গল্পে গল্পে কিছু অনুভূতি|| ১০% বেনিফিট @shy-fox এর জন্য
নমস্কার বন্ধুরা ।আশা করছি সকলে সুস্থ আছেন । আমিও সুস্থ আছি ভগবানের আশীর্বাদে এবং আপনাদের ভালোবাসায় ।কিছুদিন আগেই ইউনিভার্সিটি স্কুল-কলেজ সবকিছুই খুলে দিয়েছে সরকার থেকে ।যখন থেকে এই নিউজটা আমরা সবাই পেয়েছি ,যে জীবনটা আমাদের তৈরি হয়েছিল তা জানো চাঞ্চল্যকর হয়ে উঠেছে ।
বাড়ি বসে বসে ঘুমানো ,যখন ইচ্ছা ঘুম থেকে ওঠা ,প্রাইভেট টিউশন বন্ধ ,স্কুলে বন্ধুদের সাথে আড্ডা নেই, নেই খেলাধুলা ,নেই কলেজের সেই ক্লাসগুলো, নেই সেই অনুষ্ঠানগুলো ,ইউনিভার্সিটির বড় বড় প্রোগ্রামগুলো, সবকিছুই জীবনের রসকষ যেন কেড়ে নিয়েছিল এই করোনা ।
তার পরেও বেশ এক বছর হল সবকিছুই নিজের গতিতে ফিরে এসেছিল, কিন্তু ফিরে আসেনি স্কুল- কলেজ - ইউনিভার্সিটির চলমান জায়গাটা। কিছুদিন আগে সমস্ত কিছু খুলে যাওয়ার নির্দেশ দিতেই আমরা সকলেই আনন্দিত হয়েছিলাম ।তবে আনন্দ হওয়ার সাথে সাথে ব্যস্ততা জীবনে আবার প্রবেশ করল।
ব্যক্তিগত কথা যদি আপনাদের সাথে শেয়ার করি আমার ভাইকেই ধরুন ,ভাই আমার থেকে অনেক ছোট ।ও এখন ক্লাস ফোরে পড়ে ।ওর ক্লাস থ্রি টা পুরোপুরি বাড়িতেই কেটেছে ।পড়াশোনা যেটুকুনি বাড়িতেই করেছে। শুধু মাঝেমধ্যে মাসে মাসে অ্যাক্টিভিটি ট্যাক্স এর কাগজ জমা দিতে হয়েছে স্কুলে ।
এ ছাড়া ছিল শুধু চোখের সামনে একটা বড় কালো টিভি, ছিল সেই মরণ গেজেট মোবাইল ফোন আর ল্যাপটপ কম্পিউটার। নেই বন্ধুবান্ধব। নেই খেলার কোন সহযোগী। সবকিছু মিলিয়ে ওদের জীবনটা অগোছালো তৈরী হয়ে গিয়েছিল ।ছোট থেকেই একটা বাচ্চাকে ডিসিপ্লিনে বড় করলে তবেই সে সবকিছু অর্থাৎ জীবনের নিয়মগুলোকে সিরিয়াসলি নেওয়া শুরু করে।
কিন্তু এই বাচ্চাগুলোকে দেখুন, এরা কি করবে তাহলে ।সেদিনকে হঠাৎ ওরকম ঘোষণা হওয়ার পর ঈশানের পরের দিন থেকে স্কুলে যাওয়া শুরু হল। সকাল ছয়টায় বেচারা ঘুম থেকে উঠতে শুরু করল। এই অত শীতের সকালে জোর করে ঘুম থেকে তোলা ,,যে তুলছে অর্থাৎ আমি আর আমার মা তারাও বিরক্ত ।
অত সকালে বাচ্চাকে স্কুলে পাঠানো নিয়ে বাবা বিরক্ত। আমার বাবা সাধারণত একটু বেলা অব্দি ঘুমান। অর্থাৎ সাড়ে আটটা বেজে যায়। প্রত্যেকটি ব্যবসাদারদের হয়তো তাই হয় ।তার ওপর শিল্পী মানুষ তো আলাদাই ব্যাপার ।নিজের মুডে চলে ।বাবারও আবার ঘুমে বাজ পড়ল বলা যেতে পারে। ছেলেকে নিয়ে আবার স্কুলে দিয়ে নিয়ে আসতে হবে।
বাড়িসুদ্ধ সকাল ছয়টা থেকে শুরু হয়ে গেল হৈ-হুল্লোড়, যেটা গত দেড় বছর ধরে বন্ধ ছিল বলা যেতে পারে। যেমন শুরু হয়ে গেল সব কিছু । আশা করি জীবনের গতি টা আবার সকলের ফিরে আসবে ।বাচ্চাগুলো শিখবে সবকিছু ,যেগুলো ওরা বাড়িতে থেকে পেত না ।
এবার যদি বলি আমাদের কথা, আমিতো বাড়ি বসে বসেই গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করে ফেললাম। মাত্র তিনটে ইয়ার এর গ্রাজুয়েশনের কোর্স। আমরা করেছি দেড় বছর অফলাইন আর তারপর করনার আবহাওয়ার জন্য সমস্ত কিছু বন্ধ হওয়ায় বাকি বছর করতে হলো অনলাইনে ।
আমার এখনো মনে আছে বসন্ত উৎসবের অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পরেই সেই মাসের শেষ দিক থেকে লকডাউন শুরু হয়ে গেল ।জীবনে যেন অন্ধকার নেমে আসলো। একটা কারো সাথে দেখা নেই। দমবন্ধ একটা পরিস্থিতি। একটা মানুষকে সামনে থেকে দেখা, তার সাথে কথা বলা যে কতটা জরুরি, তা যেন তখন মনে হতে লাগলো ।সেই অভাবটা বুঝতে শুরু করেছিলাম আমরা সকলে।
প্রথমত করোনা যখন আমাদের থেকে বহুদূরে। তখনই সবাই আমরা নিজেদের নিজেদের বন্দি করে ফেলেছিলাম। প্রথম প্রথম খুব অসুবিধা হয়েছিল, কিন্তু তারপরও নিজেকে মানিয়ে গুছিয়ে নিতে শুরু করে দিলাম। নিজের ভেতরের দিকে একটু উঁকি দেওয়ার কাজ, যেমন ধরুন গান গাওয়া, কবিতা লেখা, ছবি আঁকা ,বাবার সাথে সিনেমা দেখা, নানান ধরনের গল্প ,পুরোনো স্মৃতি নিয়ে চর্চা করা ,পুরনো ছবি দেখা, গল্পের বই পড়া আর পড়াশোনা তো থাকছেই ।
সবকিছুর মধ্যে থেকে শুধু হারিয়ে গিয়েছিল পরিবার ছাড়া বাকি যে মানুষগুলোর সাথে আমরা অতিরিক্ত পরিচিত, যাদের মধ্যে দিয়ে আমরা কখনো কখনো শান্তি খোঁজার চেষ্টা করি। তাদের সংস্পর্শ ।
সেদিন ইউনিভার্সিটি তে ভর্তি হলাম এম এ করবো বলে ,ইউনিভার্সিটির প্রথম পরীক্ষাটাও অনলাইনে হলো ।অফলাইন কবে হবে এ নিয়ে প্রথম থেকেই মনের ভেতরে একটা দুর্ধর্ষ উত্তেজনা কাজ করছিল। কিন্তু আজ যখন অনলাইন থেকে অফলাইনে পরিবর্তন হয়েছে। এখন আবার অন্যরকম মাথায় টেনশন কাজ করা শুরু করে দিয়েছে।
একটা নতুন জগৎ বলা যেতে পারে। ছিলাম ঘুমিয়ে যেন ,আবার জেগে উঠতে হচ্ছে ।কিছুদিনের জন্য আমরা সকলেই একটা গভীর ঘুমে চলে গিয়েছিলাম, আবার সেই ব্যস্ততা সেই রুটিনমাফিক সেই ডিসিপ্লিন জীবনে ফিরে আসতে হচ্ছে। এটা অবশ্যই আমাদের জীবনের জন্য অনেক অনেক উপযোগী এবং অনেক অনেক প্রয়োজন। মাঝেমধ্যে আলসেমি লাগছে।
সবকিছু ঠিক হয়ে গেছে, বন্ধুদের সাথে দেখা হবে সামনাসামনি। ক্লাস হবে। প্রফেসরদের ক্লাস করব সামনে বসে।সেই ছোট ল্যাপটপ এর ভেতর থেকে রেডিওর মত যে শব্দগুলো ভেসে আসত, তা শুনে যে কি অসহায় বোধ হতো, তা আপনাদের বলে বোঝাতে পারবোনা ।আশা করছি এই জার্নি আপনাদেরও আছে। সকলে বিশেষ করে যারা স্টুডেন্ট রয়েছেন, তারা।
আপনাদের হয়তো এটা বললে আপনারা হাসবেন । একবার দুবার আমি ক্লাস শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম । যেহেতু অনলাইন ক্লাস হতো, তাই ওনাদের ক্লাস নেওয়ার টাইম সেরকম ছিলনা ।কখনো কখনো এক্সট্রা ক্লাস নিতে ওনারা দুপুরবেলায় অথবা এমন এমন সময় ক্লাস নেওয়ার জন্য বলতেন সেই সময়গুলো ক্লাস করা বড়ই জটিল।
তো নানান স্মৃতি এবং বীভৎস একটা অভিজ্ঞতা হয়েছে আমাদের এই করনার প্রকোপে। আশা করি আমাদের জীবনকে নতুন পর্যায়ে তুলে দিয়েছে এই ঝড়, নতুন কিছু শিখিয়েছে জীবনে চলার পথে। নতুন করে আবার সবকিছুকে গুছিয়ে তুলতে বেশ মজা লাগছে।
আশা করছি আমার আজকের পোস্ট আপনাদের সকলের ভাল লেগেছে ।নিজের মনের কথাগুলোকে শেয়ার করতে পেরে খুবই ভালো লাগলো ।সকলে ভাল থাকুন ।সুস্থ থাকুন। আবার কালকে কথা হবে।
@isha.ish
@tipu curate
Upvoted 👌 (Mana: 3/6) Get profit votes with @tipU :)
আজকে আপনার পোস্টটি পড়ে খুবই ভালো লেগেছে। অবশ্যই আপনি আজকে সময় নিয়ে অনেক বড় পোস্টটি করেছেন। গল্পের মাধ্যমে কিছু অনুভূতি জানতে পারলাম। এত সুন্দর পোস্ট শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য ।
আপু অনলাইন ক্লাস মানেই হচ্ছে বাচ্চাদের হাতে মোবাইল দেওয়া।তারা ক্লাস করবে কি তাদের চিন্তা থাকে ক্লাস টা শেষ হলেই গেম খেলতে পারবে।নাই কোন টাইম যখন ইচ্ছে তখন ক্লাস হতো।আমরা যখন অফলাইনে ক্লাস করতাম খুব সকালে ঘুম ঘুম চোখে রেডি হতাম ক্লাসে যাওয়ার পর ঘুম চোখে থাকলেও টিচারদেরকে দেখলে এমনেই ঘুম চলে যেত।বন্ধুদের সাথে আড্ডা। অনলাইন ক্লাসে সত্যিই অনেক ডিসিপ্লিন হারিয়ে গেছে।আপু আপনি খুব ভালো লিখেছেন।ধন্যবাদ আপনাকে।
অনলাইন অনলাইন করে করে জীবনের ছোট ছোট আনন্দ গুলো একদম হারিয়ে ফেলেছি দিদি। প্রতিটা কাজে নিজের ছাপ যেন একদম সরে যাচ্ছে। অনেক সুন্দর করে মনের কথা গুলো বলেছেন দিদি। খুব ভালো লাগলো