চলচ্চিত্র রিভিউ : লিমিটলেস // ১০% পেআউট লাজুক খ্যাঁক-কে
নমস্কার বন্ধুরা,
সবাই কেমন আছেন? আশা করছি ঈশ্বরের কৃপায় আপনারা সবাই সুস্থ। আজ ফের আপনাদের সাথে আরো একটি চলচ্চিত্রের রিভিউ নিয়ে হাজির হলাম। আজকে যে চলচ্চিত্রটি রিভিউ করবো তার নাম হলো লিমিটলেস। লিমিটলেস ২০০১ সালে প্রকাশিত পাওয়া আ্যলেন গ্লেনের উপন্যাস দা ডার্ক ফিল্ডস এর চলচ্চিত্র সংস্করণ। মূল গল্প এক স্ট্রাগলিং লেখক এডি মোরা ও একটি পরীক্ষামূলক ওষুধকে ঘিরে, যা খেলে একাগ্রতা, সৃজনশীলতা ও শেখার ক্ষমতা অনেকটা বেড়ে যায়। অগোছালো জীবনে এডি হঠাৎই একদিন তার এক পরিচিতর কাছ থেকে ড্রাগসটি পায় তারপর থেকেই এডির সাথে হতে থাকে নানা ঘটনা।
বহুতল বাড়ির বারান্দায় আত্মহত্যার প্রচেষ্টায় দাঁড়িয়ে আছেন এক ব্যক্তি, বহুতলের নীচের মানুষজন স্বাভাবিক জীবনে ব্যস্ত। অপরদিকে ফ্ল্যাটে ঢোকার চেষ্টায় কিছু অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তি দরজায় ধাক্কা দিচ্ছে। আত্মহত্যার প্রচেষ্টারত ব্যক্তিটি এক পা শূন্যে এগিয়ে দিতেই পাশের ফ্ল্যাটে একজন গুলির আঘাতে লুটিয়ে পড়লো। সিন কাট।
কয়েক মাস আগের ঘটনা উদ্ভ্রান্ত হয়ে রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে বহুতলের বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকা সেই ব্যক্তিটি। ব্যক্তিটি একজন স্ট্রাগলিং লেখক, নাম এডি মোরা। এডির জীবন অগোছালো থাকায় হতাশ হয়ে এডির প্রেমিকা বিচ্ছেদ করে নেয়। বিচ্ছেদ হওয়ার পর এডি আবার উদ্ভ্রান্তের মতো হাঁটতে থাকে। রাস্তায় হাটতে হাটতে ধাক্কা খায় তার প্রাক্তন স্ত্রীর ভাই ভার্ননের সাথে, কথায় কথায় ভার্নন এডিকে NZT-48 নামের একটি নতুন ড্রাগের নমুনা দেয়।
অ্যাপার্টমেন্টে ফিরে আসার পথে এডি ভার্ননের দেওয়া ড্রাগটি খেয়ে ফেলে। অ্যাপার্টমেন্টে ঢুকবে এমন সময় এডির সাথে বাড়ির মালিকের স্ত্রীর দেখা হয় ও তাদের মধ্যে বকেয়া বাড়ি ভাড়া দেওয়া নিয়ে তর্কাতর্কি শুরু হয়। ড্রাগ নেওয়ার কিছুক্ষনের মধ্যেই এডি বুঝতে পারে যে সে এ যাবৎকালে যা কিছু পড়েছে তার সবই স্পষ্টভাবে মাথায় ভেসে উঠছে। তারপর অ্যাপার্টমেন্টে ঢুকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে এডি বই লেখা শুরু করে।
পরের দিন ঘুম ভাঙলে এডি বুঝতে পারে ওষুধের প্রভাব চলে গিয়েছে তারপর সে প্রকাশকের কাছে গল্পের লিখিত অংশটি নিয়ে আসলে প্রকাশক এডির বেশ প্রশংসা করে। তারপর এডি NZT-48-এর খোঁজে ভার্ননের কাছে যায়, কিন্তু গিয়ে দেখে ভার্ননকে কেউ খুন করেছে। সাথে সাথে ভার্ননের খুনের খবর পুলিশকে জানিয়ে এডি ভার্ননের লুকিয়ে রাখা NZT-48 খুঁজে বের ফেলে ও নিজের কাছে লুকিয়ে ফেলে। তারপর থেকেই ভার্ননের ফ্ল্যাটে পাওয়া ড্রাগসগুলো এডি প্রতিদিন খাওয়া শুরু করে দেয়। ওষুধের সাহায্যে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এডি তার জীবন সঠিক পথে নিয়ে চলে আসে। পড়াশোনা করে স্টক মার্কেটে খুব তাড়াতাড়ি অল্প অর্থ বিনিয়োগে বড় পরিমানে আয় করতে শুরু করে। কিন্তু অল্প অর্থ দিয়ে বিনিয়োগ এডির পছন্দ হয় না তার চাই আরো মূলধন। মুলধনের তাগিদে এডি একজন রাশিয়ানের কাছ থেকে ১ লক্ষ ডলার ধার নিয়ে নেয়।
স্টক মার্কেটে সাফল্যের সুবাদে এডি একটি ব্রোকারেজ ফার্মে যোগ দিয়ে সেখানে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে তার মূলধনকে ২ লক্ষ মিলিয়ন ডলারে পরিণত করে ফেলে। সঠিক পথে জীবন ফিরিয়ে আনার পর এডি ফের পুরোনো প্রেমিকার সাথে দেখা করে এবং তারা ফের সম্পর্কে জড়ায়।
স্টক মার্কেটে এডির সাফল্য ওয়াল স্ট্রিট পুঁজিপতি কার্ল ভ্যান লুনের নজরে আসে ও তাদের মধ্যে বৈঠক হয়। মিটিং শেষ করে বাড়ি পথে এডি হ্যালুসিনেশন অনুভব করে সবকিছু ভুলে যায়। এডি আবার ভার্ননের ওষুধের প্যাকেটে খুঁজতে থাকে। ওষুধ না পেয়ে এডি নানা জায়গায় ওষুধটি খোঁজ করতে শুরু করে ও জানতে পারে যে NZT-48 গ্রহণকারী প্রত্যেকেই হয় হাসপাতালে অথবা মারা গেছে।
রাশিয়ান গুন্ডা গেনাডি টাকা ফেরত না পেয়ে এডিকে ধরে অবিলম্বে সুদের সাথে টাকা ফেরত দেওয়ার দাবি করে। ধস্তাধস্তিতে গেনাডি এডির একটা NZT-48 হাতিয়ে নিয়ে খেয়ে ফেলে, তারপরে এডিকেই ওষুধটির উৎস হিসাবে ব্যবহার করতে শুরু করেন।
গেনাডি এডির শেষ ডোজ হাতিয়ে নেওয়ার পরে এডি পিলের জন্য মরিয়া হয়ে পড়ে লিন্ডিকে তার পুরোনো অ্যাপার্টমেন্ট লুকানো ওষুধ গুলো উদ্ধার করতে বলে। অ্যাপার্টমেন্ট থেকে এডির ওষুধগুলি আনার সময় লিন্ডি বুঝতে পারে লিন্ডিকে লক্ষ্য করে একটা কোট পরিহিত লোক তাকে অনুসরণ করছে। এডি তখন লিন্ডিকে ড্রাগসটি নিতে বলে, লিন্ডি ড্রাগস খেয়ে কোট পরিহিত লোকটির থেকে পালাতে সক্ষম হয়। তারপর লিন্ডি এডিকে বলে যে এডি ড্রাগে থাকাকালীন তারা এক সাথে থাকতে পারবেন না কারণ ড্রাগটি এডিকে অন্য মানুষ করে তোলে। এডি তারপর NZT-48 বানানোর জন্য একটি পরীক্ষককে দায়িত্ব দেয়। ভার্ননের মৃত্যুর তদন্তে নেমে পুলিশ এডিকে সন্দেহ করে থানায় নিয়ে যায়। থানায় থাকাকালীন এডির অ্যাটর্নি এডির জ্যাকেট থেকে NZT-48 এর পুরো প্যাকেটটাই চুরি করে নেয়।
ওদিকে গেনাডির ড্রাগস শেষ হয়ে যাওয়ায় এডির অ্যাপার্টমেন্টে আসে ও NZT-48 দাবী করে। কিন্তু এডি না দিতে পারায় এডিকে তাঁরা খুন করতে উদ্যত হয়, কিন্তু কায়দা করে এডি গেনাডি ও তার দুই সঙ্গীকে খুন করে পালায়।
এক বছর পরের ঘটনা, এডি আমেরিকার সেনেট পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। এডির প্রচার অফিসে ভ্যান লুন এসে বলে যে লুনই সেই কোম্পানিকে কিনে নিয়েছে যেটি NZT-48 তৈরি করছিলো। সাথে এডির গবেষণাগার গুলো বন্ধ করে দিয়েছে, তারপর এডিকে লুন তার হয়ে কাজ করে দেওয়ার পরিবর্তে NZT ওষুধের অব্যাহত সরবরাহের প্রস্তাব দেয়। তখন এডি লুনকে বলে যে এডি ওষুধটিকে পার্শপতিক্রিয়াহীন বানিয়ে ফেলে ড্রাগসটি নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।
তারপর এডি লাঞ্চের জন্য একটি চাইনিজ রেস্তোরাঁয় যায়, যেখানে লিন্ডি আগে থেকে বসে ছিলো। চাইনিজ রেস্তোরাঁয় এডি সাবলীলভাবে চাইনিজ ভাষায় অর্ডার দেয়। সিনেমার শেষে এসে দর্শক বেশ দ্বন্ধে পড়ে যায় যে সত্যিই কি এডি NZT-48 আসক্তি থেকে মুক্তি পেয়েছে কিনা নাকি ভ্যান লুনের সাথে ধাপ্পাবাজি করেছে।
লিমিটলেস আ্যলেন গ্লেনের উপন্যাস দা ডার্ক ফিল্ডস উপরে নির্মিত একটি চলচ্চিত্র! সিনেমার পরতে পরতে রয়েছে রোমাঞ্চে ভর্তি। ব্রাডলি কুপার এডি মোরা হিসেবে দারুন অভিনয় করেছেন।
পরিচালনা | ৭ |
কাহিনী | ৮ |
অভিনয় | ৭.৫ |
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
দাদা ব্রাডলি কুপার আমার প্রিয় অভিনেতাদের মধ্যে একজন। ছবিটির কাহিনী অনেক ভালো লাগলো। হলিউডে এ ধরনের ড্রাগ বা মেডিসিন নিয়ে অনেকগুলো মুভি তৈরি হয়েছে। রিভিউটি করেছেন বেশ সাবলীল ভাবে। পড়তে বেশ ভালই লাগলো। শুভেচ্ছা রইলো আপনার জন্য।
লিমিটলেস আমার খুব ভালো লেগেছে, পরতে পরতে রোমাঞ্চে ভর্তি।
হলিউড মুভি গুলো দেখতে আমি অনেক ভালবাসি। আপনি এই মুভিটি আমাদের মাঝে যেভাবে রিভিউ করেছেন মনে হচ্ছে মুভিটি খুব ইন্টারেস্টিং হবে। বিশেষ করে মুভি পার্ট গুলো পড়ে বুঝতে পারলাম অনেক রোমাঞ্চকর রয়েছে এই মুভিতে। আমি যদি সময় পাই অবশ্যই এই মুভিটি একবার দেখার চেষ্টা করব । আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ দাদা এমন সুন্দর একটি মুভি আমাদের মাঝে রিভিউ করার জন্য।
আরো অনেক কিছুই আছে তবে সেগুলো সিনেমাটি দেখলে বোঝা যাবে তাই আমার পরামর্শ তাড়াতাড়ি দেখে ফেলুন। দারুন লাগবে।
দাদা মুভিটা আমার দেখা হয়নি। বর্তমানে ব্যস্ততার কারণে নাটক মুভি কোনটাই দেখা হয়না। কিন্তু আপনার মুভি রিভিউ টা দেখে ইচ্ছে করতেছে মুভিটা দেখার জন্য। সময় করে মুভিটা দেখার খুবই ইচ্ছে জেগেছে। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ মুভি রিভিউ থিস দেওয়ার জন্য।
সময় করে সপ্তাহে একবার দেখুন তাহলে ভালোই লাগবে। আগে আমিও সময় করে উঠতে পারতাম না তবে এখন বের করি।
মুভিটি আমার দেখা হয়নি তবে এর রিভিউ দেখে মনে হচ্ছে এটি দেখা প্রয়োজন। অনেকদিন ধরেই ভাবছি মুভি দেখব, কিন্তু সময় হয়ে উঠছে না। চমৎকার ছিল আপনারা আজকের পোস্ট।
অতি শীঘ্রই দেখে নিন। বেশ রোমাঞ্চ পাবেন।