রূপনগর দ্বীপ - দ্বিতীয় পর্ব (শেষ পর্ব)

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago
আজ বুধবার • ১৫ই অগ্রহায়ণ • ১৪২৯ বঙ্গাব্দ • ৩০ নভেম্বর - ২০২২


মার বাংলা ব্লগের সকল বাংলাভাষী ব্লগার ভাই এবং বোনদের আমার সালাম এবং আদাপ। সবাই কেমন আছেন? আশা করি সবাই মহান সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে অনেক ভালো আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় এবং মহান সৃষ্টিকর্তার রহমতে অনেক ভাল আছি।



mallorca-4744192.jpg

Pixabay Copyright Free Image Source



তারপর আমরা সেই আজব ধরনের মানুষেদের পাশ কাটিয়ে হোটেল খুঁজতে থাকি। হোটেল খুঁজতে খুঁজতে আমাদের সামনে এক পাগল বৃদ্ধলোক ছুটে আসে এবং আমাদের বলতে থাকে তোরা এখানে এলি কেন তোরা কেউ বাঁচবি না, এই কথাটি বারবার বলছিল আর উচ্চস্বরে হাসছিল। এই বৃদ্ধ লোকটির কথা শুনে আমরা প্রায় সকলেই ভীষণ ভয় পেয়ে গেলাম। কিন্তু ভয় পেলে তো চলবে না আমি সকলকে বললাম আরে ভয় পেয়ো না ও তো পাগল।

তারপর সেই লোকটিকে পাশ কাটিয়ে আমরা সামনের দিকে আরো এগিয়ে গেলাম। সামনে এগোতেই রূপনগর কটেজ এর সাইনবোর্ড দেখতে পেলাম। এই দ্বীপের মধ্যে এত সুন্দর কটেজ দেখে অবাক হয়ে গেলাম। তখন আমাদের ভয়টা একটু কেটে গেল। কিন্তু আমরা যখন কটেজের ভিতরে গেলাম সেই কটেজের ভেতরের স্টাফ গুলোও কেমন যেন আজব আচরণ করছিল। তখন নিলয় আমার কানে ফিসফিস করে জিজ্ঞাসা করল এগুলো সব মৃত মানুষ নয় তো? আমি হাসি দিয়ে তার কথা উড়িয়ে দিয়ে বললাম তুই কি পাগল হয়েছিস।

তারপর আমরা সেই কটেজের রিসিপশনে গেলাম এবং একটি রুম বুক করলাম। কটেজে রিসিভনিস্ট আমাদের বলল আপনারা আপনাদের রুমে যান আপনাদের জন্য রাতের খাবার পাঠিয়ে দেয়া হবে এই কথাটিও আমার কাছে কেমন যেন আজব আজব লাগলো। এই দ্বীপের কোন কিছুই আমার কাছে খুব একটা স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না। কি করবো এসেই যখন পড়েছি তখন ঘুরেফিরে তারপর এই বাড়ি ফিরব।

আমরা তারপর আমাদের রুমে চলে গেলাম। কিছুক্ষণের মধ্যেই আমাদের রাতের খাবারও চলে এলো বাহ কি সুন্দর সুস্বাদু সব খাবার। তারপর যে খাবার নিয়ে এসেছিল তাকে মাফি জিজ্ঞাসা করল এই দ্বীপের কোন দিকে আমরা ঘুরতে গেলে বেশি ভালো হবে সে এমন ভান করল মনে হয় সে মাফির কথা শুনেই নি। মাফি বলে উঠলো, কি আজব মানুষ রে বাবা।

তারপর আমরা সকলেই ফ্রেশ হয়ে খাওয়ার জন্য প্রস্তুত হলাম খেতে বসে আমরা বেশ গল্পগুজব করছিলাম তখনই নিলয়ের খাবার প্লেট থেকে পোকা মাকড় হেটে বেরোতে লাগলো নিলয় একদম ভয়ে চিৎকার করে তার প্লেটটি দূরে ঢিল দিল দিল। এগুলো দেখার পর আমরা আর কেউই ভালোমতো খেতে পারলাম না সব খাবারগুলো পাশেই রেখে দিলাম আর আমাদের সাথে নিয়ে আসা শুকনো খবর গুলোই আমরা খেয়ে নিলাম।

এখন ঘড়িতে রাত্রি বারোটা বাজে, আমরা সকলেই গানের আড্ডায় মেতে ছিলাম। আড্ডা চলতে চলতে কিছুক্ষণ পর সৃজন এবং রবিন বলে তোরা একটু থাক আমরা দুজন বাহিরে থেকে হেঁটে আসছি। কিছুক্ষণ পর তারা দুজন হাউ মাউ করে বাইরে থেকে দৌড়ে এসে আমাদের বলতে লাগলো আমরা শেষ ভাই আমরা শেষ, রবিনকে আমি জিজ্ঞাসা করলাম কি হয়েছে রবিন উত্তরে বলল বাহিরে গিয়ে দেখ এই কটেজ কটেজ নয় এ তো ভূতেদের আড্ডাখানা ঢোকার সময় আমরা কটেজ যেরকম দেখেছিলাম এখন একদমই সেরকম নেই আমরা তো এক পুরনো পোড়াবাড়ির ভিতর ঢুকেছি। এই শুনে তাড়াহুড়ো করে আমরা সকলেই বাহিরে বের হয়ে দেখি আসলেই আমরা ঢোকার সময় এই কটেজটি যেরকম দেখেছিলাম এখন একদমই সেরকম নেই ভাঙ্গা দেয়াল, দেয়ালে আগুনের পোড়া কালি নিচে পড়েছিল মানুষের কঙ্কাল।

আমরা সকলেই ভীষণ ভয় পেয়ে গেলাম এই ঠান্ডার রাতেও আমার গা বেয়ে ঘাম ঝরছিল। আমরা আর এক মুহূর্তও সেই কটেজের ভিতর দেরি না করে বাহিরে বের হয়ে পরি। বাহিরে বের হয়েও দেখি আশেপাশে সবগুলো বাড়িঘর আগুনে পোড়া কিছুই আর আগের মত নেই। আমরা সেখান থেকে জীবন বাঁচিয়ে সেই ঘাটের দিকে দৌড়াতে থাকি এই দ্বীপ থেকে আমাদের বেরোতেই হবে এখানে কোন কিছুই স্বাভাবিক নয়।

দৌড়াতে দৌড়াতে কিছুদূর এগোতেই আমরা সামনে গিয়ে থমকে দাঁড়ালাম, এদিপের সবগুলো মানুষ আমাদের পথ আটকে দাঁড়িয়েছে কিন্তু এখন তারা আর কেউই আগের মত দেখাচ্ছে না তারা সকলেই যেন আগুনে পুড়ে ঝলসে গিয়েছে। আমাদের বুঝতে দেরি থাকলো না এরা কেউই জীবিত মানুষ নয়। তারপর বুঝতে পারলাম এই দ্বীপের মানুষগুলো কোন এক সময় আগুনে পুড়ে মারা গিয়েছে।

আমরা আরো ভয় পেয়ে সবাই আলাদা আলাদা ভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলাম আমার সাথে শুধু রবিন ছিল, অন্য দিক দিয়ে আমরা পালাতে চেষ্টা করলাম কিন্তু না এদিকেও সেই আগুনে পোড়া জীবন্ত লাশ গুলো আমাদের আটকে দিল। তারপর আমি রবিনকে জিজ্ঞাসা করলাম নিলয় সৃজন এবং মাফি কোথায়। রবিন বলল ওরা তো একটু আগেই আমাদের সাথে ছিল ওরা কোথায় গেল, এদিকে আগুনে পুরা জীবন্ত লাশগুলো আমাদের জন্য চারিদিক থেকে ঘিরে ফেলেছে। কিন্তু একটা দিকে একটু ফাঁকা দেখতে গেলাম আর সেদিকে কি আচ্ছা আমি জানিনা কিছু চিন্তা হবো না না করেই সে দিকটায় আমি দৌড়াতে লাগলাম।

তারপর কিছু একটা আমার পায়ের সাথে লাগলো আর আমি পড়ে গেলাম, নিচে শক্ত কিছু থাকার কারণে আমার মাথায় ভালোই জোরেশোরে আঘাত লাগলো ফলে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেললাম। সকালে ঘুম থেকে উঠে আমি আমাকে এক মাঝির বাসায় আবিষ্কার করলাম। কিন্তু আমার সাথে নিলয় সৃজন মাফি আর রবিন ছিল না, আমাকে যে মাঝি উদ্ধার করেছিল সে বলল আমি ওই দ্বীপের নদীর ধারে পড়েছিলাম কিন্তু আমার সাথে আর কেউ ছিল না। তারপর সেই মাঝি আমাকে বলল তোমার বন্ধুরা সম্ভবত আর বেছে নেই। তোমরা সেই লাশগুলো থেকে বেঁচে দৌড়াতে দৌড়াতেই সম্ভবত ভোর হয়ে গিয়েছিল তাই তোমাকে সেই লাশগুলো আর কিছু করতে পারেনি।

তারপর আমি ভাবতে লাগলাম আমি এখন কিভাবে বাসায় ফিরব নিলয় সৃজন মাফি এবং রবিনের বাসায় আমি কি উত্তর দিব। তবে সেই মাছের পরিবার থেকে আমাকে বাড়ি ফেরার ব্যবস্থা করে দিল আর আমি বাড়ি ফিরে এলাম। তারপর আমার সাথে যারা গিয়েছিল তাদের বাসাতেও খবর পাঠিয়ে দেওয়া হল।

তারপর দীর্ঘদিন আমি আমার রুমের ভেতরেই ছিলাম , সেই ঘটনার পর আমি এতটাই শকড ছিলাম যে আমি আমার রুম থেকে বের হওয়ার সাহসটাই পেতাম না। এখন আমি কিছুটা নরমাল হয়েছি তবুও রাত হলে সেই ভয়টা আমায় এখনো গ্রাস করে খায়, বন্ধুদের হারানোর কষ্টটা আমি এখনো ভুলতে পারিনি।


সমাপ্ত


গল্পে ব্যবহৃত নাম এবং জায়গা গুলো একদমই কাল্পনিক। আশা করি রূপনগর দীপ গল্পের দ্বিতীয় এবং শেষ পর্বের গল্পটি আপনাদের ভালো লেগেছে। রূপনগর দ্বীপের প্রথম পর্বের গল্পটি পড়তে এখানে ক্লিক করুন। সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ আমার এই পোস্টে আসার জন্য, সবাই ভাল থাকবেন সুস্থ থাকবেন শুভকামনা রইল সকলের জন্য।



image.png


PicsArt_03-22-02.27.17.png

আমি মাহির । আমার বাসা বাংলাদেশের রংপুর বিভাগে । আমি একজন ব্লগার, ফটোগ্রাফার এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। নতুন কোন বিষয়ে লিখতে এবং সবাই কে অজানা বিষয়ে জানাতে আমার ভিষণ ভালো লাগে। ছবি তুলতে, জাঙ্ক ফুড খেতে এবং ঘুরতেও আমি ভিষণ পছন্দ করি । আর আমার সব থেকে বড় শখ ছবি তোলা।

FacebookTwitterYouTube

2bP4pJr4wVimqCWjYimXJe2cnCgnMqDPMwPqFHimR5p.png

standard_Discord_Zip.gif


আমাদের উইটনেসকে সাপোর্ট করুন

"Please support Bangla Witness"


https://steemitwallet.com/~witnesses




VOTE @bangla.witness as witness
witness_proxy_vote.png
OR

SET @rme as your proxy

witness_vote.png

Sort:  
 2 years ago 

যাক অন্তত একজন বেঁচে ফিরতে পারলো। আমার মনে হয় ও যখন পরে গেছিল ঠিক তার পরপরই সূর্য উঠে গিয়েছিল। এজন্য ওকে আর মারতে পারেনি, তবে অন্য তিনজন মারা গেছে জেনে ভীষণ খারাপ লাগলো। বেশ ভয়ংকর গল্প ছিল।

 2 years ago 

হ্যাঁ ভাইয়া ভোরের আলো ফোটার কারণেই সেই জিন্দা লাশ গুলো শেষ জনকে মারতে পারেনি। ধন্যবাদ ভাইয়া পুরো গল্পটি পড়ার জন্য। ❤️

 2 years ago 

রূপনগর দ্বীপ, হেডলাইন টা দেখে মনে করেছিলাম কোথাও ঘুরতে গিয়েছিলেন। কিন্তু আপনার গল্পটি পড়ে ভীষণ ভয় লেগেছে। সত্যিই এতটা ভয় পাবো জানা ছিল না। আর আপনি এত দারুণ গল্প লিখতে পারেন সেটাও চিন্তার বাইরে ছিল, সত্যিই অসাধারণ । তবে আপনি চাইলে এই গল্পটাকে আরো বড় এবং অনেক পর্ব লিখতে পারতেন। এতো সুন্দর একটি কাল্পনিক গল্প উপহার দেওয়ার জন্য শুভেচ্ছা রইল।

 2 years ago 

জি ভাইয়া ইচ্ছা ছিল এই গল্পটিকে আরো অনেক বড় করব। কিন্তু অন্য একটি গল্প মাথায় আসার কারণে এই গল্পটিকে বেশি বড় করলাম না। নতুন একটা প্রেমের গল্প লিখব ভেবেছি।
যাইহোক অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে এত সুন্দর মন্তব্যের জন্য।

 2 years ago 

গল্পটা যখন পড়ছিলাম, মনে হচ্ছিল কোন থ্রিলার মুভি দেখছি। তারপরও স্বস্তি পেলাম একজন তো বেচে ফিরতে পেরেছে।

আপনি দ্রুত লেভেল ৩ এ আমার সাথে যোগাযোগ করুন।

 2 years ago (edited)

ধন্যবাদ ভাইয়া পুরো গল্পটি পড়ার জন্য।

আমি এখনই আপনার সাথে লেভেল 3 তে যোগাযোগ করছি।

Coin Marketplace

STEEM 0.16
TRX 0.17
JST 0.029
BTC 69432.76
ETH 2492.61
USDT 1.00
SBD 2.53