"রাসযাত্রা থেকে বাড়ি ফিরে আকস্মিক মৃত্যু"
নমস্কার
রাসযাত্রা থেকে বাড়ি ফিরে আকস্মিক মৃত্যু:
গল্প শুরুর আগে আপনাদের জানিয়ে রাখি রাসপূর্ণিমা বা রাসযাত্রা কি?
রাস পূর্ণিমা মূলত শ্রীরাধা ও শ্রীকৃষ্ণকে ঘিরে আয়োজিত হয়।রাসলীলা বা রাস যাত্রা সনাতন ধর্মালম্বীদের একটি বাৎসরিক উৎসব।তো চলুন গল্পটি শুরু করা যাক----
অঞ্জলি সম্পর্কে আমার দিদির মেয়ে।অর্থাৎ গোষ্ঠী হিসেবে সে আমার এক জেঠুর মেয়ের মেয়ে।তাই আমাদের গ্রাম তার মামাবাড়ি,কিন্তু এই মামাবাড়ি গ্রামেই তার বিয়ে হয়।স্বামী ও দুই ছেলে নিয়ে অল্প জায়গায় তার বসবাস।কিন্তু এক থেকে দুইবছর হলো তারা আমাদের ঘরের পিছন দিয়ে বয়ে যাওয়া ক্যানেলের শেষপ্রান্তে জমির উপর জায়গা কিনে বসতবাড়ি গড়ে তুলেছে।যদিও ওই সময় আরো মানুষ জায়গা কিনে ওখানে বসতবাড়ি গড়ে তুলেছে।অঞ্জলির বড় ছেলে আমার থেকে অনেক বড় প্রায় 5-6 বছরের।আর অঞ্জলির স্বামী তাই এই গ্রামের নাত-জামাই কিংবা জামাই।
দেখতে দেখতে রাসপূর্ণিমা চলে এসেছে।প্রতিবছর তাই আমাদের গ্রামের মানুষ রাসপূর্ণিমার 15 দিন কিংবা এক সপ্তাহ আগেই সাগরে গিয়ে উপস্থিত হয়।আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া হয় জাল,নৌকা,হাঁড়ি-পাতিল এবং রান্না করে খাওয়ার মতো সরঞ্জাম নেওয়ার।এমনটা প্রত্যেক গ্রামের মানুষ প্রস্তুতি নিয়ে গিয়ে থাকে।তারপর রাসপূর্ণিমার দিনে ভোরে সাগরে একেবারে স্নান সেরে তবেই এদের বাড়ি ফেরা।এইবার তো প্রথম নাত-জামাই অর্থাৎ অঞ্জলির স্বামী গেল সাগরে আমাদের গ্রামের মানুষের সঙ্গে।আসলে এই কয়েকদিন তারা প্রচুর পরিমাণে মাছ ধরে সাগরে তারপর জমিয়ে খেয়েও বাড়ির জন্য নিয়ে আসে সামুদ্রিক মাছ।কেউ কেউ বেশি নিয়ে এসে বিক্রিও করে থাকে গ্রামে কারণ গ্রামে সচরাচর সামুদ্রিক মাছগুলো পাওয়া যায় না।তারপর রাতে তারা হরিণ শিকারও করে থাকে এইসময়, জমিয়ে খাওয়ার এক অন্যতম সময় এই গঙ্গাস্নান বা রাসপূর্ণিমা।
নাত-জামাই কিংবা জামাই বলে কথা।গ্রামের যারা সবাই সাগরে গিয়েছিল সবাই বড় জাল ফেলে বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছ ধরে জমিয়ে রান্না করে খেয়েছে এই কয়েকদিনে।এমনকি তারা হরিণ শিকার করেও রান্না করে খেয়েছে ,তার এক থেকে দুইদিন পরেই রাস পূর্ণিমা।
রাতে তারা সাগরের কিনারায় নৌকা বেঁধে খোলা আকাশের নিচে চাঁদ-তারার মেলা দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পড়ে।যাইহোক রাসপূর্ণিমার দিনে দূর থেকে অসংখ্য মানুষ যারা যাত্রা করে এসেছিলেন তারা ওই দিন ভোরে স্নান সেরে তবেই ঘরে ফিরে আসে।তেমনি অঞ্জলির স্বামী ভালোভাবেই ঘরে ফিরে এলো।ঘরে ফেরার দুইদিন পর অঞ্জলির স্বামী ক্ষেতের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন এবং কোদালের সাহায্যে ক্ষেত তৈরি করতে শুরু করেন মাটি খনন করে।এতে তার প্রচণ্ড বুকে ব্যথা শুরু হয় এবং সে গ্যাসের বড়ি খেয়ে নেন।ওইদিন অঞ্জলির সঙ্গে তার স্বামীর কিছুটা কথা কাটাকাটি হয়ে থাকে।তাই সকালে না খেয়েই সে কাজে লেগে পড়েন রোদ্রের মধ্যে।এছাড়া একটানা মাছ ও মাংস খাওয়াতে তার বদহজম হয়ে যায়।ফলে সে যখন তার মাথা নিচু হয়ে কাজ করছিলো তখন প্রচন্ড গ্যাসে চাপ দেয়।গ্যাস বুকে ও মাথায় এসে চাপ সৃষ্টি করে শরীর খারাপ করে।
অঞ্জলির স্বামী কোদাল রেখে ক্ষেতের মধ্যে বসে পড়ে তার এমন খারাপ অবস্থা দেখে অঞ্জলি তাকে বারান্দায় বসিয়ে রেখে একটি কাজে বাইরে চলে যায়।কিন্তু তার এতটাই খারাপ হয়েছিলো গ্যাসের প্রভাবে শরীর যে ছটফট করতে করতেই সে সেখানে মারা যায়।এটাই তার জীবনের প্রথম ও শেষ গঙ্গাস্নান বা রাসযাত্রা ছিল।
(এই গল্প থেকে আমরা এই শিক্ষা নিতে পারি যে, অতিরিক্ত কোনকিছুই শরীরের জন্য ভালো নয়।অর্থাৎ অতিরিক্ত লোভ আমাদের যেমন ধ্বংসের মুখে ফেলে তেমনি শরীরের যত্ন নেওয়াটা অতি আবশ্যক।এক্ষেত্রে কয়েক দিন বিশ্রাম সেরে তারপর অঞ্জলির স্বামী কাজ করতে পারতো।)
পোষ্ট বিবরণ:
শ্রেণী | জেনারেল রাইটিং |
---|---|
ডিভাইস | poco m2 |
অভিবাদন্তে | @green015 |
লোকেশন | বর্ধমান |
আমার পরিচয় |
---|
আমি সবসময় ভিন্নধর্মী কিছু করার চেষ্টা করি নিজের মতো করে।কবিতা লেখা ও ফুলের বাগান করা আমার শখ।এছাড়া ব্লগিং, রান্না করতে, ছবি আঁকতে,গল্পের বই পড়তে এবং প্রকৃতির নানা ফটোগ্রাফি করতে আমি খুবই ভালোবাসি।।
টুইটার লিংক
0.00 SBD,
0.00 STEEM,
0.00 SP
টাস্ক প্রুফ:
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
Thanks.
খুব মারাত্মক একটি ঘটনা তুমি পোস্টে শেয়ার করলে বোন। এভাবে হঠাৎ মৃত্যু আজকাল খুব দেখা যায়। আসলে মানুষ আজকাল খুব অনিয়মিত জীবন ধারণ করে। তাই সব দিক থেকেই হঠাৎ বিপদের একটা আশঙ্কা থেকে যায়। আমি বেশ কিছুদিন হল নিয়ন্ত্রিত জীবনে এসে গেছি। গ্যাসের সমস্যা আমাকেও খুব জ্বালাত। তোমার এই ঘটনা পড়ে তো ভয় লেগে গেল। যাইহোক সকলে সাবধানে থাকুক।
হুম দাদা,এখন ছোট-বড় সকলের গ্যাসে খুবই সমস্যা করে।ধন্যবাদ আপনাকে।
জীবনের সবকিছুই নির্দিষ্ট মাত্রার মধ্যে করা ভালো। মাত্রাতিরিক্ত কোন কিছুই স্বাস্থ্যকর নয়। যখনই নিয়ম লঙ্ঘন করে তখন তার ফল হাতেনাতে পেয়ে যায় মানুষ। অঞ্জলি স্বামীর ক্ষেত্রে তাই ঘটেছে। অনেকেই আছে লোভ হয়েছে বলে গলা ভর্তি করে খায়। কিন্তু পেটে সয়না। খুবই মর্মান্তিক ঘটনা হলেও এইসব অতি লোভের ফল। অত্যন্ত শিক্ষণীয় একটি ঘটনা শেয়ার করলে তুমি আজ
হ্যাঁ দিদি,কিন্তু খাওয়ার থেকে বিশ্রাম না নিয়ে পরিশ্রমের কাজে লেগে পড়াটা বেশি ভুল ছিল বলে আমার মনে হয়।ধন্যবাদ তোমার সুন্দর অনুভূতি প্রকাশ করার জন্য।