হুগলির বাঁশবেরিয়ায় অবস্থিত বাসুদেব মন্দিরের টেরাকোটার অনবদ্য কারুকার্য। ভ্রমণ পোস্ট।

in আমার বাংলা ব্লগ9 days ago (edited)

হুগলির বাঁশবেড়িয়ায় বিখ্যাত বাসুদেব মন্দিরের কারুকার্য

💮💮💮💮💮💮💮💮💮


FB_IMG_1735575708276.jpg

বাসুদেব মন্দির


🙏 সকলকে স্বাগত জানাই 🙏


প্রথমেই এবিবি কমিউনিটির ভারত ও বাংলাদেশের সকল বন্ধুকে স্বাগত জানাই। শীতের পরিবেশে নিশ্চয় সকলে ভালো আছেন। এই আবহাওয়া সকলের শরীরের দিকে নজর দিন। সার্বিকভাবে সপরিবারে সুস্থ থাকার চেষ্টা করুন।

আজ আপনাদের সামনে বাংলার একটি হারিয়ে যাওয়া শিল্পের নিদর্শন দেখাবো। যে শিল্পটি একসময় বাংলার পরিচয়কে তুলে ধরেছিল সারা বিশ্বের কাছে। সেই শিল্পের নাম টেরাকোটা। আজও আপনারা বিভিন্ন জায়গায় সেই টেরাকোটার ঘোড়া থেকে শুরু করে অন্যান্য দ্রব্যাদির খোঁজ পেয়ে যাবেন। বিশেষ করে যদি বাঁকুড়া বা বিষ্ণুপুরে যান, তবে তো আর কথাই নেই। বিভিন্ন ধরনের টেরাকোটার জিনিসপত্র আপনি একেবারে নাগালের মধ্যে পেয়ে যাবেন। আর কয়েকটি জিনিস না কিনে আপনি কখনোই ফিরতে পারবেন না। আপনারা নিশ্চয় বাঁকুড়ার লম্বা লম্বা গলাওয়ালা ঘোড়াগুলি দেখেছেন। মোটামুটি সকলের বাড়িতেই কোন না কোন সময় এমন ঘোড়া দু একটি ছিল। আর সেগুলিই হলো আমাদের বাংলার বিখ্যাত টেরাকোটা শিল্পের নিদর্শন।

FB_IMG_1735575694000.jpg

FB_IMG_1735575712678.jpg

আমি যখন বাংলার বিভিন্ন দিকে ঐতিহাসিক মন্দির এবং স্থাপত্য দেখতে যাই, তখন এইসব টেরাকোটার কারুকার্য আমাকে রীতিমতো অবাক করে দেয়। আমি বিস্ময়চোখে শুধু দর্শন করি সেই সব মন্দিরের অসাধারণ কারুকার্য। বাঁকুড়া জেলায় অবস্থিত বিষ্ণুপুরকে আমরা মন্দির নগরী বলে থাকি। কিন্তু বাংলায় শুধুমাত্র বিষ্ণুপুরেই টেরাকোটা শিল্পের নিদর্শন দেখা যায় না। এই বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে এমন টেরাকোটার দু একটি মন্দির বিচ্ছিন্নভাবে আজও পড়ে আছে অবহেলায়। স্থানীয় প্রশাসন ব্যবস্থা নিলে সেগুলিকে অচিরেই সংস্কার করে আবার নতুন করে তৈরি করা যায়। কিন্তু সেইসব বিভিন্ন টেরাকোটার মন্দির আজ ভগ্নপ্রায়।

FB_IMG_1735575698310.jpg

বাসুদেব মন্দিরের টেরাকোটা শিল্প

বিষ্ণুপুর ছাড়াও আজ আপনাদের দুটি জায়গার টেরাকোটা মন্দিরের কথা বলব। একটি মন্দির আজও ঠিকে আছে হুগলি জেলার বাঁশবেড়িয়া অঞ্চলে হংসেশ্বরী মন্দিরে। এই মন্দিরের পাশেই স্থানীয় রাজা নৃসিংহদেবের তৈরি করা একটি বাসুদেব মন্দির আজও অক্ষত। আপনারা যদি কখনো সেই মন্দিরে গিয়ে তার মুগ্ধ করা কারুকার্য দর্শন করতে পারেন, তবে অবশ্যই অবাক হবেন। কারণ আজ থেকে এতদিন আগে এমন সুন্দর কারুকার্য ভাবনা চিন্তাও করা যায় না। শিল্পীদের কি অসামান্য দক্ষতায় এই সব কারুকাজ মন্দির গাত্রে ফুটে উঠতো, তা ভাবলেই যেন অবাক লাগে। মন্দিরের গায়ে বিভিন্ন রকমের দেবদেবীর খোদাই করা চিত্র। কোন জায়গা বাদ নেই। যেখানেই তাকাবেন, সেখানেই পোড়ামাটির কারুকার্য। যেন স্বয়ং বিশ্বকর্মা এসে সময় নিয়ে তৈরি করে গেছেন সেই সব মন্দিরগুলিকে। অথচ দেখুন কোন রকম যন্ত্র ছাড়াই শুধুমাত্র হাতে কত সুন্দর করে তৈরি করা হয়েছে এই সব মন্দিরের শিল্পকর্মগুলি। ভাবলেই অবাক লাগে না?

FB_IMG_1735575701010.jpg

বাংলার মন্দির শিল্পে এক অন্যতম নিদর্শন হলো টেরাকোটা। অর্থাৎ মাটি দিয়ে বিভিন্ন ডিজাইন তৈরি করে তাকে আগুনে পুড়িয়ে শক্ত করে নেয়া হয়। যাকে এক কথায় পোড়া মাটি বলে। বাংলার আরো কিছু টেরাকোটার মন্দির দেখা যায় মুর্শিদাবাদ জেলার বরানগর গ্রামে চারমন্দিরে। এটি মুর্শিদাবাদ শহরের অদূরেই অবস্থিত। নাটোরের রানী ভবানী এই মন্দিরগুলি একসময় বানিয়েছিলেন। সেখানেও টেরাকোটা শিল্পের অসামান্য নিদর্শন আজও দেখা যায়।

FB_IMG_1735575703442.jpg

আজ আপনাদের সঙ্গে হুগলির বাঁশবেড়িয়ায় হংসেশ্বরী মন্দিরের পাশেই অবস্থিত টেরাকোটায় নির্মিত বাসুদেব মন্দির এর কিছু অসামান্য কারুকার্যের ছবি শেয়ার করলাম। এই সব কিছুই বানানো হয়েছে প্রায় সাড়ে তিনশো বছর আগে। রাজা নৃসিংহদেব এই মন্দির নির্মাণ শুরু করেছিলেন ১৭৯৯ সালে। কিন্তু তাঁর মৃত্যুর ফলে ১৮১৪ সালে তাঁর স্ত্রী এই মন্দির নির্মাণ শেষ করেন। হংসেশ্বরী মন্দির নিকটস্থ টেরাকোটার বাসুদেব মন্দির জমিদার রামেশ্বর দত্ত ১৬৭৯ সালে নির্মাণ করেন। এই দুটি মন্দিরেরই স্থাপত্যশৈলী অবাক করে দেওয়ার মত। তারমধ্যে বাসুদেব মন্দিরের অসামান্য টেরাকোটার কারুকার্য যেন বিস্মৃত করে দেয় এক মুহূর্তের মধ্যে। অথচ বহু মানুষ আজও যাননি এমন সুন্দর মন্দিরটি দর্শন করতে। ইতিহাসপ্রেমীদের কাছে এই মন্দির এক সোনার খনি হয়ে উঠতে পারে। সার্বিকভাবে মন্দিরের আশপাশের পরিবেশও আমাকে মুগ্ধ করে দিয়েছিল।

FB_IMG_1735580168032.jpg

হংসেশ্বরী মন্দির


Onulipi_08_07_01_37_53-removebg-preview.png

চিত্রগ্রহণ
ইনফিনিক্স হট ৩০
ক্যামেরা স্পেশিফিকেশন
৫০ মেগাপিক্সেল
স্ট্যাটাস
আনএডিটেড
চিত্রগ্রাহক
কৌশিক চক্রবর্ত্তী
লোকেশন
বাঁশবেড়িয়া, হুগলি, পশ্চিমবঙ্গ
কভার ছবি এডিটিং সৌজন্য
অণুলিপি

🙏 ধন্যবাদ 🙏


(১০% বেনিফিশিয়ারি প্রিয় লাজুক খ্যাঁককে)



1720541518267-removebg-preview.png

Onulipi_07_27_10_21_22.jpg


Yellow Modern Cryptocurrency Instagram Post_20240905_213048_0000.png

new.gif

1720541518267-removebg-preview.png


--লেখক পরিচিতি--

IMG_20240303_181107_644.jpg

কৌশিক চক্রবর্ত্তী। নিবাস পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায়। পেশায় কারিগরি বিভাগের প্রশিক্ষক। নেশায় অক্ষরকর্মী। কলকাতায় লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের সাথে দীর্ঘদিন যুক্ত৷ কলকাতা থেকে প্রকাশিত কবিতার আলো পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। দুই বাংলার বিভিন্ন প্রথম সারির পত্রিকা ও দৈনিকে নিয়মিত প্রকাশ হয় কবিতা ও প্রবন্ধ। প্রকাশিত বই সাতটি৷ তার মধ্যে গবেষণামূলক বই 'ফ্রেডরিক্স নগরের অলিতে গলিতে', 'সাহেবি কলকাতা ও তৎকালীন ছড়া' জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। সাহিত্যকর্মের জন্য আছে একাধিক পুরস্কার ও স্বীকৃতি। তার মধ্যে সুরজিত ও কবিতা ক্লাব সেরা কলমকার সম্মান,(২০১৮), কাব্যলোক ঋতুভিত্তিক কবিতায় প্রথম পুরস্কার (বাংলাদেশ), যুগসাগ্নিক সেরা কবি ১৪২৬, স্রোত তরুণ বঙ্গ প্রতিভা সম্মান (২০১৯), স্টোরিমিরর অথর অব দ্যা ইয়ার, ২০২১, কচিপাতা সাহিত্য সম্মান, ২০২১ তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য।



কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ

ধন্যবাদ জানাই আমার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যবন্ধুদের৷ ভালো থাকুন, ভালো রাখুন।

Drawing_11.png

44902cc6212c4d5b.png

First_Memecoin_On_Steemit_Platform.png

hjh.png


Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 9 days ago 

হুগলির বাঁশবেরিয়ায় অবস্থিত বাসুদেব মন্দির ভ্রমণ করেছেন জেনে বেশ খুশি হলাম। মন্দিরের কারুকার্য এর সৌন্দর্য বেশ অসাধারণ। টেরাকোটার অনবদ্য কারুকার্যে এমন সুন্দর দেখে বেশ মুগ্ধ হলাম। ধন্যবাদ আপনাকে পোস্টটি শেয়ার করার জন্য।

 9 days ago 

Daily tasks-

Screenshot_20241230-232019.jpgScreenshot_20241230-231853.jpgScreenshot_20241230-231810.jpgScreenshot_20241230-231707.jpg

Coin Marketplace

STEEM 0.35
TRX 0.25
JST 0.039
BTC 94857.25
ETH 3339.68
USDT 1.00
SBD 7.25