আবির || 10% Beneficiary To @shy-fox 🦊
আ মার বাংলা ব্লগের সকল বাংলাভাষী ব্লগার ভাই এবং বোনদের আমার সালাম এবং আদাপ। সবাই কেমন আছেন? আশা করি সবাই মহান সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে অনেক ভালো আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় এবং মহান সৃষ্টিকর্তার রহমতে অনেক ভাল আছি।
![]() |
---|
আবির বাবা মার একমাত্র ছেলে। বাবা মার অনেক আদরের ছেলে আবির, একমাত্র ছেলে বলে কথা। আবির স্কুল জীবন থেকেই পড়ালেখায় যেমন ভালো তেমন খুবই দুষ্টু। সে খুবই দুষ্টু তাতেকি এলাকার সবাই তাকে খুবই ভালোবাসে। আবিরের বাবা পেশায় একজন শিক্ষক এবং সে পড়াশোনা নিয়ে খুবই কড়া তাই হয়তো আবির পড়ালেখায় এতটা ভালো।
আর আমাদের সব বন্ধুদের মাঝে আবির ছিল সবথেকে রসিক মন-মানসিকতার। সে সবাইকে নিয়ে যেমন মজা করতো তেমনই সবাইকে সব সময় মজায় রাখতো। তাকে ছাড়া যেন আমাদের কোন আড্ডা জমতই না। আর সেও আমাদের ছাড়া কিছুই বুঝতো না। বাসা থেকে বের হলেই সবাইকে ফোন করতো আড্ডা দেয়ার জন্য আর আমরাও সবাই তার ডাকে হাজির হয়ে যেতাম, আমাদের এলাকায় এক চায়ের দোকান ছিলো আমরা চার বন্ধু সেখানেই সব সময় আড্ডা দিতাম। সেখানের স্মৃতিগুলো এখনো মনে পড়ে যায়। সেখানে আড্ডা হতো, গান হতো, মজা-ঠাট্টা সহ আরো কত কিছুই না হতো। সেই স্মৃতিগুলো এখন বাতাসের মতো চাইলেও আর ছুঁয়ে দেখতে পারিনা।
স্কুল জীবন থেকেই আবিরের মোটর বাইকের প্রতি আলাদা একটা টান ছিল। ভালো কোনো মোটরবাইক তার সামনে পড়লেই সে মোটরবাইকের দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকতো। আর যেকোনো মোটরবাইক সম্পর্কে তার ধারণার কথা কি বলব সে যেন সেই বিষয়ে আলাদা ডিগ্রী নিয়ে এসেছে, বাসায় অবসর সময়ে সে বুঝি শুধু এগুলো নিয়েই রিসার্চ করে। স্কুলে থাকতে সে তার বাবার কাছে অনেকবার মোটরবাইক কিনে চেয়েছিলো কিন্তু তখন তার বাবা তার এই ইচ্ছা পূরণ করে নি। বাবা কে তো তখন কিছু বলতে পারতোনা সব রাগ আমাদের সামনে এসে ঝারতো আর আমরা তার রাগ দেখে মজা নিতাম, কারন তার রাগের ভাবভঙ্গি গুলোও অনেক মজার ছিলো।
আমরা সবাই মজা নিতাম ঠিকই কিন্তু পরে আমরাই তাকে বুঝাতাম। আমাদের এক বন্ধু ছিলো নাম তার শাহী, সে নিজেকে সব সময় একটু পন্ডিত ভাবতো। সেই আবির কে বুঝ দিতো। বুঝ দিতে দিতে আমরা কখন কিভাবে যে আবার আড্ডায় মগ্ন হয়ে পরতাম বুঝতেই পারতাম না। এভাবেই আমাদের দিন গুলো কাটছিলো।
দেখতে দেখতে আদের এসএসসি পরিক্ষা শেষ হয়ে গেলো। আবির সহ বাকি সব বন্ধুরা সেই ছুটিতে গ্রামের বাসায় যায়। প্রায় অনেক দিন আমাদের দেখা হয় নি কিন্তু ফোনে ঠিকই কথা হয়েছিলো।
তারপর আবার সবাই এক এক করে ফিরে আসলো। এখন কলেজে ভর্তির পালা। আমরা সবাই এক কলেজেই ভর্তির জন্য চয়েজ দেই কিন্তু আমাদের এক বন্ধু আমাদের সাথে আমাদের কলেজে ভর্তি হতে পারে নি। তার এসএসসি এর ফলাফল একটু খারাপ হয়েছিলোতো তাই। তাতে কি আমাদের আড্ডা তো সেই চায়ের দোকানে আমরা বিকালে ঠিকই সেই চায়ের দোকানে একসাথে আড্ডা দিতাম।
এভাবেই দেখতে দেখতে আমাদের মাধ্যমিক পরীক্ষাও শেষ হলো। এবার আমাদের ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার পালা। ভেবেছিলাম এবার সবাই একসাথে থাকবো, কিন্তু তাতো হলোই না এদিকে আমাদের এলাকাও ভাগ হয়ে গেলো। সবাই আলাদা আলাদা বিভাগে, শুধু একজন আমার সাথে ছিলো তার নাম আদনান।
তারপর এভাবেই দিন চলছিলো। প্রথমের দিকে অনেক বেশী খারাপ লেগেছিলো। কিন্তু পরে কিছু দিন যাওয়ার পর মানিয়ে নিয়েছিলাম সবাই। মানিয়েতো নিতেই হতো। জীবন কি আর সব সময় নিজের ইচ্ছায় চলে? আসতে আসতে আমাদের কথাও কম হয়ে যাচ্ছিলো বুঝতে পারছিলাম সবাই সবার মত ব্যস্ত হয়ে পরছে। তবে মাঝে মাঝে আমরা গ্রুপ কলে সবাই আড্ডা দিতাম।
তারপর করোনার কারনে সবার ইউনিভার্সিটি বন্ধ হয়, তখন সবাই সবার গ্রামের বাসায় যায়। গ্রামের বাসায় যাওয়ার আগে আমরা সবাই একবার দেখা করেছিলাম৷ একসাথে সবাই ভালোই ঘোরাঘুরি মজা করেছিলাম।
সবাই গ্রামের বাসায় যাওয়ার পর একদিন সন্ধার দিকে আবির সবাইকে গ্রুপ কলে নিয়ে আসে। তাকে খুব খুশি খুশি লাগছিলো আমরা বার বার কারন জিজ্ঞাসা করছিলাম কিন্ত সে কোন মতেই বলছিলো না কারনটা। অবশেষে সে তার ক্যামেরায় আমাদের নতুন একটি মোটরবাইক দেখায় এবং অনেক খুশি হয়ে আমাদের বলে সে নতুন বাইক কিনেছে। আমরাও অনেক খুশি হয়েছিলাম। তারপর তার কাছে বাইক কেনার খাওয়া চাওয়াতে সে বলল করোনা কমে এলে সবাই বড়সড় করে একটা খাওয়া দেবে।
তারকিছু দিন পরেই আদনান এর কল আসলো। সে আমায় কাদো কাদো গলায় বার বার আবির আবির বলছিলো। আমি বার বার জিজ্ঞাসা করছিলাম কি হয়েছে। তারপর আদনান এর মুখ থেকে যে কথাটি বের হয়েছিলো আমি সেটা শোনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। আদনান আমায় বলে আবির ট্রাকের সাথে বাইক এক্সিডেন্ট করেছে আর তাকে হাসপাতালে নেয়ার আগেই নাকি সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছে। সত্যি খবরটি শোনার পর আমার পায়ের নিচ থেকে যেন মাটি সরে গিয়েছিলো। আমি তখনো বিশ্বাস করতে পারছিলাম না৷ এদিকে আবিরের গ্রামের বাসা অনেকটা দূরে আমাদের যাওয়ার কোন উপায় ছিল না।
করোনার ছুটির সময়ের দেখাইযে আবিরের সাথে আমাদের শেষ দেখা ছিলো আমরা এটা কখনো ভাবতেও পারি নি। তার স্কুল জীবনের বাইকের প্রতি তার আগ্রহই যে তার জীবন কেড়ে নেবে তা আমরা কখনো এটাও আমরা কখনো ভাবি নি। বাবার মার এক মাত্র সন্তান ছিলো আবির, তার বাবার মনের অবস্থাটা একবার ভেবেই দেখুন।
আসলে আমরা আজ আছি কাল নেই, কে কখন চলে যাবে এ কেউ বলতে পারবে না। যাইহোক আজ আর কিছু লিখছি না। সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন আর সব সময় সাবধানে চলাচল করবেন।
YouTube |
---|
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
![Heroism_3rd.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmRejDSNMUFmRz2tgu4LdFxkyoZYmsyGkCsepm3DPAocEx/Heroism_3rd.png)
গল্পের শেষটা এতটাই হৃদয়বিদারক যা সত্যিই মেনে নেয়া যায়না। আবিরের এভাবে চলে যাওয়াটা বাবা মার বুকের ভিতরে কতটা কষ্ট দিয়েছে তাই উপলব্ধি করছি। বাবা-মার একমাত্র সন্তান, আর সেই সন্তান যদি পৃথিবীতে বেঁচে না থাকে তাহলে বাবা মা কি নিয়ে বাঁচবে। আবিরের সড়ক দুর্ঘটনায় শেষ পরিণতি আমি নিজেও মেনে নিতে পারছিনা। পরিশেষে শুধু বলতে চাই আবিরের বাবা-মাকে আল্লাহ যেন ধৈর্য ধারণ করার ক্ষমতা দান করে এবং সেইসাথে আবিরও যেন পরপারে জান্নাতুল ফেরদৌস লাভ করে।
আসলেই মামা একদম ঠিল বলেছো। ভালো লাগলো তোমার মতামত পড়ে। ধন্যবাদ মামা। শুভ কামনা রইলো।
একটি দুর্ঘটনা কেড়ে নেয় মানুষের প্রাণ। বাবা-মা হারায় তাদের আদরের সন্তান। আসলে বাইক দুর্ঘটনা দিন দিন অনেক বেড়ে যাচ্ছে। আশা করছি সকলেই সচেতন থাকবে এবং সতর্ক থাকবে। আপনার লেখার শেষ অংশটুকু পড়ে খুবই কষ্ট পেলাম। আবিরের মৃত্যু আসলে মেনে নেওয়ার মতো নয়। পুরো বিষয়টি অনেক সুন্দর করে উপস্থাপন করার জন্য আপনাকে জানাচ্ছি ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ ভাই আমার পুরো গল্পটি পড়ার জন্য। আসলেই আজ কাল এক্সিডেন্ট অনেক বেরে গিয়েছে। আমাদের সবাইলে সাবধানে চলাচল করতে হবে।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
![default.jpg](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmNwBDPMPvL1yaKWTYF4wxyUmxWiEJgAy1WZWTJyCha5wE/jswit_comment_initial.w320.jpg)
Please check my new project, STEEM.NFT. Thank you!
আপনি শিক্ষনীয় একটি বিষয় আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। এরকম শিক্ষনীয় বিষয় বাংলা ব্লকে খুবই কমই পোস্ট হয়। আপনার পোষ্টটি পড়ে আমার চোখে পানি চলে আসছে। আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। শুভকামনা রইল।
ধন্যবাদ আমার পোস্টটি মন দিয়ে পড়ার জন্য। শুভ কামনা রইলো।
https://twitter.com/mahir4221/status/1528633163349512193?t=i9BzjywPPfvBrBfRxiIG3w&s=19
আসলে ভাই সত্যি বলতে এই কারণেই আমি নিজেও মোটর বাইক পছন্দ করিনা। যদিও সবকিছু উপরওয়ালার ইচ্ছা, তারপরও আমাদেরকে সাবধানে থাকতে হবে। প্রথম দিকে আপনার আবিরের গল্পটি পড়ে খুবই ভালো লাগছিল কিন্তু আপনার গল্পটি যখন পড়েছিলাম যদিও নিচের অংশে কি অবস্থা সেটা আমার জানা ছিল না। তারপরেও আমি কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেছি যে কোন একটা দুর্ঘটনা অবশ্যই ঘটেছে যখনই বলেছিলেন আবিরের বাইক খুব পছন্দ এর পরে বিষয়টা আমি ধারণা করেছিলাম। ভাই শেষ অংশ পড়তে গিয়ে আমার নিজের চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি। অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
আমিও বাইক জিনিসটি খুবই ভয় পাই। আর আপনি আমার পুরো গল্পটি মন দিয়ে পড়েছেন বুঝা যাচ্ছে। ধন্যবাদ ভাই এতো সুন্দর গঠনমূলক মতামত দেয়ার জন্য।
আজকাল মোটরসাইকেল অ্যাক্সিডেন্ট যেভাবে বেড়েছে তাতে কম বয়সী কাউকে মোটরসাইকেল চালাতে দেখলে এখন ভয় করে। মনে হয় এই বুঝি অ্যাক্সিডেন্ট হলো। এমন আবির আমাদের আশেপাশে প্রচুর রয়েছে। যারা সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়ে অকালে প্রাণ হারাচ্ছে। গল্পটি ভালই লিখেছেন। ধন্যবাদ আপনাকে।
আসলেই ভাই। আমাদের সবার উচিত সাবধানে চলাচল করা। ধন্যবাদ ভাই আপনার মূল্যবান মতামত দেয়ার জন্য। শুভ কামনা রইলো।
একটি দূর্ঘটনা সারা জীবনের কান্না।ছোট ছোট ছেলেদেরকে বাইক দিয়ে উল্টা পাল্টা চালানোর জন্য কত মানুষের যে প্রান গেলো।শেষের অংশটুকু খারাপ লাগলো।ধন্যবাদ
আসলে আবির ছোট ছিলো না। শুনেছিলাম ট্রাক চালকের দোষ ছিলো। ধন্যবাদ এতো সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।
আবির কে নিয়ে আপনার গল্পটি পড়ে খুবই খারাপ লাগলো। এমন ঘটনা আমাদের চারপাশে অহরহ ঘটছে। আসলে মোটরসাইকেল এক্সিডেন্ট এর মত অপ্রত্যাশিত এক্সিডেন্ট আর নেই। আমি জেনারেলি মোটরসাইকেল চালানো কি নিষেধ করি। আবির ছোটবেলা থেকেই তার মোটরসাইকেলের কেনার প্রতি ঝোঁক ছিল এবং তার জন্য সে বাবা মার সাথে অনেক সময় খারাপ ব্যবহার করেছে।বাইক কিনে দেওয়ার জন্য কিন্তু সে যখন মোটরসাইকেল কিনে নিল তখন তার জীবনে নেমে আসলো এ ঘোর অন্ধকার ।সেই সাথে পরিবারকে একা করে দিয়ে চলে গেল। এই ধরনের অপমৃত্যু থেকে বাঁচার জন্য আমাদের অবশ্যই সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। আপনি দারুন একটি গল্প আমাদের মাঝে তুলে ধরেছেন এত সুন্দর একটি হৃদয়বিদারক ঘটনা যা আমাদের সবাইকে কাঁদিয়ে চলে।
আসলেই আপু। তাই আমি মোটরসাইকেল মোটামুটি এভোয়েট করে চলি। যাইহোক ধন্যবাদ আপনার মূল্যবান মতামত দেয়ার জন্য।