প্রতিযোগিতা-১৯, বৃষ্টির দিন ও আমার সাঁতার শেখার অভিজ্ঞতা। 10% লাজুক শেয়ালের জন্য।

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago (edited)

আজ- ১৫ আষাঢ় /২৯ জুন | ১৪২৯, বঙ্গাব্দ/২০২২ খ্রিস্টাব্দ| বুধবার | বর্ষাকাল |


আসসালামু-আলাইকুম।

কেমন আছেন বন্ধুরা। আশা করি সবাই ভাল আছেন। প্রথমেই ধন্যবাদ জানাই এডমিন @shuvo35 ভাই কে বৃষ্টি নিয়ে এত সুন্দর একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করার জন্য। প্রায় প্রতি মাসেই আমার বাংলা ব্লগ কর্তৃক বিভিন্ন ধরনের প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়ে থাকে। এ ধরনের প্রতিযোগিতার মাধ্যমে একদিকে যেমন ভালো ভালো কনটেন্ট তৈরি হয, ঠিক তেমনি কমিউনিটির পরিবেশ চাঙ্গা হয়ে ওঠে। প্রায় প্রত্যেকটি প্রতিযোগিতাতেই আমি চেষ্টা করি অংশগ্রহণ করার। আমার কাছে প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হবার চাইতে অংশগ্রহণ করাটাই বড় কথা। বৃষ্টি বা বর্ষাকাল যদিও আমার প্রিয় ঋতু নয় তা সত্ত্বেও এ সংক্রান্ত এত মজার মজার অভিজ্ঞতা আছে যা লিখতে গেলে মহাকাব্য হয়ে যাবে। যাই হোক এর মধ্য থেকেই আজ সামান্য কিছু অনুভূতি শেয়ার করব আপনাদের সঙ্গে।

rain-275317_1920.jpg

Source

আমি তখন ক্লাস ফাইভে পড়ি। বয়স বড়জোর ৯/১০। ওই বয়সেই আমি বেশ ডানপিটে ছিলাম। ঘরের চাইতে বাইরের জগৎটাই আমাকে বেশি আকর্ষণ করত। আর মফস্বল এলাকায় বসবাস করার সুবাদে সমবয়সী বন্ধু-বান্ধবের অভাব ছিল না। বাবা সরকারি চাকরি করতেন তাই আমাদেরকে নিয়ে তার বসবাস ছিল ফরিদপুর জেলা শহরের প্রান্তে। আমার জন্ম, শৈশব, কৈশর সবই বলতে গেলে এই এলাকাকে কেন্দ্র করেই অতিবাহিত হয়েছে। বেশিরভাগ সময়ে বাবা অফিসে থাকতেন আর মায়ের পক্ষে আমাদের দুই ভাইকে চোখে চোখে রাখা একেবারেই অসম্ভব ছিল। আমার বড় ভাই ছিলেন আমার চাইতে দুই বছরের বড়। বলতে গেলে আমরা দুই ভাই ছিলাম বন্ধুর মতো। ঘোরাফেরা, স্কুলে যাওয়া সহ সারাদিন একসাথেই থাকতাম। ইচ্ছে মতো ঘুরে বেড়াতাম আর খেলা করতাম ছুটির দিনগুলোতে। শৈশবে বৃষ্টি ছিল আমার খুবই প্রিয়। বৃষ্টি আসলে আমাকে আর কিছুতেই ঘরে রাখা যেত না। বৃষ্টির ফোঁটা পরা মাত্রই বেরিয়ে পড়তাম ভিজবো বলে। সেই সঙ্গে সমবয়সী বন্ধুদের সঙ্গে মেতে উঠতাম ফুটবল খেলায়। পাড়ার মাঠে সেই ফুটবল খেলা চলত বৃষ্টি না থামা পর্যন্ত। সারা গায়ে কাদা মেখে ভূত হয়ে তারপর যেতাম এলাকার সবচাইতে বড় পুকুরে দল বেঁধে গোসল করতে।

boy-1972493_1920.jpg

Source

এমনই একটি বৃষ্টির দিনের ঘটনা। ফুটবল খেলা শেষ করে দলবেঁধে পুকুরে এসেছি গোসল করতে। তখনো আমি সাঁতার শিখিনি। যে পুকুরটাতে আমরা গোসল করতাম সেখানে বর্ষার পানিতে ভরে উঠা তখনো ঢের বাকি। সবচাইতে গভীর অংশে আমার ঠাই ছিল না। এছাড়া অন্য সব জায়গাতে কোথাও কোমর পানি, কোথাও বুকপানি আবার কোথাও গলা পানি ছিল। তাই মাঝখান বাদে প্রায় সবখানেই আমি অবাধে বিচরণ করতাম। সেদিন বৃষ্টি তখনো থামে নি। আমরা কয়েকজন নেমেছি গোসল করতে। আমার চাইতে কয়েক বছরের বড় আমার বড় ভাইয়ের এক বন্ধু আমাকে বলল আয় তোকে সাতার শিখিয়ে দেই। আমিও কি মনে করে যেন রাজি হয়ে গেলাম। বলা মাত্রই সে আমাকে টেনে নিয়ে পুকুরের মাঝখানে ছেড়ে দিয়ে সরে পরলো। আমি তখন প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে চার হাত পা দিয়ে প্রাণপণে চেষ্টা করতে থাকলাম গভীর জল থেকে বেরিয়ে আসার। পানি খেয়ে পেট ফুল হয়ে যাবার পর ফিরে আসতে পেরেছিলাম সে যাত্রায়। এরপর কিছু সময় বিশ্রাম নিয়ে আবার শুরু করলাম প্রাক্টিস। একদিনেই সাতার শিখে ফেলেছিলাম সেদিন। শুরুতে ব্যাপারটা বেশ কষ্টদায়ক মনে হলেও পরে চিন্তা করে দেখেছিলাম আমার জন্য ব্যাপারটা ভালোই হয়েছিল। কেননা সাঁতার শেখা প্রত্যেকটা মানুষের উচিত। তাহলে অন্তত পানিতে ডুবে যাওয়ার ভয় টা থাকেনা। আর সাঁতার শেখার মাধ্যমে আমার পানি ভীতি চিরদিনের জন্য দূর হয়ে গিয়েছিল।

wet-3609568_1920.jpg

Source

আজকের মতো এতোটুকুই। আবার কথা হবে অন্য কোন বিষয় নিয়ে। সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন এই কামনায় আজকের মত এখানেই শেষ করছি।

Sort:  
 2 years ago 

খুব ভালো লাগলো ভাই আপনার বৃষ্টির দিনে অনুভূতিটি পড়ে। আপনি যে সাঁতার শিখতে পেরেছেন কিন্তু অনেক কিছু।খুব সুন্দর করে উপস্থাপনা করেছেন আপনি।ধন্যবাদ আপনাকে এরকম সুন্দর একটি মুহূর্ত আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন।

 2 years ago 

শুরুতেই আপনার ভাইয়ের বন্ধুকে স্বাগত জানাই এবং ধন্যবাদ জানাই। যে তিনি আপনাকে এক দিনেই সাঁতার শেখাতে সক্ষম হয়েছিলেন।দারুন লাগলো আপনার সাঁতার শেখার অনুভূতি পড়ে।

 2 years ago 

আসলেই তিনি আমার মস্ত একটা উপকার করেছিলেন সেদিন। যদিও কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ ছিল কিন্তু পরবর্তীতে আমার জন্য ভালই হয়েছিল। ধন্যবাদ আপু

 2 years ago 

অভিনন্দন জানাচ্ছি আপনাকে এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার জন্য। এর মাধ্যমে আপনার অনুভূতিগুলো জানতে পারলাম। আপনি আসলে এই সময় সাঁতার ছোটবেলায় যা দেখে অনেক ভালো লাগলো। আপনার বড় ভাইয়ের এক বন্ধু আপনাকে সাঁতার শেখানোর জন্য আহবান করেছে। আসলে সাঁতার খুবই জরুরী প্রত্যেকের জন্য। অনুভূতি গুলো শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।

 2 years ago 

ঠিক বলেছেন এখনতো শহরের ছেলে মেয়েরা সাঁতার জানেনা। আর যে কারণে মাঝে মাঝেই শুনতে পাই অনেকের পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঘটনা। ধন্যবাদ আপনার মূল্যবান মন্তব্যের জন্য।

 2 years ago 

আপনার বৃষ্টির দিনের স্মৃতি টুকু ছিল অনেক মধুর। যে যাই বলুক না কেন সবাই সবার জায়গা থেকে সোনালী অতীতে একটু দুরন্ত থাকে। খুব কম ছেলেমানুষি আছে ছেলে বয়সে দুষ্টামি করে না। তবে আপনার মত আমার একটা ভাই আছে। আমার থেকে দুই বছরের বড় তবে সে আপনার বাভয়ের থেকে একেবারেই ভিন্ন ।আমার বাইটা একটু গম্ভীর টাইপের ছিল। খেলাধুলা পছন্দ করতো না এখনো করে না। তবে স্কুলে যাওয়া একসাথে চলাফেরা ঠিকই ছিল। আমি খেলতে গেলে সে মাঠের বাইরে বসে থাকতো। তবে আপনার ভাইয়ের বন্ধু যে আপনাকে সাঁতার শিখিয়েছে। আর আপনি যে প্রাণ পণে উপরে ভেসে এসেছে সেটা আপনার জীবনের জন্য একটা ভালো মুহূর্ত ছিল। আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য শুভেচ্ছা রইল।

 2 years ago 

আসলেই সব মানুষ তো আর একরকম হয় না। একেক জন মানুষের চরিত্রগত বৈশিষ্ট্য এক এক রকমের। আপনার ভাইটিও হয়তো একটু ব্যতিক্রম। আর আসলেই সেই দিনগুলো অনেক মধুর ছিল। ধন্যবাদ ভাই

 2 years ago 

প্রথমেই আপনাকে অভিনন্দন জানাচ্ছি আমাদের এই প্রিয় কমিউনিটি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার জন্য। আর আপনার পোস্ট‌ সম্পূর্ণ পড়ে খুবই ভালো লাগলো এবং আপনি একদিনের সাঁতার শিখতে পেরেছেন সেটা জেনে আরো ভালো লাগলো। অসংখ্য ধন্যবাদ আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য। আপনার জন্য শুভকামনা রইল।

 2 years ago 

অনেককেই দেখেছি সাঁতার শেখার জন্য অনেক পরিশ্রম করতে। বহু সময় ব্যাপী পরিশ্রম করা সত্ত্বেও সাঁতার শিখতে না পারার ব্যর্থতা অনেকেরই আছে। এদিক দিয়ে আমি বেশ ভাগ্যবান বলতে হবে। একদিনই সাতার শিখতে পেরেছি। ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য

 2 years ago 

কথায় আছে মানুষ বিপদে না পড়লে কিছু শিখতে পারে না। তার জ্বলন্ত প্রমান আপনি। তবে জোর বাচা বেচে গেছেন কিন্তু। আপনার সাহস ছিল বলে সাতার শিখেছেন । কিন্তু এভাবেই বিপদ ঘটে যায় কারো জীবনে । অভিজ্ঞতা টি দারুন ছিল গা শিউরে ওঠার মতন।

 2 years ago 

ঠিক বলেছেন বিপদে পড়লেই মানুষ পরিত্রাণের উপায় খুঁজে পায়। যদিও বেশ ঝুঁকিপূর্ণ ছিল ব্যাপারটা কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমি ওভারকাম করতে পেরেছিলাম। ধন্যবাদ ভাই

 2 years ago 

আপনি তাও সাতার শিখতে পেরেছেন। আমি এখনও সাতার পারি না। আসলে ছোট বয়সে সাতার না শেখা গেলে বড় হয়ে আর হয়ে উঠে না। ভাল কাজ করেছেন সাতার শিখে। আর আপনার গল্পটি বেশ ভাল লাগল পড়ে। সুন্দর করে গুছিয়ে লিখেছেন। ধন্যবাদ আপনাকে

 2 years ago 

সাঁতার শেখাটা আসলে সবার জন্যই জরুরী। চেষ্টা করলে হয়তো আপনি এখনো পারবেন। কোন একটা সুইমিংপুলে গিয়ে শুরু করে দেন, দেখবেন ব্যাপার না। শুভকামনা রইল আপনার জন্য

অনেক সুন্দর একটি মুহূর্ত শেয়ার করেছেন। প্রতিটি মুহূর্ত আপনি খুব সুন্দর ভাবে লেখার মাধ্যমে আমাদের সামনে তুলে ধরেন। মনে হচ্ছিল সামনেই সব দেখতে পাচ্ছি। সাঁতার আমাদের সবার শিখা উচিত। বর্তমান পরিস্থি খুব খারাপ। এ সময় পানিবাহিত অঞ্চলের মানুষ জন বুঝতে পারছে কতটা জরুরি আমাদের সাঁতার শিখা। আমিও খুব তাড়াতাড়ি সাঁতার শিখে ফেলবো। আপনার কাহিনি টি অনেক ভালো লাগলো। এভাবেই ছোট ছোট শব্দ,প্যারায় অসাধারণ মুহূর্ত গুলো আমাদের সাথে শেয়ার করে যান। আপনার জন্য দোয়া ও শুভকামনা রইলো।

 2 years ago 

বন্যা প্রবণ অঞ্চল গুলোতে আমার মনে হয় শতকরা 99 ভাগ মানুষ সাঁতার জানে। তবে সমস্যা হচ্ছে শহরের মানুষদের জন্য। খাল বিল বা পুকুরের অভাবে তারা অনেকেই সাঁতার শিখতে পারে না। আমার পোস্টে আপনার মূল্যবান মতামত শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

 2 years ago 

ভাই আপনার বৃষ্টিদিনের অনুভূতি জানতে পেরে খুবই ভালো লাগছে। আসলে এই বৃষ্টির দিনে আপনি একসাথে বৃষ্টিতে ভিজেছেন এবং সাঁতার শিখেছেন মুহূর্তটা সত্যিই অনেক আনন্দের ছিল।

 2 years ago 

যদিও আমার সাতার শেখার অভিজ্ঞতা এই প্রতিযোগিতার প্রাসঙ্গিক ছিল না। তবে ঐদিন বৃষ্টি ছিল বলেই ঘটনাটা লিখলাম। ধন্যবাদ আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.15
JST 0.028
BTC 60165.60
ETH 2421.15
USDT 1.00
SBD 2.44