২য় পর্বঃ এক তরফা ভালোবাসা

06-09-2022

২২ ভাদ্র ,১৪২৯ বঙ্গাব্দ


আসসালামুআলাইকুম সবাইকে


শুভ সন্ধ্যা সবাইকে 🌼। আশা করছি সবাই ভালো আছেন। আমি আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। তো আপনাদের সাথে একটি গল্পের একটি পর্ব ইতিপূর্বে শেয়ার করেছিলাম। আজকে দ্বিতীয় পর্বটি লিখে ফেললাম। আগের পর্বটি পড়ে না থাকলে লিংকে প্রবেশ করে পড়ে আসতে পারেন। আশা করি হতাশ হবেননা। যায়হোক, আজকের পর্বের দিকে আলোকপাত করা যাক।

১ম পর্বের পর

man-2933984_1280.jpg

copyright free image from pixabay

রূপা ক্লাসে প্রবেশ করে। এখনো ক্লাস ফাকাঁ। রাফি আগেভাগেই চলে এসেছে স্কুলে। রাফির হাতে অনেক শাপলা ফুল। রূপা ক্লাসের রুম থেকে যেইনা বের হলো তখনই রাফি হাটুঁ গেড়ে রূপাকে প্রপোজ করে ফেলে। রূপা কিছুটা অবাক হয়! রূপা কোনো প্রশ্নের উত্তর না দিয়েই ফুলগুলো সব নিয়ে নিল। রূপা রাফিকে কিছু না বলেই ফুল নিয়ে ক্লাসের ভিতরে চলে আসলো। রাফি অনেকটা টেনশনে পড়ে যায়। রূপা কোনো কিছুর উত্তরই দিলো না। তারপর ক্লাসে স্যার চলে আসে। রূপা ফুলগুলো ব্যাগের ভিতরে রেখে দেয়। শাকিল স্যারের ক্লাস শুরু হয়ে যায়। কোনোভাবেই রাফি ক্লাসে মনোযোগ দিতে পারতেছিল না। রূপা হঠাৎ করেই নিশ্চুপ হয়ে গেল এটা ভেবেই সে চিন্তিত। স্কুল ছুটি হবে বিকালে সেই পর্যন্ত ক্লাস করতে হবে। শাকিল স্যার রাফির বিষয়টা লক্ষ্য করলো যে সে কোনোভাবেই ক্লাসে মনোযোগ দিতে পারছে না। তার কারণ অবশ্য রূপা। কিন্তু রাফি স্যারকে মিথ্যা বলে পাশ কাটিয়ে নেয়।

স্কুল ছুটির পর রাফি গেটের সামনে দাড়িঁয়ে থাকে। রূপা কিছুই বলে না। ঠিক কিছুক্ষণ পর রূপা বলে আমি তোকে ফ্রেন্ড থেকে আর কিছু ভাবতে পারবো না। এই ফ্রেন্ড সম্পর্কটা কখনো নষ্ট হয়না। আমি চাইনা তর আর আমার বন্ধুত্বটা নষ্ট হোক। রাফি রূপার কথা শুনতে থাকে কিন্তু কোনো কথারই উত্তর দিতে পারে না। বন্ধুত্ব আজীবন টিকে থাকে কিন্তু কারো মায়ায় জরিয়ে পড়লে পরে তাকে না পেলে জীবনভর আফসোস করেই যেতে হয়। যেভাবে আছি এভাবেই থাকা ভালো। রাফি রূপার সব কথা মেনে নেয়। রাফির বিশ্বাস ছিল কোনো একদিন হয়তোবা রূপার মনে তার জন্য একটু হলেও জায়গা হবে। এই প্রথম হাটঁতে হাটঁতে রূপাদের বাড়ির কাছে চলে আসে রাফি। রূপার বাড়িটাও চিনে যায়। তারপর থেকে রাফি আর রূপার বন্ধুত্বটা আরও গভীর হতে থাকে। তবে রূপা রাফিকে একজন ভালো বন্ধু ছাড়া আর কিছুই ভাবতে পারে না।

বাড়ি চিনে যাওয়ার পর রূপাকে একনজর দেখার জন্য রাফি চলে যায় রূপাদের বাড়ির সামনে। বাড়ির সামনে ছিল বিশাল বড় মাঠ। যেখানে বিকাল বেলা খেলাধুলা হতো। রূপা আর তার মা হাটঁতো এই মাঠে। রূপাকে দূর থেকে দেখতো রাফি। রূপাদের বাসার পাশে কয়েকজন চাচাত ভাইয়ের সাথে ভালো সম্পর্ক তৈরি হয় রাফির। রাফি রূপাকে একনজর দেখার জন্য দুই কিলোমিটার রাস্তা হেটেঁ আসতো। রূপার এসবে মাথা ব্যথা নেই। রাফি তাকে ভালোবেসেই যাবে। রাতে ফোন দেয় রূপা। বিকালে কেন মাঠে এসেছিল রাফি এটা জানতে চায় রূপা। রাফি বলে রূপাকে দেখার জন্য। রূপার অবশ্য এসব শুনতে ভালোই লাগতো। তাদের মাঝে ফোনালাপ যেন বাড়তে থাকে। প্রতিদিন স্কুল শেষে রূপাকে বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দেয়া ছিল রাফির প্রতিদিনকার রুটিন। মানববাবুর বাড়ির মোড় পর্যন্ত এসে রূপাকে অটো তুলে দিয়ে আসতো রাফি। যাওয়ার সময় রূপা বিদায় জানিয়ে চলে যেত। এতেই খুশি ছিল রাফি। কিন্তু রাফি আশা ছাড়েনি। কারণ হয়তোবা পাথরের মাঝেও ফুল ফুটতে পারে।

শীতের বেলা রূপার মা রূপাকে একা প্রাইভেটে যেতে দিতো না। রাফি খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে যেত। রূপাকে নিয়ে প্রাইভেটে যেতে হবে। তখন শাকিল স্যারের প্রাইভেট বিকাল থেকে সকালে করা হলো। এতো ঠান্ডার মাঝে প্রাইভেট পড়াও কঠিন ব্যাপার ছিল। তবে কাউকে ভালোবাসলে কি এতো কিছু বাধাঁ মানে। ঠিল সাইকেল এর প্যাডেল মেরে চলে যেত রূপাদের বাড়ির কাছে। পনেরো মিনিট আগেই রাফি গিয়ে দাড়িঁয়ে থাকতো। প্রাইভেটে যাওয়ার সময় রূপার সাথে হেটেঁ হেটেঁ চলে যেত। যাওয়ার পথে কত কি কথা হতো তার হিসেব নেই। তবে রপা কি কিন্তু এখনো তার ভালোলাগার কথা বলেনি। সে রাফিকে এখনও তার ভালো বন্ধুইভাবে। রাফি রূপাকে খুব আপন ভাবে। সারাক্ষণ তাকে নিয়েই পড়ে থাকে রাফি। কিছুদিন পর শাকিল স্যার বিষয়টি খেয়াল করে। প্রতিদিন এভাবে দুজনে একসাথে প্রাইভেটে আসার বিষয়টি স্যারের চোখে যায়। স্যার তখন রাফিকে ডেকে নিয়ে অনেক কিছু বলে। তারপর সিদ্ধান্ত হলো রাফিকে বিকালের ব্যাচে পাঠিয়ে দিবে। রূপা পড়বে সকালের ব্যাচে। রাফির মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো। প্রতিদিন রূপাকে নিয়ে কে আসবে? কিন্তু কি আর করার স্যারের কথা তো অমান্য করা যায় না।

রূপা কিছুটা চিন্তিত। কারণ স্যারের কানে ব্যাপারটা চলে গেছে। তার মা শুনলে হয়তোবা অন্য কিছু ভাববে। এখন থেকে রূপা সকালের ব্যাচেই প্রাইভেট পড়বে। প্রাইভেটে শেষে রাফি রূপাকে বলে চিন্তা করার কিছু নেই সে প্রতিদিন এগিয়ে দিয়ে যাবে। রাফির কষ্ট হয়ে যাবে। তবুু সে রূপাকে প্রাইভেট পর্যন্ত আগিয়ে দিয়ে যাবে। রূপা জানে যে রাফি তার জন্য অনেক কষ্ট করছে কিন্তু রূপার মতে তো অন্য কেউ বাস করে। কিন্তু সেটা রাফিকে বলতে পারে না। কখনো বলার সুযোগও হয়নি। হাটঁতে হাটঁতে বাড়ির কাছে চলে আসে রূপা। রূপাকে বিদায় জানিয়ে রাফি সাইকেল এর প্যাডেল মেরে সেও বাড়ির দিকে রওয়ানা দেয়। যাওয়ার পথে ভাবতে থাকে রূপাকে নিয়ে হাজারো স্মৃতি। কিন্তু তার স্বপ্নগুলো কি পূরণ হবে নাকি স্বপ্নই থেকে যাবে। তা ভাবতে চায়না রাফি। রাফি জানে মেয়েরা মুখ ফুটে না বললেও তাকে ঠিকই ভালোবাসে। রাফি তা ভাবতে ভাবতে বাড়িতে চলে আসে।

চলবে.....



10% beneficary for @shyfox ❤️

C3TZR1g81UNaPs7vzNXHueW5ZM76DSHWEY7onmfLxcK2iNzq2MSXKSji21JRspt4nqpkXPR5ea7deLzvmJtuzVBwdLJUpBqtgAZ5gHtHPbayD2jR3CWqjkJ.png

ধন্যবাদ সবাইকে



WhatsApp Image 2021-12-23 at 19.46.54.jpeg



আমি কে?

IMG20210908180509.jpg

আমার নাম হায়দার ইমতিয়াজ উদ্দিন রাকিব। সবাই আমাকে ইমতিয়াজ নামেই চিনে। পেশায় আমি একজন ছাত্র। নিজেকে সবসময় সাধারণ মনে করি। অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেয় এবং তা মেনে চলার চেষ্টা করি। বাংলা ভাষায় নিজের অভিমত প্রকাশ করতে ভালো লাগে। তাছাড়া ফটোগ্রাফি,ব্লগিং,কুকিং,রিভিউ,ডাই ইত্যাদি করতে ভালো লাগে। অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে ভালো লাগে। বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি। ভবিষ্যতে প্রিয় মাতৃভূমির জন্য কিছু করতে চাই।

Sort:  
 2 years ago 
 2 years ago 

গল্পটা বেশ রোমান্টিক।
তবে রাফির জন্য খারাপ লাগছে 😕
বেচারা মরীচিকার পেছনে ছুটছে আর সামনে কষ্টের কি অপেক্ষা করছে 😕
খুব ভালো এগিয়ে চলুন 👌

 2 years ago 

জি ভাইয়া আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ চমৎকার একটি মন্তব্য করে আমাকে উৎসাহ দেয়ার জন্য 🌼❤️। সামনের পর্ব খুব শীঘ্রই আপনাদের সামনে নিয়ে আসবো।

 2 years ago 

কিন্তু রূপার মতে তো অন্য কেউ বাস করে।

এটাই হয়ে থাকে ভাই। আমার সাথেও এইরকম টাই হয়েছে 😢😢। যাইহোক গল্পের টুইস্ব আছে পরের পর্বের জন্য অপেক্ষায় থাকলাম ভাই।।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.14
JST 0.028
BTC 59404.52
ETH 2610.92
USDT 1.00
SBD 2.41