কলকাতার গর্ব ঐতিহ্যবাহী ভারতীয় জাদুঘর নিয়ে একটি প্রতিবেদন।
কলকাতার গর্ব ভারতীয় জাদুঘর
আজ আপনাদের সামনে নিয়ে আসবো কলকাতা তথা ভারতের এক উল্লেখযোগ্য ঐতিহ্যকে। যে স্থানে সংরক্ষিত করা আছে প্রাচীন ভারতবর্ষের বিভিন্ন পুরাতত্ত্বিক নিদর্শন থেকে শুরু করে বিভিন্ন মূল্যবান দ্রব্যাদি। আমি কলকাতায় অবস্থিত ভারতীয় জাদুঘরের কথা বলছি। সারা ভারতবর্ষে আয়তনের দিক থেকে এটিই সবথেকে বড় জাদুঘর। সব থেকে বেশি পরিমাণ পুরাতাত্ত্বিক মূল্যবান জিনিসপত্র এই জাদুঘরের সংরক্ষিত করা আছে। তাই সেই দিক থেকে দেখতে গেলে এই জাদুঘর কলকাতার এক ঐতিহ্য এবং গর্বও বটে। সারা ভারতবর্ষে যে কটি বড় জাদুঘর আছে, তার মধ্যে কলকাতায় এই ভারতীয় জাদুঘর এবং হায়দ্রাবাদে নিজামদের সালার জং মিউজিয়াম উল্লেখযোগ্য। কলকাতায় ভারতীয় জাদুঘর সারা ভারতবর্ষে প্রাচীনত্বের দিক থেকেও সবথেকে প্রাচীন। ১৮১৪ সালে এশিয়াটিক সোসাইটি অফ বেঙ্গল কলকাতায় এই জাদুঘরটির গোড়াপত্তন করে। কলকাতা জাদুঘরের প্রথম কিউরেটার ছিলেন ডাচ সাহেব নাথানিয়াল ওয়ালিচ। তিনি তাঁর সংগ্রহে থাকা কিছু মূল্যবান জিনিসপত্র জাদুঘরে দানও করেন। এছাড়াও সোসাইটির সদস্যদের দ্বারা সংগৃহীত পুরাতাত্ত্বিক জিনিসপত্র নিয়ে প্রথম জাদুঘরটি শুরু হয়। আপনারা যদি কলকাতা জাদুঘরে যান, তবে অবশ্যই দেখতে পাবেন এখানকার একটি বিশেষ উল্লেখযোগ্য বিভাগ হল উদ্ভিদ ও প্রাণীতত্ত্ব বিভাগ। সাধারণত ভারতের অন্যান্য জাদুঘরে এই বিভাগটি এত বড় আকারে দেখতে পাওয়া যায় না। আসলে এটিরও কৃতিত্ব সেই ওয়ালিচ সাহেবের।
প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর এশিয়াটিক সোসাইটি কর্তৃপক্ষই এই জাদুঘরের সমস্ত ব্যয়ভার বহন করত। কিন্তু পরে ধীরে ধীরে সরকার এটি অধিগ্রহণ করে এবং এটিকে বিশাল রূপ দান করে। আজ এরমধ্যে যে পরিমাণ দ্রষ্টব্য আছে তা একদিনে যেন ঠিকমতো দেখে শেষ করাই যায় না। সবথেকে উল্লেখযোগ্য হলো এখানে থাকা একটি মিশরের মমি। মিশর থেকে প্রায় আড়াই হাজার বছর পুরনো মমিটি কলকাতায় আনা হয় এই জাদুঘরের স্থান দেওয়ার জন্য। তারপর থেকে এই আসল মমিটি প্রদর্শিত হয়ে আসছে আমাদের কলকাতা জাদুঘরে। এছাড়াও ভারতের ন্যাশনাল এমব্লেম অশোক স্তম্ভ রাখা আছে এই জাদুঘরে। হরপ্পা, মহেঞ্জোদারোর মূর্তি থেকে শুরু করে, প্রাচীন পাল, সেন, গুপ্ত ও মুঘল যুগের মুদ্রা, বিভিন্ন মূল্যবান পাথর এবং প্রাণী ও উদ্ভিদের দেহাবশেষ দ্রষ্টব্যগুলির মধ্যে অন্যতম।
আমার অতিপ্রিয় গন্তব্য এই ভারতীয় জাদুঘর। ছেলেবেলা থেকে যে কতবার এখানে ঘুরতে গেছি তার হাতে গুনে বলবার নয়। জাদুঘরের বাড়িটিও যেন প্রধান দ্রষ্টব্যর মধ্যে অন্যতম। প্রাচীন ভিক্টোরিয়ান স্থাপত্যে নির্মিত এই ভবন বিশাল জায়গা নিয়ে গড়ে উঠেছে। কলকাতার পার্ক স্ট্রিটের অদূরে জিওলজিক্যাল সার্ভে অফিসের পাশে এই ভবন অবস্থিত। ঢুকতে গেলে চোখে পড়বে বিশাল সিঁড়ি এবং আশেপাশে রাখা বহুমূল্যবান পুরাতাত্ত্বিক স্থাপত্য। ঢোকা থেকেই শুরু হবে বিস্ময়। আর এখান থেকে বেরোনোর পর সারাদিন যেন বুঁদ হয়ে থাকতে হয় এইসব স্থাপত্যের মধ্যে। সে এক অদ্ভুত অনুভূতি। মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাবে ভারত তথা বাংলার সমৃদ্ধশালী ইতিহাস।
আজ ইচ্ছে হলো এই ভারতীয় জাদুঘরকে নিয়ে একটি সংক্ষিপ্ত প্রতিবেদন আপনাদের সামনে তুলে আনি। আমার অতি প্রিয় ও পরিচিত গন্তব্য কে আপনাদের সঙ্গে পরিচয় করাই। ভারতের বহু মানুষই হয়তো এই জাদুঘর দর্শন করেছেন। কিন্তু বাংলাদেশের বন্ধুরা কলকাতায় এলে ভারতীয় জাদুঘর ঘুরে যেতে ভুলবেন না। প্রাচীন ভারতের স্থাপত্যের সঙ্গে পরিচয় করবার এমন সুযোগ হয়তো আর অন্য কোথাও পাবেন না৷ তাই এই জাদুঘরে প্রতিদিন লেগেই রয়েছে দেশি এবং বিদেশী পর্যটকদের ভিড়। বর্তমানে এটি ভারতীয় পুরাতত্ত্ব বিভাগের হাতে রয়েছে।
সব মিলিয়ে এই পোস্ট আপনাদের ভাল লাগলে অবশ্যই মন্তব্য করে আমায় জানাবেন।
🙏 ধন্যবাদ 🙏
(৫% বেনিফিশিয়ারি এবিবি স্কুলকে এবং ১০% বেনিফিশিয়ারি প্রিয় লাজুক খ্যাঁককে)
--লেখক পরিচিতি--
কৌশিক চক্রবর্ত্তী। নিবাস পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায়। পেশায় কারিগরি বিভাগের প্রশিক্ষক। নেশায় অক্ষরকর্মী। কলকাতায় লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের সাথে দীর্ঘদিন যুক্ত৷ কলকাতা থেকে প্রকাশিত কবিতার আলো পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। দুই বাংলার বিভিন্ন প্রথম সারির পত্রিকা ও দৈনিকে নিয়মিত প্রকাশ হয় কবিতা ও প্রবন্ধ। প্রকাশিত বই সাতটি৷ তার মধ্যে গবেষণামূলক বই 'ফ্রেডরিক্স নগরের অলিতে গলিতে', 'সাহেবি কলকাতা ও তৎকালীন ছড়া' জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। সাহিত্যকর্মের জন্য আছে একাধিক পুরস্কার ও স্বীকৃতি। তার মধ্যে সুরজিত ও কবিতা ক্লাব সেরা কলমকার সম্মান,(২০১৮), কাব্যলোক ঋতুভিত্তিক কবিতায় প্রথম পুরস্কার (বাংলাদেশ), যুগসাগ্নিক সেরা কবি ১৪২৬, স্রোত তরুণ বঙ্গ প্রতিভা সম্মান (২০১৯), স্টোরিমিরর অথর অব দ্যা ইয়ার, ২০২১, কচিপাতা সাহিত্য সম্মান, ২০২১ তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য।
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
ধন্যবাদ জানাই আমার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যবন্ধুদের৷ ভালো থাকুন, ভালো রাখুন।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
https://x.com/KausikChak1234/status/1839020670421746109?t=6veCIqJ57byLvLWd56OvsA&s=19
এর আগে দাদার পোস্টে কলকাতা জাদুঘর এর অনেক ছবি দেখেছিলাম এবং বিষয় গুলো জেনেছিলাম। সত্যি এটা একটা ঐতিহ্য বহন করে। আজ আপনার পোস্ট থেকে বেশ কিছু তথ্য জানতে পারলাম। তথ্যগুলো আমি আগে জানতাম না। কলকাতা জাদুঘর নিয়ে প্রতিবেদন টা বেশ দারুণ লিখেছেন আপনি। ধন্যবাদ আমাদের সাথে শেয়ার করে নেওয়ার জন্য।।
আমার পোস্ট পড়ে মন্তব্য করবার জন্য অনেক ধন্যবাদ ভাই। জাদুঘর সম্বন্ধীয় আমার জ্ঞাত সমস্ত তথ্য তুলে ধরবার চেষ্টা করেছি। আপনার ভালো লেগেছে শুনে আমি আপ্লুত।