ঢাকা-কক্সবাজার একরাতের বাসযাত্রার অভিজ্ঞতা। স্মৃতির আলোয় ধরা বিভিন্ন মুহূর্ত।

in আমার বাংলা ব্লগlast month

ঢাকা থেকে কক্সবাজার যাওয়ার বাসযাত্রার অভিজ্ঞতা

☘️☘️☘️☘️☘️☘️☘️


Onulipi_09_22_12_25_44.jpg

🙏🙏সকলকে স্বাগত জানাই🙏🙏

আজ খুব মনে পড়ছে বাংলাদেশ ট্যুরে কাটানো একটি রাতের কথা। গত মার্চ মাসে আট দিনের জন্য গিয়েছিলাম বাংলাদেশ সফরে। সেখানে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে কখন যে কেটে গিয়েছিল আটটি দিন তা বুঝতেই পারিনি। কলকাতা থেকে যখন প্রথম সীমানা পেরিয়ে বাংলাদেশ প্রবেশ করলাম, তখন একটা শিহরণ তো হয়েছিলই মনে। জন্ম থেকে এই প্রথম দেশের সীমানা ত্যাগ করে বেরোলাম বাইরে। তার জন্য একটু অতিরিক্ত উত্তেজনা প্রথম থেকেই কাজ করছিল শরীরে এবং মনে।
সম্পূর্ণ সফরে বিভিন্ন রকম অভিজ্ঞতা আমাকে সমৃদ্ধ করেছে বারবার। নিজের মত ঘুরে বেড়িয়েছি বাংলাদেশের কোণায় কোণায়। ঢাকা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বা টাঙ্গাইল, সব জায়গায় একবার করে ছুঁয়ে গেছি এই সফরে।

IMG_20240228_013847_106.jpgIMG_20240227_231252_305.jpg

IMG_20240228_013815_426.jpg

হানিফ পরিবহনের সেই বাস। সাথে বাসে বসে একটি সেলফি

এরমধ্যে একটি বাসযাত্রার কথা আজ খুব মনে পড়ছে। একটা নতুন দেশে গিয়ে সেখানে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অনেকবার ভাবতে হয়। আর এসব বিষয়ে আমি অনেক সাবধানে। নিজের দেশে যে সাবলীলতা থাকে বাইরে তা কখনোই থাকে না। ঠিক সেই কারণেই আমি বাংলাদেশে যাওয়ার আগেই বাসের টিকিট করে রেখেছিলাম ঢাকা থেকে কক্সবাজার যাওয়ার উদ্দেশ্যে। এটি ছিল একটি নাইট জার্নি। রাত ১১ টা নাগাদ ঢাকা থেকে রওনা হয়ে কক্সবাজার কলাতলী মোড়ে পৌঁছানোর সময় সকাল সাতটা। সেদিন ঢাকা একুশে বইমেলায় কয়েকটি কাজ ছিল। সেই কাজগুলি সেরে তাড়াতাড়ি করে রিক্সা নিয়ে পৌঁছে গেলাম বাসস্ট্যান্ডে। যতদূর মনে পড়ছে সেটি ছিল ফকিরাপুল বাসস্টপ। সেখান থেকে আগেই রাতের খাবার খেয়ে ফেললাম। তারপর এক বোতল জল কিনে যথাসময়ে পনেরো মিনিট লেটে উঠে পড়লাম হানিফ পরিবহনের বিলাসবহুল ভলভো বাসটিতে। বাসটি সিটিং হলেও এর সার্বিক ব্যবস্থাপনা ও স্বাচ্ছন্দ ভীষণ ভালো। কন্ডাক্টর আমায় সাহায্য করে সিটে বসিয়ে দিলেন। এরপর রওনা হলো বাসটি। আমিও নতুন শহরের অলিগলি দেখতে দেখতে এগোতে লাগলাম সৈকত শহর কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে। এই বাসযাত্রায় রাতের কয়েকটি মজার ঘটনা উল্লেখ করি। মধ্যরাতে বাসটি হল্ট দেয় একটি জায়গায়। কন্ডাক্টর হাঁকতে লাগলেন, "আধ ঘন্টার বিশ্রাম। তার মধ্যে সকলে চলে আসবেন।"

IMG_20240228_054020_966.jpgIMG_20240228_054057_312.jpg

কুমিল্লায় হল্টে রেস্তোঁরার ছবি

সকলের মত আমিও নেমে পড়লাম বাস থেকে। কিন্তু প্রথমেই যে বিষয়টিতে কৌতুহল হল, সেটি হল জায়গাটি কী? নিজেই খোঁজখবর করে জানতে পারলাম বাসটি কুমিল্লায় দাঁড়িয়েছে। এইসব জায়গার নাম ছেলেবেলা থেকে শুনে আসছি। একদম ছেলেবেলায় পাশের বাড়ির এক জেঠিমা বলতেন তাঁরা কুমিল্লার মানুষ। কিন্তু দুঃখ করতেন যে এ জীবনে আর কোনদিন সেখানে যেতে পারবেন না তাঁরা। আর তাঁর সেই আক্ষেপ বুকে নিয়ে আমি আজ পৌঁছে গেলাম তাঁর দেশ কুমিল্লায়। আমি ভাবলাম নিশ্চয়ই আমি সেই জেঠিমার দেশবাড়ির খুব কাছাকাছিই কোথাও দাঁড়িয়ে আছি। অথচ আমি জানিনা ও চিনিনা কিছুই। ভারত বাংলাদেশের এই যোগসূত্রের ধারা প্রতিটি মানুষের মধ্যে রয়ে গেছে আজীবন। আর সেই আবেগটুকু তুলে এনে অপর দেশের মাটি ছুঁয়ে দেখা সত্যিই এক আনন্দের মুহূর্ত।

IMG_20240228_062716_986.jpgIMG_20240228_061856_645.jpg

ভোরের আকাশে রঙের ছটা। বাস থেকে তোলা।

তবে সেই রাতে কুমিল্লার মাটিতে নেমে আমি একটু আবেগঘন হয়ে গেছিলাম। সঙ্গে সঙ্গী বলতে কেউ ছিল না। তাই একা একাই ঘুরে বেড়ালাম কন্ডাক্টর প্রদত্ত ওই আধঘন্টা সময়টি। আমার পেট ভর্তি ছিল বলে কিছুই খাওয়ার প্রয়োজন হয়নি। কিন্তু হোটেল রেস্টুরেন্টের মধ্যে খাবারদাবার দেখতে ও দরদাম করতে তো অসুবিধা নেই। তাই অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের জন্য কথা বলতে শুরু করলাম দোকানিদের সাথে।
তখনই প্রথম জানলাম বাংলাদেশের রসগোল্লা বিক্রি হয় কেজি দরে। আমাদের দেশের মতো দশ টাকা দিয়ে একটি উদরস্থ করে চলে যেতে পারবেন না। ঠিক কত পরিমান রসগোল্লা আমার একার জন্য কেনা উচিত তা বুঝে উঠতে উঠতেই কখন যেন আধঘন্টা সময় পেরিয়ে গেল। তাই কিছু শুকনো চকলেট আর বিস্কুট ছাড়া কিছুই খাওয়া হয়ে উঠল না তখন। আবার গিয়ে উঠে বসলুম বাসে। এরপর আবার ঘন্টা দুই চলার পর বাস দাঁড়ালো আরেকটি জায়গায়। কন্ডাক্টর বলল নেমে পড়ুন, আবার কুড়ি মিনিটের হল্ট। আবার একইভাবে আমি জায়গার নামের খোঁজ করলাম। তখন জানতে পারলাম জায়গাটি চট্টগ্রাম। এই চট্টগ্রাম নিয়ে বাঙালির অনেক আবেগ। চট্টগ্রাম বললেই মনে পড়ে মাস্টারদা সূর্য সেন, অম্বিকা চক্রবর্তী, অনন্ত সিংহদের দাঁতে দাঁত চেপে লড়াইয়ের কথা। প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদরের বীরত্বের কথা। ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণ থেকে শুরু করে অস্ত্রাগার লুণ্ঠন, সব কিছুর সঙ্গে জড়িয়ে আছে ঐতিহাসিক চট্টগ্রাম। সেখানকার পূণ্য মাটিতে দাঁড়িয়ে একবার স্মরণ করলাম সেইসব মহাত্মাদের। যদিও জায়গাটি ঘুরে দেখার সুযোগ পেলাম না, তবু একবার সেখানকার মাটি ছুঁতে পারলাম এটাও আমার জন্য কম পাওনা নয়। এরপর আবার বাসে উঠে যাত্রা শুরু করলাম। এরপর ঘুম এসে গেল চোখে। যখন চোখ খুললাম, দেখলাম পুব আকাশে রঙিন ছটায় ভরে গেছে দিগন্ত। সেই দৃশ্যের সৌন্দর্য মন ভালো করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। জীবনে প্রথম চেয়ে দেখলাম বাংলাদেশের ভোরের আকাশ। যেন আমার দেশের মতোই সাতরঙে সেজে আছে নিজের রূপে। তখন ভোর পাঁচটা। আর ঘন্টা দুয়েকের মধ্যেই আমি নামব কক্সবাজার কলাতলী বাসস্ট্যান্ডে। গুগল ম্যাপ চালিয়ে দেখলাম আমার বাস ছুটে চলেছে একেবারে ত্রিপুরা বর্ডারের পাশ দিয়ে। অর্থাৎ একটু এগিয়ে গেলেই আবার আমার দেশ। কিন্তু আমি তখন রয়েছি বাংলাদেশের মাটিতে। এই অনুভূতি ভাষায় ব্যক্ত করার নয়। এরপর সঠিক সময়ে বাস আমাকে নামিয়ে দিল কক্সবাজারে। বাস থেকে নেমে হাঁটা দিলাম নির্দিষ্ট হোটেলের উদ্দেশ্যে।

IMG_20240228_072500_232.jpgIMG_20240228_072508_361.jpg

তখন কক্সবাজার কলাতলী মোড়ে

IMG_20240228_014015_585.jpg

রাতের হাইওয়ে

এই হল আমার ঢাকা থেকে কক্সবাজার যাওয়ার বাসযাত্রার অভিজ্ঞতা। ভালো লাগলে নিশ্চয়ই মন্তব্য করে আপনাদের অভিজ্ঞতাও জানাবেন।


Onulipi_08_07_01_37_53-removebg-preview.png

চিত্রগ্রহণ
ইনফিনিক্স হট ৩০
ক্যামেরা স্পেশিফিকেশন
৫০ মেগাপিক্সেল
স্ট্যাটাস
আন এডিটেড
চিত্রগ্রাহক
কৌশিক চক্রবর্ত্তী
লোকেশন
বাংলাদেশ
ছবি এডিটিং সৌজন্য
অণুলিপি

🙏 ধন্যবাদ 🙏


(৫% বেনিফিশিয়ারি এবিবি স্কুলকে এবং ১০% বেনিফিশিয়ারি প্রিয় লাজুক খ্যাঁককে)



1720541518267-removebg-preview.png

Onulipi_07_27_10_21_22.jpg


Yellow Modern Cryptocurrency Instagram Post_20240905_213048_0000.png

new.gif

1720541518267-removebg-preview.png


--লেখক পরিচিতি--

IMG_20240303_181107_644.jpg

কৌশিক চক্রবর্ত্তী। নিবাস পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায়। পেশায় কারিগরি বিভাগের প্রশিক্ষক। নেশায় অক্ষরকর্মী। কলকাতায় লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের সাথে দীর্ঘদিন যুক্ত৷ কলকাতা থেকে প্রকাশিত কবিতার আলো পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। দুই বাংলার বিভিন্ন প্রথম সারির পত্রিকা ও দৈনিকে নিয়মিত প্রকাশ হয় কবিতা ও প্রবন্ধ। প্রকাশিত বই সাতটি৷ তার মধ্যে গবেষণামূলক বই 'ফ্রেডরিক্স নগরের অলিতে গলিতে', 'সাহেবি কলকাতা ও তৎকালীন ছড়া' জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। সাহিত্যকর্মের জন্য আছে একাধিক পুরস্কার ও স্বীকৃতি। তার মধ্যে সুরজিত ও কবিতা ক্লাব সেরা কলমকার সম্মান,(২০১৮), কাব্যলোক ঋতুভিত্তিক কবিতায় প্রথম পুরস্কার (বাংলাদেশ), যুগসাগ্নিক সেরা কবি ১৪২৬, স্রোত তরুণ বঙ্গ প্রতিভা সম্মান (২০১৯), স্টোরিমিরর অথর অব দ্যা ইয়ার, ২০২১, কচিপাতা সাহিত্য সম্মান, ২০২১ তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য।



কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ

ধন্যবাদ জানাই আমার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যবন্ধুদের৷ ভালো থাকুন, ভালো রাখুন।

Drawing_11.png

44902cc6212c4d5b.png


Sort:  
 last month 

বেশ ভালো লাগলো আপনার লিখা পড়ে। বেশ সুন্দরভাবে আপনার কক্সবাজার যাত্রার বর্ণনা দিয়েছেন।সেই সাথে প্রতিটি জায়গার ইতিহাস আপনি বেশ সুন্দর করে উপস্থাপন করেছেন অল্প কথায়। যেমন কথার ভিতরে কথা থাকে তেমনভাবে। ধন্যবাদ দাদা পোস্টটি শেয়ার করার জন্য।

 last month 

চেষ্টা করেছি আপু পোস্টটিকে সুন্দর করার। আপনাদের ভালো লেগেছে শুনলে নিজের কাজকে সার্থক মনে হয়। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 last month 

আপনার সম্পূর্ণ বাস যাএা চমৎকার ভাবে উপস্থাপন করেছেন ভাই। ভাষার অসাধারণ একটা ব‍্যবহার হয়েছে পোস্টে। হানিফ আমাদের দেশের অন‍্যতম সেরা একটা ট্রান্সপোর্ট। তবে এখন ঢাকা কক্সবাজার রুটে ট্রেন চালু হওয়ার কারণে বাসের যাএী বেশ কমে গিয়েছে। সবকিছু দেখতে দেখতে আপনার যাএাটা বেশ ভালোভাবে শেষ হয়েছে দেখছি।

 last month (edited)

চেষ্টা করেছি ভাই সমস্ত বাস যাত্রার বিবরণ ও অভিজ্ঞতা তুলে ধরতে। আমার পোস্ট আপনার ভালো লাগায় আমি আনন্দিত। ভালো থাকবেন।

Coin Marketplace

STEEM 0.16
TRX 0.16
JST 0.029
BTC 68547.43
ETH 2527.38
USDT 1.00
SBD 2.53