো। আমার বিভ্রান্তির কথাগুলো ‍শুনে হয়তো আপনাদেরও মেজাজ কিছুটা হলেও বিগরে যাবে। হা হা হা।

Add a heading (2).png

ছবি সোর্স
Made By-@maksudakawsar

যাইহোক, তো প্রফেসর সাহেব কে দেখানোর নিয়ম হলো আগের দিন সকাল ১১.০০ টায় তাকে দেখানোর জন্য সিরিয়াল দিতে হবে। এগারোটা তো এগারোটা। তার এক সেকেন্ড আগে ফোন করলেও সিরিয়াল নিবে না। সেখানে আবার সিরিয়াল নেওয়া হয় দুই সিফটে। একটি দুপুর ২টা হতে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত আর একটি সন্ধ্যা ৭.০০ হতে শুরু হয়। তো আমাকে জিজ্ঞেস করা হলে আমি কোন সিফটে দেখাতে চাই। আমি দুপুরের সিফট টাই পছন্দ করে নিলাম। আমাকে জানানো হলো আমার সময় বিকেল ৪.০০ টায়। নিয়ম মাফিক আমি আমার সেল ফোনে এপয়েন্টমেন্টের সিরিয়াল নাম্বার ও পেয়ে যাই। আমি তো একটু খুশি কারন যত তারাতারি প্রফেসর কে দেখিয়ে বাসায় আসতে পারি আমার জন্য ততই মঙ্গল।এদিকে পড়েছে আবার কুয়াশা। রাতে বাহিরে প্রচন্ড শীত থাকে। সব মিলিয়ে দুপুরে সিরিয়াল পাওয়ায় আমি একটু সস্থিও পেলাম।

পরদিন ছিল যদিও বৃহস্পতিবার তারপরও আমি অফিসে যাইনি। কারন আপনা হয়তো অনেকে জানেন যে, আমার সেজো ভাইয়ের স্ত্রী মারা গেছেন গত বুধবার। তো আমি প্রায় রাত ৯.০০ পর্যন্ত হাসপাতালে ছিলাম। রাত ৯.০০ টায় মৃত ব্যক্তিসহ সবাইকে বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়ে আমি আমার বাসায় ফিরে আসি। কারন প্রচুর ঠান্ডা পরায় সবাই বারন করলো। আবার আমারও একটু খারাপ লাগছিল। সারাদিন না খাওয়া। তাই আমি আর বাড়ি যাইনি। তবে ছোট ভাই কে তাদের সাথে পাঠিয়ে দিলাম। আর বলে দিলাম সকাল সকাল বাসায় ফিরে আসতে। কারন পরদিন বিকেল ৪.০০ টায় ডাক্তারের সিরিয়াল। এদিকে সব মিলিয়ে আমি বৃহস্পতিবার ছুটিতে ছিলাম।

একে তো মন খারাপ। আবার শরীর টাও তেমন ভাল না। পরদিন যথারীতি সময় মত ডাক্তারের চেম্বারে যাওয়ার জন্য আমার খুব টেনশন হচ্ছিল। তাই ছোট ভাই কে বার বার ফোন করে তড়িঘড়ি করে মুন্সীগঞ্জ হতে আসতে বলি। সেও খুব তড়িঘড়ি করে ঢাকায় আসে। তারপর আমরা ডাক্তার দেখাতে যাই। আমাদের সেখানে পৌঁছাতে প্রায় সন্ধ্যা ৭.০০ বেজে যায়। আমি তে খুব টেনশনে পড়ে গেলাম। মনে করলাম সকালের সিফট যদি শেষ হয়ে যায় তাহলে তো আর আজ ডাক্তার সাহেব কে দেখাতে পারবো না। কিন্তু সেখানে যেয়ে দেখি এক বিশাল ঘটনা। ডাক্তার সাহেবের এটেনডেন্ট বলেন উনি নাকি অপারেশনে ছিলেন। এইজন্য দুপুর সিফটে রোগী দেখা হয় নাই।আমরা যখন যাই তখন মাত্র সকাল সিফটের সিরিয়াল ৬ নম্বর চলে। তাহলে ভাবুন আমার ২৫ সিরিয়াল আসতে কত সময় লাগবে?

আমি ডাক্তার সাহেবের এটেনডেন্ট কে নিজের পরিচয় দিয়ে একটু অনুরোধ করলাম। দুর ছাই কে শোনে কার কথা। সেখানে নাকি ভিআইপি দের কেও একই ভাবে সিরিয়ালে থাকতে হয়। উনি আমার কোন কথাই শুনলো না।কি আর করার সিরিয়াস ইস্যু ডাক্তার তো দেখাতেই হবে। তাই অপেক্ষা করতে লাগলাম। এদিকে ছোট ভাই তো ইয়ং তাই তার রক্ত গরম। সে ডাক্তার সাহেবের এটেনডেন্ট কে অবজারভ করতে লাগলো। তার ও আমার কৌতহল কি হচ্ছে একটু বিষয়টা দেখার। কিছুক্ষণের মধ্যে বুঝতে পারলাম সিরিয়ালের বাহিরে অনেক লোক ঢুকনো হচেছ। তখন বিষয়টা এটেনডেন্ট এর কাছে জানতে চাইলে সে বলল এরা সবাই পুরানো আর অপারেশন এর রোগী।

কিন্তু কি আর করার অবশেষে রাত ১২.৪৫ মিনিটে সেই প্রফেসর মহাশয়ের দপ্তরে প্রবেশ করতে পারলাম। অবশেষে ডাক্তার সাহেব কে দেখিয়ে মনটা কিছুটা ভাল হয়ে গেল। আর আমরা যখন বাসায় ফিরলাম তখন প্রায় রাত ২’০০ টা। কিন্তু এখানেই শেষ নয় কিন্তু। আমি গতকাল আবার গিয়েছিরাম সেই ডাক্তার মহাশয় কে আর একজন পরিচিত রোগী দেখাতে। আর গতকালই আমি উদঘাটন করতে পারলাম কেন ডাক্তার সাহেব কেন ২৫ নম্বর সিরিয়াল পাওয়া একজন রোগীর ডাক্তার সাহেব কে দেখাতে দেখাতে রাত ১.০০ বাজে।

এবার আমাদের সিরিয়াল পড়ল ৪৭ নম্বর সিরিয়াল। ভাবুন তো ২৫ নম্বর সিরিয়াল যেতে যদি রাত ১.০০ বাজে তাহলে ৪৭.০০ নম্বর সিরিয়াল যেতে রাত কয়টা বাজবে। আর আমরা যখন সেখানে গেলাম তখন মা্ত্র চলে ১০ নম্বর সিরিয়াল। তাই আমরা একটু বুদ্ধি করলাম যে ডাক্তার সাহেবের এটেনডেন্ট কে কিছু অফার করে দেখি না সিরিয়াল টা আগে পাওয়া যায় নাকি। সেজন্য সেই এটেনডেন্ট এর পাশে আর একজন বসে থাকে । তাকে ইশারায় ঢেকে এনে বললাম ভাই আমরা তো অনেক দূর থেকে এসেছি। আমরা কিছু খরচ দেই আমাদের কে একটু আগে দেখানোর ব্যবস্থা করে দেন। সে অনায়াসে রাজি হয়ে গেল। কিন্তু ওমমা সে বলে কি, ডাক্তার সাহেবের ভিজিট যা তাই নাকি তাদের কে দিতে হবে। কম দিলে হবে। না। তাই সেদিন বুঝতে পারলাম যে ২৫ নাম্বার সিরিয়াল কিভাবে রাত ১.০০ টায় চলে যায়।

তারপর আমরা এসব বিষয় নিয়ে নিজেদের মাঝে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিলাম যত রাত হয় হউক কোথাও কোন উপরি দিয়ে সুবিধা নিবো না। এতে করে অন্য মানুষগুলো, যারা দূর দুরান্ত হতে এসেছে তাদের কষ্ট হবে। তবে সেদিন কিন্তু আর আমাদের রাত ২.০০ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়নি। সেদিন আমরা ১১.৩০ এর মধ্যে ডাক্তার দেখিয়েছি। কিন্তু কেন জানিনা। একমাত্র ‍উপর ওয়ালা বলতে পারেবে।

আসলে এদেশে এত এত সিস্টেম, এই সিস্টেমের যাতাকলে পরে সাধারণ আর অসহায় মানুষগুলো হয়ে পড়ে দিশেহারা। কোথায় যাবে মানুষ সরকারি হাসপাতালে নাকি বেসরকারি হাসপাতালে? অথচ মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলোর একটি কিন্তু এই চিকিৎসা। কি উত্তর আছে জাতির বিবেকের? আমরা আসলেই অসেত অসহায়।

কেমন লাগলো বন্ধুরা আপনাদের কাছে অসুস্থ্যতা আর ভোগান্তির জীবনের কিছু কথা? জানার অপেক্ষায় রইলাম।

❤️ধন্যবাদ সকলকে।❤️

@maksudakawsar

image.png

image.png

Sort:  
 2 years ago 

একদম ঠিক বলেছেন আপু। কথাগুলো পড়েই বুঝলাম ডাক্তারের কাছে গিয়ে সিরিয়াল আগে থাকার পরও কেন অনেকগুলো লোকজন আগেই পেয়ে যায়। আর এরকম অনেক ঘটনা আমার নিজ চোখের সামনে ঘটে যাওয়া।আমরা নিজেরাও যখন ডাক্তার দেখাতে গিয়েছিলাম তখন ১০ নাম্বার সিরিয়াল আসতে আসতে বিকেল তিনটা বেজে গিয়েছিল। যদিও সেই সিরিয়ালটা ছিল দুপুরে ১১টা বাজে।

 2 years ago 

আপু কি আর বলবো কেউ যেন এগুলো দেখার মতো নেই। মাঝে মাঝে মনে হয় চলে যাই অন্য দেশে।

 2 years ago 

এখন তো অনেকে ডাক্তার দেখাতে গিয়ে টাকা দিয়ে সিরিয়াল আগে করে নেই। আপনাদের অনেক কষ্ট হয়েছিল সত্যি রাত অব্দি অপেক্ষা করা খুবই কষ্টের ব্যাপার। আসলে টাইম থাকে একসময় কিন্তু অপেক্ষা করতে হয় ২-৩ গুণ সময় পর্যন্ত। অবশেষে ডাক্তার দেখাতে পেরেছেন তা জেনেই ভালো লাগলো। এখন তো এরকম ঘটনা অহরহ ঘটে যাচ্ছে।

 2 years ago 

কি আর বলবো আপু। আমার তো মনে হয় অনেক মানুষ এই ডাক্তার দেখানো ভোগান্তিতে ধুকে ধুকে মারাই যায়।

 2 years ago 

এখনতো ডাক্তারের কাছে যাওয়ার ফলে সহজে সিরিয়াল ও পাওয়া যায় না। অনেক ঘণ্টা পর্যন্ত অপেক্ষা করা লাগে। আমরা যদি সকালবেলায় ডাক্তারের কাছে যাই তাহলে বিকেল বেলায় বাড়ি ফেরা লাগে। আমাদের চোখের সামনে এখন তো এরকম ঘটনা বেশি দেখা যায়। যাই হোক তাহলে ঠিকমতো ডাক্তার দেখাতে পেরেছেন।

 2 years ago 

জি আপু অবশেষে সোনার হরিণ এর দেখা পেয়েছি।

Coin Marketplace

STEEM 0.16
TRX 0.15
JST 0.027
BTC 59944.92
ETH 2307.28
USDT 1.00
SBD 2.48