জসীম পল্লী মেলা ভ্রমণ( প্রথম পর্ব)। 10 শতাংশ লাজুক শিয়ালের জন্য।

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

আজ- ২ জৈষ্ঠ্য /১৬ মে | ১৪২৮, বঙ্গাব্দ/২০২২ খ্রিস্টাব্দ| সোমবার | গ্রীষ্মকাল |


আসসালামু-আলাইকুম।

কেমন আছেন বন্ধুরা। আশা করি সবাই ভাল আছেন। পল্লীকবি জসীমউদ্দীনের নাম আপনারা সকলেই শুনেছেন। ১৯০৩ সালে ফরিদপুরের তাম্বুলখানা গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তার জন্মস্থানে প্রতিবছর আয়োজন করা হয় জসীম পল্লী মেলার। প্রায় দীর্ঘ ৬ বছর বন্ধ থাকার পর গতকাল আবার উদ্বোধন হলো এই মেলা। উদ্বোধন এর আগের দিন গিয়েছিলাম কবির বসতবাড়িতে। এটা নিয়েই আজকের আয়োজন।

20220514_180152.jpg
কবি ও তার স্ত্রী
20220514_180531.jpg
জাদুঘরে সংরক্ষিত বিভিন্ন ছবি ও স্মারক

জসিম উদ্দিন মানুষের কাছে পল্লী কবি হিসেবেই সুপরিচিত। তান লেখনীতে পল্লী ও তার মানুষের সুখ-দুঃখের কাহিনী সুচারুভাবে ফুটে উঠেছে। তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ গুলোর মধ্যে নকশী কাঁথার মাঠ, সুজন বাদিয়ার ঘাট, হাসু, রাখালী, বালুচর, ধানক্ষেত উল্লেখযোগ্য। কবির বাড়ির পাশে ছোট্ট একটি নদীর তীরবর্তী বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে আয়োজন করা হয় এই জসীম পল্লী মেলা। যেহেতু পল্লীমেলা তাই এখানে শহরের মেলার মত বড় বড় প্যাভিলিয়ন বা শোরুম থাকেনা। তার বদলে থাকে সার্কাস, পুতুল নাচ, মৃত্যুকূপ খেলা, বাচ্চাদের জন্য বিভিন্ন রাইড আর অসংখ্য মনোহারী দোকান। যেখান থেকে শিশু, নারী-পুরুষ সবাই বিভিন্ন ধরনের পণ্য সামগ্রী কিনতে পারেন সুলভ মূল্যে।

20220514_182005.jpg
কবির কবর
20220514_180309.jpg
কবির বসতঘর

আমি মেলায় গিয়েছিলাম 14 তারিখ অর্থাৎ মেলা উদ্বোধনের আগের দিন। এই মেলা সাধারণত মাসব্যাপী হয়ে থাকে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মেলার সময়সীমা হলেও বেশিরভাগ মানুষ মেলায় আসে বিকেলের দিকে। মেলার প্রধান আকর্ষণ বাচ্চাদের বিভিন্ন ধরনের খেলনা, মহিলাদের কসমেটিক্স সামগ্রী আর হরেক রকম খাবারের দোকান। সাম্প্রতিক সময়ে মেলায় নতুন একটি আকর্ষণ যুক্ত হয়েছে যার নাম লটারি। এটা এক ধরনের জুয়া। যেখানে 20 টাকার একটি টিকিট ক্রয়ের মাধ্যমে সম্ভাবনা থাকে একটি মোটরসাইকেল সহ আরো নানা আকর্ষণীয় পুরষ্কার জেতার। আর এ লোভ দেখিয়েই প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বিশেষ বাহিনী।

20220514_182739.jpg
সার্কাসের আয়োজন চলছে
20220514_182434.jpg
মেলায় স্টল নির্মাণের প্রস্তুতি

মেলা প্রাঙ্গণের পাশেই আছে কবির পৈত্রিক বসতবাড়ি। যেটাকে বর্তমানে একটি জাদুঘরের রূপ দেয়া হয়েছে। 20 টাকার টিকিটের বিনিময় দেখতে পারবেন কবির বিভিন্ন ব্যক্তিগত সামগ্রী সহ আরো অনেক কিছু। এখানে বাচ্চাদের জন্য কয়েকটি দোলনা, স্লাইডিং বোর্ড সহ বেশ কয়েক রকম খেলনা আছে। রাস্তার পাশেই কবির কবর। যেখানে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন তিনি। তার বিখ্যাত কবিতা "ঐ খানে তোর দাদির কবর ডালিম-গাছের তলে" সেই ডালিম গাছটিও দেখতে পাবেন এখানে আসলে। সবমিলিয়ে উপভোগ করার মতো কিছুটা সময় পার করতে পারবেন সে গ্যারান্টি দিচ্ছি। প্রথম পর্ব এখানেই শেষ করছি। মেলা জমে উঠলে আবারো হাজির হব আপনাদের সামনে। ততদিন পর্যন্ত সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন এ প্রত্যাশা রইল।

20220514_182527.jpg
বিভিন্ন রাইড এর সরঞ্জাম জমা করা হচ্ছে
20220514_182232.jpg
আলোক সজ্জার জন্য বাশ দিয়ে তৈরি টাওয়ার
20220514_180957.jpg
শিকায় ঝুলন্ত মাটির হাড়ি

Photographer@ferdous3486
DeviceSamsung M21
Locationlink
Sort:  
 2 years ago 

পল্লি কবি জসিম উদ্দিনের আসমানি কবিতা টা আমার এখনো মনে আছে। বেশ চমৎকার লাগত। তবে তার স্মরণে যে মেলার আয়োজন করা হয় এটা জানতাম না। মেলার আয়োজন চলছে। আশাকরি মেলা নিয়ে আপনার আরও কিছু পোস্ট দেখতে পারব। অপেক্ষায় থাকলাম।।

 2 years ago 

এই মেলা আমাদের ফরিদপুরবাসীদের একটি ঐতিহ্য। সেই ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি জাঁকজমকপূর্ণ এই মেলা। শহরের মত এত বড় পরিসরে না হলেও পল্লী অঞ্চলের এই মেলা যথেষ্ট সুপরিচিত। শুভকামনা রইল আপনার জন্য।

 2 years ago 

কবি জসীমউদ্দীনের কথা অনেক শুনেছি এমনকি ওনার অনেক কবিতা পড়েছি। আপনি কবি জসীমউদ্দীনের বসত বাড়িতে গিয়েছেন শুনে বেশ ভালই লাগলো। এমনকি এই দীর্ঘ 6 বছর ধরে এই মেলা টা বন্ধ আছে শুনে একটু খারাপ লাগলো। কিন্তু পুনরায় আবার মেলা শুরু হচ্ছে জেনে বেশ ভালই লাগলো। যদিও এখন মেলার খুব একটা কিছু দেখতে পাইনি পরবর্তীতে অবশ্যই আপনার থেকে মেলার দৃশ্য এমন কি সবকিছু দেখতে পাবো।

 2 years ago 

কবি জসীমউদ্দীন আমাদের ফরিদপুর জেলার গর্ব। আর এই মেলাটি বহু বছর যাবৎ তার ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। মাঝখানে রাজনৈতিক কোন্দল আর করোনার কারণে অনেক দিন বন্ধ ছিল। আশা করি মেলার অনেক কিছুই আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করতে পারব। ধন্যবাদ আপু

 2 years ago 

আমার প্রিয় কবিদের মধ্যে অন্যতম হলো শ্রদ্ধেয় পল্লী কবি জসিম উদ্দিন। আপনি পল্লীকবি জসীমউদ্দীন এর বাড়িতে গিয়েছেন দেখে খুব ভালো লাগলো‌ আপনি খুব সুন্দর করে অত্যন্ত চমৎকারভাবে কবির বিভিন্ন নিদর্শনসমূহ এবং মেলার ফটোগ্রাফি আমাদের মাঝে উপস্থাপন করেছেন । আপনার পোস্টের মাধ্যমে অনেক কিছু দেখার সুযোগ হলো ।এতো অসাধারণ পোষ্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই।

 2 years ago 

এধরনের পোষ্টে সাধারণত আমি খুব বেশি মন্তব্য আশা করি না। আপনারা যারা দু-চারজন আছেন তাদের জন্যই আসলে এই পোস্টগুলো। সময় দিয়ে আমার পোস্টটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

 2 years ago 

পল্লী কবি জসীম উদ্দিন আমাদের বাংলার গর্ব। তার লিখনী এখনো মানুষের হৃদয়ে গাঁথা।
আপনি তার বসতবাড়ি, কবরস্থান সহ সবকিছু ঘুরে এসেছেন সত্যিই সৌভাগ্যবান আপনি। আর মেলার প্রস্তুতি চলছে সবে। ইনশাআল্লাহ সামনে পুরো মেলার আরো চমৎকার বর্ণনা পাবো।
শুভ কামনা রইল আপনার জন্য 💌

 2 years ago 

বলতে গেলে মাসব্যাপী এ মেলায় কম করে হলেও তিন-চারবার যাওয়া হত। এখন হয়তো আর অত না গেলেও চেষ্টা করব মেলার সম্পূর্ণ কভারেজ দিতে। ধন্যবাদ ভাই

 2 years ago 

আপনার এই পোস্ট দেখেই বোঝা যাচ্ছে পল্লীকবি জসীমউদ্দীন মেলায় ভ্রমণ করার সময় অনেক চমৎকার একটি মুহূর্তে অতিবাহিত করেছেন। আর সেই সময় চমৎকার কিছু ফটোগ্রাফি ও আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন দেখে খুবই ভালো লাগলো। মাঝে মাঝে এরকম মেলায় ঘোরাঘুরি করতে খুবই ভালো লাগে। সত্যিই আপনার ফটোগ্রাফি গুলো আমার কাছে অনেক বেশি ভালো লেগেছে। শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।

 2 years ago 

দীর্ঘদিন করোনার ভয়ে মানুষ গৃহবন্দি থাকার পর সবার মনেই ঘোরাফেরার জন্য ব্যাপক আগ্রহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আমিও তার ব্যাতিক্রম নই। তাই যেখানে যাই সেখানেই ভালো লাগে। ধন্যবাদ আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য।

 2 years ago (edited)

কবি জসীমউদ্দীন অনেক বিখ্যাত একজন কবি। তিনি আমাদের মাঝে পল্লী কবি নামে পরিচিত। তার রচয়িত নকশী কাঁথার মাঠ সুজন বাদিয়ার ঘাট খুব ভাল লেগেছিল আমার কাছে। আমার প্রিয় কবিদের মধ্যে তিনি একজন। যতটুকু শুনেছিলাম কবিতা অসীম উদ্দিনের সে পল্লবী গ্রাম দেখতে অনেক সুন্দর। আমার তো মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে গিয়ে ঘুরে আসতে। আপনি সেই মেলায় ঘুরাঘুরি আনন্দ করেছেন তা ফটোগ্রাফি গুলো দেখলে বুঝা যায়। শিকায় যে মাটির কলসি টি ঝুলছে তা আমার কাছে অনেক ভালো লেগেছে। কলস এর উপরের নকশী কাজ খুব সুন্দর।

 2 years ago 

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেক কিছুই পরিবর্তিত হয়েছে। সবকিছু আর আগের মত নেই। তারপরেও যা আছে তা দেখলে আশা করি আপনার খারাপ লাগবে না। ঘুরে যাওয়ার আমন্ত্রণ রইল। ধন্যবাদ আপু

 2 years ago 

আমার খুব ইচ্ছা পল্লীকবি জসীমউদ্দীনের সেই পল্লীগ্রাম গুলোতে ঘুরে আসতে। তার নকশী কাঁথার মাঠ দেখতে। পল্লীকবি জসীমউদ্দীন সবসময় গ্রামীণ সমাজ মানুষের নিত্যনৈমিত্তিক জীবন ধারা নিয়ে লেখালেখি করতেন। তার উপন্যাস কাব্যগ্রন্থের কবিতায় সবসময়ই গ্রামের মানুষের সহজ সরল জীবন প্রেম বিরহ উঠে এসেছে। যেমন তার নকশী কাঁথার মাঠ গ্রামের ত্রিভুজ প্রেমের কাহিনী ফুটে উঠেছে। আপনি খুব সুন্দর ভাবে পল্লীকবি জসীমউদ্দীনের এলাকার মেলার ফটোগ্রাফি করেছেন সেই জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

 2 years ago 

প্রথমেই আপনাকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি কবির স্মৃতি বিজড়িত এই জন্মস্থান ভ্রমণ করার জন্য। আশা করি সত্যিই যদি কখনও আসেন খুব একটা খারাপ লাগবে না। আর আপনি যে প্রচুর পড়ালেখা করেন তা আপনার কথা শুনলেই বোঝা যায়। ধন্যবাদ আপু

 2 years ago (edited)

কবি জসীম উদ্দীনের অনেক কবিতা বই এ পড়েছি। আমার কাছে ওনার কবিতা গুলো অনেক ভালো লাগে। ভাইয়া আপনি কবির বাসায় ঘুরতে গিয়েছেন শুনে অনেক ভালো লাগলো। আরো ভালো লাগলো আপনার ফটোগ্রাফি ও পোস্টের মাধ্যমে আমিও অনেক কিছু দেখে নিলাম এবং শিখে নিলাম। অনেক ভালো লাগলো ভাইয়া ধন্যবাদ আপনাকে আপনার জন্য শুভকামনা আপনার।

 2 years ago 

কবি জসীমউদ্দীন আমারও অনেক প্রিয় একজন কবি। তার আসমানী নামে একটি কবিতা আমার এখনো মুখস্ত। বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করতে তার ভূমিকা কোন অংশেই কম নয়। ধন্যবাদ আপু

 2 years ago 

পল্লীকবি জসীমউদ্দীন খ্যাতি পেয়েছে বাংলার মানুষের রূপ ও বৈচিত্র্য এবং সুখ দুঃখ সবকিছু পুটিয়ে তুলেছেন তিনি কবিতা এবং গল্পের মাধ্যমে। আপনি অনেক সুন্দর করে পল্লীকবি জসীমউদ্দীনের বাড়ি এবং পল্লী মেলার বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন। অনেক কিছুই জানতে পারলাম এবং না জানা অনেক তথ্য জানতে পারলাম। পল্লীকবির পল্লী মেলার আয়োজন চলছে দেখার আশায় রইলাম। শুভেচ্ছা রইল আপনার জন্য।

 2 years ago 

অবশ্যই চেষ্টা করবো মেলার উল্লেখযোগ্য অংশ আপনাদের সামনে তুলে ধরতে যাতে ঐতিহ্যবাহী এ মেলা সম্পর্কে আপনারাও জানতে পারেন। ধন্যবাদ পাশে থাকার জন্য

 2 years ago 

পল্লি কবি জসীমউদ্দীন এর স্মরনে যে এরকম বড় একটি মেলা হয় তা আজ জানতে পারলাম ভাই। অনেক বছর মেলা বন্ধ ছিল পুনরায় আবার চালু হচ্ছে এটা শুনে খুশি হলাম। এর পরে মেলার বিভিন্ন কিছু আপনার মাধ্যমে আরও বিশদ জানতে চাই।

 2 years ago 

মেলাটি আসলে খুব বেশি বড় না হলেও ঐতিহ্যবাহী। বহু বছর যাবৎ এ মেলা হয়ে আসছে। পল্লী মেলা দেখার অভিজ্ঞতা না থাকলে আশা করি ভালো লাগবে।

Coin Marketplace

STEEM 0.29
TRX 0.12
JST 0.034
BTC 63521.22
ETH 3319.09
USDT 1.00
SBD 3.91