মা || ১০% বেনিফিট @shy-fox এর জন্য

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

মা তোমায় নিয়ে গদ্য লিখবো পাতার পর পাতা।
আমার জীবন গাছের সাথে যে হাঁড়ি বাঁধা আছে,
যতক্ষণ নাহ ভরছে হাঁড়ি ,
আমি তোমায় নিয়ে পদ্য লিখবো পাতার পর পাতা।
জিরানো প্রাণের একটুকু আলসেমি
থাকতে দেবো না আমার লেখায়।
তুমিই আছো আমার কোটি কোষের প্রতিটি রেখায়।

- ঈশা

20220508_203340.jpg

আমার ছোটো বেলা কেটেছে মা আর ঠাকুরদাদার হাত ধরে। আমি হওয়ার দুই মাস পরেই কাজের সূত্রে বাবাকে বাইরে যেতে হয়। টানা দশটা বছর বাবাকে দেখেছি বছরে দুই তিন বার বাড়ি আসতে।
আর এই ছোট্ট ঈশা খুব আদরে খুব যত্নে মা এর কোলেই বড়ো হয়েছে। বাড়ি ভর্তি তখন অনেক লোক। আমাদের তখন যৌথ পরিবার। মা এর বয়স তখন চব্বিশ / পঁচিশ। ওই রোগা টিং টিঙ্গে চেহারা তখন মা এর। মা ছোটো থেকেই নাকি অমন রোগা। একা হাতে কত দিক সামলাতে দেখেছি। আমাদের তখন একটা শোরুম , বাড়ির ভেতরেই ছোটো মাটির পুতুলের কারখানা। কত দাদারা কাজ করতো।

IMG-20220508-WA0001.jpg

ওদিকে বাবা বাইরে সরকারি মিউজিয়াম গুলোর সব মূর্তিগুলোর কন্ট্যাক্ট নিয়েছে। বাবার সাথেও প্রায় কুড়িজন দাদা। বাবা এক দিক সামলাচ্ছে । আর এদিকে দেখেছি মা কে বাড়ির ব্যবসা সামলাতে।বেশ অনেক ঝড় ঝামেলা পেরিয়ে আমি হয়েছিলাম। তাই ছোট থেকেই বাড়ির লোকজন খুব আদর মাখিয়েছে।

20220508_203406.jpg

চারিদিকে এত ব্যস্ততার মাঝেও মা এর চোখের মণি হয়ে ছিলাম আমি । শরীর স্পর্শ করলেই আদর করা হয়না। হাত বুলিয়ে অনেকে বিষ ও খাওয়াই। আমার মা আমাকে কখনও হাত বুলিয়ে আদর করেনি। মা এর আদর টা যেন ভেতর থেকেই বুঝতে পারি। এখনও পারি। আর বাকি বাচ্চাদের মত হুট করে মা কে গিয়ে জড়িয়ে ধরিনি , ধরতাম দাদু কে। আমার দাদু যেন আমার আরেকটা মা ছিল।

20220508_203506.jpg

আমাকে স্কুল নিয়ে যাওয়া, আমাকে পড়ানো সব আমার মা করেছে। বাবা তখন বহু দূরে। আমার এখনও মা এর সামনে পড়লে তাড়াতাড়ি পড়া মুখস্থ হয়। মা এর মত করে কাউকে পাইনি যে, যার সামনে তাড়াতাড়ি পড়া কমপ্লিট হবে। মা এর হাতে মার খেয়েছি প্রচুর। এত লক্ষ্মী শান্ত মেয়ে হয়েও মার খেতে হয়েছে। ওটুকু বয়সে সব একা হাতে সামলাতে যে কি পরিমান অসুবিধা হয়েছে। আজ বুঝি। তাই হয়তো রাগের মাথায় আমার ছোটো দুষ্টুমি গুলো তে বেশি রিয়াক্ট করতো।

20211029_104633.jpg

যত দিন যাচ্ছে,সময় যাচ্ছে। আমি বুঝতে পারছি মা আমার জন্য কত পরিশ্রম করে যায় নিস্তব্ধে। আমার ছোট খাটো ভুল গুলোতে যে এত চণ্ডাল হয়ে যায় ।তার কারণ আমাকে নিখুঁত করে গড়ে তুলতে চায় এখনও।

আমার মা এর আগের জীবনটা অনেক প্যাথেটিক । যে কথা গুলো এই পাবলিক প্লাটফর্মে বলার মত নয়। তবে একটা জিনিস বুঝতে পারছি। আগে ক্লাস নাইনের আগে মা এত বকে দেখে খুব ঝামেলা করতাম মা এর সাথে। আজ বুঝতে পারি মা কে। এই মানুষটা যখন হাসে। আমার সারা পৃথিবী হেসে ওঠে।

20220304_195322.jpg

মা এখন আমার বন্ধুর মত। সব কথাই গিয়ে বলতে থাকি মা কে। মা কে আমি সাজিয়ে দিই, ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার জন্য জেদ করি। এটা সেটা রান্না করে খাওয়াই।ছবি যখন তুলি আর একটু করে বলি , মা কি লাগছে! দারুন লাগছে তোমাকে। মা যেভাবে মুচকি হাসি দেয়। আমি ক্ষণিকের জন্য মুঠো ভর্তি সুখ পেয়ে যাই।

মা কে বুঝতে আমার বেশ সময় লেগেছে। তাই আপসোস হয়। আসলে ছোট রা বোঝে না যে মা কেন এত বকে, মারে । আমি যেটুকু বুঝেছি পৃথিবীতে মা ছাড়া আর কেউ নেই নিঃসার্থ ভাবে আমাদের খেয়াল রাখার। আমি দেখেছি আমি না খেয়ে থাকলে বাবাও খেয়ে নেয় ।কিন্তু মা না খেয়ে বসে থাকে। বাড়ি থেকে বেড়িয়েছি যবে থেকে। মা এর যত্ন ভালবাসা টা, যেটা বাড়িতে থাকতে বুঝতাম না। এখন পরিষ্কার বুঝি।

B612_20220508_104853_653.jpg

আমার ছোট খাটো ঝামেলা গুলো কে মাফ করে দিক ভগবান। না বুঝে ছোটো থেকে অনেক রাগ করেছি মা এর ওপর। মা এর বাধা নিষেধ গুলোর ওপর অনেক জেদ করেছি। আমার ছোট ভাইটাও এখন যেমন করে। এখন আমি বুঝতে পারি। মা এর কোনো ব্যাখ্যা নেই। পৃথিবীতে সব মা এর সাথে তার সন্তানের আলাদা আলাদা রকম খুনশুটি। এই খুনশুটি গুলোই হয়তো মা সন্তানের সম্পর্ককে আরও গাঢ় করে।

একটাই কথা ছোটো মুখে বলতে চাই, জীবনে যাই করুন নাহ কেন।মা এর কথা একবার চিন্তা করবেন। যে পৃথিবীর আলো দেখিয়েছে, তাকে কষ্ট দিয়ে ভালো থাকা যায় না। একদিন নাহ একদিন ভুগতে হবেই।

এই পৃথিবীর এবং আমার সকল মা কে আমার এত্ত গুলো আদর আর এত্ত গুলো ভালোবাসা।সকলে সুস্থ থাকুন। ভালো থাকুন। মা এর কোলে একবার যাওয়ার জন্য পৃথিবী ছটফট করতে থাকুক । মা কে বুঝুন। সব বুঝতে পারবেন।

@isha.ish

Sort:  
 2 years ago (edited)

আপু লিখাটা পড়ে বেশ ভালো লাগলো।ভালো থাকুক পৃথিবীর সকল মায়েরা।প্রত্যকটা মা চায় তার সন্তান নিখুঁত ভাবে বড় হোক।যাই হোক একেবারে উপরের ছবিটাই আন্টিকে একেবারে আপনার মত লাগছে।ভালো ছিলো।ধন্যবাদ

 2 years ago 

অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। দাদা হ্যাঁ ,সবাই বলে আমাকে আমার মা এর মতন লাগে।

 2 years ago 

আপু আমি দাদা না,,আমি দিদি।

 2 years ago 

পৃথিবীতে শ্রেষ্ঠ বলতে যদি কিছু থেকে থাকে তবে তা হলো "মা "। বলা হয় মা অমূল্য রতন। মা নিয়ে লেখনি বরাবরই আমার প্রিয়। শুভকামনা।

 2 years ago 

একেবারেই তাই মাকে নিয়ে যাই লিখি কম পড়ে যায়।

 2 years ago 

আপু খুব ভাল লেগেছে আপনার আজকের মাকে পোস্টটি। আপনার মাকে এবং আপনাকে একসাথে খুব ভালো লেগেছে আপু। আপনার মায়ের জন্য অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা রইলো। আসলে একমাত্র মায়েদের ভালোবাসায় নিঃস্বার্থ ভালোবাসা। সকল মায়েদের প্রতি আমার শ্রদ্ধা।

 2 years ago 

খুব ভালো লাগলো কমেন্ট পড়ে, আপনি ভালো থাকুন।

 2 years ago 

আসলে মা দিবস আসলে মায়ের প্রতি ভালোবাসার আরেক ধাপ সামনে এগিয়ে নিয়ে যায়। মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা ভালোবাসায় কখনো কমি থাকে না, তবে মা দিবস আরো বেশি অনুপ্রেরণা যোগায়। আপনার এত সুন্দর পোস্ট আমাকে মুগ্ধ করেছে।

 2 years ago 

মা শব্দটা উচ্চারণ করতে যতটা ভালো লাগে। মাকে নিয়ে গল্প করতেও ততটা ভালো লাগে। পুরো পোস্টে আমার মাকে আপনাদের সকলের সাথে শেয়ার করতে পেরে খুব ভালো লেগেছে।

 2 years ago 

শেষ অব্দি যতটুকু বোঝা গেল, আমার জীবন মানে আমার একার না, অন্তত দু'তিন জন মানুষকে নিয়ে একটা জীবন তৈরী। আমরা আলাদা-আলাদা শরীরে থাকার পরেও আলাদা হতে পারলাম কই?

এতদিন ছিলাম। আমায় নিয়ে বেঁচে ছিল। আমি আর নেই। আমার শূন্যতা আঁকড়ে বেঁচে আছে। এভাবে বেঁচে থাকতে থাকতে তারাও একদিন হারালো। এখন আর আমরা কেউই নেই!

আজ চার-পাঁচশো বছর পর সেই ক্ষুদ্র দলটিকে আমি স্মরণ করে দেখলাম, তাদের আগে-পিছে মৃত্যু হলেও তারা আসলে একটাই ছিল।

 2 years ago 

সত্যি বলছি প্রথম স্ট্যঞ্জার মানে আমি বুঝতে পেরেছি কিন্তু দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্ট্যঞ্জার মানে আমাকে প্লিজ পরে বুঝিয়ে বলিস। এত গভীরত্ব তোর ভেতরে ।বুঝতে সময় লেগে যায় ।

 2 years ago 

মা, এই একটা শব্দ আপু, যাকে নিয়ে যতই কথা বলি না কেন? তার যথার্থ মূল্যায়ন হয় না, মনে হয় একটু কম হয়ে গেলো। সত্যি মা এবং তার স্নেহ ছিলো বলেই আজ পৃথিবীর মুক্ত বাতাসে নিজেকে ভাসাতে পারছি, আজ নিজের অনুভূতিগুলোকে সাজাতে পারছি। ভালোবাসায়, মমতায় শ্রেষ্ঠত্বের আসনে থাকুক সর্বদা তারা, তাদের ঋণ কোনদিনও শোধ হবার না।

 2 years ago 

আমি জানি আমার পোস্টটা দেখে সবারই মায়ের কথা মনে পড়ে গেল।

 2 years ago 

পৃথিবীর আলো দেখিয়েছে, তাকে কষ্ট দিয়ে ভালো থাকা যায় না।

আপনি একদম ঠিক কথা বলেছেন। মায়ের মনে কষ্ট দিয়ে কখনো সুখী হওয়া যায় না। কারণ আমরা যতই অপরাধ করি মা আমাদের সব অপরাধ ক্ষমা করে দেয়। আর সেই মাকে কষ্ট দিলে সৃষ্টি কর্তাও সহ্য করেন না। ধন্যবাদ আপনার পোস্ট দেখে খুবই ভালো লাগছে খুব সাজিয়ে গুছিয়ে উপস্থাপন করেছেন।

 2 years ago 

আমাদের জীবনে মা বলে এই মানুষটা একেবারেই ভিন্ন সবার থেকে ,যার কোন তুলনা হয় না।

Loading...
 2 years ago 

খুব ভালো লাগলো পড়ে।সত্যিই মাকে কোনোদিন বলা হয়নি যে মানুষটাকে কতোটা ভালোবাসি।আগে আমিও এমন বকাঝকা করে বলে রাগ করতাম।তবে এখন সবটা বুঝি।

 2 years ago 

একেবারেই তাই ।মেয়েরা বড় হলে মাকে সবথেকে ভালো বুঝতে পারে।

Coin Marketplace

STEEM 0.19
TRX 0.14
JST 0.030
BTC 60035.79
ETH 3187.54
USDT 1.00
SBD 2.45