প্রথম পর্ব: "গ্রাম্য পদ্ধতিতে ভুতচতুর্দশীর যম দীপদান পালন" (10% বেনিফেসিয়ারী লাজুক খ্যাককে)
শুভ দীপাবলির শুভেচ্ছা সকলকে,
আশা করি ,আপনারা সকলেই ভালো ও সুস্থ আছেন।গতকাল ভুতচতুর্দশী ছিল।আমরাও সেটি পালন করেছিলাম।কিন্তু রাতে নেট খুবই সমস্যা দেখা দেয়, তাই ছবি আপলোড করে পোষ্ট করতে পারিনি।তাই গতদিনের আমার আনন্দঘন মুহূর্তটি আপনাদের সঙ্গে আজ ভাগ করে নিতে চলে আসলাম।
আমার লোকেশন
(ভুতচতুর্দশীর রীতিনীতি পালন)
■যমদীপদান /ভুতচতুর্দশী পালনের বিশেষত্ব:
হিন্দুদের মহাউৎসবের মধ্যে দীপদান বা দীপাবলি উৎসব অন্যতম।এই দীপাবলি উৎসব 5 দিন ধরে সারাভারতবর্ষে পালন করা হয়।তাই আমরা বাঙ্গালীরা এই উৎসব 2 দিন ধুমধাম করে পালন করি।সেটা হলো -"ভুতচতুর্দশী/যমদীপদান "এবং কালীপূজার রাতে "দেওয়ালি /দীপাবলির দীপদান"।তাই আমিও ভুতচতুর্দশী বা যমদীপদান পালন করেছিলাম।এটি মূলত প্রত্যেক হিন্দুদের ঘরে ঘরে পালিত হয় 14 প্রদীপ জ্বেলে।এটি ছোট -বড়ো সকলেই পালন করতে পারে।
কথিত আছে,দৈত্যদের রাজা বলী তার সাঙ্গপাঙ্গ অর্থাৎ(ভুত ও প্রেতদের) নিয়ে ভুতচতুর্দশীর দিনে বিষ্ণুদেবের আশীর্বাদস্বরূপ মর্তলোকে পূজা নিতে আসেন।তাই তাদের উদ্দেশ্যে 14 টি প্রদীপ প্রজ্জ্বলিত করে চারিদিকে দেওয়া হয়।এছাড়া এই দিনে আমাদের বংশের মৃত 14 জন পূর্বপুরুষদেরকে উদ্দেশ্য করে 14 টি প্রদীপ জ্বালানো হয়।যাতে আমাদের পূর্ব পুরুষদের আত্মার শান্তি হয় ও তারা আমাদেরকে আশীর্বাদ করেন।আমাদের পূর্বপুরুষরাও ভুত,প্রেতদের সঙ্গে মর্তলোকে আসেন এইদিন।প্রদীপ প্রজ্জ্বলিত করার ফলে দৈত্যরাজা বলি ও তার ভুত,প্রেত সাঙ্গপাঙ্গরা সহজে মর্তলোকে পথ চিনে চলতে পারে কিন্তু কোনো বাড়িতে প্রদীপ না জ্বাললে পথ ভুলে সেই বাড়ি ঢুকে পড়ে ভুত- প্রেতরা।এইদিন 14 প্রদীপ জ্বেলে বাড়ি থেকে সকল অশুভ শক্তি তাড়িয়ে দেওয়া হয় এবং সকল প্রকার অশুভ শক্তি ও পথদুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেতে যমরাজের কাছে প্রার্থনা করা হয়।
(14 টি দীপদান)
■শাক খাওয়ার গুরুত্ব:
ভুতচতুর্দশীর দিনে 14 প্রকার শাক খেয়ে 14 প্রদীপ প্রজ্জ্বলিত করতে হয়।এই দিনে 14 প্রদীপ জ্বালানো ও 14 প্রকারের শাক খাওয়ার রীতি রয়েছে।তাই আমিও 14 রকম শাক তুলেছিলাম।এছাড়া 14 প্রকার শাক খেয়ে প্রদীপ প্রজ্জ্বলিত করেছিলাম।তার কিছু ফটোগ্রাফি শেয়ার করলাম আপনাদের সঙ্গে।
(এক এক করে 14 প্রকার শাক তুললাম)
(আমি যে শাকগুলি তুলেছিলাম, সেই শাকগুলির নাম--পুঁইশাক, লাউশাক, কচুশাক, কুমড়োশাক,ধুন্দল শাক,ঝিঙে শাক,থানকুনি শাক,ঘুমশাক, মাটিফোরা শাক, লালশাক,কুলেখারা শাক,তেলাকুচো শাক ,সাঞ্চি শাক এবং নাম না জানা একটি শাক)
(শাকগুলি বেছে নিয়ে কুঁচিয়ে নিয়ে ধুয়ে নিলাম)
(নিরামিষ/পেঁয়াজ ও রসুন ছাড়া 14 প্রকার শাক রান্না করে নিলাম)
■গ্রাম্য পদ্ধতিতে নিজে হাতে প্রদীপ তৈরি ও প্রজ্জ্বলিত করা:
সাধারণত সবাই পোড়ামাটির প্রদীপ কিনে প্রজ্জ্বলিত করে।কিন্তু আমি ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি আমার মা,দিদিমা,ঠাকুমা সবাই নিজে হাতে কাঁচা মাটি দিয়ে প্রদীপ বানিয়ে সেই প্রদীপ জ্বালায়।তাই আমি ও সেই রীতি পালন করি।কিন্তু শহরে থাকাকালীন সময়ে সেটি সম্ভব ছিল না।আমি গ্রামের মেয়ে।তাই গ্রাম্য পদ্ধতিতে আমি নিজে হাতে প্রদীপ বানিয়েছি।ছোটবেলায় ও এভাবে বানাতাম মায়ের সঙ্গে।কিন্তু গ্রামের মানুষেরাও এখন কেনা প্রদীপ জ্বালায়।যাইহোক ভুতচতুর্দশীর দিন আমার কোনো পূর্ব প্রস্তুতি ছিল না, হঠাৎ করেই বানিয়ে ফেললাম।তাই মাটি ভীষণ নরম ছিল ও সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছিল।ফলে তেমন ভালোভাবে সময় নিয়ে বানাতে পারিনি প্রদীপগুলি।কিন্তু দীপাবলির দিন সময় নিয়ে সুন্দর করে প্রদীপ বানাবো ভাবছি।
(মাটিগুলি ভীষণ নরম)
(একটুখানি মাটি নিয়ে বলের মতো করে একটি আঙ্গুল দিয়ে চেপে নিলাম)
(প্রদীপের মতো মাথার দিকে সরু করে দিলাম)
(হাতে জল লাগিয়ে প্রদীপ বানিয়ে ফেললাম)
(তো গুনে গুনে 14 টি প্রদীপ বানিয়ে নিলাম)
(তুলসী গাছের নিচটা জলও মাটি দিয়ে লেপে নিলাম)
(আমি যেহেতু গাছের তুলো ব্যবহার করি তাই তুলোর মধ্যে দানাগুলো ছাড়িয়ে ফেলে দিলাম)
(14 টি তুলো দিয়ে পলতে পাকিয়ে নিলাম দুই হাত দিয়ে এবং প্রদীপের মধ্যে সরিষার তেল দিয়ে দিলাম)
(তেলে পলতেগুলি ভিজিয়ে 1 টি প্রদীপ জ্বেলে নিলাম এবং সেই 1 টি প্রদীপ থেকে বাকি সব প্রদীপ জ্বেলে নিলাম)
আমার লোকেশন
(এরপর একে একে সব প্রদীপ চারিদিকে সাজিয়ে দিলাম)
তো এই ছিল আমার ভুতচতুর্দশীর যমদীপদানের আনন্দঘন মুহূর্ত।আশা করি আপনাদের সকলের কাছে ভালো লাগবে।
ধন্যবাদ সবাইকে।
সকলেই ভালো ও সুস্থ থাকবেন।
কাহিনীটি আমার একেবারেই জানা ছিলোনা। আপনার কারণে আজ কাহিনিটি জানলাম।আমার আসলে পুরনো কাহিনী গুলো জানতে ও পড়তে বেশি ভালো লাগে। আপু মজার ব্যাপার হচ্ছে আমি কোনোদিনো এতোগুলো শাক খাইনি, পুরো জীবনে আলাদা আলাদা ভাবেও ১৪ রকমের শাক খাইনি। আপনার প্রদীপ বানানো দেখেই মাটি নিয়ে খেলতে ইচ্ছে হচ্ছে আমার।
হ্যাঁ আপু,14 রকম শাক একসঙ্গে খেতে অনেক মজার ।আমরা প্রতিবছর এই ভুতচতুর্দশীর দিনে 14 প্রকার শাক খেয়ে 14 টি প্রদীপ প্রজ্জ্বলিত করি।এটাই রীতি।তাছাড়া আমার প্রদীপগুলি খুবই দ্রুততার সঙ্গে বানানো তাই বেশি ভালো হয়নি।আর এই কাহিনীটি পুরান বা ধর্মগ্রন্থে উল্লেখ আছে বোধহয়, মনে নেই আমার।আমি যেটুকু জানি তাই ব্যক্ত করলাম। আপনার কাছে ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম।অসংখ্য ধন্যবাদ আপু, আপনার গঠনমূলক সুন্দর মন্তব্যের জন্য
দিদি আপনি যেখানে থাকেন আমার সেখানে গিয়ে আপনার রান্না খেতে বড় ইচ্ছে করছে। কি সুন্দর ভাবে সব রান্নার মূল উপকরণ নিজের বাগান থেকে সংগ্রহ করেন। আমার কাছে খুবই ভালো লাগে। কোন প্রকার ভেজাল তো থাকেই না, খাওয়ার সময় ও আলাদা একটা তৃপ্তি পাওয়া যায়।
ঠিক বলেছেন দাদা, বাড়ির খাবারের তৃপ্তিই আলাদা।ইন্ডিয়াতে আসলে অবশ্যই খাওয়াবো।অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে, সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
খুব সুন্দর ভাবে আপনি ভূতচতুর্দশী পালনের গুরুত্ব গুলো বললেন। অনেক কিছু জানতাম না জানতে পারলাম।আর মাটির প্রদীপ গুলো বানানো টা খুব সুন্দর হয়েছে।দেখতে ও খুব ভালো লাগছে। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
দিদি ,আসলে আমি অনেক দ্রুত মাটির প্রদীপগুলি বানিয়েছি হঠাৎ করেই।তাই বেশি ভালো হয় নি।তবুও আপনার কাছে ভালো লেগেছে জেনে খুব খুশি হলাম।অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে, এত সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
ওয়াও আপু চৌদ্দ রকমের শাক একসাথে খেতে অনেক মজা লাগে মনে হয়। আপনার প্রদীপগুলো যা হয়েছে না আপু একেবারে দুর্দান্ত লাগছে ।খুব সুন্দর হয়েছে প্রদীপ গুলো বানানো। আগুন জ্বালানোর পর অসম্ভব সুন্দর লাগছে দেখতে ।অনেক শুভকামনা রইল আপনার জন্য।
হ্যাঁ আপু,বিভিন্ন ধরনের শাক খেতে অনেক মজা লাগে।আপনার মন্তব্য শুনে উৎসাহ পেলাম।অসংখ্য ধন্যবাদ আপু।
দারুন একটি পোষ্ট করেছেন। সকালেই তো আপনার সাথে কথা হয়েছিল ডিসর্কডে ।আপনি বলেছিলেন আজকে একটি পোষ্ট করবেন দিপাবলী নিয়ে । তাই খুজতে খুজতে পেয়ে গেলাম। আয়োজন দেখে আবেগ আপ্লুত হয়ে গেছি। মনে হচ্ছিল কতই না মজা করছেন। তবে আমাদের এখানে এত সব কিছু করা হয় না। যাই হোক দিপাবলীর শুভেচ্ছা নিবেন। ভাল থাকবেন। পরবর্তী পোষ্ট টির অপেক্ষায় রইলাম। ভাল থাকবেন।
হ্যাঁ ভাইয়া, অনেক মজা হয়েছিল।আপনাকে ও শুভ দীপাবলির শুভেচ্ছা।অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে, আপনার গঠনমূলক মন্তব্যের জন্য।
অনেক সুন্দর লাগছে আপু। দিপাবলী সম্পর্কে যদি কিছু জানতাম না আজ কিছু হলেও জানলাম। আর বিভিন্ন শাক সবজি দিয়ে নিরামিষ ভালোই হইছে। আপনার হাতে মাটি দিয়ে তৈরী প্রদীপ অনেক সুন্দর লাগছে। আর প্রদীপে আলো দেওয়ার দৃশ্য ছিল অসাধারণ। সব মিলে অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। শুভ দিপাবলী
আপনাকে ও শুভ দিপাবলী আপু।আপনার কাছে ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম।অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
প্রথমে দিদি দিপাবলির শুভেচ্ছা নেবেন। দিদি অনেক সুন্দর ভাবে দিপাবলি পূজার উপস্থাপনা করছেন।প্রথমে আপনার অনেক রকমের শাকের নিরামিষ রান্নাটা দারুণ হয়েছে ।পরে আপনার হাত দিয়ে মাটির তৈরি প্রদীপ গুলো অনেক সুন্দর ভাবে বানিয়েছেন।তারপর প্রদীপের মধ্যে তেল দিয়ে জ্বলে উঠা প্রদীপ গুলো তুলসি গাছের জায়গাটি ফুটন্ত এক আলোময় হয়ে গেলে।সব মিলে দারুন ছিলে দিদি।আপনার জন্য অনেক শুভ কামনা রইল।
আপনাকে ও শুভ দীপাবলির শুভেচ্ছা।আপনার সুন্দর মন্তব্যে অনুপ্রাণিত হলাম।অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে দাদা।
ওয়াও, আপু, আপনার প্রদীপগুলো অনেক সুন্দর হয়েছে। প্রদীপগুলো জ্বালানোর পর দেখতে আরও বেশি সুন্দর লাগছে।
আমি কখনও এতো রকম শাক দিয়ে ভাজি করে খাই নাই। মনে হয় অনেক মজা লাগে খেতে। সব দিক দিয়ে আপনার পোষ্টটা অনেক সুন্দর হয়েছে।
শুভ কামনা রইল আপু।
হ্যাঁ ভাইয়া,14 রকম শাক একসঙ্গে খেতে অনেক মজার ।আমরা প্রতিবছর এই ভুতচতুর্দশীর দিনে 14 প্রকার শাক খেয়ে 14 টি প্রদীপ প্রজ্জ্বলিত করি।এটাই রীতি।তাছাড়া আমার প্রদীপগুলি খুবই দ্রুততার সঙ্গে বানানো তাই বেশি ভালো হয়নি।তবে আপনার কাছে ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম।অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া, আপনার গঠনমূলক সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
আপু তো দেখছি বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী।এত কিছু একা কিভাবে করেন।রেসিপি,কবিতা, আর্ট, ক্রাফট সবকিছু করেন।আজকের পোস্টটি আপনি না হয়ে অন্য কেউ হলে দুটো পোস্ট বানাতো।শুভকামনা রইলো আপনার জন্য।
😊😊
সব কিছুই আপনাদের আশীর্বাদে হয়ে যায় ভাইয়া।ঠিক বলেছেন দুটি পোষ্ট হয়।কিন্তু একটি পূজার রীতি অনুযায়ী দুটি পোষ্ট করে আমি আমার বিবেককে ছোট করতে চাই না।কারণ দুটি বিষয় একই পূজার মধ্যে তাই আর ভেঙে আলাদা করলাম না।অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে, আপনার গঠনমূলক মন্তব্যের জন্য।ভালো থাকবেন।
দীপাবলি সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারলাম দিদি। ১৪ রকমের শাক খাওয়া ব্যাপরটা আমার কাছে ভালো লেগেছে। অবশ্য এতো রকমের শাক পাওয়া একটু কষ্টের মনে হয়। আর আপনার মাটি দিয়ে বানানো দীপাবলিগুলো সুন্দর হয়েছে খুব। দীপ জ্বালাতেই উজ্জলতা বেড়ে গেছে অনেকটা। আপনার জন্য শুভকামনা ও মঙ্গল কামনা করছি।
ভাইয়া, আমার গ্রামের বাড়িতে 14 প্রকার শাক পেতে কষ্ট হয় নি বরং 15 প্রকার হয়ে গিয়েছিল ।তাই আমি 1 প্রকার বাদ দিয়ে দিয়েছি।অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে, আপনার সুন্দর মতামত ব্যক্ত করার জন্য।