"আমার বাংলা ব্লগ" প্রতিযোগিতা - ২৫ ||"টক ঝাল মিষ্টি কাঁচা তেঁতুলের আচার রেসিপি"
নমস্কার
বন্ধুরা, কেমন আছেন আপনারা সবাই?
আশা করি সবাই ভালো ও সুস্থ আছেন।আমিও মোটামুটি ভালোই আছি।আমাদের শ্রদ্ধেয় এডমিন @hafizullah ভাইয়া বরাবরের মতোই সুন্দর একটি রেসিপি প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছেন।তাই ধন্যবাদ জানাই ভাইয়াকে এবং আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটির ফাউন্ডার, এডমিন ও মডারেটরসহ সকলকে।আজ আমি সেই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে যাচ্ছি।আসলে আমার যেকোনো রেসিপি তৈরি করতে খুবই ভালো লাগে।আর সেই ভালো লাগা থেকেই আচার রেসিপি তৈরি করার চেষ্টা করলাম।
আচার আমার খুবই প্রিয়।আচার পছন্দ করেন না এমন মানুষ খুব কমই পাওয়া যাবে।তাছাড়া আচারের নাম শুনলেই জিভে জল চলে আসে।ছোটবেলায় আমরা দোকান থেকে 1 টাকার তেঁতুল কিংবা বরইয়ের আচার কিনে খেতাম যেটা খুবই সামান্য পরিমাণ থাকতো।আর এখন 50 টাকার আচার দেখলেও মন ভরে না যেটিও খুবই কম পরিমানে থাকে।যাইহোক ঘরে তৈরি আচার অনেক স্বাস্থ্যসম্মত ও খুবই টেস্টি হয়ে থাকে খেতে। কিন্তু দোকানের আচার বেশ অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি করা হয়।যেটি স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর।তাই আজ আমি প্রথম কাঁচা তেঁতুলের আচার তৈরি করেছি।ছোটবেলা থেকেই কাঁচা তেঁতুলের উপর আমার আলাদা একটা আকর্ষণ আছে।আর তেঁতুলের আচার আমার খুবই পছন্দের।
টক ঝাল মিষ্টি কাঁচা তেঁতুলের আচার রেসিপি:
তেঁতুলের আচার খেতে অনেক মজার।তাছাড়া আমি সবসময় শুকনো জাতীয় আচার পছন্দ করি, তেলে ডুবানো আচার আমার একদম পছন্দ নয়।এছাড়া কাঁচা তেঁতুলে রয়েছে অনেক পুষ্টি উপাদান।তেঁতুল শরীরের জন্য খুবই উপকারী এবং বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে ও এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।যেমন- কোষ্ঠবদ্ধতা,ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে,শরীর জ্বালা করা, স্কার্ভি প্রভৃতি রোগে তেঁতুলের শরবত খুবই উপকারী।তেঁতুল গ্যাসের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে এবং মেদ কমায়।এছাড়াও তেঁতুল রক্তের কোলস্টেরল কমায়।এক্ষেত্রে তেঁতুলের শরবত,তেঁতুলের আচার খুবই উপকারী।আশা করি আমার তৈরি তেঁতুলের আচারটি আপনাদের সকলের কাছে ভালো লাগবে।তো চলুন রেসিপিটা শুরু করা যাক---
উপকরণসমূহ:
ক্রমিক নং | উপকরণ | পরিমাণ |
---|---|---|
1 | কাঁচা তেঁতুল | 400 গ্রাম |
2 | চিনি | 1/3 কাপ |
3 | শুকনো মরিচ | 4 টি |
4 | জিরা | 1 টেবিল চামচ |
5 | পাঁচফোড়ন | 1.5 টেবিল চামচ |
6 | ধনিয়া | 1 টেবিল চামচ |
7 | রসুন বাটা | 1 টেবিল চামচ |
8 | লবণ | স্বাদ অনুযায়ী |
9 | সরিষার তেল | 100 গ্রাম |
10 | লাল মরিচের গুঁড়া | 1/2 টেবিল চামচ |
প্রস্তুতপ্রণালি:
ধাপঃ 1
প্রথমে আমি কাঁচা তেঁতুলগুলি ভালোভাবে জল দিয়ে ধুয়ে নেব এবং একটি ছুরির সাহায্যে তেঁতুলের গা হালকা পরিষ্কার করে নেব।
ধাপঃ 2
আমি এখানে রসুনগুলি মিহি করে শীল-পাটার সাহায্যে হাত দিয়ে বেঁটে নিয়ে একটি পাত্রে তুলে নিয়েছি।
ধাপঃ 3
এবারে একটি কড়াই মিডিয়াম আঁচে চুলায় বসিয়ে দেব।কড়াইতে পরিমাণ মতো জল দিয়ে তেঁতুলগুলি সেদ্ধ করে নেব 5 মিনিট জ্বাল করে নিয়ে।
ধাপঃ 4
তেঁতুলের গায়ে হালকা ফাটল ধরলে তেঁতুল চুলা থেকে নামিয়ে নেব।কারণ তখন বুঝতে হবে তেঁতুল সেদ্ধ হয়ে গেছে।
ধাপঃ 5
আমি এখানে তেঁতুলগুলি জল ঝরিয়ে তুলে নিয়েছি।এরপর তেঁতুলগুলি হালকা ঠান্ডা হয়ে গেলে খোসা ছাড়িয়ে আলাদা করে নেব।
ধাপঃ 6
তো আমি সবগুলো তেঁতুল থেকে খোসা ছাড়িয়ে আলাদা করে নিয়েছি।এখন আচারের মসলা তৈরি করে নেব।
ধাপঃ 7
এবারে আমি একটা কড়াইতে চারটি শুকনো মরিচ,গোটা জিরা,গোটা ধনিয়া ও গোটা পাঁচফোড়ন দিয়ে দেব।এরপর মিডিয়াম আঁচে মসলাগুলি নেড়েচেড়ে ভেঁজে নেব 2-3 মিনিট।
ধাপঃ 8
মসলাটির কালার হালকা পরিবর্তন হলে এবং সুন্দর স্মেল বের হলে নামিয়ে নেব পাত্রে ভেঁজে নেওয়া মসলাটি।
ধাপঃ 9
এখানে আমি সব মসলাগুলি শীল-পাটায় বেঁটে গুঁড়ো করে নিয়েছি।এবারে আচার তৈরি করে নেব।
ধাপঃ 10
আমি এখানে কড়াইতে সরিষার তেল নিয়ে নিলাম।এরপর তেলের মধ্যে 1/2 টেবিল চামচ পরিমাণ গোটা পাঁচফোড়ন দিয়ে ভেঁজে নেব 1 মিনিট মতো।
ধাপঃ 11
পাঁচফোড়ন ভেঁজে নেওয়ার পর রসুন বাটা দিয়ে দেব তেলের মধ্যে।
ধাপঃ 12
এরপর রসুন বাটা 2 মিনিটের মতো ভেঁজে নেব নেড়েচেড়ে।যাতে রসুনের কাঁচা গন্ধ না থাকে।
ধাপঃ 13
রসুন যখন ভাজা ভাজা হয়ে যাবে তখন আমি সেদ্ধ করা তেঁতুলগুলি দিয়ে দেব এর মধ্যে।এবারে 2 মিনিটের মতো তেঁতুলগুলি তেলের মধ্যে ভেঁজে নিতে হবে।
ধাপঃ 14
এরপর আমি স্বাদ মতো লবণ ও লাল মরিচের গুঁড়া দিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে নেব তেঁতুলের সঙ্গে।আরো 2 মিনিট তেলের মধ্যে ভেঁজে নেওয়ার পর আগে ভেঁজে গুঁড়ো করে রাখা মসলাটি পরিমাণ মতো তেঁতুলে দিয়ে মিশিয়ে নেব।
ধাপঃ 15
এবারে আমি প্রয়োজন মতো চিনি দিয়ে দেব।আচার তৈরি করার সময় অনবরত নাড়তে হবে যাতে আচার পুড়ে না যায়।কারণ আচার পুড়ে গেলে এর স্বাদ ভালো লাগে না।
ধাপঃ 16
চিনি দেওয়ার পর আচারে যে জল বের হবে তা অনবরত নেড়েচেড়ে শুকিয়ে নিতে হবে।এই পর্যায়ে চুলার আঁচ মিডিয়াম রেখে যতক্ষণ পর্যন্ত না আচার থেকে তেল আলাদা হয়ে যায় ততক্ষণ ঘন ঘন নাড়তে হবে।
ধাপঃ 17
এরপর আচারটি চুলা থেকে নামিয়ে নেওয়ার পূর্বে আরো 1 টেবিল চামচ ভাঁজা গুঁড়ো মসলা দিয়ে মিশিয়ে নেব।এবারে এটি একটি পাত্রে নামিয়ে নেব।তো তৈরি করা হয়ে গেল আমার "টক ঝাল মিষ্টি কাঁচা তেঁতুলের আচার রেসিপি"।
সর্বশেষ ধাপঃ
এই আচারটি দেখতে যেমন সুন্দর,তেমন খেতেও খুবই টেস্টি ও মজাদার হয়েছে।এছাড়া এই তেঁতুলের আচারটি কাঁচের পাত্রে 2-3 মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করেও রাখা যাবে।তো আপনারা চাইলে এভাবে এটি ট্রাই করে দেখতে পারেন।
আশা করি আপনাদের সকলের কাছে আমার আচারের রেসিপিটা অনেক ভালো লাগবে।সকলে ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন ও সাবধানে থাকবেন।
টুইটার লিংক
আসলেই আপু ছোটবেলায় ১/২ টাকা দামের তেঁতুলের আচার পাওয়া যেত,খেতে বেশ ভালো লাগতো।তবে এই ভাবে কাঁচা তেঁতুলের আচার খাওয়া হয়নি।কালার টা বেশ সুন্দর হয়েছে। খেতে নিশ্চয়ই অনেক ভালো হয়েছে। প্রতিটি ধাপ খুব সুন্দর করে দেখিয়েছেন। ধন্যবাদ
এইভাবে আচার করে খেয়ে দেখবেন আপু,দারুণ টেস্টি।ধন্যবাদ আপনাকে।
একদম ঠিক কথা বলেছেন আপু আপনি আচার 😋😋 পছন্দ করেনা এমন মানুষ আসলে খুঁজে পাওয়া মুশকিল।।
কাঁচা তেঁতুলের লোভনীয় আচার প্রস্তুত করেছেন আপনার পোস্টের টাইটেলটা পড়তেই আমার জিভে জল চলে এসেছে।😋😋।
আপনার প্রস্তুত করা তেতুলের আচার খেতে দেখুন মজা হবে এটা কোন সন্দেহ নেই খুব সুন্দর ভাবে তুলে ধরেছেন আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল।।
সত্যিই এটি খুবই মজার খেতে হয়েছিল ভাইয়া।ধন্যবাদ আপনাকে।
টক ঝাল মিষ্টি তেঁতুলের আচার রেসিপি দেখে খেতে ইচ্ছা করছে। সত্যিই আপনি খুবই মজাদার রেসিপি তৈরি করলেন। এই রেসিপির পরিবেশন আমার খুবই ভালো লেগেছে। দেখে শিখতে পারলাম শুভকামনা রইল।
আপনি শিখতে পেরেছেন ,এটাই আমার রেসিপি তৈরির সার্থকতা ভাইয়া।ধন্যবাদ আপনাকে।
ছোট থাকতে ভাঙ্গা জিনিস পত্রের বদলে আচার দিত।আর এখন ১০টাকা দিলেও নাক সিটকায়।আপনার অনেক পছন্দের সাথে আমার পছন্দ মিলে গেছে।তবে আমি সব ধরনের আচার খেতেই পছন্দ করি।আচারের কালার টা অনেক সুন্দর হয়েছে।দেখেই লোভ লাগছে।শুভ কামনা রইল আপনার জন্য।
দাদা,বাড়িতে অবশ্যই এভাবে তৈরি করে খেয়ে দেখবেন, ধন্যবাদ আপনাকে।
আপনার তৈরি আচারটি দেখতে যেমন সুন্দর হয়েছে খেতেও নিশ্চয়ই বেশ মজা হয়েছে। সুন্দর করে প্রতিটি ধাপ শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।
খেতে অনেক মজার ছিল আপু,ধন্যবাদ আপনাকে।
আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটি প্রতিনিয়ত নতুন নতুন কিছু আয়োজন করছে ৷ দিদি আপনার কাচা তেতুলের আচার দেখে ভালো লাগলো ৷ আপনি অনেক গুলো উপাদান দিয়ে তৈরি করেছেন ৷
আর তেতুল নিয়ে অনেক অনুভুতি ৷ সেই ছোট্ট বেলায় স্কুল থেকে আসার পথে রাস্তার ধারে তেতুল গাছে ঢিল ৷ আর গাছ ওয়ালার তাড়ানো ৲
যা হোক অনেক ভালো লাগলো আপনার টক ঝাল মিষ্টি কাঁচা তেঁতুলের আচার রেসিপি৷
ধন্যবাদ
সত্যিই ,তেতুল গাছে ঢিল ছোড়া অনেক মজার বিষয় ছিল।হি হি ☺️☺️ধন্যবাদ দাদা, সুন্দর অনুভূতি শেয়ার করার জন্য।
তেতুলের আচার খেতে পছন্দ করে না এমন মানুষ খুবই কম আছে। আর আপনি এত সুন্দর ভাবে তেতুলের আচার রেসিপি তৈরি করে উপস্থাপন করেছেন দেখেই তো জিভে জল চলে এসেছে। মন চাচ্ছে একটু খেতে। আমিও এভাবে তৈরি করে খেয়ে দেখব। ধন্যবাদ আপু আপনাকে।
অবশ্যই তৈরি করে খেয়ে দেখবেন আপু,আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।
আপনার তেতুলের আচারের কালার দেখেই ভালো লাগছে ।তবে আমি আচার তেমন পছন্দ করি না ,তাই জিভে জল আসে না ।তবে আমি ডাল ভাতের সাথে আচার খেতে পছন্দ করি । তবে আপনার সিম্পলের মধ্যে রেসিপিটা ভালো লেগেছে।
ধন্যবাদ আপু।
আপু কি জিনিস দেখালেন দেখে জিহ্বা দিয়ে পানি চলে আসলো। আমার খুব পছন্দ হচ্ছে তেঁতুল এর আচার।যদিও মেয়েরা একটু বেশি পছন্দ করে। কিন্তু যে কোন আচার খেতে আমার বরাবরই অনেক ভালো লাগে। আপনি যে আচার টা বানিয়েছেন এই আচার ছোট বেলায় প্রচুর খেতাম। বাড়ির আঙ্গিনায় এসে পুরাতন বই খাতা দিয়ে এই ধরনের তেঁতুল এর আচার খেতাম। অনেক দিন পর দেখলাম এই আচারটি। আচার বানানোর প্রসেস সমূহ প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত খুবই সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। পরিবেশনা টা অনেক সুন্দর ছিল। ধন্যবাদ আপু আপনাকে সুন্দর এবং লোভনীয় একটি আচার এর রেসিপি শেয়ার করার জন্য। শুভ কামনা রইলো আপু আপনার জন্য।
আচারটি আপনার পছন্দ হয়েছে জেনে খুশি হলাম ভাইয়া, ধন্যবাদ আপনার সুন্দর অনুভূতি প্রকাশ করার জন্য।