"ফিরে পেলাম সেই স্বাদ"(10% বেনিফেসিয়ারী লাজুক খ্যাককে)

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

কেমন আছেন বন্ধুরা?
আশা করি সবাই ভালো ও সুস্থ আছেন।আজ আমি শেয়ার করবো ছোটবেলায় অনেক স্মৃতিজড়ানো একটি ফলের গল্প নিয়ে।

IMG_20220430_213023.jpg

কি ভাবছেন ?
কোন ফলের গল্প বলবো।নিশ্চয়ই অনেকে ফলটি দেখে চিনে গেছেন আবার অনেকের কাছেই অপরিচিত।যাইহোক
এটির স্বাদ থেকে বেশ অনেক বছর বঞ্চিত ছিলাম কিন্তু চোখের সামনে দেখে আর ঠিক থাকতে পারলাম না।দাম দিয়ে কিনে ফেললাম গুটিকয়েক।কখনো ভাবিইনি যে এগুলো একসময় কিনে খেতে হবে।তো চলুন শুরু করা যাক স্মৃতির গল্পগুলো----

ছোটবেলাকার কথা।
যখন আমাদের বাড়ীতে প্রচুর ফল-মূলের গাছ ছিল, এখনও অবশ্য আছে।তবে আমরা সেখানে থাকি না।যাইহোক গ্রামের বাড়ি বলে কথা।আমাদের বাড়িতে দুইপ্রকার গাব গাছ ছিল।একটি ছোট গাব ও অন্যটি বিলাতি গাব।

IMG_20220430_212636.jpg

IMG_20220430_212656.jpg

ফিরে পেলাম সেই স্বাদ

আজ অনেক বছর পর দেখা মিললো ছোট গাবগুলির।যেটি আমার বড়ো জেঠুদের একটি মাত্র গাছ ছিল।প্রতিদিন বিকেল হলেই বাড়িতে আমরা যারা ছোট ছিলাম 3-4 জন।ঝাঁপিয়ে পড়তাম সেই গাব গাছের উপর।ছোট গাব গাছের ডাল ছিল বেশ শক্ত আর পাতাগুলো ছিল খুবই ঘন।তাই সকলে গাছে চড়ে ভিন্ন ভিন্ন ডাল খুঁজে বের করতাম পাকা হলুদ হয়ে যাওয়া গাবগুলি।এই গাবের শুধুমাত্র আটির শাস খেতে হয় বাকি অংশ ফেলে দিতে হয়।গাব থেকে আঙুল দিয়ে আটি বের করে নিয়ে মুখে পুরে জিভের সাহায্যে চুষে খেতে হয়।
বিশেষত্ব: এই ছোট গাব বিশেষ একটি কাজে ব্যবহার করা হয়।কাঁচা থাকাকালীন সময়ে এই গাবের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে বাজারে।কারন এটির জাব করে মাছ ধরা জালে দেওয়া হয় যাতে জাল দীর্ঘদিন স্থায়ী ও মজবুত থাকে।
গাছে বসে বসে খেতাম গাবগুলি।তবে মজার বিষয় হচ্ছে এই গাবের আটিগুলি খুবই পিচ্ছিল জাতীয় হয়,কত যে গিলেছি---ছোটবেলায় তার ইয়ত্তা নেই।আবার কখনো কখনো বাবার সঙ্গে যখন গ্রামের অন্য একটি বাড়ি মাছ ধরা জালে দেওয়ার জন্য কাঁচাগাব কিনতে যেতাম,তখন ও খুঁজে দুইএকটা পেলে মজা করে খেতাম।আজ অনেক বছর ধরে সেই স্বাদ থেকে বঞ্চিত ছিলাম, খুবই মিস করতাম।গতকাল হঠাৎ বাজারে চোখে পড়লো।খুশিতে মন ভরে গেল আমার।তাই ভাবলাম এই স্বাদ গ্রহণ করতেই হবে, যাক খেয়ে তৃপ্তি পেলাম।যদিও ছোটবেলার মতো মজার ছিল না তবে চোখে দেখতে পেয়ে ও খেতে পেরে মনকে একটু সান্ত্বনা দিতে পেরেছি ।সেই ছোটবেলার স্মৃতিটা একটু ঘুচে গিয়েছে।

IMG_20220430_212927.jpg

IMG_20220430_213007.jpg

বিলাতি গাব

বিলাতি গাবগাছ আমাদের নিজেদের ছিল 3 টি।এছাড়া অন্যান্য কাকা-জেঠুর বাড়িতেও ছিল।এই গাব এইসময় পাকে তবে বিলাতি গাবগুলি বেশ বড়ো গোলগাল ও হালকা একটু লম্বা সাইজের হতো।গায়ে হালকা লোমযুক্ত ছিল যেটির হালকা গন্ধও থাকতো।আমাদের বাড়ির পিছনেই প্রাইমারি ও হাইস্কুল রয়েছে।তাই সেখানের ছেলেমেয়েরা গাব কিনতে আসতো আমাদের বাড়িতে।অবশ্য আমরা বেশি বিক্রি করতাম না।কারণ এই বিলাতি গাব পাক ধরলেই প্রতিদিন দলবেঁধে বাদুড় উড়ে এসে খেয়ে যেত বিকাল থেকে শুরু করে সারারাত ধরে।তাই আমার কাজ ছিল প্রতিদিন বিকেলে বেছে বেছে গাছ থেকে কিছু লাল লাল হয়ে যাওয়া গাব নামানো বাঁশের লগা দিয়ে।আসলে বিলাতি গাব গাছের ডাল খুবই নরম ও ছাতুর মতন হয়।পাকলে গাবগুলি খুব টকটকে লাল হয়ে যায় আর পুকুর পাড়ের সিঁড়িতে ঘষে ঘষে এর লোম তুলতে হয়।তারপর ছিপছিপে খোসা ছাড়িয়ে শাস ও গাবের আটির শাস খেতাম।আমার কাকাদের গাব গাছটি অনেক বড়ো ছিল। এছাড়া গাব গাছে জাল দেওয়া ছিল তাই বাদুড় বেশি নষ্ট করতো না।ফলে কাকারা প্রচুর পরিমাণ গাব বিক্রি করতো এইসময়।কিন্তু দুঃখের বিষয় ছোটবেলায় কত খেয়েছি বিলাতি গাব এখন খুবই মিস করি।যেটি বাজারেও পাই না।

IMG_20220430_213042.jpg

তো আজ এই পর্যন্তই।আশা করি আমার শৈশব জীবনের গল্পটি আপনাদের সকলের কাছে ভালো লাগবে।সকলেই ভালো ও সুস্থ থাকবেন।

🌸🌸🌸ধন্যবাদ সকলকে🌸🌸🌸

ক্যামেরা: poco m2

অভিবাদন্তে: @green015

Sort:  
 2 years ago (edited)

অনেকদিন পর সেই চিরচেনা গাব দেখতে পেলাম। আসলে আমাদের বাড়িতেও দুইটা গাব গাছ আছে কিন্তু আগের মতো আর গাব খাওয়া হয় না। তাও এখনো মাঝে মাঝে হঠাৎ করে গ্রামের বাড়িতে আসলে গাব খাওয়া হয়।অনেকদিন পর গাবের এত সুন্দর সুন্দর ছবি দেখতে পেয়ে আমার খেতে খুব ইচ্ছা করছে। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এত সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে তুলে ধরার জন্য।

 2 years ago 

বাড়িতে থাকলে তার প্রতি চাহিদা কম থাকে, ধন্যবাদ ভাইয়া।

 2 years ago 

আপনার গাব দেখে আমার সেই ছোটবেলার কথা মনে পড়ে গেল ।আমি ছোটবেলায় আমি বাড়িতে গিয়ে দেখেছিলাম অনেক স্বাদ পেয়েছিলাম। আমার অনেক ভালো লেগেছে । পরবর্তীতে গাছটি কেটে ফেলা হয়েছে। তারপরে আর কখনো গাব খাওয়া হয়নাই বা গাছ দেখিনি। তবে আপনার মাধ্যমে দুই প্রকারের গাবের বিভিন্ন গুনাগুন ও আপনার অনুভূতি জানতে পেরে খুব ভালো লাগছে। গাম সম্পর্কে আপনার অনেক স্মৃতি অনুভূতি আমাদের সামনে পর্যায়ক্রমে ধরার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

 2 years ago 

গাছটি কেটে ফেলা হয়েছে জেনে খারাপ লাগলো আপু,ভালো থাকবেন।

 2 years ago 

আপু আমিও এটি অনেকদিন পর দেখেছি আপনার কাছে। দেখে বিলাতি গাব খুবই খেতে ইচ্ছে করতেছে । এত চমৎকার একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। শুভকামনা রইল আপনার জন্য।

 2 years ago 

এগুলো কিন্তু বিলাতি গাব নয় ভাইয়া ছোট দেশি গাব।ধন্যবাদ আপনাকে।

 2 years ago 

দেখতেতো অপ বিলাতি গাবের মত। বেশ কিছুদিন আগে খেয়েছিলাম। এখন আর কোথাও দেখা ও মিলেনা।

 2 years ago 

ভাইয়া বিলাতি গাবগুলি বেশ বড়ো গোলগাল ও হালকা একটু লম্বা সাইজের হয়।পাকলে লাল টুকটুকে ও লোমযুক্ত হয়ে থাকে যেটির বর্ননা আমি বিস্তারিত করে লিখে দিয়েছি ।কিন্তু সেটা আমিও এখন দেখতে পাইনা।😢আমি যে গাব শেয়ার করেছি এটি মূলত মাছ ধরা জালে ব্যবহার করা হয় কাঁচা অবস্থায় ,আশা করি বুঝতে পেরেছেন।
তবে হ্যাঁ, অঞ্চলভেদে আবার আপনারা অন্য নামেও চিনে থাকতে পারেন।😊

 2 years ago 

বাহু কি দেখালেন! আমার কাছে মনে হচ্ছে আমি ছোটবেলায় এগুলো অনেক দেখেছি এমনকি খেয়েছি। কিন্তু এখন তো নেই বললেই চলে। তাই অনেক বছর হয়ে গেছে আমি মনে হয় এগুলো আর দেখতে পাইনি। আপনার ফটোগ্রাফিক দেখেই আমার একটু খেতে ইচ্ছে করছিল। ঠিক বলেছেন একদম ছোটবেলার কথা মনে পড়ে গেল। এত সুন্দর একটা মুহুর্ত শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।

 2 years ago 

হ্যাঁ আপু, গাবগুলি বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে দিন দিন।আপনার সুন্দর অনুভূতির জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।

 2 years ago 

পুরনো স্মৃতি মনে পড়ে গেলো আপনার পোস্টটি দেখে। এখন তো এই ধরণের দেশি ফল বাজারে প্রায় দেখাই যায় না। কারণ গ্রামেও এখন এই ধরনের ফলের গাছের সংখ্যা অনেক কমে গিয়েছে। নেই বললেই চলে। আমার নানু বাড়িতে বেশ কিছু গাবগাছ দেখেছি। ছোটবেলায় আমরা যখন নানু বাড়িতে বেড়াতে যেতাম তখন সেই গাছ থেকে গাব পেড়ে খাওয়া হোতো। সেই স্মৃতিটা মনে পড়ে গেলো। ধন্যবাদ আপনাকে।

 2 years ago 

হ্যাঁ ভাইয়া, গাবগুলি বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে দিন দিন।আপনার সুন্দর অনুভূতির জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।

 2 years ago 

আপনি নায় স্বাদ ফিরে পেয়েছেন। কিন্তু আমরা যে পেলাম না। আমরা যে শুধু চেয়ে চেয়ে দেখলাম আপনার এত সুন্দর কার্যক্রম। শুধুমাত্র মনের মধ্যে লোভ লাগিয়ে দিয়ে গেলেন।

 2 years ago 

ভাইয়া, যখনই সামনে পাবেন তখনই স্বাদ নেবেন।ধন্যবাদ ভাইয়া।

 2 years ago (edited)

গাবের বিচি একটি করে মুখে দিতাম আর একটা রসালো চিনির দলা মুখে দিয়েছি মনে হতো। এগুলো এতটাই পিচ্ছিল ছিল মাঝে মাঝে আটি গলা দিয়ে পেটে চলে যেত। পাকাঁ গাব খুব একটা পেতাম না। ওগুলো আগেই গায়েব হয়ে যেতো। আমাদের এখানে বৈরাগির বন নামে একটি জায়গা ছিল যেদিও সেখানে এখন অট্রালিকা উঠেছে। তারপরও দু একটি গাব গাছ রয়ে গেছে। আমারা মূলত সেই বনে যেতাম গাবের আঠা আনতে। ঘুড়ি তৈরীতে এই আঠার ব্যবহার করতাম। তাছাড়া সুতো মাঞ্জা দেওয়ার কাজেও এই আঠা ব্যবহার করতাম। আমাদের বাড়ীর ভিতর এখনও একটি গাব গাছ আছে সেটি অবশ্য বিলাতী গাব গাছ। কিন্তু দুঃখের বিষয় কোন দিন একটিও গাব হয়নি। কেন হয়নি জানি না। হা হা হা। সত্যি গাবের স্বাদ টা এখনও উপলদ্ধি করতে পারি। তবে আর একটি কথা , গাব গাছে কিন্তু ভুত থাকে। ধন্যবাদ বোন । শুভেচ্ছা রইল।

 2 years ago 

বৈরাগীর বন দারুণ নাম তো।সত্যিই খারাপ লাগলো দাদা যে গাব গাছে একটি ও গাব ধরে না।তাছাড়া আমি ভুতের ভয় পাইনা ,অনেক সুন্দর অনুভূতি প্রকাশ করার জন্য ধন্যবাদ দাদা।

 2 years ago 

এই গাব ফলটি আমাদের দেশ চিরচেনা। এটি আসলে লবন মরিচ দিয়ে খেতে খুবই ভালো লাগে। আপনার পোস্টটি পড়ে খুবই ভালো লাগলো। আপনি খুব সুন্দর ভাবে ফলটি আমাদের মাঝে উপস্থাপন করেছেন। এত অসাধারন পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই।

 2 years ago 

গাব লবণ ও মরিচ দিয়ে খাওয়া যায় নতুন শুনলাম।আমি তো ভাবীই নি এভাবে গাব খাওয়া যায় কিনা!তাছাড়া গাব পেকে গেলেই আমরা খেতাম।ধন্যবাদ ভাইয়া।

 2 years ago 

আসলে আপনার গাব খাওয়ার এই গল্পটা পড়তে পেরে আমার খুবই ভালো লেগেছে এবং আমার সেই ছোটবেলার কথা মনে পড়ে গেল। আপনার গাবগুলো অবশ্য অনেক পাঁকা এবং দেখেও সুস্বাদু মনে হচ্ছে।ছোট বেলায় আমাদের বাড়ির পাশে একটি গাব গাছ ছিল, সেই গাব গাছে উঠে আমি গাব পারতাম। আর গাবের কষ দিয়ে আমার শরীর মেখে গেছিল। আমি বাড়িতে আসার সাথে সাথে আমার মা আমাকে ধরে সেই মার, সেই দিনটা মনে পড়ে গেল।

 2 years ago 

সত্যিই এই গাবের ভীষণ আঠা যেটি পোশাককে নষ্ট করে দেয়।সেইজন্য মা ধরে তো মারবেই, হি হি।ধন্যবাদ ভাইয়া।

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.14
JST 0.030
BTC 66937.04
ETH 3270.78
USDT 1.00
SBD 2.74