আবোল-তাবোল জীবনের গল্প [ সততা ]
হ্যালো বন্ধুরা,
একটা বিষয় বেশ লক্ষণীয় আমাদের মানুষের মাঝে, জানি না সেটা আপনারা কখনো খেয়াল কিংবা অনুভব করেছেন কিনা? দেখুন আমরা মানুষ আর মানুষের স্বভাবজাত বৈশষ্ট্য হলো নিয়মের বিপরীতে কাজ করার চেষ্টা করা। এই জন্য এটা আমি বেশ লক্ষ্য করেছি যে মানুষ সর্বদা উল্টো বিষয়টির প্রতি বেশী আগ্রহ এবং আকর্ষনবোধ করে কিংবা নিয়মের বিপরীতে কাজ করতে বেশী পছন্দ করে।
এই নিয়মের উল্টো বিষয়টি নিয়ে আজ কিছু কথা বলার চেষ্টা করবো কারণ অনেক দিন হয়েগেছে আমার ধারাবাহিক আবোল-তাবোল নিয়ে কিছু বলা হচ্ছে না। তবে এটা সত্য যে ভেতরে অনেক কথা জমে আছে কিন্তু সময়ের অভাবে সেগুলোকে প্রকাশ করতে পারছি না। আজ সততা নিয়ে একটা উদাহরণ দিবো এবং তার সাথে প্রসঙ্গক্রমে আরো কিছু অনুভূতি প্রকাশ করার চেষ্টা করবো। যদিও আমরা সবাই কম বেশী এই শব্দটির সাথে পরিচিত এবং হয়তো আমরা সততার বিষয়টি ভালোভাবেই জানি কিন্তু সমস্যা তৈরী হয় তখনই যখন এটা মানার প্রশ্ন আসে।
কারন আমরা মানুষরা একমাত্র জাতি যারা জেনে বুঝে অন্যায় করে এবং সজ্ঞানে নিয়ম বর্হিভূত কাজটি করতে দ্বিধাগ্রস্তবোধ করে না। সত্যি এটা আমার কাছে বড়ই আশ্চার্য লাগে, কি চাই আমাদের? কতটা চাই আমাদের? হয়তো আমরা নিজেরাও সেটা জানি না বা উপলব্ধি করতে পারি না। যার কারনে সততা নামক শব্দটির কোন মূল্য আমাদের কাছে নেই, যার কারনে আমরা সততাকে মূল্যায়ন করতে রাজি নই এবং সততা বিপক্ষে যেতে বেশী স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। হয়তো সবগুলোই আপনার কাছে নীতি বাক্য মনে হতে পারে, হয়তো সবগুলো আপনার কাছে পড়তে ভালো লাগতে পারে কিন্তু যদি আপনাকেও সততার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়, কতটা স্বচ্ছ অবস্থানে থাকতে পারবেন আপনি সেটা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
কিছু দিন আগের ঘটনা আমি সাপ্তাহিক কেটাকাটা করার জন্য বাজারে গিয়েছিলাম, মেইন রোড হতে বেশ কিছুটা ভেতরে যেতে হয় কেনাকাটা করার জন্য। আমি পুরো সপ্তাহের কেনাকাটা একত্রে করে থাকি। তাও প্রায় ৪/৫ হাজার টাকা খরচ হয়। সেদিন সব কেনাকাটা করে মেইর রোডে এসে একটা রিক্সায় উঠলাম, উঠে বসার পর আমার মনে হলো চার কেজি মুরগি কিনেছিলাম সেটা ভুলে বাজারের ভেতরের এক দোকানে ফেলে এসেছি। সঙ্গে সঙ্গে আমি রিক্সা হতে নেমে গেলাম এবং বললাম মামা তুমি একটু সামনে গিয়ে সাইড করে রিক্সাটা রাখো আমি মুরগি নিয়ে ফিরে আসছি। রিক্সা একটু সামনের দিকে চলে গেলো আর আমি পেছনে বাজারের ভিতর।
দোকানে গিয়ে মুগরির ব্যাগটা খুঁজে পেলাম এবং যথারীতি রিক্সাটা পেলাম। উঠে বসা মাত্র রিক্সাওয়ালা আমাকে প্রশ্ন করলো মামা আপনি কি আমাকে চেনেন না, আমি বললাম নাতো। তাহলে আপনি এতোগুলো টাকার জিনিষপত্র রেখে হুট করে চলে গেলেন যদি আমি এগুলো নিয়ে চলে যেতাম। আমি উত্তর দিলাম হয়তো আমার এক সপ্তাহ চলতে কষ্ট হতো কিন্তু তুমি এক সপ্তাহ ভালো কাটাতে পারতা! আমার জন্য হয়তো কষ্ট হতো কিন্তু তুমিতো নিজের সততা বিক্রি করে বড়লোক হয়ে যেতে না। রিক্সাওয়ালা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিলো আর বললো গত সপ্তাহে এই রকম এক লোক মালপত্র রিক্সায় রেখে ভিতরে গিয়েছিলেন কিন্তু ফিরে আসছিলেন প্রায় ৩ ঘন্টা পর, আমি এই তিন ঘন্টা সেই জায়গায় বসে অপেক্ষা করেছি, উনি ফিরে এসে আমাকে দেখে অবাক হয়েছিলেন এবং বলেছিলেন যে, আমি এই মালামালের আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম।
আমি চলে যাই নাই, কারন গরীব হতে পারি কিন্তু নিজের সততা কখনো নষ্ট হতে দেই নাই। মালামালগুলো আপনার জন্য প্রয়োজনীয় কিন্তু আমার জন্য না, আমি এগুলো নিয়ে হয়তো নষ্ট করতাম কিন্তু সবগুলো জিনিষ আমার কাজে লাগতো না। আমি আমার ভাড়া প্রাপ্তিতেই খুশি কিন্তু অন্যের জিনিষ নষ্ট করায় কিংবা নিজের সততা নষ্ট করতে রাজি নই। আমি বললাম এটাই আপনার উত্তম সম্পদ, সততা ধরে রাখতে পারাটা বড় চ্যালেঞ্জ এটা সবাই পারে না কিন্তু আপনি পেরেছেন। এটাকে ধরে রাখুন উত্তম পুরস্কার সময় মতো অবশ্যই পাবেন, নিজের আত্মবিশ্বাসকে ঠিক রাখুন।
সত্যি রিক্সাওয়াল ব্যবহার এবং তার সততার গল্প সেদিন আমাকে বেশ মুগ্ধ করেছিলো। আসলে এই মানুষগুলো আছে বলেই এখনো আমরা সততার গল্প বলতে পারি, এই মানুষগুলো আছে বলেই এখনো আমরা সততার উদাহরণ উপস্থাপন করতে পারি। কিন্তু কেন জানি আমরা শিক্ষিত মানুষরা সেটা বুঝি না এবং বুঝতে চাইও না। বরং আমরা সর্বদা ব্যস্ত থাকার চেষ্টা করি নিজের সততাকে বিকিয়ে দিয়ে অসৎ উপায়ে আরো বেশী সম্পদ অর্জন করার। সবশেষে সততা থাকুক আমাদের মাঝে, সততা থাকুক আমাদের কাজ কর্মে, মানুষের স্বার্থকতা তখনই পূর্ণতা পাবে যখন মানুষ হিসেবে সততার পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করতে পারবো।
Image taken from Pixabay 1 and 2
ধন্যবাদ সবাইকে।
@hafizullah
আমি মোঃ হাফিজ উল্লাহ, চাকুরীজীবী। বাংলাদেশী হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করি। বাঙালী সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য লালন করি। ব্যক্তি স্বাধীনতাকে সমর্থন করি, তবে সর্বদা নিজেকে ব্যতিক্রমধর্মী হিসেবে উপস্থাপন করতে পছন্দ করি। পড়তে, শুনতে এবং লিখতে ভালোবাসি। নিজের মত প্রকাশের এবং অন্যের মতামতকে মূল্যায়নের চেষ্টা করি। ব্যক্তি হিসেবে অলস এবং ভ্রমন প্রিয়।
|| আমার বাংলা ব্লগ-শুরু করো বাংলা দিয়ে ||
ভাই আজকে আপনার গল্পটা পড়ে আমার সত্যি অনেক ভালো লেগেছে। আসলে আমাদের সমাজে অনেক সততা ব্যক্তি রয়েছে যাদের কারণে সমাজব্যবস্থা সুন্দরময় হয়েছে। আসলে আপনি সাপ্তাহিক বাজার করেন একসাথে। যার কারণে 4,5 হাজার টাকার বাজার হয়। যেহেতু আপনি একটি মুরগি ভুল রেখে এসেছিলেন। সে মুরগি আনতে গিয়ে রিকশাতে সকল মালামাল রেখে গেছেন। আর রিকশাআলা সততার সাথে সেই মালামালগুলো রেখেই আপনার জন্য অপেক্ষা করল। যদি চলে যেতে তাহলে আপনি তাকে খুঁজে পেতেন না কিন্তু এখানে সততা ধরে রেখেছে এবং আমি অবাক হয়ে গেলাম। তিন ঘন্টা অপেক্ষা করেও অন্য একজনের মালামাল নিয়ে। আমাদের সমাজে অনেক রিস্কাওয়ালা আছে যাদের সততা দেখে মুগ্ধ হয়ে যায়। আসলেই গরিব বলে তারা আজ সমাজের অবহেলিত হলেও তারাই প্রকৃত মানুষ। আমার গল্পটা খুবই ভালো লেগেছে। আপনার জন্য রইল শুভেচ্ছা ভালোবাসা।
ধন্যবাদ ভাই আপনার সুন্দর মন্তব্য ভাগ করে নেয়ার জন্য।
আপনি খুব যথার্থই বলেছেন শ্রদ্ধেয়;অসৎ উপায়ে উপার্জনে আমরা উঠেপড়ে লেগে থাকি।আমাদের চিন্তাশীলতার অনেক অভাব লক্ষ্যনীয়।শ্রমজীবী সাধারন মানুষদের কাছে আমাদের শেখার অনেক কিছুই থাকে।কিন্তু প্রতিযোগিতার দুনিয়ায় চাহিদা মেটাতে আমরা যা করছি মোটেও এটি সমর্থনযোগ্য নয়। বিবেকের জাগরনে ন্যায়,সততায় বাচুক জীবন।
শিক্ষামূলক এমন গল্পে শিক্ষা হোক সকলের।
হ্যা, ঠিক বলেছেন আমাদের মানসিকতা নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারনে আমরা সঠিক বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করতে পারি না। ধন্যবাদ
ধন্যবাদ শ্রদ্ধেয় এমন একটি সুন্দর কথনে।
ভাই আজকে আপনার পোষ্টের মাধ্যমে আমি একজন সহৃদয়বান মানুষের সন্ধান পেলাম। যদিও আমি তাকে চিনি না কিন্তু তার প্রতি আমার শ্রদ্ধা অনেক বেড়ে গেল। তার এই আচরন সত্যিই আমাকে মুগ্ধ করে দিল। এই রকম মানুষ পাওয়া এখন অনেক কষ্টকর। আর আমরা সবাই যদি এরকমই হতাম তাহলে আমাদের এই সামাজিক পরিবেশ এরকম হত না। সত্যি ভাইয়া এরকম একজন মানুষের সন্ধান আপনি পেয়েছেন। হয়তো আপনি অনেক লাকি যার কারণে এমন একজন সৎ মানুষের দেখা আপনি পেলেন।
আসলেই ভাই এই মানুষগুলো প্রতি আমার নিজেরও শ্রদ্ধাবোধ অনেক বেড়ে গিয়েছে। ধন্যবাদ
Congratulations, your post has been upvoted by @dsc-r2cornell, which is the curating account for @R2cornell's Discord Community.
হাফিজ ভাই নিজের অভিজ্ঞতা থেকে খুব সুন্দর একটি উদাহরণ দিয়েছেন আপনি। আমি বিশ্বাস করি এ ধরনের মানুষ আমাদের সমাজে এখনও প্রচুর পরিমাণেই আছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমি এখনো এমন কারো দেখা পাইনি। একশভাগ সৎ এমন একটি লোকের দেখা যদি আমি পেতাম তাহলে আমি তার পায়ের ধুলা মাথায় নিতাম। আছে আপনার জানামতে এমন কোনো সৎ লোক।
হ্যা, এই ধরনের মানুষ আছে বলেই এখনো সমাজটা ঠিক আছে। ভাই আমার জীবনে আমি এই রকম বহু মানুষের সাক্ষাত পেয়েছি। আপনিও পেয়ে যাবেন কোন একদিন হঠাৎ করে। ধন্যবাদ
বাহ,রিক্সাওয়ালার ব্যবহারের বিষয় পড়ে খুবই ভালো লাগলো ভাইয়া। এখনো কিছু ভালো মানুষ আছে এবং কিছু মনুষ্যত্ব এখনো টিকে আছে বলেই পৃথিবী ঠিকভাবে চলছে।সত্যিই এই মানুষগুলো প্রশংসার দাবিদার।কিন্তু শিক্ষিত মানুষ বেশি আত্মকেন্দ্রিক হয়।ধন্যবাদ ভাইয়া।
হ্যা, এটা সত্যি আপু এদের কারনেই এখনো মনুষ্যত্ব হারিয়ে যায় নাই সমাজ হতে। ধন্যবাদ
এই রিক্সা ওয়ালাদের আমরা ছোট মানুষ বলি আর নিজেদের বড় মানুষ।তবে চিন্তা করে দেখলে বুঝতে হয় আমরাই ছোট মানুষ!আমাদের মধ্যেই আজকাল সততাটা ভীষণ দুর্লব হয়ে গিয়েছে।