দুই বছরের বন্ধুত্বের উদযাপন। সকলে মিলে রেস্তোঁরায় আড্ডা ও খাওয়া দাওয়া।

in আমার বাংলা ব্লগ12 hours ago

দুই বছরের বন্ধুত্বের উদযাপন

☘️☘️☘️☘️☘️☘️☘️


1727454099977.jpg

🙏🙏সকলকে স্বাগত জানাই🙏🙏

আজ অনেকদিন পরে বন্ধু-বান্ধবেরা মিলে রেস্টুরেন্টে বসে খাওয়া দাওয়া হল একসাথে। ভাবলাম সেই অভিজ্ঞতাটুকুই আজ শেয়ার করি আপনাদের সাথে। অনেকদিন পরে বন্ধুদের সঙ্গে একসাথে কিছুটা সময় কাটাতে ভালই লাগে। আজ আমাদের সকলের কোর্সের সর্বশেষ পরীক্ষা ছিল। পরীক্ষা দিয়ে ফেরবার পথে স্বাভাবিকভাবেই সকলে ক্ষুধার্ত হয়ে পড়ে। ফলস্বরূপ ঠিক হয় সকলে মিলে খাওয়া হবে কোন একটি রেস্তোঁরায় বসে। আর সঙ্গে হবে অফুরান আড্ডা। সেই কথা অনুসারে আমরা চলে এলাম মধ্যমগ্রামে বিখ্যাত রেস্তোঁরা 'চায়ের বাড়ি'তে। চায়ের বাড়ি মধ্যমগ্রাম অঞ্চল তথা কলকাতার আশেপাশে থাকা মফস্বলের বিভিন্ন রেস্তোঁরার মধ্যে বেশ বিখ্যাত। এর আগেও আমি চায়ের বাড়িতে গেছি। চা খেয়েছি। কিন্তু এতজন বন্ধুর সাথে আড্ডা সমেত খাওয়া-দাওয়া এই প্রথম। তাই সবদিক থেকেই একটি সুন্দর সময়ের সাক্ষী রইলাম কিছুক্ষণের জন্য।

1727453214805.jpg

সেখানে ঢুকে আমরা প্রথমে মেনু কার্ডে চোখ বোলালাম। তারপর সকলে মিলে ঠিক করলাম শেয়ার করে আজ বিভিন্ন রকম খাওয়া দাওয়া হবে। এমন ভাবেই মেনু ঠিক করা হোক যাতে সকলের পেটও ভরে আবার মনও ভরে। সেইমতো আমরা প্রথমেই চায়ের বাড়ির বিখ্যাত চা অর্ডার করলাম। সেখানে বিভিন্ন ফ্লেভারের চা পাওয়া যায়। যেমন এলাচ চা, স্ট্রবেরি চা, ভ্যানিলা চা ইত্যাদি। ভ্যানিলা ফ্লেভার আমার বরাবরই প্রিয়। তাই সকলে এলাচ চা অর্ডার করলেও আমি ভ্যানিলা চা অর্ডার করলাম। ভাঁড়ে করে দেওয়া সেই চায়ের স্বাদ যে গ্রহণ করেছে সে কখনো তা ভুলতে পারবে না সহজে। তুলনায় অল্প দামে এত সুন্দর চা আমি সচরাচর কোথাও খাইনি। চা খাবার পর আমরা সকলে একে একে বিভিন্ন ধরনের খাবার অর্ডার করলাম। আমাদের অর্ডার মত প্রথমেই এলো ক্রিসপি চিলি বেবী কর্ন ড্রাই।

1727454676129.jpgIMG_20240927_154546_528.jpg

ছোট ভুট্টা দিয়ে তৈরি করা এই পদ আমার বিশেষ প্রিয়। তাই সকলে প্রথমে এই ভেজ ডিশের স্বাদ গ্রহণ করে তারপরে আমিষ খাবারের দিকে ঝুঁকলাম। আসলে মাছ মাংস ছাড়া বাঙালির খাওয়া যেন অসম্পূর্ণ। তাই বেবী কর্নের পর সকলে অর্ডার করলাম তন্দুরি চিকেন উইংগস। সবদিক থেকে এর স্বাদ ছিল অসাধারণ। সকলে গল্প করতে করতে এই তন্দুরির অসাধারণ স্বাদ গ্রহণ করলাম। কিন্তু সেখানেও আমাদের শান্তি নেই। আরো কিছুক্ষণ গল্পের বেশ বজায় রাখতে হবে যে। তাই আবার মুখ চালাতে হবে। সেক্ষেত্রে পরবর্তী পছন্দ পিৎজা। সেখানেও আমরা সহমত। বন্ধুরা সকলে মিলে খাওয়া দাওয়া করলে এই মতৈক্যের বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ। যা আমাদের মধ্যে সবসময়ই ছিল। তাই সব ধরনের খাবার আমরা সামান্য করে হলেও আস্বাদন করেছি সকলে। চায়ের বাড়ির পিৎজা আমি আগে কখনো খাইনি। তবে আজকে খুব খারাপ লাগলো না। চিকেন বারবিকিউ পিৎজা এবং চিকেন সসেজ পিৎজা উইথ এক্সট্রা চিজ আজকে আমাদের আড্ডার অন্যতম সঙ্গী ছিল।

IMG_20240927_162934_207.jpgIMG_20240927_161559_683.jpg

এই সবকিছুর আসল উদ্দেশ্য হল বেশ কিছুটা সময় একসাথে কাটানো। আজ শেষ পরীক্ষা উপলক্ষে যার গুরুত্ব ছিল আমাদের কাছে অপরিসীম। বন্ধুসঙ্গ মানুষকে অনেক কিছু দেয়। দৈনন্দিন ব্যস্ততার মাঝে এই সামান্য আড্ডাটুকু অনেকটা অক্সিজেন ভরে দেয় বুকের খাঁচায়। আর সেই স্বাসটুকু বেঁচে থাকে বহুদিন। আজকের এই দুর্মূল্য সময় বহুদিন মনে থাকবে। আমরা নয় জন বন্ধু চায়ের বাড়িতে যে মূল্যবান সময়টুকু একসাথে কাটালাম তার স্বাদ পেট থেকে খুব তাড়াতাড়ি উধাও হয়ে গেলেও মন থেকে উধাও হবার নয়। হয়তো আর কোনোদিন আমরা একসঙ্গে পরীক্ষা দেব না। হয়তো আর কোনোদিন আমরা একসাথে যাওয়ার জন্য টাইম টেবিল খুলে ট্রেন দেখব না। কারণ আমাদের কোর্স আজ শেষ হয়ে গেল। কিন্তু আমরা সকলে থেকে যাব সকলের হৃদয়ে। ভুলবো না একসঙ্গে কাটানো এই দুটি বছর। সবকিছুর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হয়ে রয়ে গেল এক বন্ধুর থেকে পাওয়া এই দুই বছরের স্মৃতির একটি দলিল। দিনের শুরুতেই সে যত্ন করে এই দুই বছরের বিভিন্ন ক্যামেরাবন্দি মুহূর্ত গুলি একত্রিত করে সুন্দর খামে আমাদের সকলকে উপহারস্বরূপ দিল। যা পেয়ে যেমন আবেগপ্রবণ হলাম, ঠিক তেমন ভাবেই মন ভরে গেল প্রাপ্তির আনন্দে।

1727454499408.jpg

বন্ধুর দেওয়া উপহার

মানুষ পেশাদারী উন্নতির জন্য এবং প্রয়োজনের ভিত্তিতে হঠাৎ করে ভর্তি হয় বিভিন্ন শাখায় এবং বিভিন্ন কোর্সে। তখন অনেকগুলো অপরিচিত মুখ বিভিন্ন দিক থেকে যেন একই কেন্দ্রীয় বিন্দুতে এসে যুক্ত হয়ে যায়। তারপর একসাথে চলতে থাকে দিন। আর ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে হৃদয়ের বন্ধন। সেখান থেকেই তৈরি হয় বন্ধুত্বের সম্পর্ক। আর শুরু হয় একে অন্যের উপর নির্ভরতা। এই বন্ধুত্ব শেষ হওয়ার নয়। হয়তো পড়াশোনা শেষ হয়ে যায়, হয়তো রোজকার দেখা শেষ হয়ে যায়। কিন্তু মানুষ মানুষকে অত সহজে ভুলতে পারে না। আজ আমরা আমাদের এই দুটি বছরকে কিছুটা স্মরণীয় করে রাখবার জন্যই একসঙ্গে বসেছিলাম কিছুক্ষণ। সময় তো চলেই যায়। সকলকেই একদিন ছেড়ে দিতে হয় সবকিছু। মানুষই তো অমর নয়। কিন্তু তাও আমরা কি সত্যিই ছেড়ে দিতে পারি? আসলে সবটাই যেন আসলে আঁকড়ে থাকার তাগিদ। তাই সবকিছু শেষ হলেও শেষ হয় না সেই সম্পর্কটুকু। আমরাও আজ বদ্ধপরিকর। এই বন্ধুত্ব যেন শেষ না হয়। সামনে চলতে চলতে আমরা আবার এক হব কোনো এক চায়ের বাড়িতে। আবার একসঙ্গে মেনু কার্ড দেখে অর্ডার করবো নিজেদের পছন্দমত খাবার। আর সাথে চলবে জমিয়ে আড্ডা এবং ফেলে আসা দিনগুলোর কথা। আজ জীবনের আরও একটি ধাপ অতিক্রম করলাম। ডিগ্রি সংগ্রহ করা হয়তো সময়ের অপেক্ষা। কিন্তু তার থেকেও মূল্যবান এই বন্ধুত্বের মুখগুলি। হঠাৎ করে এসে মূল স্রোতে মিলে যাওয়া এই বন্ধুত্বটুকু আসলে ডিগ্রির থেকেও যেন উপরি পাওনা। যার জন্য কোনো কোর্স ফি লাগে না। তাই সবটুকুই গুছিয়ে নিলাম আজ। পরবর্তী কোনো সময় এর সুফলটুকুও গুছিয়ে নেব খুব যত্ন করে। ভালো থেকো বন্ধুরা। গুছিয়ে রেখো এই দুই বছরের স্মৃতি।

IMG-20240927-WA0013.jpg

আমরা সবাই


Onulipi_08_07_01_37_53-removebg-preview.png

চিত্রগ্রহণ
ইনফিনিক্স হট ৩০
ক্যামেরা স্পেশিফিকেশন
৫০ মেগাপিক্সেল
স্ট্যাটাস
আনএডিটেড
চিত্রগ্রাহক
কৌশিক চক্রবর্ত্তী
লোকেশন
মধ্যমগ্রাম, কলকাতা
ছবি এডিটিং সৌজন্য
অণুলিপি

🙏 ধন্যবাদ 🙏


(৫% বেনিফিশিয়ারি এবিবি স্কুলকে এবং ১০% বেনিফিশিয়ারি প্রিয় লাজুক খ্যাঁককে)



1720541518267-removebg-preview.png

Onulipi_07_27_10_21_22.jpg


Yellow Modern Cryptocurrency Instagram Post_20240905_213048_0000.png

new.gif

1720541518267-removebg-preview.png


--লেখক পরিচিতি--

IMG_20240303_181107_644.jpg

কৌশিক চক্রবর্ত্তী। নিবাস পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায়। পেশায় কারিগরি বিভাগের প্রশিক্ষক। নেশায় অক্ষরকর্মী। কলকাতায় লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের সাথে দীর্ঘদিন যুক্ত৷ কলকাতা থেকে প্রকাশিত কবিতার আলো পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। দুই বাংলার বিভিন্ন প্রথম সারির পত্রিকা ও দৈনিকে নিয়মিত প্রকাশ হয় কবিতা ও প্রবন্ধ। প্রকাশিত বই সাতটি৷ তার মধ্যে গবেষণামূলক বই 'ফ্রেডরিক্স নগরের অলিতে গলিতে', 'সাহেবি কলকাতা ও তৎকালীন ছড়া' জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। সাহিত্যকর্মের জন্য আছে একাধিক পুরস্কার ও স্বীকৃতি। তার মধ্যে সুরজিত ও কবিতা ক্লাব সেরা কলমকার সম্মান,(২০১৮), কাব্যলোক ঋতুভিত্তিক কবিতায় প্রথম পুরস্কার (বাংলাদেশ), যুগসাগ্নিক সেরা কবি ১৪২৬, স্রোত তরুণ বঙ্গ প্রতিভা সম্মান (২০১৯), স্টোরিমিরর অথর অব দ্যা ইয়ার, ২০২১, কচিপাতা সাহিত্য সম্মান, ২০২১ তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য।



কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ

ধন্যবাদ জানাই আমার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যবন্ধুদের৷ ভালো থাকুন, ভালো রাখুন।

Drawing_11.png

44902cc6212c4d5b.png


Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.16
JST 0.030
BTC 66070.34
ETH 2691.62
USDT 1.00
SBD 2.88