ঘাটের মরা হওয়ার কারণ || ১০% বেনিফিট @shy-fox এর জন্য

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

কলকাতায় সকাল আটটা থেকে ওই যে রোদ আর গরম , বিকেল অব্দি ওরকম থাকে। আমার বাড়িটা র সামনে অনেক বড় একটা ঝিল ,তাই হয়তো বিকেল থেকে হাওয়া দেয় । ঝিলের সামনে,চারিদিক দিয়ে অনেক বসার জায়গা আছে। চারিদিকটা সুন্দর করে বাঁধানো, গাছ দিয়ে ঘেরা।কোথাও ঘাটের সিড়ির মত।কোথাও আবার শান বাঁধানো বসার জায়গা ঘরের মত।

20220424_202821.jpg

আমার বাড়ি থেকে ২মিনিট হেঁটেই ঝিলের সিরিগুলো। অন্ধকার নয়। চারিদিকে ঝলমলে আলো। সামনে পার্টি অফিস । আরও অনেক ফ্ল্যাট। সন্ধ্যার পর ঝিলের রাস্তার পাশ দিয়ে সব কটা দোকান খুলে যায়। ফাস্ট ফুড থেকে শুরু করে, মুদিখানার, আবার চকোলেট কোল্ড ড্রিংকস এর দোকানও আছে। এছাড়াও একটা কাকু ট্রলি ভর্তি অনেক রকম সবজি নিয়ে বসে থাকে । ঝিলের আশেপাশের সব বাড়ি থেকে সবাই বেরিয়ে এসে ঝিলের বাঁধানো বসার জায়গা গুলোতে বসে।

অবাক লাগে এই যে। সারা সকাল দুপুর লু বইছে। এই সন্ধার সময় এসে কোথা থেকে যেন এত হাওয়া এসে ঝিলের চারিদিকে ঘোরাঘুরি করে। আমি আমার বন্ধু মিলে মাঝে মধ্যেই প্রায় প্রতিদিনই সন্ধ্যার পর ঝিলে র পাশে সিড়িতে বসতাম। আমার পাশের রুমের মেয়েরাও বন্ধুদের সাথে বসতো।
সবাই মিলে আড্ডা হয়।মজা হয় দিনের সব ব্যস্ততা কাটিয়ে সিড়িতে বসে কি যে প্রাণ জুড়ায় , বলে বোঝাবার নয়। সেই হাওয়া খোলা হাওয়া।গুমোট নয়। হাওয়ায় হাওয়ায় মন ঠান্ডা হয়ে যায়। শত কষ্ট যন্ত্রণা হাওয়ায় মিশে যায়।

20220417_201902.jpg

বাড়ী থেকে এত দূরে এসে কোথাও যেন শান্তির একটা জায়গা খুঁজে চলি আমরা। আর ওই ঝিলের জায়গাটা যেন ওই শান্তি টা দু হাত ভরে ঢেলে দেয়। চারপাশের এত পার্ক,এত ভালো ভালো বসার জায়গা থাকতেও আমরা ঘাটের মরার মত ওখানে পড়ে থাকি কিছুক্ষণ।

সন্ধ্যা হলেই আর ঘরের মধ্যে মন টেকে না। আমাদের মত বহু জন ওইভাবেই সন্ধ্যার সময় টুকু ওখানে পড়ে থাকলেও। আমাকে আর আমার বন্ধুকে আমাদের এক পরিচিত দিদি ঘাটের মরা বলে ডাকে। সত্যিই মনে হয় ওখানে বিছানা পেতে শুয়ে পড়ি। শুধু একটা মশারি লাগবে চাদর আর বালিশ। ঘরের মধ্যে গেলেই গুমোট একটা গরম চেপে ধরে। তাই সত্যিই ওই ঝিলের পাশ থেকে উঠতে ইচ্ছে করে না।

প্রতিদিন ইউনিভার্সিটি থেকে এসে স্নান করি আবার। কিছুক্ষণ রেস্ট নিই। তারপর ঝিলের ধারে সময় কাটিয়ে বাজার করি টাটকা সবজি অথবা অন্য কিছু। প্রতিদিন রাতের রান্না থাকে।আমরা পাঁচটা মেয়ে থাকি ওই বাড়িতে। এক একজন এক এক দিন রান্না করি। বাকিরা সাহায্য করে।প্রতি রাতে চাপ থাকেনা । যার রান্নার দিন, তার চাপ সেদিন।

20220330_220652.jpg

মাঝে মধ্যে পাশের দোকান গুলো থেকে কিছু কিনে এনে খেতে খেতে গল্প করি।যেখানে বসি,তার সামনের দৃশ্য টা অপরূপ। এক কথায় কোনো বর্ণনা হবে না জায়গাটার।

ঝিলের জলটা চারিপাশের হলুদ সাদা আলোতে চক চক করতে থাকে। ঝিলের ওই শেষ প্রান্তের বাড়ি গুলোর আলো জলের ওপর পরে একটা অপূর্ব জল রঙের পেইন্টিং বানিয়ে ফেলে। মনে হয় কেও যেন তুলি দিয়ে সামনের দৃশ্যটা এঁকে রেখেছে। এটা যেন রিয়েল নয়। কোনো ক্যানভাস।

চারিপাশের গাছ গুলো হাওয়ায় দুলতে থাকে। আমার বেপরোয়া খামখেয়ালী পাগল মনের সাথে প্রাণ খুলে গাইতে থাকে -

"তোমার খোলা হাওয়া লাগিয়ে পালে"

Sort:  
 2 years ago 

দিদি ঝিলের পাড় কে কেন্দ্র করে আপনার অনুভূতি গুলো আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। আসলে আমাদের সবারই কিছু ভাললাগা জায়গা থাকে যেখানে দিনের সব ক্লান্তি শেষ করে আসা যায়। মনের প্রশান্তি যেন সেখানে খুঁজে পায়। আমাদের চাহিদা আমাদের সব সবকিছুই যেন ভিন্ন ভিন্ন তার মাঝেও এক অভিন্ন কিছু আমাদের মাঝে খেলা করে। ঝিলের পাড় আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে কারণ সন্ধ্যাবেলা পর থেকে চারপাশের রঙিন আলোয় এই জায়গা থেকে আরো বেশি রঙ্গিন করে তুলেছে ।এমন জায়গায় বসে থাকলে মন এমনিতেই ভালো হয়ে যাবে। এত সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে তুলে ধরার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ দিদি।

 2 years ago 

বুঝলাম যে, আপনিও আমার পোস্ট পড়তে পড়তে খানিকক্ষণ কল্পনায় ওই আমার বাড়ির সামনের ঝিল থেকে ঘুরে এলেন। লেখা পড়েই এত অনুভূতি। ঝিলের পাশে বসলে তো হাওয়া ভাসিয়ে নিয়ে যাবে!!😜

 2 years ago 

দিদি আপনি আপনার বাড়ির সামনের ঝিলের সৌন্দর্য কে অনেক সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করেছেন। বিকেল হলে ঝিল থেকে যে ঠান্ডা হাওয়া আসে যা আমার কাছে বেশ ভালো লেগেছে। এছাড়া ঝিল কে কেন্দ্র করে আপনাদের ওইখানে যে বাজার বসে সেই বিষয়টা ভালো লেগেছে। ধন্যবাদ।

 2 years ago 

ধন্যবাদ!

 2 years ago 

অনুভূতি গুলো মিষ্টি। আমি ছোট থেকে আস্তে আস্তে বড় হয়ে উঠেছি যেখান থেকে সেই জায়গা টা যেন আমার প্রান। এখনও সেই পুরোনো ব্রিটিশ আমলের ঘাট টি রয়ে গেছে পুকুর পারে। যদিও কিছুটা জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। তারপরও সন্ধ্যার পর কম করে হলেও তিন বার ঐ ঘাটটিতে গিয়ে বসি। ওখানে বসার জন্য দুটো সোফা মতন বসার জায়গা আছে । যেগুলো পাথর আর সিমেন্টের মিশ্রনে তৈরী করা হয়েছিল আজ থেকে ১০০ বছর আগে। প্রচন্ড গরমেও পুকুর পারে সেকি বাতাস। মনে হয় ভগবান ফ্যান ছেরে দিয়েছে।ওখানে কেউ খুব একটা বসে না। কেন জানি না সবাই বলে ওখানে নাকি মশা কামড়ায় কিন্তু আমাকে কখনও কামড়ায় না। হি হি। আজকের লেখাগুলো যেন আমার বর্তমান
এবং অতীত স্মৃতি মনে করিয়ে দিল।ইস এভাবেই যদি জীবন কেটে যেত। ভাল ছিল লেখা। শুভেচ্ছা রইল বোন।

 2 years ago 

যাক, আমার লেখা পড়ে কেও ঝিল থেকে ঘুরে এলো।কেও আবার ছোটবেলার ঘাটে ফিরে গিয়েছিল। আমি ধন্য! ভালো লাগলো দাদা মন্তব্য পড়ে। ভালো থাকুন।

Coin Marketplace

STEEM 0.16
TRX 0.15
JST 0.029
BTC 56477.82
ETH 2390.38
USDT 1.00
SBD 2.33