২য় পর্বঃ ট্রেন জার্নি (ফেণী টু ঢাকা)

05-10-2022

২০ আশ্বিন ,১৪২৯ বঙ্গাব্দ


আসসালামুআলাইকুম সবাইকে


কেমন আছেন সবাই? নিশ্চয় অনেক ভালো আছেন 🌼। আমি আপনাদের দোয়ায় ভালো আছি। আপনাদের সাথে কয়েকদিন আগে ফেনী টু ঢাকা ট্রেন জার্নির একটি পর্বটি শেয়ার করেছিলাম। আজকে দ্বিতীয় পর্বটি লিখলাম। আসলে ট্রেনের ভিতরে এতোসব ঘটনা ঘটে সবগুলো উল্লেখ করলে বেশ কয়েকটি পর্ব করে লিখলেও শেষ হবে না। কন্টেন্ট এর যেন অভাব নেই। যায়হোক, আশা করি আজকের পর্বটি পড়বেন সবাই।

IMG20220927133106.jpg

w3w

১ম পর্বের পর

চাচার সাথে পরিচয় হয়ে ভালোই হলো। ফেনীতে গিয়েছিল কাজ করতে সেটাও আবার উনার গিন্নিকে না বলে । চাচাকে বললাম না বলে গেলেন যে! একটা মুচকি হেসে চাচা বললো, রাগ করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েছিলাম। আজ দুই মাস পর বাড়িতে যাচ্ছি। ফেনীর পরশুরাম এলাকায় কাজ করত। এখানকার মানুষজন অনেক অলস চাচার মুখ থেকে শুনলাম। আমারও তাই মনে হয়। কারণ একটি বছর ফেনীতে থেকেছি। আশেপাশে অনেক জমি পরে আছে। মানুষজন জমিটুকু চাষ করার সময় যেন পায় না। বাড়িতে বসে অলস সময় পার করে। অনেকে চায়ের দোকানে বসেই সময় কাটিয়ে দেয়। চাচা যে জায়গায় কাজ করতো সেখানকার মানুষজন নাকি ভালোই আপ্যায়ন করেছে। যায়হোক, অনেক কথাই হলো এ ব্যাপারে। ঠিক কিছুক্ষণ পর একজন বাদাম বিক্রেতা এলো। বাদাম দেখেই আমার লোভ লেগে গেল একরম। দশটাকার বাদাম কিনলাম। বাদামগুলো অনেক বড় ছিল। লবণ দিয়ে বাদাম খেতে ভালোই।

বাদাম নিয়ে চাচাকে দিলাম কিছু। তখনই উনার মুখ থেকে জানতে পারি এগুলো হাইব্রিড বাদাম। দেখতে একটু বড় হয়। চাচার ক্ষেতেও এবার অনেক বাদাম হয়েছিল। এক কেজি বাদামের দাম পরে ৪০০ টাকা করে। চরে প্রায় এক একর এলাকা জুড়ে চাচা এবার বাদাম ফলিয়েছে। বাড়িতে না থাকায় উনার ছেলেরাই দেখাশোনা করছে। তবে গ্রামে যে টাকা খরচ করে বাদাম চাষ করা হয় সে টাকা আর তুলতে পারে না। কারন পাইকার যারা আছে তারা সঠিক মূল্য দেয় না। আর উনারাও নিরূপায় হয়ে বাদাম বিক্রি করে দেয়। এদিকে চাচার কথা শুনতে শুনতে আমার বাদাম খাওয়াও শেষ। ট্রেনও লাকসাম চলে আসে। লাকসাম এসে কিছুক্ষণ দাঁড়াবে। তখন ঘড়িতে বাজে প্রায় আড়াইটা। সূর্যের আলো যেন একদম কপালে এসে পড়ছে। এদিকে ক্ষুধাও লাগছিল। মেস থেকে না খেয়েই বের হয়েছিলাম। মেস থেকে প্লেন করেই বের হয়েছিলাম ট্রেনে উঠে নাস্তা করে নিবো। ট্রেনে আগের বার ফাস্টফুড কিনে খেয়েছিলাম। কিন্তু অনেক্ষণ অপেক্ষা করার পরও ফাস্টফুডের লোকেরা কেউ আসে না। কফি নিয়ে এসেছিল। খালি পেটে কফি তো আর খাওয়া যায় না।

IMG20220927164757.jpg

w3w

ট্রেন চলা শুরু করেছে। চোখে ঘুম ঘুম ভাব চলে আসছিল। কিন্তু সূর্যের আলোয় যেন ঘুমানো যাচ্ছিল না। চাচাকে বললাম জানালাটা একটু নিচে নামিয়ে দেয়। চাচা জানালা নিচে নামাতে পারতেছিল না। তারপর আমি চাচাকে হেল্প করলাম। এবার একটু ঘুমানো যাবে। কানে হেডফোনটা লাগিয়ে স্লোভাইব এর একটি গান চালিয়ে দিলাম। চোখ বন্ধ করে গান শুনতে লাগলাম আর ট্রেন আপন গতিতে চলছে। কখন যে ঘুমিয়ে গেলাম টেরও পেলাম না। তবে চিন্তা মাথায় নিয়ে বেশিক্ষণ ঘুমানো যায় না। আর যানবাহনে তো একদমই না। তাও ত্রিশ মিনিটের মতো ঘুমিয়ে নিলাম। কিছুক্ষণ দেখলাম কুমিল্লায় এসে পড়েছি। এখানেও কিছুক্ষণ দাঁড়াবে ট্রেন। কেউ নামবে আবার কেউবা উঠবে। এরই মধ্যে এক ভদ্রলোকের ফোন নেই। পাঞ্জাবীর পকেট থেকে ছিনতাইকারী হাত দিয়ে নিয়ে চলে গেছে। ভদ্রলোক কিছুটা আপসেট। কারণ এতে গুরুত্বপূর্ণ ফোন নাম্বার ছিল। তবে উনার সাথে ছোট একটি বাটন ফোন ছিল। বাড়িতে ফোন দিয়ে বলে দিয়েছে যে উনার ফোনটি ছিনতাইকারী নিয়ে চলে গেছে।

আমি অবশ্য ট্রেনে উঠলে ফোন আর মানিব্যাগ যথেষ্ট সাবধানে রাখি। চলন্ত গাড়ির মধ্যে অহরহ এমন ঘটনা ঘটে থাকে। যাক কিছুক্ষণ পর আবার ট্রেন চলতে শুরু করে। এরই মাঝে আপু ফোন দিয়ে বলেছিল কোন পর্যন্ত এসেছি। আমি তখন বলেছিলাম কুমিল্লা পার হয়েছি। আসতে আসতে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা বেজে যাবে। এরই মাঝে ট্রেন চলতে শুরু করে। ঘড়িতে তখন চারটার মতো বাজে। তখন একজন পেয়ারার ভর্তা বিক্রেতা আসে। পেয়ারার ভর্তা খেতে ভালোই লাগে। সাথে হালকা ঝাল আর টক মিশ্রিত। দশটাকার পেয়ারা ভর্তা নিলাম। ঝাল ঝাল খেতে ভালোই লাগছিল। চাচাকেও বললাম দশ টাকার নিয়ে নেন, খেতে ভালোই লাগে। চাচাও পরে দশটাকার পেয়ারা ভর্তা নিল। যাক, পেয়ারা ভর্তাটা আসলেই ভালো ছিল। ট্রেনের ভিতরে হালকা এসব খাবার খেতে ভালোই লাগে। পকেটে টিসুও নেই। পেয়ারা বিক্রেতার কাছ থেকে একটা পেপার নিয়ে নিলাম। হাতে পেয়ারা ভর্তার কিছু অংশ লেগে আছে, পেপার দিয়ে মুছে নিলাম।

ট্রেন তখন কুমিল্লা পার হয়ে অনেকটা পথ চলে এসেছে। কুমিল্লার পরের স্টেশন কসবা। সেখানেও কিছুক্ষণ দাঁড়াবে। দেখতে দেখতে কসবা চলে এলাম। কসবা স্টেশনে দেখলাম আরও একটা ট্রেন দাঁড়ানো। সেটা সম্বভত কর্ণফুলী এক্সপ্রেস ছিল। ঢাকার উদ্দেশ্যেই এটি যাচ্ছে। সূর্য তখন অস্তমিত হওয়ার পথে। লাল আকার ধারণ করেছে। জানালার পাশে সূর্যের আলো এখন দেখা যাচ্ছিল না। জানালার কাচটা উপরে তুলে দিলাম। এবার বাহিরের ওয়েদার উপভোগ করা যাবে। চাচা সামনে ভৈরব স্টেশনে নেমে যাবে। আমি তখন জানালার পাশে বসবো। এরই মাঝে কিছু লোক দাড়িঁয়েছিল। কয়েকজন সিট দেখার পরও সিট পাচ্ছিল না। আমাদেরকে কয়েকজন এসে জিজ্ঞেস করছিল কোথায় যাবো? আমি ঢাকা আর চাচা নেমে যাবে ভৈরব। তারপর এখানে একজন বসতে পারবেন। ট্রেন কিছুক্ষণ পর ছাড়তে শুরু করে। সামনে ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া স্টেশন। এখানকার আশুগঞ্জ এ আমাদের ইন্ডাস্ট্রিয়াল নিয়েছি। এখানে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে। ট্রেন থেকেই দেখা যায়। কসবা থেকে ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া স্টেশনও কাছে।

চলবে...



10% beneficary for @shyfox ❤️

C3TZR1g81UNaPs7vzNXHueW5ZM76DSHWEY7onmfLxcK2iNzq2MSXKSji21JRspt4nqpkXPR5ea7deLzvmJtuzVBwdLJUpBqtgAZ5gHtHPbayD2jR3CWqjkJ.png

ধন্যবাদ সবাইকে



WhatsApp Image 2021-12-23 at 19.46.54.jpeg



আমি কে?

IMG20210908180509.jpg

আমার নাম হায়দার ইমতিয়াজ উদ্দিন রাকিব। সবাই আমাকে ইমতিয়াজ নামেই চিনে। পেশায় আমি একজন ছাত্র। নিজেকে সবসময় সাধারণ মনে করি। অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেয় এবং তা মেনে চলার চেষ্টা করি। বাংলা ভাষায় নিজের অভিমত প্রকাশ করতে ভালো লাগে। তাছাড়া ফটোগ্রাফি,ব্লগিং,কুকিং,রিভিউ,ডাই ইত্যাদি করতে ভালো লাগে। অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে ভালো লাগে। বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি। ভবিষ্যতে প্রিয় মাতৃভূমির জন্য কিছু করতে চাই।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.15
JST 0.029
BTC 61039.43
ETH 2460.28
USDT 1.00
SBD 2.66