ঘাড়ে ব্যথা এক রুগীর গল্প যার ব্যথার একটা কারণ পাওয়া গেল অবশেষে
হ্যালো! আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন সবাই। আশা করি ভাল আছেন। আপনার পোস্টে আপনাকে স্বাগতম। হাজির হলাম চেম্বার কথনের আরেকটা গল্প নিয়ে। এগুলো শুধু গল্প নয়, আমার চেম্বারে আগত রুগীদের দুঃখ বেদনার বাস্তব চিত্র। চলেন শুনি আজকে কাহিনী!
৪০ বছর বয়স্ক একজন রুগী। অনেক দিন থেকেই ঘাড়ে ব্যথার সমস্যার ভুগছেন। তাও অন্তত ৫ বছরের বেশী সময় ধরে উনার এই ব্যথা। অসহ্য কোন ব্যথা না। সব সময় থাকেও না। মাঝে মাঝে আসে, আবার চলে যায়। বিভিন্ন সময় ডাক্তার দেখিয়েছেন। কখনও বলা হয়েছে প্রেশার কম এজন্যে ব্যথা হচ্ছে। কখনও বলা হয়েছে হাই প্রেশার । কখনও কোন কারণ পাওয়া যায় নাই। সিম্পল পেইনকিলার খেয়েছে্ন ব্যথা চলে গেছে। একবার ঘাড়ের এক্সরে পর্যন্ত করিয়েছেন বাংলাদেশে। এক্সরেতে কোন সমস্যা উঠে নাই!
আমার কাছে এসেছিলেন গতকাল সকালের দিকে। উনার নিশ্চিত বিশ্বাস ছিল যে উনার হাই প্রেশার। তাই শুরুতে উনার প্রেশার চেক করতে বললেন। প্রেশার মাপলাম।পাওয়া গেল ১২০/৮৫ মিলিমিটার মার্কারী। মানে স্বাভাবিকই আছে, বেশীও না, কমও না। যেহেতু লম্বা একটা সময় ধরে উনি এই সমস্যায় ভুগছেন, তাই উনার পুরা ইতিহাস শোনার চেষ্টা করলাম। ঘাড়ে কোন আঘাতের ঘটনা আছে কিনা, মাথায় করে ভারি জিনিস বহন করা লাগে কিনা, ব্যথা হাতের দিকে ব্যথাটা ছড়িয়ে পড়ে কিনা, ঝিন ঝিন করে কিনা ইত্যাদি। উল্লেখযোগ্য কোন হতিহাস পাওয়া গেল না।
ঘাড়ে ব্যথার খুবই কমন একটা কারণ হচ্ছে শোয়ার সময় পজিশন ঠিক না থাকা। সারা রাত উল্টাপাল্টা পজিশনে ঘুমানোর পর সকালে উঠে ব্যথা শুরু হয়। এধরণে কোন ঘটনা আছে কিনা জানতে চাইলাম। সেটাও পাওয়া গেল না। উনি তখনও হাই প্রেশার নিয়েই ভাবছিলেন। তাই তাকে কয়েকটা বিষয় বললামঃ
উনাকে একটা বিপি চার্ট (BP Chart) মেইনটেইন করতে হবে। দিনের ভিন্ন ভিন্ন সময়ে প্রেশার মাপতে হবে। সময়সহ প্রেশার একটা কাগজে লিখে রাখতে হবে। এভাবে এক সপ্তাহ চার্ট করতে হবে অন্ততপক্ষে। সেক্ষেত্রে দিনের বা রাতের কোন সময় হাই প্রেশার বা লো প্রেশার হয় কিনা বোঝা যাবে।
এক্সরে নরমাল এসেছে কিন্তু উনার সমস্যা যেহেতু যায় নাই, সেক্ষেত্রে পরবর্তী ধাপ হচ্ছে একটা এম আর আই (MRI) পরীক্ষা করা। ওমানে এটা খুবই দামী একটা পরীক্ষা।
চেম্বারের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী কিছু কিছু ঘাড়ে ব্যথার রুগীর রক্তের চর্বি বেশী পাওয়া যায়। বিশেষ করে ট্রাইগ্লিসারাইড (Triglycerdie) উপাদানটা। উনার সেটা সাজেস্ট করলাম। সেটা করতে উনি রাজি হলেন।
একঘন্টা খানেকের মধ্যে রিপোর্ট চলে আসল। উনার রক্তের চর্বির সব উপাদান গুলোই অস্বাভাবিক পাওয়া গেল।
- কোলেস্টেরল: ২৫৭ মিলিগ্রাম/ডেসি লিটার (স্বাভাবিক মাত্রাঃ < ২০০ মিলিগ্রাম/ডেসি লিটার)
- ট্রাইগ্লিসারাইড: ৫১৫ মিলিগ্রাম/ডেসি লিটার (স্বাভাবিক মাত্রাঃ ৫০-১৬৫ মিলিগ্রাম/ডেসি লিটার)
- এইস ডি এল (ভাল কোলেস্টেরল): ৩০ মিলিগ্রাম/ডেসি লিটার (স্বাভাবিক মাত্রা ৩৫-৭৫ মিলিগ্রাম/ডেসি লিটার)
- এল ডি এল (খারাপ কোলেস্টেরল): ১৯১ মিলিগ্রাম/ডেসি লিটার (স্বাভাবিক মাত্রা ৭০-১০৫ মিলিগ্রাম/ডেসি লিটার)
মোদ্দা কথা হচ্ছে যেটা কম থাকার কথা সেটা অনেক বেশী, আর যেটা বেশী থাকলে ভাল, সেটা কম।
অন্য কোন কারণ পাওয়া না যাওয়ায় এই চর্বির অস্বাভাবিকতাকে (Dyslipidemia) কারণ হিসাবে ধরে চিকিৎসা দিলাম তিন মাসের জন্যে। নিয়মিত ওষুধ খেতে বললাম।
উনি যদি তিন মাস পর আসেন তাহলে বোঝা যাবে ঘাড়ে ব্যথার কারণ এটাই ছিল নাকি এটা ছাড়াও অন্য কোন কিছু আছে!!
আজকে এ পর্যন্তই আশা করি আজকের গল্পটাও আপনার ভাল লেগেছে। কোন কিছু জানার থাকলে কিংবা কোন পরামর্শ থাকলে কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন আশা রাখছি।
ধন্যবাদ এবং শুভকামনা রইল চিরন্তর
ডা হাফিজ
ওমান
১৩ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪
ঘাড়ে ব্যথা হলেই অনেকে ধরে নেয় যে প্রেসারের কারণে হচ্ছে। অনেকে তো আবার অবহেলা করে ডাক্তারের কাছেও আসে না। এই রোগী আপনার কাছে এসে ভালো করেছে। তার কোলেস্টেরলের সমস্যাগুলো ধরা পড়েছে। দেখা যাক এখন ঔষুধ খেয়ে তার এগুলো কমে কিনা। ভালো লাগলো আপনার ভিন্ন ধরনের পোস্টটি পড়ে।