বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘরে ছুটির বিকেলে||@shy-fox 10% beneficiary

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago
  • ২৩ আশ্বিন, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ
  • ৮অক্টোবর, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ
  • ১১ রবিউল আউয়াল, ১৪৪৪ হিজরি
  • শনিবার
  • শরৎকাল

আমার প্রিয় আমার বাংলা ব্লগের সকলকে ভালোবাসা ও শুভেচ্ছা জানিয়ে আজ আমি আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি আমার নতুন একটি লেখা নিয়ে, মহান সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে আশা করছি সকলেই ভালো আছেন আমিও আলহামদুলিল্লাহ খুব ভালো আছি। কর্মব্যস্ত জীবনের ফাঁকে বিশেষ করে ছুটির দিনে চেষ্টা করি বাসার বাইরে কোথাও সময় কাটানোর জন্য। তেমনি এক ছুটির দিনে সস্ত্রীক কিছু চমৎকার সময় কাটিয়ে ছিলাম ঢাকার বিজয়নগরে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘরে। যে মুহূর্ত গুলো আপনাদের সাথে শেয়ার করবো বলে আজকের লেখা আশা করছি আপনাদের কাছেও ভালো লাগবে।
IMG_20220514_171051.jpg
Location
বরাবরের মতোই আমার স্ত্রীর সাথে আলোচনা করে ঠিক করলাম এবারে ছুটির দিনে আমরা বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘর এ সময় কাটাবো। ছুটির দিনে দুপুরে খাওয়া-দাওয়া শেষ করে প্রস্তুত হয়ে নিলাম, প্রথমে আমরা বাসা থেকে নেমে হাঁটতে হাঁটতে রামপুরা বাজারে গেলাম, মূলত আমার বাসা থেকে রামপুরা বাজার মেইন রোড হেঁটে যেতে ৫ মিনিট সময় লাগে। সিএনজি ডাকার পর দরদাম ঠিক করে বিজয়নগর বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘর এর উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। রাস্তায় তেমন কোনো জ্যাম ছিল না যার কারণে খুব অল্প সময়ের মধ্যে আমরা সামরিক জাদুঘর সামনে মেইন রোডে উপস্থিত হলাম।

সিএনজি ভাড়া পরিশোধ করার পর দেখলাম জাদুঘরের বাইরে থেকেই টিকিটের জন্য লম্বা লাইনে দর্শনার্থী দাঁড়িয়ে আছে। সামরিক জাদুঘর সকাল দশটা থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত এবং বিকাল তিনটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকে। বুধবার এবং অন্যান্য সরকারি ছুটির দিনগুলোতে জাদুঘরটি বন্ধ থাকে। সামরিক জাদুঘরে টিকিটের প্রবেশ মূল্য জনপ্রতি ৫০ টাকা বাংলাদেশীদের জন্য, সার্ক-ভুক্ত দেশগুলোর দর্শনার্থীদের প্রবেশ মূল্য ৩০০ টাকা এবং অন্য বিদেশি দর্শনার্থীদের প্রবেশ মূল্য ৫০০ টাকা।
IMG_20220514_170818.jpg
Location
আমরা লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কেটে ভিতরে প্রবেশ করলাম,জাদুঘরের মূল গেট দিয়ে প্রবেশ করার পর প্রথমে সাইট-ম্যাপ ভালোভাবে দেখে নিলাম। সামরিক জাদুঘর এর মূল কেন্দ্রে প্রবেশের আগে অনেক বড় একটি পানির ফোয়ারা দেখতে পেলাম, যেখানকার দৃষ্টিনন্দন সৌন্দর্যের সাথে দুজন মিলে কিছু ছবি তুলে নিলাম। এরপর জাদুঘরের মূলকেন্দ্রে টিকিট দেখিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলাম। মূলত জাদুঘরটিকে পাঁচটি গ্যালারিতে বিভক্ত করা হয়েছে, আন্ডারগ্রাউন্ড ফাস্ট এবং সেকেন্ড ফ্লোর বাংলাদেশ নৌবাহিনী, গ্রাউন্ড ফ্লোর এবং ফাস্ট ফ্লোর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর, সেকেন্ড ফ্লোর বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর, থার্ড ফ্লোর জাতিসংঘ শান্তি মিশন এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি রক্ষার গ্যালারির জন্য বিভক্ত করা হয়েছে।

সামরিক জাদুঘরে প্রবেশ করে প্রথমে আমরা তোশাখানা দেখলাম, মূলত তোশাখানা জাদুঘর হচ্ছে রাষ্ট্রপতি অথবা সরকার প্রধান বিভিন্ন দেশ থেকে যেসকল উপহার সামগ্রী পেয়েছে সেগুলো সংরক্ষণ স্থান। যেখানে রয়েছে চাঁদে পাঠানো বাংলাদেশের পতাকা, চাঁদের মাটি, স্বর্ণ খচিত তরবারির খাপ, মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ইত্যাদি। এরপর দেখতে পেলাম ইতিহাসের দর্পণ নামে একটি ডিজিটাল ডিসপ্লে যেখানে ক্লিক করলে বাংলাদেশের ইতিহাস সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। এরপর একটি ঐতিহাসিক কামান দেখতে পেলাম যেটা পলাশীর যুদ্ধে ব্যবহার করা হয়েছিল, কামানটি আমি তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে আগ্রহ সহকারে দেখছিলাম কারণ এর সাথে মিশে অন্য এক ইতিহাস এবং আরও দেখতে পেলাম পলাশীর যুদ্ধের ম্যাপ। দেখতে দেখতে পৌঁছে গেলাম এনফিল্ড রাইফেলের কাছাকাছি যেটার ইতিহাসও অনেক নির্মম, এই এনফিল্ড রাইফেলের দ্বারা ইংরেজরা আমাদের এই উপমহাদেশের হিন্দু মুসলিম সম্প্রীতির বন্ধন এর ইতিহাসকে ধুলোর সাথে মিশিয়ে দিয়েছে।
IMG_20220514_170636.jpg
Location
এরপর আমরা প্রবেশ করলাম আন্ডারগ্রাউন্ড এ অবস্থিত নৌ-বাহিনী গ্যালারিতে,যেখানে বড় বড় স্ক্রিনে ভিডিওর মাধ্যমে বাংলাদেশ নৌবাহিনী বিভিন্ন কার্যক্রম তুলে ধরা হয়েছে। এই গ্যালারি একটি উল্লেখযোগ্য অংশ হলো ১৮০° ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ডিসপ্লে, যেখানে আমাদের মনে হয়েছে নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজে দাঁড়িয়ে সরাসরি যুদ্ধ উপভোগ করছি। এই গ্যালারিতে আরও দেখতে পেয়েছি বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে ব্যবহৃত বিভিন্ন সমরাস্ত্র সমূহ। গ্যালারি আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো ফোর ডাইমেনশনাল ডিসপ্লে, যেখানে সমুদ্রের তলদেশে অবস্থিত বিভিন্ন জলজ প্রাণীর থ্রিডি ভিডিও দেখা যায়, যা সত্যিই দৃষ্টিনন্দন।

এ পর্যায়ে আমরা প্রবেশ করলাম সেনাবাহিনীর গ্যালারিতে , প্রথমে আমাদের চোখে পড়ল বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সৈনিকদের যুদ্ধরত প্রতিকৃতি। তারপর দেখতে পেলাম বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ব্যবহৃত প্রথম কামান, এই ধরনের ৬টি কামান নিয়ে গঠিত হয়েছিল প্রথম গোলন্দাজ বাহিনী মুজিব ব্যাটারি। মহান মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহৃত রাইফেল থ্রি নোট থ্রি ডিসপ্লে দেখতে পেলাম, এছাড়াও মুক্তিযুদ্ধের সময় ব্যবহৃত বিভিন্ন সমরাস্ত্র এবং মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল আতাউল গনি ওসমানীর ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিসপত্র।
IMG_20220514_180606.jpg
Location
এ পর্যায়ে আমরা প্রবেশ করলাম বিমানবাহিনী গ্যালারিতে, যেখানে রয়েছে স্বাধীনতা যুদ্ধ থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত বিমান বাহিনীতে ব্যবহৃত বিভিন্ন সমরাস্ত্র যা আসলে আমাদের গৌরবের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। জাতিসংঘ শান্তি মিশনে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর যে গৌরবগাঁথা রয়েছে সেগুলো এখানে প্রদর্শিত হয়েছে। আমরা আরও দেখতে পেলাম জাতিসংঘের শান্তি মিশনে ব্যবহৃত বিভিন্ন সমরাস্ত্র সমূহ। জাদুঘরের ভিতরকার-সবকিছু দর্শন করে বাহিরে এসে আমরা দুজনে কিছু সময় বসেছিলাম। বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘরের বিভিন্ন প্রদর্শনী দেখে আমরা দুজনেই সত্যিই মুগ্ধ হয়েছি এবং আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ধারণা পেয়েছে যা আমাদের গর্বের বিষয়।

বন্ধুরা আজ এখানেই শেষ করছি, পরবর্তী সময় আমার নতুন কোন লেখা নিয়ে আপনাদের সামনে আবার হাজির হবো। সে পর্যন্ত সবার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি, অসংখ্য ধন্যবাদ সবাইকে।

amarbanglablog.gif

Sort:  
 2 years ago 

আমার কাছেও ছুটির দিন মানেই স্পেশাল।। ছুটির দিন এলে আমিও বন্ধুদের সাথে একটু ঘুরাঘুরি করি এবং স্পেশাল কিছু খাবারের চেষ্টা করি।।

আপনি বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘর ভ্রমণ করে খুবই সুন্দর আলোকচিত্র সেইসাথে সুন্দর তথ্য ভবন আলোচনা করেছেন খুবই ভালো লাগলো এর মধ্যে থেকে অনেক বিষয়েই আমার অজানা ছিল যেগুলো জানতে পেরে খুবই ভালো লাগছে।।

আমি অনেক ছোট বয়সে একবার ভ্রমণ করেছিলাম কিন্তু এখন আর সেগুলো তেমন একটা মনে পরেনা।।

আপনার ভ্রমণ করা দেখে খুবই ইচ্ছা যাচ্ছে মনের মধ্যে দেখে খুব শীঘ্রই একটা ভ্রমণ করে আসবো বঙ্গবন্ধু সাময়িক জাদুঘরে।। ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর এবং তথ্যবহুল আলোচনার সাথে সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করে নেওয়ার জন্য।।

 2 years ago 

আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া, আমার পোস্টে আপনার মূল্যবান মন্তব্যের জন্য। সময় করে একদিন ঘুরে আসবেন এখন আরো অনেক সুন্দর ভাবে সাজিয়ে তুলেছে সামরিক জাদুঘরটি।

 2 years ago 

সেই স্কুল লাইফ থেকেই সবার পছন্দ ছুটির দিন আর চাকরি জিবনেও মানুষ এই ছুটির দিনে ঘুরতে পছন্দ করে আমি এই সামরিক যাদুঘর কখুনো স্বচক্ষে দেখি নি ভাল লাগলো পরে।

 2 years ago 

একদিন সময় করে এসে জাদুঘরটি দেখে যান, আশাকরি আপনার কাছে ভালো লাগবে, অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।

 2 years ago 

জাদুঘর মানেই নতুন কিছু দেখা নতুন কিছু শেখার নতুন কিছু জানা। আর আপনি সেই ছুটির দিনে বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘরে অনেক নতুন কিছু দেখেছেন। যেমন সামরিক বাহিনীর জানা-অজানা চিত্রগুলো দেখে সেগুলো আমাদের সাথে শেয়ার করেছেন। তাছাড়া সুন্দর একটি সময় কাটিয়েছেন আপনি।
আপনার জন্য শুভকামনা রইল

 2 years ago 

সত্যি ভাইয়া জাদুঘরে ইতিহাস এবং ঐতিহ্যের অনেক কিছু সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়, ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর মন্তব্যের জন্য।

 2 years ago 

আমার অনেক দিনের ইচ্ছা এখানে একদিন ঘুরে আসার। কিন্তু এখন পর্যন্ত যাওয়া হয় নি। পোস্ট টা দেখে বেশ ভালো লাগলো। কিছু কিছু তথ্য নতুন জানা হলো। লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কেটেছেন তার মানে ভালোই ভিড় হয় দেখছি। দেখি আমার কবে যাওয়ার সুযোগ হয়। অনেক ধন্যবাদ পোস্টের জন্য।

 2 years ago 

সামরিক জাদুঘরটি অনেক চমৎকার ভাবে সাজিয়ে তুলেছে ,এখানে অনেক ভিড় হয় বিশেষ করে ছুটির দিনগুলোতে। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর মন্তব্যের জন্য।

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.13
JST 0.029
BTC 66521.28
ETH 3454.20
USDT 1.00
SBD 2.67