প্রশান্তির হাসি এবং কৃতজ্ঞতাবোধ || জীবনের গল্প
হ্যালো বন্ধুরা,
কেমন আছেন সবাই? আশা করছি সবাই ভালো আছেন এবং সুস্থ্য আছেন। আমি বেশ আছি শীতের উষ্ণতায় সময়গুলোকে আরো বেশী উপভোগ্য রাখার চেষ্টা করছি। কারন শীতকাল মানেই আমার প্রিয় সিজন, সুন্দর প্রকৃতির সাথে শীতের উষ্ণতায় নিজেকে আরো বেশী সতেজ রাখার সুযোগ। আর আমি সেই সুযোগটা বেশ ভালো ভাবেই ব্যবহার করছি। আজকে আপনাদের সাথে জীবনের গল্পে আরো কিছু বাস্তবত অনুভূতি শেয়ার করবো, বাস্তবতায় সাথে জীবনের কিছু কথা গল্পের মতো, হয়তো যথারীতি আপনাদের কাছে ভালো লাগবে, হয়তো কিছু হাসি মুখে আলোকিত হবে, হয়তো বা কোন অনুভূতিই তৈরী হবে না।
সেদিন আমার বাংলা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা @rme দাদার পোষ্টটি পড়ে মনের অনুভূতিগুলো ভীষণভাবে নিষ্প্রভ হয়ে গিয়েছিলো, কৃতজ্ঞতা, অকৃতজ্ঞতা আর কৃতঘ্ন নিয়ে বাস্তবতা অভিজ্ঞতাগুলো নিদারুণভাবে আঘাত করেছিলো হৃদয়ে। সত্যি আমরা মানুষ হিসেবে কতটা নিচ হয়ে যাচ্ছি, সুযোগ পেলেই উপকারীর উপকার যেমন অস্বীকার করি ঠিক তেমনি নানাভাবে তাদের ক্ষতিও করার চেষ্টা করি। আমি জানি না অন্য প্রাণীকুলের মাঝে এই বৈশিষ্ট্য আছে কিনা? স্বার্থের জন্য তারা এতোটা দ্রুত পাল্টে যায় কিনা? স্বজাতির প্রিয়মুখগুলোকে মুহুর্তের মাঝে মুখোশে ঢেকে দেয় কিনা? এই রকম অজস্র প্রশ্ন আমার মাঝে বার বার ফিরে আসে আর তার সাথে নিজেকে খুব বেশী ছোট মনে হয়। না জানি ইচ্ছায় কিংবা অনিচ্ছায় কত মানুষের মনে আঘাত করেছি, কত মানুষের মনে দুঃখ দিয়েছি, সেগুলো নিয়ে ভাবলে চোখে পানি চলে আসে আমার।
যাইহোক, আজকে বাস্তব জীবনের কিছু অনুভূতি শেয়ার করবো শুরুতেই বলেছিলাম, চলুন তাহলে আবেগ থেকে বের হয়ে সেদিকে হাঁটা ধরি। আপনাদের ভাবি খুব একটা সুপার শপে যায় না, আমাদের পরিচিত দোকান আছে বাজারে। সাধারণত মাসিক বাজারগুলো সেখান হতেই নিয়ে আসি। যেহেতু দোকানদার আমাদের পরিচিতি সেহেতু সদাইগুলো তারাই অটোতে উঠিয়ে দিয়ে যায়। আবার ফোন করে অনুরোধ করলে বাড়িতেও দিয়ে যায়। কিন্তু এবার একটু সমস্যা হয়েছিলো, আমার অফিসের অবস্থা খুব একটা ভালো না এখন। তাই এই মাসে বেতন পেয়েছি ২১ তারিখে, বুঝতেই পারছেন তাহলে অফিসের আর্থিক অবস্থা কতটা খারাপ। এছাড়া আমি বাকিতে কিছু ক্রয় করা একদমই পছন্দ করি না। অল্প অল্প করে যতটা জরুরী ঠিক ততোটাই ক্রয় করে চলছি।
এর মাঝে একদিন একটা বিজ্ঞাপন দেখলাম সাভারে মিনা বাজার এর নতুন শোরুম খোলা হচ্ছে। ২১ তারিখ বেতন পাওয়ার পর সেদিনই সেটা উঠিয়ে নেই ব্যাংক হতে। তারপর আপনাদের ভাবিকে বলি মিনা বাজার এ যাবো এই মাসের বাকি পণ্যগুলো ক্রয় করার জন্য। সে তো অবাক মিনা বাজার এটা আবার কোথায়? তারপর তাকে সেটা বুঝিয়ে নিয়ে আসলাম, অবশ্য একটু লোভ দেখাতে হয়েছিলো যে নতুন শোরুম খুলেছে বলে বেশ ডিসকাউন্ট দেয়া হচ্ছে হি হি হি। না না বিষয়টি সত্য ছিলো সকল পন্যে বেশ ভালো ডিসকাউন্ট দিচ্ছিলো তারা। এটা সকল ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য, কোথায় নতুন কোন শোরুম খোলা হলে প্রথম সপ্তাহ বেশ ভালো ডিসকাউন্ট দেয়া হয় মানুষের দৃষ্টি আকর্ষন করার জন্য।
তো, আমরা ভিতরে প্রবেশ করার সাথে সাথে শুরু হয়ে গেলো পচিরিত একটা শব্দের ব্যাপক ব্যবহার। যে সাইডে যাই, যে পন্য নিতে যাই সেখানে একটাই শব্দ বেশ স্পষ্ট সেটা হলো স্যার, স্যার, স্যার এটা নিন, এটায় বেশী ডিসকাউন্ট, এটা বেশী ভালো স্যার। আপনাদের ভাবিতো স্যার স্যার শুনতে শুনতে হেসে অস্থির। বলে এরা সারাদিন এতো এতো স্যার বলে, চাকুরীর সময় কি এদের এই শর্ত দিয়েছিলো নাকি কোম্পানী যে যত বেশী পারো স্যার স্যার শব্দের ব্যবহার করতে হবে, হা হা হা। তার কথা শুনে আমিও হেসে উঠলাম, বলি কথা বলার আর সময় পেলে না, এখানে এসব বলো না তারা সবাই শরম পাবে হি হি হি। তারপর বিল পরিশোধ করে যথারীতি বাড়িতে চলে আসলাম এবং একটা একটা করে আপনাদের ভাবিকে দেখাতে লাগলাম কোনটায় কতটা ডিসকাউন্ট পেয়েছি।
তারপর একটা বিষয় উদঘাটন করলাম, নারকেল তেলের দাম রাখে নাই তারা, হয়তো অতিরিক্ত ভুলে এমনটা হয়েছে অথবা সেটা ছুটে গেছে। পরের দিন ২০ টাকা অটো ভাড়া দিয়ে আবার সেখানে গেলাম, বিষয়টি ক্যাশ কাউন্টারে খোলে বললাম, তারপর তাদের চোখে মোখে একটা প্রশান্তি হাসি দেখলাম। তারা বেশ অবাক হয়েছে আমি নারকেল তেলের টাকা ফেরত দিয়েছি বলে। সিরিয়াল ছাড়াই আমার পেমেন্টটা রাখলেন এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন। আমিও প্রশান্তির হৃদয় নিয়ে সেখান হতে ফিরে আসলাম। উপকার করার পর কারো মুখের হাসি সত্যি হৃদয়ে ভীষণ একটা প্রশান্তির অনুভূতি তৈরী করে, যা সত্যি যে উপকার করেন তিনি ছাড়া কেউ বুঝতে সক্ষম নয়। হয়তো এই জন্যই দাদা এতোটা নিঃস্বার্থভাবে আমাদের সকলের মুখের হাসি দেখার জন্য কমিউনিটির মাধ্যমে উপকার করে যাচ্ছেন, প্রশান্তি থাকুক সর্বদা দাদার হৃদয়ে, এই কামনায় শেষ করলাম আজকের জীবনের গল্প।
Image taken from Pixabay 1 and 2
ধন্যবাদ সবাইকে।
@hafizullah
আমি মোঃ হাফিজ উল্লাহ, চাকুরীজীবী। বাংলাদেশী হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করি। বাঙালী সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য লালন করি। ব্যক্তি স্বাধীনতাকে সমর্থন করি, তবে সর্বদা নিজেকে ব্যতিক্রমধর্মী হিসেবে উপস্থাপন করতে পছন্দ করি। পড়তে, শুনতে এবং লিখতে ভালোবাসি। নিজের মত প্রকাশের এবং অন্যের মতামতকে মূল্যায়নের চেষ্টা করি। ব্যক্তি হিসেবে অলস এবং ভ্রমন প্রিয়।
|| আমার বাংলা ব্লগ-শুরু করো বাংলা দিয়ে ||
>>>>>|| এখানে ক্লিক করো ডিসকর্ড চ্যানেলে জয়েন করার জন্য ||<<<<<
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote
Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote
VOTE @bangla.witness as witness
OR
আসলে অন্যের উপকার করলে হৃদয়ে প্রশান্তি অনুভব করা যায়। প্রকাশ করা যায় না। আপনি চাইলে নারিকেল তেলের দাম টা আপনি নাও দিতে পারতেন। কিন্তু সামান্য কিছু টাকার জন্য নিজেকে নিজের কাছে অপরাধী হয়ে থাকতেন।দাদা নিঃস্বার্থভাবে আমাদের সকলের মুখের হাসি ফোঁটানোর জন্য কমিউনিটির মাধ্যমে উপকার করে যাচ্ছেন।
এটা সত্য, আমরা হয়তো দূর হতে অনেক কিছু কল্পনা করতে পারি কিন্তু কাছে আসলে পুরো বিষয়টি দারুনভাবে উপলব্ধি করতে পারি। ধন্যবাদ
একদম ঠিক কথা ভাইয়া। উপকার করলে যে কি পরিমান ভিতরে সুখ লাগে সেটা কেবল উপকার করা মানুষ গুলোই জানে। তবে আপনার যে মানসিকতার পরিচয় মিনা বাজারের ক্যাশের দায়িত্ব প্রাপ্ত ভদ্রলোক পেয়েছে এর পরে আপনি যতবারই ঐ জায়গাটায় যাবেন তত বারই সেই প্রাণবন্ত হাসিটা দেখতে পাবেন। ধন্যবাদ ভাইয়া এত সুন্দর একটি অভিজ্ঞতা আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ মন্তব্য শেয়ার করার জন্য। প্রশান্তি কিংবা প্রকৃত সুখ অন্যের উপকারের মাঝেই রয়েছে যদিও আমরা কেউ কারো উপকার করতে চাই না।
অন্য প্রাণীর মধ্যে এরকম বৈশিষ্ট্য একটু কমই আছে ভাইয়া।আমরা মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব তবে আমাদের মন মানসিকতা দিন দিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।কৃতজ্ঞতা শব্দটি এখন উঠেই যাচ্ছে।দাদার পোস্টটি পড়ে অনেকটাই খারাপ লেগেছিল।উপকার করার পর অন্যের মুখের হাসি আসলেই হৃদয়ে প্রশান্তি এনে দেয়।আপনার পোস্টটি পড়ে ভীষণ ভালো লাগলো।আপনি বেশ ভালো হৃদয়ের মানুষ ভাইয়া।ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর পোস্টটি শেয়ার করার জন্য।
দাদার পোস্টটি পড়েছিলাম, আসলে মানুষ যে কতরকমের স্বার্থপরতার মতো কাজ করে তা জানতে পারলাম। এতো কিছুর পরেও দাদা সবাইকে ক্ষমা করে দিয়েছিল! যাক, আপনার ব্যাপারটাও ভালো লাগলো। নারকেল তেলের দামটা ভুলে না রাখলেও পরদিন ঠিকই দিয়ে এসেছেন! তাদের মুখে প্রশান্তির যে হাসি ফুটেছে সেটাই অনেক 🌼
Congratulations, your post has been upvoted by @dsc-r2cornell, which is the curating account for @R2cornell's Discord Community.
হ্যাঁ ভাই নতুন শো-রুম খোলা হলে কয়েকদিন এমনিতেই ডিসকাউন্ট দিয়ে থাকে ক্রেতাদেরকে আকৃষ্ট করার জন্য।
ভাবীর কথা শুনে তো আমি হাসতে হাসতে শেষ। যাইহোক আপনি নারিকেল তেলের দাম দিতে গিয়েছেন, এটা জেনে খুব ভালো লাগলো। আসলে ভুল হতেই পারে, কারণ মানুষ মাত্রই তো ভুল। যদিও আমাদের সমাজে এখন এমন মানুষের বড়ই অভাব। তবে এমন মহৎ কাজ করার পর, মানুষের মুখের হাসি দেখলে মনের মধ্যে অন্য রকম প্রশান্তি কাজ করে। কিছুদিন আগে ফল কেনার সময় ফল বিক্রেতা ভুল করে আমাকে ৫০০ টাকা বেশি দিয়ে দেয়। তারপর আমি ফেরত দেওয়ার পর ফল বিক্রেতা ভীষণ খুশি হয়। তারপর থেকে আমি গেলে সবসময় ভালো মানের ফল দেওয়ার চেষ্টা করে। যাইহোক আমাদের সবার উচিত কেউ উপকার করলে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করা। এতো চমৎকার একটি পোস্ট আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
ভাইয়া উপকারীর উপকার করার পরিবর্তে অপকার করা একমাত্র মানুষের মধ্যেই রয়েছে কিন্তু অন্য কোনো প্রাণীর মধ্যে তা নেই। আপনার এই কথাগুলো পড়ে আমার নিজের কাছেও অনেক প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। এসব প্রশ্নের উপর আপনার মতো আমিও খুঁজে পাচ্ছি না। তবে আপনি যেই কাজটি করেছেন সেটা হয়তো অন্য কেউ হলে নাও করতো। কার মনের ভিতরে কি কাজ করে কেউ জানেনা। হয়তো এই কয়টা টাকার জন্য আপনারও সমস্যা হতো না কিংবা তারা তো জানেই না। তবে সারাজীবন আপনার মনের মধ্যে একটা অশান্তি রয়ে যেতো আর বারবার মনে হতো দিয়ে আসলে হয়তো ভালো হতো। এটা ঠিক বলেছেন দাদা আমাদের মতো মানুষদের মুখে হাঁসি ফোটানোর জন্য সবসময়ই নিঃস্বার্থভাবে কমিউনিটির মাধ্যমে আমাদের উপকরণ করে যাচ্ছেন।