অন্ধকারের আশ্চর্য: অন্তিম পর্ব
নমস্কার বন্ধুরা,
অন্ধকারের আশ্চর্য: পর্ব ৮ এর পর...
সারাদিন গ্রামের সব কটি জনমানুষের মুখে মুখে সুদীপ্ত এবং সুকেশের অভিজ্ঞতা নিয়েই আলোচনা চললো। গ্রামের মানুষজন দুজনের সাথে এমন আচরণ করছে যেন তারাই কোনো ভুল করেছে। বাধ্য হয়ে তারা তাই বাকি দিন ঘরেই কাটিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো। বাড়ি বসে থেকে সুদীপ্তর মাথায় সেই ঘটনাই ঘুরতে থাকলো। রাতে আবার ঘুম হয়নি। দুই মিলিয়ে তার বেদম মাথা যন্ত্রণা শুরু হলো। কোনোমতে এভাবে দুপুর পর্যন্ত কেটে গেলো। ঠিক বিকেলের দিকে সুদীপ্তর বাড়িতে এক ভদ্রলোক এসে উপস্থিত হলেন। পাশের গ্রামেরই মানুষ, রবি কাকা। সুদীপ্তর বাবার পরিচিত। সে ছোটোবেলায় মাঝে মধ্যে যখন বাবার সাথে হাটে যেতো তখন বাবাকে রবি কাকার কাছ থেকেই মাছ কিনতে দেখতো।
রবি কাকা এসেই সুদীপ্তর বাবার খোঁজ করলেন। কাছে পিঠে তাকে না দেখতে পেয়ে তাই সুদীপ্তর সাথেই গল্প শুরু করলেন। অন্যান্য লোকের মতো ইনিয়ে বিনিয়ে না জিজ্ঞেস করে সুদীপ্তর কাছে সরাসরি গতরাতের ঘটনার বিবরণ জানতে চাইলেন। সুদীপ্ত অল্প দোনামনা করলেও রবি কাকাকে গতরাতের ঘটনার বিবরণ শোনালো।
সুদীপ্তর কথা মন দিয়ে শোনার পরে রবি কাকা সুদীপ্তকে বললেন,
"বাবা গত রাত্রে আমরা কজন জেলেরা মিলে খাড়িতে মাছ ধরতে গিয়েছিলাম। সেই সময়ে মাছ ধরার জন্য আমরা খাড়ির জলে বারবার করে বাঁশ দিয়ে সজোরে আঘাত করছিলাম। তোমরা হয়তো সেটারই আওয়াজ পেয়েছো।"
রবি কাকার কথা শোনার পর সুদীপ্তর মাথা বনবন করতে ঘুরতে শুরু করলো। ঠিকই তো। রাতে জলের উপর সজোরে আঘাত করলে খুব জোরে আওয়াজটা হয় সেটা সুদীপ্ত ভালোভাবেই জানে। কথা গুলো ঠাহর করার পর সুদীপ্তর চোখে মুখে কিছুটা প্রশান্তি ফিরে এলো। গত রাতের ভয় কিছুটা হলো কমলো।
রবি বাবুর কথা শুনেই সোজা দৌড়ে গিয়ে সুকেশকে পুরো ঘটনাটা জানালো। ঘটনা শোনার পর সুকেশ ও সুদীপ্ত কয়েক মিনিট চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকার পর দুজনেই সজোরে হেসে উঠলো। গত রাত থেকে ভালো ঘুম হয়নি। তারা ভালোভাবে খায়নি। তাদের ভয় ছিলো যে কোনো এক অলৌকিক শক্তির খপ্পরে তারা হয়তো পড়েছিল কিন্তু শেষমেষ যে জেলেদের বাঁশের আওয়াজে তারা ভয় পেয়েছে সেটাই যেন আরো হাসির বড় কারণ।
সুদীপ্ত তারপর হাসিমুখে ঘরে ফিরে এলো। ভদ্রলোক এতক্ষণ তাদের বাড়িতেই বসেছিলেন। সুদীপ্ত তাকে দেখে টুক করে প্রণাম করে নিলো। তারপর ভদ্রলোকটি উঠি বলে রওনা দিলেন। রবি কাকা চলে যেতেই সুদীপ্ত মনে মনে ভাবল শীতের রাতে আর অ্যাডভেঞ্চার নয়। ভৌতিক শক্তি হয়তো নেই কিন্তু মানুষের কার্যকলাপ কেই ভৌতিক শক্তি ভেবে এমন কোনো অ্যাডভেঞ্চারে সে প্রাণ হারাতে চায় না।
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
মনের ভয় বড় ভয় দাদা, বনের ভয়ের চাইতেও মনের ভয় মানুষকে বেশি কাবু করে ফেলে। আর তাই হয়তো জেলেদের বাঁশের আওয়াজে তারা ভয় পেয়েছিল। আর এটা বুঝতে পেরেই তারা হেসেও ফেলেছিল। সুদীপ্ত বেশ ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছিল ভৌতিক কোন শক্তি নেই বরং মানুষের কার্যকলাপ কেই ভৌতিকশক্তি ভেবে এমন অ্যাডভেঞ্চারে তৈরি হয়। যাই হোক দাদা, অন্ধকারের আশ্চর্য অন্তিম পর্বটি পড়ে ভালো লাগলো শেয়ার করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।