মর্মান্তিক এক্সিডেন্ট
আজ--১৩ ফাল্গুন | ১৪৩০ বঙ্গাব্দ | সোমবার | বসন্তকাল |
আসসালামু ওয়ালাইকুম,আমি জীবন মাহমুদ, আমার ইউজার নাম @jibon47। বাংলাদেশ থেকে। আশা করি আপনারা সবাই ভালো আছেন। আলহামদুলিল্লাহ আমি আপনাদের দোয়ায় ভালোই আছি মাতৃভাষা বাংলা ব্লগিং এর একমাত্র কমিউনিটি [আমার বাংলা ব্লগ] ভারতীয় এবং বাংলাদেশী সদস্যগণ, সবাইকে আমার পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন।
- প্রিয় কমিউনিটি,আমার বাংলা ব্লগ
- মর্মান্তিক এক্সিডেন্ট
- আজ-১৩ইফাল্গুন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
- সোমবার
তো চলুন শুরু করা যাক...!
শুভ দুপুর সবাইকে......!!
আমি সবসময়ই একটা জিনিস অনেক গভীরভাবে মাথায় রাখি সেটা হচ্ছে যে ছোট্ট একটা অ্যাক্সিডেন্ট হতে পারে সারা জীবনের কান্না। আমরা অনেকেই আছি যারা বাইক চালাতে অনেক বেশি পছন্দ করি বাইক নিয়ে কোথাও ঘুরতে যেতে আমাদের অনেক বেশি ভালো লাগে। ঠিক তেমনি ভাবে এমন অনেক মানুষ আছে যারা বাইক এর গতি সবসময়ই অনেক বেশি রাখে বা এত স্পিডে বাইক চালায় যে সে নিজের জীবনের চিন্তাও করে না সাথে আশেপাশের মানুষদের জীবনের চিন্তাও করে না সে সবসময়ই এক ভিন্ন ধরনের মানুষ সেই সাথে তার গাড়ি চালানোর ধরণটাও অন্য সবার থেকে ভিন্ন। এ কথাগুলো আমি কেন বললাম সেটা এখন আপনাদের মাঝে বলি। গত শুক্রবার ভার্সিটির ক্লাস করে বাসে করে ফ্যাক্টরির উদ্দেশ্যে আসছিলাম। আপনাদের একটু জানিয়ে রাখি গত কিছুদিন আগে আমার একটা ফ্যাক্টরিতে জব হয়েছে এ ব্যাপারে নতুন আরেকটা পোস্টে বিস্তারিত ভাবে বলবো। তো ক্লাস শেষ করে আসতে আসতে আমার প্রায় সন্ধ্যা ছটা বেজে গিয়েছিল। বাস থেকে নামার পরেই আমি ভাবলাম যে পাশের চায়ের দোকান থেকে বসে এক কাপ চা খাই। অনেকটাই ক্লান্ত ছিলাম আর ক্লান্ত শরীরে রুমের মধ্যে গিয়ে একা একা বসে থাকার থেকে ভাবলাম এখানে বসে কিছুটা সময় আশেপাশের পরিবেশটা দেখি।
হঠাৎ করেই চিৎকার চেঁচামেচিতে চারিদিকে কেমন যেন হট্টগোল বেঁধে গেল। চায়ের কাপের তখন সবেমাত্র কয়েকটা চুমুক দিয়েছি। চায়ের কাপটা ওখানেই রেখে চায়ের বিল দিয়ে ব্যাগটা কাঁধে নিয়ে দৌড়ে চলে গেলাম সামনের দিকে। সামনের দিকে গিয়ে দেখি একটা বৃদ্ধ রাস্তার মাঝে পড়ে রয়েছে। বৃদ্ধ বলতে হতে পারে তার সন্তান অথবা তার আপন জন কেউ নেই কারণ তার পোশাক চলন বলন দেখে তেমনটাই মনে হচ্ছিল। যদিও বর্তমান সময়ে শহরে এমন অনেক মানুষ আছে যাদের সন্তান রয়েছে আপন মানুষ রয়েছে তার পরেও তারা এমন ভাবে চলে দেখে মনে হয় আসলে ই সে সন্তানহারা ঠিক তেমনি ভাবে এমন অনেক সন্তান আছে যারা মা-বাবার খোঁজ রাখে না। আমি তার পোশাক পরিচ্ছেদ দেখে বুঝতে পারলাম যে এ হয়তোবা কোন এক ভিক্ষুক। ধরে কাছে গিয়ে দেখি যে সে রাস্তার মাঝে পড়ে রয়েছে আমি পৌঁছানোর আগেই কয়েকজন লোক তাকে ধরে রাস্তার সাইডে নিয়ে আসলো। রাস্তার সাইডে নিয়ে আসার পরে দেখি যে সে খুবই মারাত্মকভাবে আহত হয়েছে। তার কতটা এরকম ছিল যে তখন তার সেন্স ছিল না।
পাশে থাকা একটা বেঞ্চের উপর তাকে শুইয়ে দেওয়া হয় তারপরে পাশের দোকান থেকে পানি নিয়ে এসে তার মাথায় কিছুক্ষণ পানি দেওয়া হয় তিন থেকে চার মিনিট পরে তার সেন্স ফিরে আসে। তবে সব থেকে ভালো ব্যাপার হচ্ছে তার কোথাও সেরকম ভাবে ভেঙে যায়নি কয়েকটি জায়গায় শুধুমাত্র একটু কেটে গিয়েছে। পরবর্তীতে অবশ্য বুঝতে পারলাম যে কোন এক বাইকার তাকে ধাক্কা দিয়ে বাইক জোরে চালিয়ে চলে গিয়েছে আশেপাশে থাকা মানুষগুলো তাকে থামতে বলেছে কিন্তু সে কোন রকম ভাবেই থামেনি না থেমে বাইক জোরে টেনে চলে গিয়েছে। যেটা সত্যিই অনেক বেশি অমানবিক ছিল।
এখন কথা হচ্ছে যে এই যে মানুষটা এখানে পড়ে রয়েছে এই মানুষটার চিকিৎসা খরচ এখন কে দেবে..?? যদিও আশেপাশের মানুষ তাকে অনেক রকম ভাবেই সাহায্য করেছে কিন্তু সেই লোকটা উঠে দাঁড়াতে পারছিলো না শেষ শুয়ে ছিল কোন রকম কথা বলতে পারছিল না। রাস্তা দিয়ে তখন অনেক মানুষ যাচ্ছিল আর তাকে দেখতে আসছিল কারণ সেখানে অনেক মানুষের ভিড় ছিল। সেখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পুরো ব্যাপারটা লক্ষ্য করে দেখলাম যে আশেপাশে থাকা মানুষগুলো ওই মানুষটাকে অনেক রকম অভিশাপ দিচ্ছে। সেই মানুষটাকেই মানুষ অভিশাপ দিচ্ছে যে মানুষটা এই ভিক্ষুককে বাইক দিয়ে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়ে সেখান থেকে চলে গিয়েছে। কিছু কিছু মানুষ এমন বলছে যে যে এই কাজটা করে চলে গিয়েছে তারও কোনো না কোনো একদিন এরকমই এক্সিডেন্ট হবে এরকম ভাবেই সে পথে পড়ে থাকবে। এবার তাহলে আপনারাই বলুন এই মানুষগুলোর অভিশাপ বা গালমন্দ গুলো ওই মানুষটাকে কোনভাবে শুনতে পারবে..?? বিশেষ করে আশে পাশে থাকা মহিলা গুলো ওই বাইকারের অনেক বেশি অভিশাপ দিচ্ছিল। যদিও তাদের এরকম কথা শুনে খারাপ লাগছিল। আবার এই পড়ে থাকা ভিক্ষুকের জন্য আরো বেশি খারাপ লাগছিল।
যাই হোক যেহেতু লোকরা এক্সিডেন্ট করে এখানে পড়ে আছে তার আর তার সাহায্যের কেউ নেই আশে পাশে থাকা মানুষগুলো তাকে কিছুটা আর্থিকভাবে সাহায্য করেছিল। কিন্তু সব থেকে বেশি দুঃখের ব্যাপার হচ্ছে এই লোকটা উঠে বসতে পারছে না সে শুয়ে শুয়ে শুধু তাকিয়ে আছে মাঝে মাঝে কথা বলার চেষ্টা করছে কিন্তু সে কথাও বলতে পারছে না। এরকম একটা দৃশ্য দেখে সত্যিই নিজের কাছে অনেক বেশি খারাপ লাগছিল এই খারাপ লাগা হয়তোবা বলে বোঝানো সম্ভব নয়। এরকম দৃশ্য দেখে আর বেশিক্ষণ সেখানে থাকতে পারেনি সেখান থেকে চলে এসেছিলাম। এরপরে নিজের রুমে চলে যাই নিজের রুমে গিয়ে কিছুটা সময় রেস্ট করে ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম কখন বুঝতেই পারিনি। ঘুম থেকে উঠে দেখি প্রায় রাত্রি নটা বাজে আর যেহেতু রাত্রি নটা বেজে গিয়েছে রাতের খাবার খেতে হবে। রাতের খাবার খেয়ে আমি আবার একটু বাহিরে বের হই।
মূলত বাহিরে বের হওয়ার উদ্দেশ্য ছিল ভিক্ষুকটা এখন পর্যন্ত সেখানে আছে নাকি অন্য কোথাও চলে গিয়েছে সেটা দেখার। সাড়ে নয়টার সময় বাহিরে বের হয়ে দেখতে পায় যে সেই মানুষটা আর সেখানে নেই এরপরে পাশে থাকা সেই দোকানদারের কাছে জিজ্ঞেস করাতে সে বলল কেউ একজন এসে তাকে নিয়ে গিয়েছে। মনে মনে চিন্তা করলাম যে ভালোই হয়েছে হয়তোবা তার সন্তান অথবা আত্মীয়-স্বজনের কেউ খোঁজ পেয়েছে যার কারণে তাকে নিয়ে গিয়েছে। যাই হোক, লোকটা হয়তোবা কিছুদিন অসুস্থ থাকার পরে আবার সুস্থ হয়ে উঠবে কিন্তু যেই বাইকার এমন একটা কাজ করে দিয়ে চলে গেল তার কি হবে। সেই মানুষটা চলে যাওয়াটা মোটেও উচিত হয়নি সে হয়তোবা এক্সিডেন্ট করেছে কিন্তু তার উচিত ছিল সেখানে দাঁড়িয়ে লোকটাকে অন্ততপক্ষে সরি বলা। এমন অনেক মানুষ আছে যারা অনেক ভুল করে কিন্তু ভুল শুধরাতে চায় না।
যাই হোক আমাদের সকলেরই উচিত সাধারণ একটা গতিতে বাইক চালানো কখনোই ফুল স্পিডে বাইক চালানো উচিত নয়। আর যদি কেউ ফুল স্পিডে বাইক চালায় তাহলে বাইকটা যেন সে নিজের কন্ট্রোল এর মধ্যে রাখতে পারে এরকম ভাবেই বাইক চালানো উচিত। আপনি কন্ট্রোল হারিয়ে অন্য কাউকে কখনোই ক্ষতি করতে পারেন না এরকম কোন অধিকার আপনাকে দেওয়া হয়নি। এটাই ছিল আমার আজকের পোস্ট আশা করছি আমার এই সতর্কতামূলক পোস্ট আপনাদের অনেক বেশি ভালো লেগেছে। আজ আর নয় এখানেই শেষ করছি, সকলেই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন এবং আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটি পরিবারের সঙ্গেই থাকুন। ধন্যবাদ সকলকে...!!!
আমার পোষ্ট দেখার জন্য আপনাদের অনেক ধন্যবাদ। আশা করছি আপনাদের কাছে আমার এই পোস্ট খুবই ভালো লেগেছে। আমার এই পোস্ট পরে সুন্দর মন্তব্যের মাধ্যমে আমাকে অনুপ্রাণিত করবেন বলে আশা রাখি। আপনার সুন্দর মন্তব্যই আমার কাজ করার অনুপ্রেরণা
বিভাগ | জেনারেল রাইটিং |
---|---|
বিষয় | মর্মান্তিক এক্সিডেন্ট |
পোস্ট এর কারিগর | @jibon47 |
অবস্থান | [সংযুক্তি]source |
আমি জীবন মাহমুদ, আমার ইউজার নেম @jibon47। আমি মাতৃভাষা এবং মাতৃভূমিকে অনেক বেশি ভালোবাসি। আব্বু আম্মু আর ছোট বোনকে নিয়েই আমার পরিবার। এই তিনজন মানুষকে কেন্দ্র করেই আমার পৃথিবী।একসাথে সবাইকে খুশি করা তো সম্ভব নয়, তারপরও আমি চেষ্টা করি পরিবারের সবাইকে খুশি রাখার। আমি হৃদয় থেকে ভালবাসি সৃষ্টিকর্তা ও তার সকল সৃষ্টিকে।আমি বর্তমানে সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটিতে মেকানিক্যাল ডিপার্টমেন্ট থেকে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং লেখাপড়া করছি। আমি গান গাইতে, কবিতা লিখতে, এবং ভাই ব্রাদারের সঙ্গে ঘোরাঘুরি করতে অনেক বেশি ভালোবাসি। সত্যি বলতে আমি প্রচন্ড রকমের অভিমানী, হতে পারে এটা আমার একটা বদ অভ্যাস। "আমার বাংলা ব্লগ" আমার গর্ব,"আমার বাংলা ব্লগ" আমার ভালোবাসা। আমার নিজের ভেতরে লুকায়িত সুপ্ত প্রতিভাকে বিকশিত করার লক্ষ্যে "আমার বাংলা ব্লগে" আমার আগমন। এই স্বল্প মানব জীবনের প্রতিটা ক্ষণ আমার কাছে উপভোগ্য। আমি মনে করি, পরিশ্রম সফলতার চাবিকাঠি।
@jibon47
VOTE @bangla.witness as witness
![witness_vote.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmW8HnxaSZVKBJJ9fRD93ELcrH8wXJ4AMNPhrke3iAj5dX/witness_vote.png)
OR
হ্যাঁ আসলেই আমরা যারা বাইক চালাই তাদের উচিত একটা নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে বাইকের গতি সীমাবদ্ধ রাখা। তাছাড়া এরকম অমানবিকভাবে একজনকে ধাক্কা দিয়ে তাকে বিপদের মুখে ফেলে যাওয়া কোন মানবিকতার কাজ হয় না। তার উচিত ছিল বৃদ্ধ লোকটিকে তোলা এবং বাইকে করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া।
আসলেই আমাদের সকলের উচিত নির্দিষ্ট একটা গতির মধ্যে বাইক এর স্পিড সীমাবদ্ধ রাখা যাতে করে কারো ক্ষতি না হয় এবং নিজেও সুস্থ থাকা যায়। লোকটাকে দেখে আসলেই অনেক বেশি খারাপ লাগছিল তবে কিছু করার ছিল না। ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।
আসলে বর্তমান সময়টা এমন একটা পরিবেশ পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে মানুষ যেন ভালোমন্দ দিকগুলো বিবেচনা করতে জানে না। এত এক্সিডেন্ট হচ্ছে এত কিছু জানার পরেও যেন মানুষ নিয়ন্ত্রণের মধ্যে গাড়ি চালায় না। গাড়িতে উঠলে যেন মনে হয় দিশেহারা হয়ে গেছে, তাই ফুল স্পিডে গাড়ি চালায়। এদিকে এক্সিডেন্ট ঘটলে পিছনে ফিরে তাকায় না। তবে দোয়া করি সেই মানুষটার জন্য যেন সুস্থ হয়ে যান। আর এই সমস্ত বিষয়ে আমাদের সত্যি সজাগ ও সচেতন হওয়া প্রয়োজন রয়েছে। এতে করে হয়তো অনেকের প্রাণ বেঁচে যেতে পারে অনেক দুর্ঘটনা।
আসলেই বর্তমান সময়ের মানুষ এত স্পিডে বাইক চালায় যে তার আশেপাশে কি হচ্ছে কি না হচ্ছে সেটা দেখার অপেক্ষায় রাখে না। মানুষটাকে অ্যাক্সিডেন্ট করে তার জন্য বিন্দুমাত্র দাঁড়িয়ে সমবেদনা জানায়নি এটা সত্যিই খুবই দুঃখজনক। মন্তব্যের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।