পোষ্যদের ভ্যাক্সিনেশন যুদ্ধ // ১০% পেআউট লাজুক খ্যাঁক-কে

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago (edited)



নমস্কার,

যুদ্ধ! আজ সন্ধ্যেটা আমার যুদ্ধ করেই কেটে গেলো। যুদ্ধ আমার বোনের দুই চারপেয়ের সাথে আমাদের। কোহিনূর আর মৃণালিনী বাড়িতে দুটি মাত্র চারপেয়ে। কোহিনূর, গোল্ডেন রিট্রিভার আর মৃণালিনী নেড়ি। বিগত একমাস ধরে পুজো পার্বণ নানান ব্যস্ততায় ত্রৈমাসিক ভ্যাকসিনেশন পিছিয়েই চলছিলে। অবশেষে আজকে বিস্তর যুদ্ধের পর আবার তিনমাসের শান্তি। বাড়ির পোষ্যদের নিয়মিত ভ্যাক্সিনেশন দরকার আমার গ্রামের বাড়িতে একটি দেশি প্রজাতির কুকুর রয়েছে তাকেও প্রতি তিন মাস অন্তর অন্তর আমার বাবা ভ্যাক্সিনেশন করান। রেবিসের ভয়টা মূলত কাজ করে। তাছাড়া চারপেয়েদের প্রতি তিনমাস অন্তর ভ্যাসিনেশন প্রয়োজন হয়, নইলে নানান অসুখ বিসুখ হতে থাকে। বিশেষ করে বর্ষার পর। যেহেতু বর্ষায় বেশিরভাগ কুকুরের চুল প্রায় ঝরে যায় আবার শীতের আগমনের আগেই নতুন লোমে সারা গা ভরে যায়, লোমের সাথে আসে নানান পরজীবী। পেটে কৃমির সাথে গায়ে আসে রক্তখেকো এটুলি বা উকুন।


তোমরা আমাকে কোথায় নিয়ে যাও, আমি বাড়ি যাবো

আগে থেকেই বোন কোহিনূরদের কেয়ারটেকার রাজনকে ভ্যাকসিনের জন্য সন্ধ্যেবেলায় আসবার জন্য বলে রেখেছিলো। রাজনের মা বাঙালি আর বাবা তেলেগু, প্রায় ৩ বংশ ধরে কলকাতার বাসিন্দা, তাই মোটামুটি বাঙালিই হয়ে গেছে। ওদের সাথে আমার যাওয়ার কথাই ছিলো না, বোন নিজে রয়েছে। আমি বেশ চিন্তাহীন ছিলাম, তবুও সন্ধ্যেবেলায় যাবার সময় হতেই আমাকে সঙ্গ দিতে হলো। ভরসা নেই খোলামেলা রাস্তা পেয়েই মৃণালিনীদের লম্ফঝম্ফ বেড়ে যায়, হাত ছেড়ে পালিয়ে গেলে আরেক কেলেঙ্কারি। তাছাড়া পাড়ার নেড়ি গুলো নতুন কাউকে দেখলেই বেশ উত্তেজিত হয়ে পড়ে। আমাকে তাই একপ্রকার বাধ্য হয়েই সেফটি গার্ড হিসেবে যেতে হল। সেফটি গার্ড হয়ে যাওয়াতে একখানা লাভ হলো পাড়ার নেড়িরা বিশেষ একটা বেগড়বাই করতে পারেনি, চিৎকার শুরু করাতেই লাঠি উঁচু করলাম। সবাই বেপাত্তা।


আমরা ঘুরতে বেড়িয়েছি


পেট হেভেন

প্রায় নির্ঝঞ্ঝাটেই ডাক্তারের কাছে পৌঁছে যাওয়া গেলো, নির্ধারিত সময়ের মিনিট কুড়ি আগেই। গিয়ে দেখি, আমাদের আগেই দুখানা পোষ্য মালিকের কোলে বসে, একখানা এক মাসের রটউইলারের ছানা, দিব্য মালিকের পিঠে চড়ে আছে।


হুমান, না বলে ছবি তুলছো কেন?

বাচ্চাগুলোকে কোলে দেখে কোহিনূরের কিছুক্ষন ধরে কোলে ওঠার জন্য বায়না চললো, তবে আমরা বিশেষ একটা পাত্তা না দিয়ে ওজন আর জ্বর মেপে নিলাম। তারপর অপেক্ষার শুরু। কোহিনূরের আঠাশ কেজি আর মৃণালিনীর উনিশ। একদম স্বাভাবিক।


ওজন পর্ব

ডাক্তারের আসবার সময় ছিল সাতটা, আমরা বাইরে দাঁড়িয়ে অন্য মালিকদের সাথে গপ্পো করতে করতেই সাতটা বেজে গেলো এদিকে ডাক্তারের পাত্তা নাই। জানা গেলো উনি রাস্তায় জ্যামে আটকে গেছেন। বাইরে আমাদের অনেকক্ষন দাঁড়াতে দেখে পাড়ার কুকুরগুলো ধীরে ধীরে জটলা পাকাতে শুরু করলো, অবস্থার বেগতিক বুঝে দোকানেই ঢুকে গেলাম। ভেতরে ঢুকে কোহিনূরদের উত্তেজনার শেষ নেই, নিজেদের মধ্যে লাফালাফি করতে করতে হাঁফিয়ে গেলো। ডাক্তার মশাই সাড়ে সাতটা বাজিয়ে দিলেন।

ডাক্তার দোকানে ঢুকতেই কোহিনূররা লেজ গুটিয়ে অদ্ভুত আচরণ শুরু করে দিলো। হয়তো আগের ইনজেকশন গুলো কথা মনে পড়ে গেছে। কোহিনুরকে অল্প আদর করতে করতেই ভ্যাকসিন দিয়েও দেওয়া হলো।


হুমান, আমাদের বোকা বানিয়েছে

সমস্যা হলো মৃণালিনীর ক্ষেত্রে, যেহেতু নেড়িরা একটু খেঁকি তাই ডাক্তারকে দেখে দাঁত খিঁচিয়ে উঠলো। শেষে অনেক ধস্তাধস্তি করার পর মুখে মাজেল পড়িয়ে কোলে তুলে দুজন মিলে চিপে ধরে তবেই ভ্যাকসিন দেওয়া গেলো। আমি আর কোহিনূর জুলুজুলু ভাবে সব কীর্তি দেখলাম।


হুমান, আমাকে এইভাবে কেন ধরেছ


আমি এবার কেঁদে দেবো। হুমান গুলো ভালো না

আমাদের যুদ্ধের ইতি রাত পৌনে আটটা বেজে গেলো, বাড়ি ফেরাটাও অনেকটা বাড়ি থেকে আসবার মতোই গেলো। আমি লাঠি উঁচিয়ে চললাম, ব্যাস। ঘন্টাখানেককের ভয়ানক যুদ্ধ শেষে পর আমার ছুটি হলো সাথে আগামী তিন মাসের জন্য চিন্তামুক্তি।



Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Sort:  
 2 years ago 

প্রথমেই বলি ডাক্তার জন্য অপেক্ষা করা একটা পেইন লাগে আমার কাছে। আর মজার ছিল যে আগের ইনজেকশন গুলো কথা মনে পড়ে গেছে হহাহাহাহাহাহাহ। আসলেই তাই আমি তো ইঞ্জেকশন এর কথা শুনলেই ভয় পাই হাহাহ। কুকুর টাকে খুব আদর করে কোলে নিয়ে রেখেছে এটা খুব ভালো লেগেছে ভাইয়া।

 2 years ago 

আমার নিজেরই সিরিঞ্জ নিয়ে ভয়! তাই কোহিনূরের ভয়টা বুঝতে পারি। 😆

 2 years ago 

🙈🙈🙈😁😁😁😁😁

 2 years ago 

আমি এবার কেঁদে দেবো। হুমান গুলো ভালো না

তার মনের ভাবটা কিন্তু সত্যিই। মানুষ আসলেই খুব একটা ভালো না। কারণ!!
কারণটা তো আমরা জানি তাইনা? আর বেচারার অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে সে যদিও সেই মুহূর্ত একবার ছাড়া পেত তাহলে আপনাদের খবর ছিল। মানে ঐযে ওই নেড়িটার কথা বললাম।

 2 years ago 

এক্ষেত্রে হুমান দের মাঝে মধ্যে বজ্জাত হতেই হয়। মৃণালিনী কে ইনজেকশন দেওয়ার পরেই কোল থেকে নামানো হলো। 😛

 2 years ago 

বাহ,বেশ মজা লাগলো ছবির নিচে কথাগুলো পড়ে।সত্যিই প্রাণীদের মনের অব্যক্ত কথাগুলো তুলে ধরেছেন।আমি যদিও দেশি কুকুর, বিড়াল তেমন পছন্দ করি না।তবে বিলিতি গুলি পছন্দ করি।ভালো লাগলো দেখে।ধন্যবাদ দাদা।

 2 years ago 

হ্যাঁ! নীচের লেখা গুলো নিয়ে একটা মিম বানাবো ভেবেছিলাম। তারপর দেখলাম এভাবে বেশি ভালো লাগছে 😆। দেশি কুকুর বিদেশিদের থেকে অনেক কম খরচে পালন করা যায়।

 2 years ago 

কুকুরটিকে ভ্যাকসিন দিতে নিয়ে যেতে বেশ কষ্ট হয়েছে মনে হচ্ছে। তবুও বিরক্ত না হয়ে ভ্যাকসিন দিয়ে আসলেন। কুকুরের প্রতি আমাদের অনেক সহানুভূতি এবং ভালোবাসা রয়েছে।

 2 years ago 

মারামারি হয়েছে। মারামারি। বিরক্ত হলেও ভ্যাকসিন তো দিতে হবেই। 🤗

 2 years ago 

অসাধারণ একটা ভালো লাগা কাজ করলো আজকের পোস্টে, এদের ঘরে রাখতে গেলে এভাবেই তিন মাস পর পর ভ্যাকসিন দিতে হবে, না হয় ওরা তো অসুস্থ হবে সাথে সাথে আমরাও অসুস্থ হব,
তবে দাদা যেভাবে বাচ্চার মত কুলে নিয়ে রেখেছে দেখে খুবই আনন্দ পেয়েছি আমি,
আর একটা জিনিস খুবই ভালো লাগলো, ডাক্তারকে দেখার সাথে সাথে তার আগের কথা মনে পড়ে গেল। আজকের পোষ্ট অনেক ইনজয় করলাম, অনেক ধন্যবাদ দাদা।

 2 years ago 

পোষ্য চারপেয়ের নাম গুলো খুবই সুন্দর ভাইয়া, কোহিনুর ও মৃণালিনী। মৃণালিনী ইনজেকশন দেখে খুবই ভয় পেয়েছে মনে হচ্ছে। মৃণালিনী কে ইনজেকশন দেওয়ার যুদ্ধটা দেখে বেশ খারাপ লাগলো। আমাদের তো ব্যথা লাগলে আমরা বলতে পারি ওরা তো সেটাও পারেনা। বেশ বড়সড় একটি যুদ্ধের পর তিন মাসের জন্য চিন্তা মুক্ত হলেন। শুভকামনা রইল আপনার জন্য ।

We officially invite you to join us to talk about our pets here SteemPetLovers

https://steemit.com/trending/hive-168194

Coin Marketplace

STEEM 0.28
TRX 0.13
JST 0.032
BTC 60752.39
ETH 2904.82
USDT 1.00
SBD 3.73