টিকিটের মূল্য

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

নমস্কার বন্ধুরা,

টোটোতে চেপে বসার পর থেকেই শুরু হলো রেস। পথে ট্রেন কতদূর এলো আর আমরা কতদূর পৌঁছলাম দুয়ের মাঝে চললো বহু টানাপোড়েন। আসলে সত্যি কথা বলতে ট্রেনের থেকে সময়ের সাথেই আমাদের লড়াইটা ছিলো বেশি। স্টেশনে ট্রেন আগে পৌঁছায় নাকি আমরা। সময় ঝড়ের গতিতে বেরিয়ে যেতে দেখে বার কয়েক টোটো দাদাকে জোরে চালাতে বলায় দাদা ধীরে ধীরে টোটোর গতি বাড়াতে থাকলো। টোটো দাদাকে এভাবে বারবার বলতে থাকায় পাশে বসা এক লোক বলেই উঠলেন, তোমরা আজকে ট্রেন ধরতে পারবে না। লোকটির কথায় নিরাশ না হয়ে টোটো দাদাকে বললাম, চেষ্টা করে দেখাই যাক পারা যায় কিনা। অপরদিকে লক্ষ্য করলাম যে, ট্রেন যাত্রা স্টেশন থেকে পরবর্তী স্টেশনে পৌঁছে গেছে। সেকথা বলতেই টোটো আরো জোরে ছুটতে শুরু করলো।

PXL_20230117_081109599_copy_1209x907.jpg

দুইয়ের টানাপোড়েনে কখন যে স্টেশনে কাছে পৌঁছে গেছি সেটা স্টেশনের রেল ফাটকের উপরে খেয়াল হলো। ফাটকের উপর দিয়ে পেরোচ্ছি তখন লক্ষ্য করলাম স্টেশনের দূরে হলুদ আলো দেখা যাচ্ছে। আমি প্রমাদ গুনলাম। ভয়ে ভয়ে টোটো দাদাকে অনুরোধ করলাম, স্টেশন পর্যন্ত পৌঁছে দিতে। মূল রাস্তা থেকে স্টেশন প্রায় ২০০ মিটার দূরে। স্টেশন পর্যন্ত টোটো যাওয়ার না থাকলেও আমার অনুরোধ শুনে স্টেশনের পথে টোটো ঢুকে গেলো। স্টেশনের পথে ঢোকা মাত্র দেখি ট্রেনটা স্টেশনে এসে দাঁড়ালো। ট্রেন মাত্র এক মিনিট দাঁড়াবে।

PXL_20230117_062333107.PORTRAIT_copy_1209x907.jpg

স্টেশনে টোটো দাড়ানো মাত্র ব্যাগ পত্র নিয়ে দৌড়ে ট্রেনে উঠে ব্যাগ রেখে দিলাম। তারপর আবার ঝপাং করে ট্রেন থেকে নেমে টোটোতে আমার সঙ্গী এক মা ও মেয়েকে তাদের ব্যাগ সহ ট্রেনে উঠতে সাহায্য করলাম। তিনজনে ওঠার ৪-৫ সেকেন্ড মধ্যেই ট্রেন ছেড়ে দিলো। সবকিছুই এত তাড়াতাড়ি হয়ে গেলো যে টোটোতে বিগত ৩০ মিনিটে যে ঠান্ডা লেগেছিল সেটা নিমিষেই কেটে গেল।

PXL_20230117_062739778_copy_1209x907.jpg

উত্তেজনার মধ্যে ফাঁকা সিট দেখে বসে পড়লাম। তারপর শুরু হলো নতুন আরেক চিন্তা। আদপে সময়ের অভাবে কলকাতার না টিকিট কেটেই ট্রেনে উঠে পড়েছি যে। সেটা নিয়ে চিন্তা আরো বেশি কারন, যদি টিকিট ছাড়া টিকিট চেকার দেখতে পান তাহলে প্রচুর পরিমাণে ফাইন লেগে যাবে।

মনে মনে ঠিক করে নিলাম পরবর্তী কোনো স্টেশন নেমে টিকিট কাউন্টার থেকে টিকিট কেটে নেবো। যথারীতি পরের স্টেশন আসতেই ট্রেন থেকে নেমে পড়লাম, নামার পর বুঝলাম টিকিট কাউন্টার প্রায় এক-দেড়শ মিটার দূরে। টিকিট কাটা হলো না। এরম করে তিন তিনটে স্টেশন পেরিয়ে গেলো অথচ আমার টিকিট কাটতে আমি ব্যর্থ। পরের স্টেশন ছিলো আমার টিকিট কাটার শেষ সুযোগ যেখানে ট্রেন ১০ মিনিট মতো দাড়িয়ে থাকবে।

PXL_20230117_073543591_copy_1209x907.jpg

ট্রেন সঠিক সময়ের দু মিনিট আগেই পৌঁছলো। আমি কাঁধে ব্যাগ উঠিয়ে ছিলাম। ট্রেন স্টেশনে দাড়াতেই মারলাম দৌড়। টিকিট কাউন্টার প্রায় সাড়ে ৩৫০ মিটার দূরে। প্ল্যাটফর্ম নেমে দৌড়াতে দৌড়াতে টিকিট কাউন্টারে পৌঁছে গেলাম। দেখি টিকিট কাউন্টার ফাঁকা। মুহূর্তের মধ্যে টিকিট কেটে ফের প্ল্যাটফর্মে ফেরত এলাম। ফের দৌড়াতে শুরু করবো ঘড়িতে দেখি মাত্র দু মিনিট পেরিয়েছে। আমি একটু আশ্বস্ত হলাম হাতে আরো দশ মিনিট সময় আছে। চিন্তামুক্ত হয়ে কামরার দিকে হাঁটতে শুরু করলাম। বাকি যাত্রাটা আরামে হবে ভেবে মন বেজায় খুশি।




IMG_20220926_174120.png

Vote bangla.witness


Support @heroism by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

|| Join HEROISM ||

Sort:  
 2 years ago 

দাদা তোমার সফল ভাবে টিকিট কাটার ঘটনাটি শুনে অবাক হয়ে গেলাম। টিকিট চেকারকে এত ভয় পাওয়ার কোন দরকার নেই। নতুন এক নিয়ম হয়েছে দাদা দূরপাল্লার ট্রেনগুলোতে ট্রেনে থাকা অবস্থায় ট্রেনের টিকিট কেটে নেয়া যাবে। যদিও সে ক্ষেত্রে টিকিটের দামের উপর ২৫০ টাকা এক্সট্রা পে করতে হবে । তবে সে ক্ষেত্রে এত দৌড়া দৌড়ি এবং রিক্স নেয়ার কোন ব্যাপার থাকবে না। যদিও তোমাদের দূরপাল্লার কোন জার্নি ছিল না তাও ইনফরমেশনটা জানিয়ে রাখলাম যদি কোনদিন কাজে লাগে। তুমি যে কাজগুলো টিকিট কাটার জন্য করেছো সেই কাজগুলো কয়েক বছর আগে আমিও করেছিলাম একবার কিন্তু এখন টিটি কে আর ভয় লাগে না ।অনেক জায়গায় চলে যায় টিকিট না কেটেই....হিহি 🤭

 2 years ago 

টিটির কাছে নিজে গেলেও সমস্যা থাকে না তবুও টেনশনে মাথা কাজ করে না। 🥲

২৫০ টাকা বেশি দিয়ে টিকিট কাটা যায়, বিষয়টা জানা নেই তো। কি ব্যাপার বলতো

 2 years ago 

দাদা দূরপাল্লার ট্রেনের টিকিট সাধারণত ১০ থেকে ১২ দিন আগেই কাটতে হয়, না হলে সিট পাওয়া যায় না। আর তৎকালের টিকিট পাওয়া প্রচন্ড সমস্যার কাজ যেটা ২৪ ঘন্টা আগে পাওয়া যায়। তৎকালের টিকিট সবাই পায়ও না। এইজন্য ভারতীয় রেলে নতুন নিয়ম হয়েছে টিকিট না কেটেও কেউ যদি দূরপাল্লার ট্রেনে উঠে পড়ে তাহলে ট্রেনে উঠে সে ট্রেনের টিকিটের দামের সাথে ২৫০ টাকা এক্সট্রা ফাইন দিয়ে টিকিট কেটে নিতে পারবে অর্থাৎ সে যাত্রাটা করতে পারবে তার যদি এমার্জেন্সি হয় যেটা আগে করা যেত না । অনেক সময় ট্রেনের সিট ফাঁকা থাকে সে ক্ষেত্রে সেই সিট গুলো তারা ব্যবহার করতেও পারবে।

 2 years ago 

এটা আমার জানা ছিলো না। বলে ভালোই করলে।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.13
JST 0.027
BTC 58664.80
ETH 2569.75
USDT 1.00
SBD 2.42