শৈশবের ফেলা আসা দিনগুলির স্মৃতি - "ছোট্টবেলায় রাস্তা ভুলে নিজেই হারিয়ে যাওয়া।
আস্সালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ
হ্যালো বন্ধুরা, আপনারা সবাই জানেন যে আমাদের সম্মানিত ফাউন্ডার বড় দাদা একটি নতুন সিরিজ শুরু করেছেন। সেই সিরিজের নাম হলো শৈশবের ফেলা আসা দিনগুলির স্মৃতি। আমাদের দাদা প্রায় সময় তিনির নিজের জীবনের কিছু কিছু স্মৃতি আমাদের মাঝে শেয়ার করে থাকেন। আমরাও সে মধুর স্মৃতির গল্প গুলো পড়ে অনেক মজা পায়। দাদার কয়েকটি গল্প পড়ে অনেক হেঁসেছি। বিশেষ করে নিজের ঘরের মিষ্টি চুরি করে খাওয়ার গল্প,হা হা হা।
দাদা গত কাল আবার ছোট্টবেলায় নিজেকে হারিয়ে ফেলার একটি ছোট গল্প শেয়ার করেছেন। সেই সাথে দাদা সবাইকে নিজের শৈশবের ফেলা আসা দিনগুলির স্মৃতি শেয়ার করতে উৎসাহিত করেছেন। আর সবার স্মৃতি গুলোই হবে সিরিজের এক একটি অংশ। সেই সুবাদে আমিও আজকে এই সিরিজে প্রথম নাম লেখাতে যাচ্ছি। আমিও আজকে শৈশবের ছোট একটি ঘটনা শেয়ার করবো। আমিও একদিন নানার বাড়িতে যাওয়ার সময় হারিয়ে গেছিলাম। সেই গল্পটাই আজকে শেয়ার করতে যাচ্ছি।
প্রায় ষোল থেকে সতের বছর আগের কথা। তখন আমি কোন ক্লাসে পড়তাম সেটা মনে নেই। সম্ভবত ক্লাস টু অথবা থ্রিতে হবে। ঐ সময় স্কুল বন্ধ দিলেই আমরা নানার বাড়িতে বেড়াতে যেতাম। ঐ বছর প্রচুর শীত পড়েছিল। পাচঁদিন সাতদিন সূর্য মামার দেখা পাওয়া যেত না। চার দিকে কুয়াশায় অন্ধকার হয়ে যেত। স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরের দিন সকাল বেলা আমি আমার বড় ভাই আর আমার ছোট বোন দাদার সাথে নানাবাড়িতে বেড়াতে যাচ্ছিলাম। তখন বাবা কাজের ব্যস্ততার জন্য যেতে পারতো না। আর বাবাকে ছাড়া মা ও যেতে চায় না। কিন্তুু আমাদেরকে তো আর আটকিয়ে রাখতে পারে না। সবার মত আমরাও নানার বাড়ির খুব পাগল ছিলাম। আমার মনে হয় আমার মত সবাই ছোট সময় নানার বাড়ির জন্য পাগল থাকে।
যায়হোক আমরা তিন ভাই বোন আর দাদা বাড়ি থেকে হেটেঁ হেটেঁ বাস স্টেশনে গিয়েছি। আমাদের বাড়ি থেকে বাস ষ্টেশন বেশি দুরে না। হেটেঁ গেলে দশ থেকে বারো মিনিট লাগে। তখন তেমন গাড়িও পাওয়া যেত না আর রাস্তাও তেমন ভাল ছিল না। যায় ফলে আমরা হেঁটেই চলে গেছি। বাসে চড়ে রামরাইল স্টেশনে না নেমে গজারিয়া স্টেশনে নেমে গেছি। এই দুই স্টেশনে নেমেই নানা বাড়িতে যেতে হয়। রামরাইল স্টেশন থেকে রাস্তা দিয়ে হেঁটে গেলে নানা বাড়ি একটু দুরে হয়। আর গজারিয়া স্টেশন থেকে জমির উপর দিয়ে হেটেঁ গেলে একটু কম সময় লাগে। তো আমরা গজারিয়া স্টেশন থেকে চার পাচঁ মিনিট হেটেই রাস্তা ছেড়ে জমিতে নেমে গেলাম। তখন জমিতে তেমন ধান ছিল না। সব ধান কেটে ফেলছে খালি মাঠ। কোন কাদা পানিও নেই। মাঝে মাঝে দুই একটি জমিতে ধান রয়েছে। তখন চার পাশে প্রচুর কুয়াশা। দশ হাত দুরের কোন কিছু দেখা যায় না। হাটতে হাটতে সামনে একটি জমি আসলো,সেই জমিতে ধান গাছ আছে। আমরা তো আর ধান গাছের উপর দিয়ে যেতে পারি না। তাই জমির পাশ দিয়ে আইল ধরে যেতে হবে। দাদা,বড় ভাই আর বোন গেল জমির উত্তর পাশের আইল দিয়ে আর আমি একা গেলাম দক্ষিন পাশের আইল দিয়ে। ব্যস দুই মিনিট পরেই আমি রাস্তা সহ তাদেরকেও হারিয়ে ফেলেছি।
চার দিকে কুয়াশা কিছুই দেখা যায় না। কোথায় যাবো, কোন দিকে যাবো কিছুই বুঝতেছি না। কোন উপায় না পেয়ে কান্না শুরু করে দিলাম। কিন্তুু আমার কান্না কে শুনে আর কে দেখে। এত কুয়াশার মধ্যে মাঠে কোন মানুষও নেই। আমার এটা খেয়াল আছে যে নানা বাড়ি পশ্চিম দিকে আমি সোজা পশ্চিম দিকে হাটতে লাগলাম। হাটতে হাটতে সামনে গিয়ে পড়লো এক কবরস্থান। কবরস্থান দেখে আরও ভয় পেয়ে গেলাম। তখন আবার পূর্ব দিকে দৌড়াচ্ছি আর কান্না করছি। রোদ তো উঠছেই না বরং কুয়াশা আরো বাড়ছে। কোন দিকে যাবো কোন কিছু না বুঝে মাঠের মাঝখানে বসে কান্না করতে লাগলাম।
ঐদিকে দাদা,বড় ভাই আর ছোট বোন নানা বাড়িতে পৌছে গেছে। সবাই নানিকে বলতে লাগলো রামিম আসে নাই..? নানা বাড়ির সবাই বললো না। সে কোথায়..? ছোট বোন আর ভাই বললো সে আমাদের সাথেই ছিল কিন্তুু মাঠের মধ্যে অন্য রাস্তা দিয়ে যেতে গিয়ে হারিয়ে গেছে। তখন নানা বাড়ির সবাই পাগল হয়ে আমাকে খুঁজতে লাগলো। মামারা কয়েকজন মাইক নিয়ে বের হয়ে গেল। সারা বাড়িতে হৈ হোল্লর পড়ে গেল। আমার পাচঁ মামা মাঠের পাচঁ দিকে বের হয়ে আমাকে ডাকতে লাগলো আর খুজতে লাগলো। এত বড় মাঠের মধ্যে আমাকে আর কোথায় খুঁজে পায়।
আমি অনেক্ষন বসে থেকে পশ্চিম দিকে গিয়ে ভয় পেয়ে দক্ষিণ দিকে হাটতে লাগলাম। সেদিকে হাঁটতে হাটঁতে নানা বাড়ির গ্রামে বাজারে উঠলাম। বাজারের মধ্যে তিন নাম্বার মামা মাইক নিয়ে আমাকে খুজঁতেছে। সেখানে নানা বাড়ির একটি ছেলে আমাকে দেখে চিনে ফেলে। তারপর আমাকে ধরে নিয়ে মামার হাতে তুলে দেয়। সেখান থেকে মামা আমাকে কুলে করে বাড়ি নিয়ে আসে। বাড়ি এসে দেখি নানি আর আন্টিরা কান্নাকাটি করতেছে। আমাকে জড়িয়ে ধরে বলতেছে কোথায় হারায় গেছিলাম,যদি এখন হারায় যেতাম তাহলে বাবা মার কাছে কি জবাব দিতো। তারপর আমাকে দুধ আর গরম পানি দিয়ে গোসল করিয়ে ভাত খেতে দিলো।
সেই দিন যদি আমাকে খুঁজে পাওয়া না যেত তাহলে আমার যে কি অবস্থা হতো আল্লাহই জানে। হয়তো এখনো আমাকে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতে হতো। নাম ঠিকানা হীন পথে পথে জীবন পার হতো।
সবাইকে ধন্যবাদ। আল্লাহ হাফেজ।।
আমি একজন বাংলাদেশের সাধারন নাগরিক। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাতে আমার বসবাস। সিম্পল আমার স্বপ্ন সিম্পল আমার জীবন। স্টিমিট আমার জীবনের একটি অংশ, আমার বাংলা ব্লগ আমার পরিবার। বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া বলতে আমি স্টিমিটকেই চিনি। ভ্রমন করা, ফটেগ্রাফি করা,ডিজাইন করা আর বই পড়া আমার স্বপ্ন। আমি বিশ্বাস করি মানুষের জীবনে উত্তান পতন আছেই। সর্বপরি কাজ করতে হবে লেগে থাকতে হবে, তাহলেই একদিন সফলতা আসবে,এটাই আমি বিশ্বাস করি। সবাইকে ধন্যবাদ।।
Bangla Witness কে সাপোর্ট করতে এখানে ক্লিক করুন
এখানে ক্লিক করো ডিসকর্ড চ্যানেলে জয়েন করার জন্য
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP 500 SP 1000 SP 2000 SP 5000 SP
Click Here For Join Heroism Discord Server
Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
please click it!
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)
The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.
গল্পটি আপনার দাদুর কাছ থেকে শুনেছেন। তবে একটা বিষয় ঠিক বলেছেন ওই সময় যখন শীত পড়তো তখন সব তাকে সপ্তাহে কেটে যেত সূর্যের মুখ দেখতো না মানুষ। গ্রামের মানুষগুলো অনেকগুলো সিটি এক জায়গায় করে আগুন ধরে সবাই মিলেমিশে আগুন তাপাতো। আর ওই সময় এত কুয়াশা করত যে এক হাত দুর থেকেও কোন কিছু দেখা যেত না। আপনি হারিয়ে গিয়েছিলেন এবং আপনার তিন নম্বর মামা মাইক নিয়ে খুঁজছিল এটা বেশ ভালো ছিল। তবে ঐদিন আপনি যদি হারিয়ে যেতেন তাহলে আমার বাংলা ব্লগে আপনাকে আমরা পেতাম না। আর আপনার সাথে এত মজা করে কথা বলতে পারতাম না। আপনার দাদুর কেয়ার করা গল্পটি আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে ধন্যবাদ আপনাকে।
না ভাই আমার হারিয়ে যাওয়া গল্পটা আমার পুরোপুরিই মনে আছে। আর হারিয়ে গেলে কি যে হতো আল্লাহই জানে। ধন্যবাদ ভাইয়া।
সত্যি ভাই আপনার জীবনের শৈশবে ফেলে আসা স্মৃতিগুলো আমার কাছেও বেশ দারুন লেগেছে। গল্পটি পড়ে সত্যি ভাই আমি মুগ্ধ হয়েছি। আসলে ছোটবেলার কাহিনী গুলো সবার মনে থাকে না তাই গুরুজনদের কাছ থেকে সবাই জানতে পারে আপনিও তার ব্যতিক্রম নয় আপনি আপনার দাদুর কাছ থেকে জেনেছেন । জানতে পেরে বেশ ভালো লাগলো আমার। ঠিক বলেছেন ভাই আপনি আগে শীতের সময় গ্রামের মানুষ সবাই এক জায়গায় আগুন পোহাতে এই বিষয়টা কিন্তু আমার কাছে এখনো বেশ ভালো লাগে। আসলে আপনি ছোটবেলায় হারিয়ে গিয়েছিলেন এবং আপনার মেজ মামা মাইক নিয়ে খুঁজে ছিল এই বিষয়টা সত্যি যদি এখন মনে পড়ে বেশ মজা লাগে ভাই। ধন্যবাদ ভাই ছোটবেলার শৈশব আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
নাহ ভাইয়া আমি তো নিজেই আমার হারিয়ে যাওয়ার ঘটনাটা শেয়ার করেছি। ধন্যবাদ ভাইয়া।
একদিন এমন একটা ঘটনা ছোটবেলায় আমার জীবনে ঘটেছিল, তাই স্মরণ করতে পারলাম অনেকদিন পর আপনার এই পোষ্টের মাধ্যমে। খুব সুন্দর ভাবে আপনি উপস্থাপন করেছেন ছোটবেলার এই ঘটনাটি। তবে আপনি কুয়াশার কবলে পড়েছিলেন,আর আমরা পড়েছিলাম সরিষা গাছের নিচে তাই পথ ভুলে গেছিলাম।
জী ভাইয়া কুয়শার কবলে পড়ে হারিয়ে যাচ্ছিলাম। ধন্যবাদ ভাইয়া।
ছোটবেলার স্মৃতি গুলো কখনোই ভোলার নয়।এটা সত্য যে গ্রামের মানুষ শীতের সময় একসঙ্গে খরকুটো পুড়িয়ে আগুনের তাপ পোহাতো।আপনার ছোটবেলার স্মৃতি গুলো খুবই সুন্দর কাটিয়েছেন। ছোটবেলার স্মৃতি ও অনুভূতি প্রকাশ করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
জী ভাইয়া এসব স্মৃতি ভুলার মত নয়। ধন্যবাদ ভাইয়া।