ধান্যকুড়িয়া গায়েন বাড়ি
নমস্কার বন্ধুরা,
পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন কোনাতে লুকিয়ে রয়েছে কত শত অজানা ঐতিহাসিক জায়গা যা এখনো আমাদের অগোচরে রয়ে গিয়েছে। আসলে বর্তমানে আমরাই নিজেদের ইতিহাস সম্পর্কে অবগত হতে চাইছি না। সেজন্য জায়গা গুলোকে বর্তমানে কেউই বিশেষ চিনে উঠতে পারে না। বেশ কিছুদিন আগে আমি গিয়েছিলাম সেরমই এক জায়গায়, যার নাম চন্দ্রকেতুগড়। সেদিন দুপুরটা সেখানেই কাটিয়ে ফেরার পথে বাসে জানতে পারি খুব কাছেই ধান্যকুড়িয়া নামের একটি বর্ধিষ্ণু গ্রাম রয়েছে। যেখানে উনবিংশ শতাব্দীতে বেশ কিছু জমিদার পরিবার তাদের বসত স্থাপন করেন এবং তার পর থেকেই গ্রামটি আশেপাশে বেশ পরিচিতি পায়। সেদিনই মনে মনে ঠিক করেছিলাম একদিন দুপুর বেলায় বেরিয়ে পড়বো ধান্যকুড়িয়া গ্রাম ঘুরে আসার জন্য।
অপেক্ষার অবসান হলো। সময় বের করে বেরিয়ে পড়লাম ধান্যকুড়িয়ার দিকে। টাকি রোড ধরে কলকাতা থেকে মাত্র ৫০ কিলোমিটার দূরে গ্রামটি চোখে দেখার আগ পর্যন্ত ভাবতেই পারিনি যে এত বড় মাপের গ্রাম হয়। ট্রেনে করে যাওয়ার সুযোগ থাকলেও আমি গিয়েছিলাম বাসে চেপে। কারণ ধান্যকুড়িয়া থেকে ট্রেন স্টেশন অল্প কিছুটা দূরে। স্টেশন নেমে তারপর ফের অটো করে আবার ধান্যকুড়িয়া গ্রামে পৌঁছতে হবে। সেই চিন্তা থেকেই বাসে করে প্রথমে পৌঁছে গেলাম বারাসাত। বারাসাত থেকে তারপর বাস ধরে সোজা পৌঁছে গেলাম ধান্যকুড়িয়া গ্রামে।
বাস থেকে নেমে টোটো চেপে পৌঁছে গেলাম গ্রামের ঠিক মাঝখানে। গ্রামের সড়কের ভেতর দিয়ে যখন যাচ্ছিলাম তখন একটা জিনিস লক্ষ্য করলাম যে এটা আর পাঁচটা গ্রামের মতো নয়। চারিদিকে সুন্দর বাড়ি ঘর, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাস্তাঘাট আর গাছপালা ঘেরা পরিবেশ। দেখে অল্প ঈর্ষাই হচ্ছিলো। কিলোমিটার দুয়েক টোটো চেপে নেমে পড়লাম যে জায়গায় সেখানেই ছিলো গায়েন জমিদার বাড়ি। ঊনবিংশ শতাব্দীতে গোবিন্দ চন্দ্র গাইন এবং তাঁর পুত্র মহেন্দ্রনাথ গাইন ধান্যকুড়িয়া গ্রামে তাদের বসতবাড়ি বানান। মহেন্দ্রনাথ গাইন সেসময়ে বেঙ্গল চেম্বার অফ কমার্সের বিশিষ্ট সদস্য ছিলেন ও কলকাতার আশেপাশে বেশ কয়েকটি পাটকলের মালিকও। সেই প্রতিপত্তি থেকেই তারা ধান্যকুড়িয়াতে বানান বিশাল বাড়ি। বর্তমানে পুরোনো জৌলুস না থাকলেও বহু হিন্দি, বাংলা সিনেমার শুটিং এখানে হয়েছে। যেমন গুরু দত্তের সাহেব বিবি আউর গুলাম, কপাল কুন্ডলা, ন হন্যতে, ঋতুপর্ণ ঘোষের সত্যান্বেষী।
পরবর্তীতে আরো দুটো জমিদার বাড়ি এখানে তৈরি হলেও ধান্যকুড়িয়া গ্রামের সুপরিচিতি গাইন বাড়ির হাত ধরেই। যদিও গাইন বাড়িতে বর্তমানে প্রবেশ করা নিষেধ তবে যিনি বাড়িটির দেখভাল করেন তার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলাতে তিনি বাড়ির মুখটাতে ঢুকতে দিলেন। এতদিনের পুরোনো বাড়ি এখনো মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে সেটাই অত্যন্ত আশ্চর্যের। তাছাড়া বাড়ির সামনে অনেকটা জায়গা জুড়ে বাগান খুব সুন্দরভাবে পরিচর্যা করা ছিলো। বাড়ির একদম ভেতরে ঢুকতে না পারলেও দুর্গা মন্ডপটি দেখতে পেলাম। কথায় কথায় শুনে রাখলাম দুর্গাপুজোর সময় বাড়ির দরজার সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।
হ্যাঁ দাদা চন্দ্রকেতুগড়ের গল্প আমাদের সাথে শেয়ার করেছিলেন। যাইহোক ধান্যকুড়িয়া গ্রাম তো আসলেই খুব সুন্দর। গায়েন জমিদার বাড়ি দেখে সত্যিই মুগ্ধ হয়ে গিয়েছি দাদা। এখানে তাহলে হিন্দি এবং বাংলা মুভির শুটিং হয়েছে। আপনার পোস্টের মাধ্যমে এই চমৎকার জায়গা দেখার সুযোগ পেলাম। ফটোগ্রাফি গুলো চমৎকার ভাবে ক্যাপচার করেছেন দাদা। সবমিলিয়ে পোস্টটি বেশ উপভোগ করলাম। যাইহোক এতো সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
এতো গোছানো গ্রাম আগে একটিও দেখিনি। গ্রামের মধ্যেই পাকা রাস্তা, সুন্দর সুন্দর সব বাড়ি।
অনেক সিনেমার শুটিং হয়েছে। আসলে বাড়িটা শুটিং করার জন্য একদম উপযোগী।
এরকম আগের জিনিসগুলো সত্যি ভাইয়া অনেক উক্ত হবে বাড়ানোর হয়ে থাকে যার দরুন সেগুলো অনেক দিন পর্যন্ত টেকসই হয়। ঠিক তেমনটাই তো জমিদার বাড়িটি এত দিনের পুরনো হওয়া সত্বেও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে ছিল।ঊনবিংশ শতাব্দীতে গোবিন্দ চন্দ্র গাইন এর পুত্র সেখানে বসতি স্থাপন করে তারপর থেকেই গ্রামের বিস্তার ঘটে। বুঝাই যাচ্ছে ভাইয়া আপনি ধান্যকুড়িয়া গায়েন বাড়িতে দারুন কিছু মুহূর্ত উপভোগ করেছেন এবং সেখানকার সুন্দর কিছু ফটোগ্রাফি আমাদের দেখার সুযোগ করে দিয়েছেন। ধন্যবাদ জানাচ্ছি ভাইয়া নতুন একটি ঐতিহাসিক জায়গা সম্বন্ধে আমাদের অবগত করার জন্য।
পুরোনো জিনিসের কাজই যেন আলাদা রকমের ভাই!
বাড়ির একদম অন্দরে ঢুকতে দিলে আরো মজা পেতাম 😁