জগদ্ধাত্রী পূজার কিছু মুহূর্ত || ১০% বেনিফিট @shy-fox এর জন্য
নমস্কার বন্ধুরা , আশা করছি সকলে ভালো আছেন। পূজোর
দিনের গল্প নিয়ে হাজির হলাম আজ।পুজোর দিন সকালবেলা ঘুম থেকে ওঠার পর থেকেই দেখছি মেঘলা আকাশ ,এই দেখেই মাথাটা গরম হয়ে গিয়েছিল। আমি পুরোপুরি নির্জলা উপস করি। যতক্ষণ না পূজো শেষ হচ্ছে অর্থাৎ রাত দশটা বেজে যাবে হয়তো ।
মা জগদ্ধাত্রী
তার মধ্যেও অনেক অনেক প্লানিং ছিল আমাদের। যেহেতু এবারে দাদা আর বোন এসেছে। কিন্তু সকালে ঠান্ডা ওয়েদার আর এই বৃষ্টি চোখে পড়তেই মনটা সত্যিই ভেঙে গেছিলো। যাই হোক তখন হয়তো সকাল সাড়ে আটটা বাজে আমি স্নান করে নিজের বাড়ির পুজো সারলাম। তারপরে শাড়ি পড়লাম ।কিছুদিন আগে এই শাড়িটা আমাকে @roy.sajib উপহার দিয়েছে।আমার খুব পছন্দ হয়েছে শাড়িটা ।
মা এর কোলে
ও ওর ওয়ালেট থেকে আমার ওয়ালেটে স্টিম পাঠিয়ে দিয়েছিল ,আমি সেটা থেকেই ইন্ডিয়ান রুপিতে কনভার্ট করে তারপর শাড়ি কিনেছি ।এই শাড়ি কেনার গল্প নিয়ে কথা বললে নানান হাসির কথা উঠে আসবে বলতে পারেন। আমরা দুটোই পাগল। ও সাধারণত একটু সাদামাটা ছিমছাম শাড়ি পছন্দ করে ।আর আমার ধারনা পুজোর একটি দিন, একটু সুন্দর করে সাজবো ।গয়নাগাটি পড়বো ।কারণ আমি জগদ্ধাত্রী পূজা ছাড়া অন্য কোন পুজোতে সাজুগুজু বেশিই করি না। তো যেহেতু আমাকে বারোয়ারী তে থাকতে হয় ,আমি এই পুজো টাকে নিজের বাড়ির পুজো বলেই মনে করি। এমনকি আমার বাবাও তাই মনে করেন ।পুজোর আগের দিন থেকে যেভাবে আমরা বারোয়ারির সাথে জড়িত থাকি, সত্যিই যে কেও বলবে যে এটা আমাদের বাড়ি পুজো । তো নিজের বাড়ির পূজার মতনই একটি সাজগোজের ব্যাপার আমি নিজের মধ্যে আনার চেষ্টা করি। সেই নিয়ে সেদিনকে শাড়ি কিনতে গিয়ে দোকানের মধ্যেই আমার সাথে ভদ্রলোকের(roy.sajib) ঝামেলা বেধে ছিল। তিনি যে শাড়ি পছন্দ করেন, আমার সেটা পছন্দ হয়না এই করতে করতে যে কত শাড়ি বার হয়ে গিয়েছিল, তার ঠিক নেই ।যিনি দোকানদার অর্থাৎ যিনি আমাদের শাড়ি দেখাচ্ছিলেন, তিনি পর্যন্ত পাগল হয়ে গিয়েছিলেন- যে কার পাল্লায় পড়লাম!, তো যাই হোক অনেক রাগারাগি মারপিট ঝগড়া কথা কাটাকাটির পর এই শাড়িটি আমি নিজে থেকেই চুস করে কিনেছিলাম। শাড়িটি নাম মাহেশ্বরী সিল্ক। বেশ একটা পুজো পুজো ভাব যেমন রয়েছে সাথে সাদামাটা ও একটা রুপ আমি এর মধ্যে পেয়েছি ।
এরপর আমার আর ইচ্ছা নেই ভদ্রলোকের থেকে আর একটা শাড়ী ও নেওয়ার। কারণ আমি এইটুকুনি গ্যারান্টি দিতে পারি ,পরেরবার যদি শাড়ি কিনতে যাই তাহলে আবারও ঝামেলা হতে পারে। যাইহোক এই কথা এখানেই শেষ থাকুক।🤪🤣🤣🤣🤣🤣
বোন আর আমি
আমার বোন শাড়ি পড়তে কিছুটা সাহায্য করে দিল। বৃষ্টির মধ্যে শাড়ি পড়ে যাব কিভাবে, জল কাদার ব্যাপার রয়েছে। শাড়িটা ভেস্তে যাবে, এই নিয়ে অনেক কিছুই ঝামেলা হচ্ছিল ।
যেহেতু অষ্টমীর অঞ্জলি বারোটার পর ,তাই আমি এগারোটা আগেই বাড়িতে পৌঁছে গেলাম। ওখানে গিয়ে আমাদের পূজামণ্ডপ এ আমি বসে থাকি, আর মাকে একনাগাড়ে দেখতে থাকি। এই যে মিষ্টি মুখখানা। শুধুমাত্র আজকের দিনটি দেখতে পারবো ।কালকে মায়ের বিসর্জন ।
মিষ্টি মা আমার
সকাল থেকে ষষ্ঠী পুজো শুরু হয়ে গেছে ।তারপরে আমি সপ্তমীর অঞ্জলি দিলাম,তারপর অষ্টমীর অঞ্জলি দিলাম। যেহেতু আমি আগেই বলেছি আমাদের শহরে পুজো এক দিনেই হয়। ষষ্ঠী , সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী এক দিনেই সেরে ফেলা হয় ।আর পরের দিন সকালে দশমী পূজা হয়ে মায়ের বিসর্জন হয় ।সেইমতো অষ্টমী পূজো শেষ হলো যখন আমি অন্য কাজে লেগে পড়লাম ।
আমাদের বারোয়ারির একটি বিশেষত্ব হলো খুব সুন্দর আরতী হয় ,সন্ধ্যা আরতির জন্য মানুষ ভিড় করে দাঁড়িয়ে থাকে পূজা মণ্ডপের সামনে। আর আজ সকালের অষ্টমীর আরতি টাও অতীব সুন্দর হল।
আপনাদের জন্যই আমি আমার ইউটিউব চ্যানেলে পুজোর সকালের আরতির কিছু ভিডিও পোস্ট করেছি।
আরতীর ভিডিও লিংক
আমার বোন প্রথম বার আরতী দেখছিল ,আমাকে পরে বাড়িতে গিয়ে সে বলল যে ,সে সময় যেন মনে হচ্ছিল আমি কোন ঘোরের ভেতর চলে গেছি। ও ব্লগিং করে তাই ও বলছিল আমি ব্লগিং আর কি করবো ,,মায়ের মুখে আমি বিভোর হয়ে যাচ্ছিলাম। ব্লগিংয়ের দিকে চোখ যায়নি।
সত্যিই সকালের অষ্টমীর আরতী অতীব সুন্দর হয়েছিল। মায়ের মুখ খানা দেখে এত শান্তি লাগে বলে বোঝাতে পারব না। বাইরে ঝমঝম করে বৃষ্টি পড়ছে ।তার মধ্যেও দর্শনার্থীদের ভিড় দেখে আমি অবাক হয়ে যাচ্ছিলাম।
মা এর জন্য ভোগ
মায়ের মন্দিরের সামনে আমাদের শ্যামাচরণ লাহিড়ী বাবার প্রতিষ্ঠিত মন্দির বাবা জলেশ্বর এর মন্দির। সেই মন্দিরের চাতালে ভোগের রান্নাবান্না হচ্ছিল। মাকে ৬১ টা সরাই ভাগ করে দেওয়া হয় ভোগ । আমি সেই কাজে লেগে পড়লাম ৬১টা সরাই ভোগ পরিবেশন করতে শুরু করলাম। মায়ের ভোগে এবারে লুচি, পায়েস, খিচুড়ি, আলুর দম ,বাসন্তী পোলাও আর কৃষ্ণনগরের বিখ্যাত মিষ্টি সরপুরিয়া ছিল।
ভোগ সাজানোর সময়
আয়োজন সম্পন্ন করার পরে আমি বাড়ির দিকে রওনা হলাম ।তখন ঝমঝম করে বৃষ্টি পড়ছে ।কোনরকমে ছাতা মাথায় দিয়ে বাড়িতে চলে গেলাম ।এই দুপুরে সময়টা আসলেই শরীরটা কেমন খারাপ করে যদি আমি উপোস করে থাকি ।
তাও মায়ের কৃপায় এ কটা বছর ধরে এই যে উপস শুরু করেছি, তা ভালোভাবেই পার করতে পারছি ।এত সুন্দর শাড়ি পড়েছিলাম ,ঠিক করে যে ছবি তুলব। তার সময় সুযোগ হয়নি ।পুজোর দিন বাড়িতে এত ব্যস্ততা থাকে, তাই সেভাবে ছবি তুলতে পারিনি ।কিন্তু তাও কয়েকটা ছবি আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম ।
ক্লান্তির নিঃশ্বাস
এই ভাবেই পুজোর সকালটা কেটে যায় ।তারপরে দুপুরবেলায় বাড়ি ফিরে আসলাম যখন তখন কিছুটা রেস্ট নিলাম শুয়ে ।শরীরটা একদম খারাপ লাগছিল ।আগের দিন রাতে বেশ হাঁটাহাঁটি হয়েছে সে নিয়ে তো আপনাদের কথাই বলেছি ।হাঁটাহাঁটির পর পায়ে যন্ত্রণা হচ্ছিল ।তারপর আজ সকাল সকাল উঠে এই আয়োজন, সবকিছু মিলিয়ে একটা জমজমাট পরিস্থিতি। তার মধ্যেই ভারী বৃষ্টি ।কিযে হচ্ছিল আমি আপনাদের বলে বোঝাতে পারবো না ।এই ছিল আমার পূজার দিনের সকালের কাহিনী ।
প্রতিবার আমি বুড়িমার মণ্ডপে পূজা দিতে যাই ।কিন্তু এবার বৃষ্টির কারণে সেটা হয়ে উঠলো না ,এই জন্য আমার মনটা একটু ভেঙে গিয়েছিল ।এরপরের ঘোরাঘুরি নিয়ে একটি পোস্ট লিখব ।
আশা করছি আপনাদের আমার এই পোস্ট ভালো লাগবে ।সকলের জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল ।সকলে ভাল থাকুন। মা মহামায়া আপনাদের সকলের মনস্কামনা পূরণ করুক ।আপনাদের সুস্থ রাখুক ।পৃথিবীর মঙ্গল হোক ।এটাই চাওয়া। নমস্কার।
@isha.ish
জয় মা!
কৃষ্ণনগর যাওয়ার সুযোগ পেলাম না, যাওয়ার মানুষ নেই। আর কেউ তো ডাকলো না, যেখানে বাড়ির পাশেই বারোয়ারী পুজো তারাও ডাকলো না 😭।
শাড়িটা বেশ সুন্দর হয়েছে। রানী পিঙ্ক আমার বেশ সুন্দর লাগে। আর মায়ের পুজো নিয়ে কোনো কথা হবেই না। @roy.sajib বাবুকে তো দেখিই না। কোথায় থাকেন তিনি?
বুড়িমার পুজো নিয়ে প্রশাসন যা নোংরামি করলো দেখে মনটাই খারাপ হয়ে গেলো। হয়তো এটাই আমাদের প্রাপ্তি।
কৃষ্ণনগরে পূজা দেখতে যাওয়ার খুব ইচ্ছা আছে জানি না কোনোদিন পূরণ হবে কি না। তবে শাড়িতে আপনাকে বেশ লাগছে। আমার রানী গোলাপি খুব পছন্দের একটা রং। পূজার সময় একটু সাজ গোজ না করলে হয়। আমার জগধাত্রী পূজা কখনও দেখা হয় নি। প্রতিবছর টিভিতে দেখে দেখে সময় কাটে। তবে এই বার আপনার মাধ্যমে ঠাকুর দেখতে পারছি। আপনার জন্য অনেক শুভকামনা রইলো দিদি।
আরে বৌদি,, কৃষ্ণনগর কেন !আমার বাড়ি বসে আপনি ঠাকুর দেখবেন ।যখন ইচ্ছে চলে আসবেন ।যে বছরে সুযোগ হবে, হাতছাড়া করবেন না ।আমার বাড়িতে আমার প্রিয় বৌদির আমন্ত্রণ রইল।
অনেক ধন্যবাদ সুন্দর করে মন্তব্য করার জন্য। আর হ্যাঁ ঠিকই বলেছেন পুজোর সময় একটু সাজগোজ না করলে একদমই হয় না।
আমারও খুব ভালো লেগেছে আমার জগদ্ধাত্রী পূজার সমস্ত কিছু আপনাদের সকলের সাথে শেয়ার করতে পেরে ।এটাই তো আমাদের ঐতিহ্য।
দাদা বোনের বাড়ি আসবে তার জন্য কি নিমন্ত্রণ লাগে!?? সে যখন খুশি আসতে পারে ।আর ঠিকানা তো সবই জানারই কথা।
অনেক ধন্যবাদ এত সুন্দর করে কমেন্ট করার জন্য।
আর হ্যাঁ সত্যিই বুড়িমার সাং নিয়ে খুব বাজে ভাবে গন্ডগোল হলো ।আর কৃষ্ণনগর এর তরফ থেকে যে মিছিল নেমেছিল ,তার পরেও প্রশাসন টাকা পয়সা নিয়ে তারপরে সাং এর পারমিশন দিয়েছে ,এটা জেনে আমার খুবই নোংরা লাগলো পুরো ব্যাপারটাকে ।কিন্তু কিছু বলার নেই। প্রশাসন তো প্রশাসনের তালেই চলবে।
আর আমার ভদ্রলোকের খবর নিয়ে কি বলি, জবের প্রিপারেশন নিচ্ছে তো, তাই রেগুলার হতে পারছেনা। ঠাকুর ঠাকুর করে ভালো একটা জব হয়ে গেলে শান্তি ।
নেমতন্ন তো লাগেই! 😅
টাকা নিয়ে সাং বের করতে দিয়েছে। ছিঃ ছিঃ ছিঃ। ভবিষ্যত নিয়ে শুধুই আতঙ্ক হয়।
চেষ্টা তো করছেই, পেয়ে যাবে নিশ্চই। 🤗
আপনাদের সকলকে খুব সুন্দর লাগছে দেখতে। আপনাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান গুলো দেখতে বেশ ভালই লাগে। আর একের পর এক উৎসব লেগেই থাকে এটা আসলে খুবই আনন্দদায়ক। শুনেছি হিন্দুধর্মাবলম্বীদের নাকি বারো মাসে তেরো পার্বণ।
এবং আপনার পারিবারিক সকল সদস্যদের জন্য অনেক অনেক শুভকামনা এবং ভালোবাসা রইলো।
ঠিক কথা বলেছেন দাদা, আমারও অনেক ভালো লাগছে সব কিছু শেয়ার করতে পেরে। ভালো থাকুন। নমস্কার ।