জীবনের গল্প :) আমি যখন একদিনের গুন্ডা || প্রতিবাদ যখন স্বপ্ন পূরণের জন্য।
জীবনের গল্প :) আমি যখন একদিনের গুন্ডা
প্রতিবাদ যখন স্বপ্ন পূরণের জন্য
প্রতিবাদ যখন স্বপ্ন পূরণের জন্য
দেখুন আমাদের দেশে একটি জিনিস রয়েছে তা হলো আমরা যদি বুঝতে পারি কেউ একজন উপরে উঠতে চাইছে কিংবা স্বপ্ন পূরণের পথে হাঁটছে ঠিক তখনই তার পা টেনে ধরার চেষ্টা করি সে যাতে আর এগুতে না পারে। আসলে কেউ কেউ বলে পাথরে ফুল ফোটে আসলে ব্যাপারটা তা না পাথরকে পাশ কাটিয়ে কিছু গাছ ফুল ফোটাতে সক্ষম হয়। আমাদের জীবনে এমন অনেক পরিস্থিতি আসে যখন নিজের রাগ এবং আক্রোশ দমিয়ে রাখা ভীষণ কষ্টকর হয়ে ওঠে। আর পরিস্থিতি যদি এমন দেখেন কেউ আপনার স্বপ্ন নিয়ে আর ভবিষ্যত নিয়ে খেলা করছে তখন আপনি কি করবেন ? আপনিও নিশ্চয়ই প্রতিবাদ করবেন আমার মতো। এমন এক পরিস্থিতির শিকার আমি হয়েছিলাম যেখানে একজন মনুষত্বহীন শিক্ষককে ধমক দিতে হয়েছিল আমায়। তো চলুন শুরু করি পুরো কাহিনী।
এক দিনের গুন্ডা
"ঘটনার পটভূমি"
আমি তখন সবেমাত্র এসএসসি শেষ করলাম ২০০৫ সাল তখন। মোটামুটি বেশ কিছু দিন ছুটি রয়েছে। তাই এই সময়টাতে কম্পিউটার এবং কুংফু (মার্শাল আর্ট) শেখার একটি আগ্রহ তৈরি হয়। কম্পিউটার শেখার উদ্দেশ্য ছিল মূলত কম্পিউটারের উপর দক্ষতা অর্জন করা আর কুংফু শেখার উদ্দেশ্য ছিল নিজের আত্মরক্ষা এবং শারীরিক গঠন মজবুত করা। আর ছোট থেকেই কোন যন্ত্র দেখলে তার প্রতি একটি আলাদা টান অনুভব করতাম, সেটা নিয়ে চিন্তা করতাম কিংবা ভেঙ্গে চুড়ে জোড়া লাগানোর চেষ্টা করতাম যা একজন ইঞ্জিনিয়ার করে। ভেতরে ভেতরে একজন ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার বীজ বুনে রেখেছিলাম। এর মধ্যে আমার এক চাচা তিনি মেকানিক্যাল ইন্জিনিয়ার ছিলেন। তিনি রেলওয়েতে ইঞ্জিন সেকশনে কাজ করতেন। মূলত তিনি ছিলেন আমার অনুপ্রেরণা। তার উৎসাহে আমি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে পড়ার সিদ্ধান্ত নেই এবং ফরম তুলি। এরমধ্যে আরো একটি ব্যাপার হলো আমার বাবার ইচ্ছে ছিল এইচএসসি শেষ করে আমি যেন ডাক্তারিতে ভর্তির চেষ্টা করি। অনেকটা জোর করেই বাবা আমাকে একটি সাধারণ কলেজে ভর্তি করেন। আমি সাত দিনে মাত্র একদিন ক্লাশ করলাম এবং বাসায় এসে আমার মন মেজাজ ভীষণ খারাপ করতাম। বাবা বুঝতে পারলেন আমার উপর মানসিক চাপ দিয়ে লাভ হচ্ছে না। অবশেষে তিনি আমাকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার অনুমতি দিলেন। আমি আলহামদুলিল্লাহ ছাত্র ভালো ছিলাম তাই দিনাজপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ভর্তির সুযোগ পেলাম। কিন্তু আমার কাগজপত্র সব বাবা ঐ সাধারণ কলেজে জমা দিয়ে দিয়েছে। আমার বাবা দুবার ঐ কলেজে গিয়ে আমার কাগজপত্র আনতে ব্যার্থ হন এবং ঐ শিক্ষক বাবার কাছে মোটা অংকের টাকা আবদার করে। যা আমার বাবার পক্ষে দেয়া অসম্ভব আর এটা তো অন্যায়। ভর্তির যেদিন শেষ তারিখ সেদিন আমি সেই শিক্ষকে ফোন করি এবং অনুরোধ করি আমার কাগজপত্র দেয়ার জন্য। কিন্তু তার এক কথা টাকা দিতে হবে। মনে মনে সেই শিক্ষকের উপর ক্ষোভ জন্মে যায়।
যখন প্রতিবাদী এক অন্য আমি
যখন ঐ লোভী শিক্ষককে কিছুতেই তার লোভী চিন্তা থেকে সরাতে পারলাম না। তখন আমি মাথায় অন্য চিন্তা ভাবনা করি। আঙুল বাঁকা করতেই হবে। আমি আমার কুংফু বন্ধুদের সবটা জানাই ওরাও আক্রোশে ফেটে পড়ে। আমার একটা ফোন কল পেয়ে সবাই একসাথে কলেজের মাঠে উপস্থিত হই। এরপর উক্ত প্রধান শিক্ষককে ডেকে পাঠাই এবং বলি হাতে থাকা হকস্টিক দিয়ে পুরো স্কুলে ভাংচুর শুরু করবো। এটা মূলত তাকে ভয় পাওয়ানোর উদ্দেশ্যে ছিল। আমি বললাম আমার কাগজপত্র আমি পাঁচ মিনিটের মধ্যে হাতে চাই। আর রাগে আক্রোশে ফেটে পড়লাম কারন আমার স্বপ্ন ভেঙ্গে যাচ্ছে একমাত্র ঐ লোভী শিক্ষককে জন্য। তখন ঐ শিক্ষক দৌড়ে কাগজপত্র সব নিয়ে আসে এবং আমাদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করে। আমার কাগজপত্র সব দেখে চোখে তখন পানি চলে আসলো। এটার জন্য আজ আমায় গুন্ডা সাজতে হলো এই লোকটার কারনে। সবার সামনে ঐ শিক্ষককে বললাম আমরা এই এলাকার ছেলে আর যদি কখনও কোন ছাত্রের সাথে অন্যায় করা হয় তাহলে তাকে ছাড় দেয়া হবেনা। এর পরপরই মটরবাইক্ দিয়ে খুব দ্রুত দিনাজপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে পৌঁছাই এবং শেষ মুহূর্তে ভর্তি কোন মতে শেষ করে আলহামদুলিল্লাহ পড়ি কারন আমার স্বপ্ন পূরন হতে চলেছে।
কিছুটা পর্যালোচনা
দেখুন পৃথিবীতে কোটি কোটি মানুষ রয়েছে কিন্তু কজন সত্যিকারের মানুষ ? আমাদের কাছে কেউ সহযোগিতা চাইলে আজ লোভে জিহ্বা লিকলিক করে ওঠে। চিন্তা আসে এইতো বিপদে পড়েছে এবার আমার কাছে আসবে আমার প্রচুর পয়সা উপার্জন হবে। ডাক্তারের কাছে যাবেন কসাইয়ের মতো ছুড়ি বসিয়ে দেবে, পুলিশের কাছে যাবেন হয়ত মিথ্যা মামলায় জেলে পুরে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেবে। এই হলো বাস্তবতা আমাদের মানব সভ্যতার। এদের জন্য আসলে কিছু মানুষকেও গুন্ডা সাজতে হয়। কারন সোজা আঙ্গুলে ঘি সত্যিই ওঠে না।
ভালো খারাপ মিলেই পৃথিবী। প্রত্যেকটি সেক্টরে যেরকম ভালো মানুষ আছে সেরকম খারাপ মানুষও আছে। কিন্তু এ কিছু সংখ্যক খারাপ মানুষের জন্য পুরো সেক্টরের দুর্নাম হয়ে যায়।
আপনার স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে আপনি ওই বদমাস শিক্ষকের সাথে যে রকম আচরণ করেছেন আমি তার সাধুবাদ জানাই। কারণ আপনি যদি এই উদ্যোগটি না নিতেন তাহলে ওই শিক্ষক আরো অনেক ছাত্রের সাথেই এরকম ব্যবহার করত। এবং সে ছাত্রদের জীবন ধ্বংসের পথে যেত। আপনার এই উদ্যোগের কারণে সে শিক্ষকের বোধোদয় হয়েছে এবং অন্যান্য ছাত্ররাও এতে উপকৃত হয়েছে।
ধন্যবাদ আপু চমৎকার মন্তব্যের জন্য।
সত্যি বলতে ঐ শিক্ষক পরবর্তীতে অনেকটাই শুধরে গিয়েছিল। কারন ঐ দিনের কথা তার দীর্ঘদিন মনে থাকার কথা। কারন আমাকে সত্যিই কঠোর হতে হয়েছিল সেদিন।
ভাইয়া নিজের স্বপ্নের সাথে কোনপ্রকার সেক্রিফাইস করা উচিত। আমি নিজেও এ কথাটি বিশ্বাস করি । আমি আমার স্বপ্নের সাথে কখন সেক্রিফাইস করে নি বিধায় আজও সকল প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে টিকে আছি। আপনার আত্মরক্ষার জন্য কনফু শিখা ওই সময় কাজে দিয়েছিল। আমাদের সমাজে শিক্ষক নামে এখন কিছু দুষ্কৃতিকারী লোভী মন মানসিকতার মানুষ রয়েছে। দেখা যায় বিভিন্ন কলেজ স্কুলের পরীক্ষার ফি নামে অতিরিক্ত টাকা আদায় ভর্তি ফি নামে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হচ্ছে। তবে আপনার স্বপ্নপূরণের ওই প্রধান শিক্ষক যেভাবে বাধা সৃষ্টি করেছিল তা শুনে ওই শিক্ষকের প্রতি আমারও খারাপ ধারণা জন্মে গেল।শিক্ষকরা হচ্ছে স্বপ্ন পূরণের পথে অন্যতম কারিগর। তারা আমাদের অনুপ্রেরণা দেবে ,স্বপ্নের পথে এগিয়ে চলার প্রেরণা যোগাবে কিন্তু তাদের কাছ থেকে যখন স্বপ্নের পথে বাধা আসে তখন সত্যি খুবই খারাপ লাগে। তবে অবশেষে আপনি স্বপ্নের ঠিকানায় পৌঁছে গেছেন দেখে খুবই ভাল লেগেছে। আরেকটি কথা আপনি যত উপরে উঠতে চাইবেন সমাজের এক ধরনের মানুষ আছে আপনাকে তত পিছুটানবে তারা নিজেরা পিছুটানতে গর্তে পড়ে যাবে তবু আপনাকে নামানো থামাবে না। এত সুন্দর একটি অতীতের ঘটনা আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
আমি ভীষণ গর্বিত আপনাকে নিয়ে কারন আপনিও আমার মতো নিজের স্বপ্ন পূরণের জন্য কোন সেক্রিফাইস করেননি। দোয়া রইল আপু 🥀
❤️❤️❤️🙏🙏
লেখাটা পড়ে ভালোই লাগলো।কিছু কিছু অসৎ শিক্ষিকের কারনে দেশের অবস্থা খারাপের দিকে যাচ্ছে।আসলেই সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে আঙুল বাঁকা তো করতে হয়,ঐ স্যার কে যথাসময়ে ধমক না দিলে আপনার স্বপ্ন পূরন হতো না।যাই হোক ভালো লাগলো।আপনার এক দিনের গুন্ডার গল্প পড়ে।ধন্যবাদ
ধন্যবাদ আপু।
আসলে মাঝে মাঝে কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি হয়ে যায় কিছু অসৎ মানুষের জন্য।
যাক আমি সার্থক কারন আমি সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।
আপনাকে যতটা সহজ সরল ভাবতাম আপনি দেখছি তেমন না। আসলে সমাজের এক শ্রেণির লোক ক্ষমতার অপব্যবহার করে। তাদের শিক্ষা দিতে এমন পথ বেছে নেওয়া খারাপ কোনো কিছু না। আপনি শেষ পর্যায়ে ভর্তি হয়ে আজ এই পজিশনে সত্যি আমাদের জন্য অনেক অনুপ্রেরণার বিষয়ে এটি। দারুণ লাগল ভাই সম্পূর্ণ টা। ধন্যবাদ আমাদের সঙ্গে আপনার জীবনের এমন একটি অধ্যায় শেয়ার করে নেওয়ার জন্য।।
ধন্যবাদ ভাই। আসলে নিজের স্বপ্ন যখন নিমজ্জিত হচ্ছিল তখন এরকম কাজটি আমায় করতে হয়েছিল। আসলে ঐ শিক্ষক ভীষণ লোভী ছিলেন আর অর্থের জন্য সব করতে পারতেন।
ভাই আপনার এই একদিনের গুন্ডা হওয়াটা আমার কাছে একদম উচিৎ বলে মনে হচ্ছে। কারণ পৃথিবীটা হচ্ছে শক্তের ভক্ত নরমের যম। আপনার বাবা বারংবার আপনার কাগজপত্র ফেরত চাওয়া সত্ত্বেও তারা যখন দিচ্ছিল না তখন আপনার কঠোর না হয়ে আর কোন উপায় ছিল না। আর তাই হয়তো আপনার কঠোরতায় তারা কাগজপত্র ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছে। তবে আমি কোন ভাবেই শিক্ষকের নির্বুদ্ধিতার কান্ডটা মেনে নিতে পারছিনা। যেখানে একটি ছাত্রের ভবিষ্যতের প্রশ্ন সেখানে তার এই হেয়ালিপনা কিছুতেই মেনে নেয়া যায়না। আর তাই আপনার গুন্ডামি করা আমার কাছে ভীষণ ভালো লেগেছে। যার মাধ্যমে আপনি আপনার স্বপ্ন পূরণ করতে সফল হয়েছেন। পরিশেষে আপনার সঙ্গে তাল মিলিয়ে একটি সত্য কথা বলতে চাই, সোজা আঙ্গুলে সত্যিই ঘি ওঠেনা। আপনার সুন্দর উপস্থাপনার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ ভাই চমৎকার মন্তব্যের জন্য 🥀
সত্যিই কিছু কিছু মানুষের জন্য মাঝে মাঝে কঠিন হতে হয়। এরা টাকার কাছে বিক্রি হয়ে যায়।
ভাইয়া,একদম আপনি ঠিক কথা লিখেছেন সোজা আঙ্গুলে কখন ঘি ওঠে না।আঙ্গুল একটু বাঁকা করার কারণে ওই শিক্ষক নিজের জান বাঁচানোর জন্য আপনার কাগজপত্র হাতে এনে দিয়েছে।একজন শিক্ষক যদি এই অবস্থা করে তাহলে কিবলব। আমাদের দেশে প্রতিনিয়ত চলছে এই অবস্থা আপনি ভাল করে জানেন। ডাক্তার,পুলিশ প্রশাসনের ভিতর দুর্নীতির কাজ চলছে। আসলে আমরা বিপদে পড়েছি আমরা ওদের কাছে যাব ওরা মোটা অংকের টাকা নিয়ে আমাদেরকে সুবিধা দিবে।আসলে ভাইয়া,আমাদের প্রত্যেকের প্রয়োজন আপনার মত করে প্রতিবাদ করা তাহলে এদের মত লোভী মানুষদের আর সাহস হবে না কাউকে এমন ভাবে হয়রানি করার।ধন্যবাদ ভাইয়া,পোস্টটি পড়ে সত্যি অনেক ভালো লেগেছে।
আসলে সেদিন প্রতিবাদ না করলে আজ ইন্জিনিয়ার হতে পারতাম না।
তবে সে দূর্নীতিগ্রস্থ হলেও ভিতু টাইপের মানুষ ছিল। তার শিক্ষা হয়ে গিয়েছিল।
কুংফু আমার খুব ভালো লাগে দেখতে।এটা চীনাদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।তাছাড়া এখনও অধিকাংশ মা বাবা জোর করে ছেলেমেয়েদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনো বিষয় চাপিয়ে দেয়,যেটা উচিত নয়।যাইহোক মাঝে মাঝে কোনো লোভী ও জীবন নিয়ে টানাপোড়েনের কাজে গুন্ডা সাজতে হয়।কাগজপত্র কতটা মূল্যবান তা যার জীবন জড়িত সেই বোঝে।ভালো লাগলো আপনার জীবনের গল্প পড়ে।ধন্যবাদ ভাইয়া।
ধন্যবাদ দিদি চমৎকার মন্তব্যের জন্য।
সত্যি বলতে আমাকে পরিস্থিতির চাপে ঐ সময় এটি করতে হয়েছিল।