বাড়ি ফেরা || শেষ পর্ব

07-07-2022

২৩ আষাঢ় ,১৪২৯ বঙ্গাব্দ


আসসালামুআলাইকুম সবাইকে


কেমন আছেন সবাই? আশা করছি ভালো আছেন। তবে এই গরমে কি আর ভালো থাকা যায়! লোডশেডিং প্রবলেম করতেছে খুব বেশি কয়েকদিন ধরে। সেটার অবশ্য কারণও আছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন করার জন্য চাই তেল ও গ্যাস। সেগুলো এখন কমে যাচ্ছে। কয়েকদিন এরকম সমস্যা হবে। বাড়িতে এসে দেখি লোডশেডিং বেশি। যায়হোক, ইতোপূর্বে আপনাদের সাথে শেয়ার করেছিলাম বাড়ি ফেরার গল্প। আজকে শেষ পর্বটি শেয়ার করবো। পোস্টটি পড়লে কিছুটা হলেও আন্দাজ করতে পারবেন কিভাবে বাড়িতে আসলাম।

১ম পর্বের পর

IMG20220705202135.jpg

w3w
Device:Oppo A12

চোখে কিছুটা ঘুম অনুভব করছিলাম। বন্ধুরা সবাই দেখি ফোন নিয়ে ব্যস্ত। আমি ভাবলাম কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে নিলে ভালো হবে না হলে সকাল সকাল আরও ঘুমে ধরে বসবে। গরমের মধ্যেয় কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে নেয়ার চেষ্টা করলাম। ঘুমাতেও বিরক্ত লাগছিল তবে ঘুমও পাচ্ছিল খুব। যায়হোক, প্রচন্ড বিরক্ত নিয়েই হাফ আওয়ার ঘুমিয়ে নিলাম। উঠে অবশ্য দেখি ট্রেন আখাউড়া চলে আসছে। তাহলে হয়তো কিশোরগঞ্জ যেতে বেশি লেইট করবেনা। আখাউড়া থেকে ভৈরব কাছেই। এরই মাঝে ট্রেনে প্রবেশ করলো আমাদের সমাজের তৃতীয় লিঙ্গের এক শ্রেণীর মানুষ। যাদেরকে আমরা হিজড়া বলে থাকি। উঠেই সবার কাছ থেকে টাকা নেয়া শুরু করে দিলো। আমাদের কাছে আসতেই টাকা দিতে চায়নি প্রথম তখনই লেগে গেলো গন্ডগোল। গায়ে হাত দেয়া শুরু করে দিলো। আমরা বুঝাচ্ছিলাম আসলে আমাদের কাছে ভাংতি কোনো টাকা নেই। কে শুনে কার কথা! মানিব্যাগ থেকে পঞ্চাশ টাকা বের করলে সেটাই নিয়ে চলে যাবে।

আমার কয়েকজন বন্ধুর উপর রীতিমত জোরাজুরি করা শুরু করে দেয়। নিশাদের সানগ্লাস সেটা নিয়ে নেয়। টাকা না দিলে সানগ্লাস দিবেনা। আমার মানিব্যাগ এ খুচরা কোনো টাকা ছিল না। এখন তাহলে কি করা! সাথে মোবারক বন্ধু বসেছিল বললাম তার কাছে থাকলে দিয়ে দিতে। আমার কাছে এসেও রীতিমত খারাপ ব্যবহার করতে থাকে। মান সম্মানের ভয় নেই ওদের মাঝে বললেই চলে। এই প্রথম খুবই বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে গিয়েছিলাম। তারপর অবশ্য মোবারককে বলে দশ টাকা দিয়ে দেয়। আর নিশাদ দশ টাকা দেয়াতে তার সানগ্লাসটাও ফেরত পায়। যায়হোক, সেখান থেকে রেহাই পেলাম।

IMG20220705194057.jpg

w3w
Device:Oppo A12

দেখতে দেখতে এদিকে ভৈরব চলে এসেছি। ঘড়িতে তখন সাড়ে বারোটা বাজে। আজ তাহলে দুইটার দিকেই কিশোরগঞ্জ চলে যাবে ভাবতেছিলাম। কিন্তু একি! দুই ঘন্টা ধরে বসে আছি ট্রেন ছাড়ার কোনো খবর। এদিকে গরমে শেষ। আমার কয়েকজন বন্ধু জামা কাপড় খুলে টিশার্ট পরে নেয়। কি আর করা। এতো গরম সহ্য করার মতো ছিল না। শার্ট পরে এসে বিপদে পরে গেলাম। শার্ট গরমে ভিজে একাকার হয়ে গেছে। বাহিরে বৃষ্টিতে তবুও এতো গরম অনুভব হচ্ছিল। এরই মাঝে একজন কলা বিক্রেতাকে খেয়াল করলাম। এক হালি আট টাকা করে কলা বিক্রি করছে। ভৈরব এর কলা খেতেও মজা যেমন ঠিক তেমন দামটাও কম। তিন হালি কলা নিয়ে নিলাম ২৪ টাকা দিয়ে। আমার আরও দুইজন বন্ধু পাচঁ হালি করে কলা কিনে নিলো বাড়িতে নিয়ে যাবার জন্য। আমি অবশ্য কলা খেতে থাকলাম। ক্ষুধাও লাগছিল তখন। কলা খাওয়া শেষ। কিন্তু ট্রেন তো ছাড়ছে না। খুবই অসহ্য লাগছিল। আগেরবার এতো খারাপ লাগেনাই ট্রেন দিয়ে আসার সময়। এবার যতটা না অসহ্য ফিল হচ্ছে। ফ্রিতে আসলে একটু তো কষ্ট করতে হয়।

IMG20220706034734.jpg

w3w
Device:Oppo A12

তবে সামনের বার এতো কষ্ট নিয়ে জার্নি করাটা কঠিন হয়ে যাবে। তবে স্টুডেন্ট লাইফে কষ্ট করাটাও ভালো। চাকরি থাকলে এসি বগীতে করে আসলেও সমস্যা ছিল না। ছাত্র অবস্থায় প্রতিটা ক্ষেত্রে হিসেব করে টাকা খরচ করতে হয়। যায়হোক, ঘড়িতে তখন দুইটা বেজে দশমিনিটের মতো। তখন ট্রেন ছাড়া আবার শুরু করে। একটু যেন স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো সবাই। একে তো গরম, তার উপরে এতোক্ষণ বসে থাকা। ভৈরব থেকে সামনে পাচঁটা স্টেশন পড়ে থাকে সে স্টেশনগুলো বেশিক্ষণ দাড়াঁয়ও না। সরারচর স্টেশনে গিয়ে দেখলাম আবার ট্রেন দাড় করালো। কিছু মালপত্র দেখলাম তুলতেছিল। সেখানে বেশিক্ষণ লেইট করেনি। তারপর কিশোরগঞ্জ আসতে আসতে ভোর তিনটা বেজে পঁয়তাল্লিশ এর সময় এসে পৌঁছালো। সেখানেই নেমে পড়লাম। বাহিরে তখন অন্ধকার। এতো সকাল সকাল যানবাহনও পাওয়া যাবেনা। তাই মসজিদে গিয়ে ফজরের নামাজ আদায় করে নিলাম। নামাজ শেষ করে দেখলাম বাহিরে কিছুটা আলোকিত। অটো নিয়ে বাসস্ট্যান্ডে চলে গেলাম। সেখানে গিয়ে দেখি বাস আছে তবে বাস ছাড়বে সকাল ছয়টায়। ভাগ্য ভালো একটি ব্যাটারিচালিত অটো পেলাম। সকাল সকাল ভাড়াটা বেশি চাচ্ছিল। তবে ত্রিশ টাকা ভাড়া বলে নান্দাইল পর্যন্ত অটোতে উঠে পড়লাম। সকাল সকাল প্রকৃতিক আবহাওয়া একদম রিফ্রেশ লাগতেছিল। আমাদের দিকেও তাহলে বৃষ্টি হয়েছিল। সাড়ে ছয়টার দিকে অবশ্য নান্দাইলে চলে আসলাম সেখান থেকে সোজা বাড়িতে।

DeviceOppo A12
Photographer@haideremtiaz
Date06-07-2022

যায়হোক, বাড়ি ফেরা কষ্ট হলেও বাড়িতে আসলে মনটা ভালো হয়ে যায়। ঈদের আনন্দটা সবাই একসাথে উদযাপন করতে পারবো। আপনাদের ধন্যবাদ পোস্টটি পড়ার জন্য। সকলের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে আজকের মতো এখানেই বিদায় নিচ্ছি। আল্লাহ হাফেজ।



10% beneficary for @shyfox ❤️



ধন্যবাদ

WhatsApp Image 2021-12-23 at 19.46.54.jpeg



আমি কে?

IMG20210908180509.jpg

আমার নাম হায়দার ইমতিয়াজ উদ্দিন রাকিব। সবাই আমাকে ইমতিয়াজ নামেই চিনে। পেশায় আমি একজন ছাত্র। নিজেকে সবসময় সাধারণ মনে করি। অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেয় এবং তা মেনে চলার চেষ্টা করি। বাংলা ভাষায় নিজের অভিমত প্রকাশ করতে ভালো লাগে। তাছাড়া ফটোগ্রাফি,ব্লগিং,কুকিং,রিভিউ,ডাই ইত্যাদি করতে ভালো লাগে। অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে ভালো লাগে। বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি। ভবিষ্যতে প্রিয় মাতৃভূমির জন্য কিছু করতে চাই।

Sort:  
 2 years ago 
 2 years ago 

যাক অবশেষে বাড়িতে পৌঁছেছেন সুন্দরভাবে এটাই সবচাইতে বড় সার্থকতা। আর আশা করি ঈদের আমেজ কাটিয়ে খুব শীঘ্রই ফিরে আসবেন ফেনীতে ধন্যবাদ আপনাকে।

 2 years ago 

জি ভাইয়া আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ

 2 years ago 

ঈদের আনন্দকে ভাগাভাগি করে নেওয়ার জন্য অনেক দূর-দূরান্ত থেকে বা কর্মস্থল থেকে মানুষ ফিরে আসে তার আপন ঠিকানায় ঠিক আপনার মত করে। তবে দোয়া করব ঈদের দিনগুলো যেন আপনজনদের সাথে ভালো কাটে।

 2 years ago 

আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া চমৎকার একটি মন্তব্য করার জন্য। আসলে ঈদের আনন্দটুকু পরিবারের সাথে ভাগ করে নেয়ার জন্যই আসা।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.13
JST 0.027
BTC 60935.93
ETH 2645.60
USDT 1.00
SBD 2.56