ক্রিয়েটিভ রাইটিংঃ- লবন দিয়ে কাঁচা খেজুর পাকানোর গল্প
আজ - বৃহস্পতিবার
![]() |
---|
খেজুর অথবা খেজুরের রস দুটোই খেতে কিন্তু অস্থির মজা লাগে। আপনারা কেউ কি দেশীয় খেজুর খেয়েছেন? যারা গ্রাম অঞ্চলে থাকেন আমি হলফ করে বলতে পারি তারা অবশ্যই এটির স্বাদ হয়তোবা একবার না একবার জীবনে নিয়েছেন। কিন্তু অন্যদের কথা আমি ঠিক সঠিক ভাবে বলতে পারছি না। এই খেজুরগুলোর মধ্যে কিন্তু অনেক ধরনের পার্থক্য রয়েছে আবার অনেক ধরনের জাতের ভেদাভেদ রয়েছে। এই কারণে এই খেজুরের স্বাদ আলাদা, আলাদা রকমের হয়ে থাকে । যেমন দেশীয় খেজুরের মধ্য একটি রয়েছে দেশি খেজুর এবং অন্যটি রয়েছে মেটে খেজুর । দেশি খেজুরগুলো দেখতে একটু হলুদ বর্ণের হয়ে থাকে এবং যখন এটি পেকে যায় তখন লাল হয়ে যায় কিন্তু যেই মেটে খেজুরগুলো রয়েছে এগুলো দেখতে অনেকটা চকলেট কালারের মত হয়ে থাকে। আর এটার সাধও কিন্তু দেশি খেজুরের চেয়ে বেশ আলাদা এবং আরো বেশি মজাদার। আমাদের এদিকে অনেক খেজুর গাছ রয়েছে যার কারণে খেজুরের সময় আমরা মন প্রাণ জুড়ে এই গাছ থেকে খেজুর পেড়ে খেতে পারি।
![]() |
---|
ছোটবেলায় এই খেজুর পাকানো নিয়ে আমার জীবনে অনেক স্মৃতি রয়েছে । আজকে স্মৃতির সেই স্মৃতির পাতা থেকে একটি গল্প আপনাদের মাঝে শেয়ার করছি আশা করি আপনাদের সবার অনেক ভালো লাগবে। আমাদের এদিকে যেহেতু অনেক খেজুর গাছ রয়েছে তাই খেজুরের সময় আমরা সকালে ভোরে পাঁচটার দিকে প্রাইভেট পড়তে চলে যেতাম এবং প্রাইভেট পড়া শেষ করে আসার পথে খেজুর গাছ থেকে খেজুর কড়িয়ে খেতাম । তবে একটা সমস্যা ছিল খেজুর গাছ অনেক লম্বা হয়ে থাকে এবং অত বড় গাছে আমরা এই অল্প বয়সে উঠতে পারতাম না তবে আমাদের মধ্য কিছু, কিছু ফ্রেন্ড ছিল তারা একপ্রকার গাছরি টাইপের ছিল যেকোনো উচ্চতার গাছে তারা খুব সাহসের সঙ্গে উঠে পড়তো । তবে আমি তেমন একটা গাছে উঠতে পারতাম না তাই নিজ থেকেই ওরা যেগুলো দিত ওগুলোই খেতাম। এভাবে খেজুর পেরে খেতে একটু কষ্টকর হয়ে যেত তাই আমরা বন্ধুরা মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম এবার আমরা খেজুর গাছ থেকে পেড়ে পাকিয়ে খাব।
![]() |
---|
খেজুর পাকানোর জন্য খুব সুন্দর একটা প্রসেস আমাদের জানা ছিল সেটা হচ্ছে যে কোন গাছের খেজুর প্রথমে কাইন থেকে কেটে নিচে নামাতে হবে। তারপরে সেটা পরিষ্কার করে ধুয়ে ওই খেজুরগুলো ছারিয়ে নিতে হবে এবার লবণ পানি দিয়ে ওই খেজুর দুই দিনের মতো রেখে দিলেই সেগুলো পেকে যেত আর ওই পাকা খেজুর গুলো খেতে বেশ মজাই লাগতো। সবচেয়ে মজার মুহূর্ত ছিল যখন খেজুরগুলো স্কুলে নিয়ে যেতাম এবং স্কুলে গিয়ে বন্ধু-বান্ধব একসঙ্গে আড্ডা দিয়ে খেতাম আর এমন সময় ভাবতেই কেমন ছোটবেলার সেই স্মৃতিগুলো মনের ভিতর ওকে দিয়ে উঠে। এই খেজুরের পাশাপাশি খেজুরের রস এর ব্যাপারে যদি কিছু কথা বলি তাহলে বলতে হয় যে খেজুরের রসও কিন্তু আমরা বেশ মজা করে খেতাম। সকালে ভোর বেলায় চলে যেতাম খেজুর গাছে দোই এর ছোবা রাখতে আসলে যেই খেজুর গাছে গাছোরেরা ভার পেতে রাখত তারপরে আমরা ওখানে বোতল অথবা ছোবা দিয়ে রস সংগ্রহ করতাম।
মাঝেমধ্যে যখন ওই রসগুলো অধিক পরিমাণে হয়ে যেত তখন বাসায় এসে আম্মুর কাছে ওই রসগুলো দিতাম এবং আম্মু সেগুলো ফুটিয়ে সে রস থেকে গুড় তৈরি করে দিত এবং অনেক সময় রস থেকে নোইটানা তৈরি করে যেত এই রেসিপিটা শীতের সময় আমি আপনাদের মাঝে ইনশাল্লাহ শেয়ার করব । কিন্তু এটা অনেক আঠালো একটা খাবার একবার যদি কামড় দেয়া যায় তাহলে ওগুলো যেন দাঁতের সঙ্গে একেবারে লেগে যায় তাও অনেক মজা এগুলো। আপনাদের কারোর খেজুরের গুড়ের নইটানা খাওয়ার অভিজ্ঞতা আছে কিনা চাইলে কমেন্টে জানাতে পারেন। আমি কিন্তু জীবনে এটা অনেকবার খেয়েছি যাইহোক এভাবেই আমরা খেজুরের রস এবং খেজুর পাকিয়ে বন্ধু-বান্ধব মিলে আড্ডা দিয়ে খেতাম। আমাদের মধ্যে সব সময় প্রতিযোগিতা হতো একটা বিষয় নিয়ে সেটা হচ্ছে সকালবেলায় কে আগে রস পেতে আসতেপেতে আসতে পারে।
আসলে আমাদের এদিকে খেজুরের গাছ অনেক বেশি থাকলেও ছোট গাছগুলো অনেক কম ছিল তবে আমাদের ছোটদের একমাত্র লক্ষ্য ছিল ওই ছোট খেজুর গাছগুলো কারণ বড় গাছে ওঠা অনেক কষ্টসাধ্য একটা বিষয় এবং সেই সাথে অনেক সাহস লাগে। কিন্তু সাহস করে ওঠে যদি একবার গাছ থেকে একবার পড়ে যায় তাহলে একবারে অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে । তবে আমাদের মধ্যে কিছু , কিছু ফ্রেন্ড রয়েছে তারা ওই গাছগুলোতে সাহস করে উঠে পড়তো আর ওরাই সবচেয়ে বেশি রস পেতো কারণ ওই গাছগুলোতে রস যেমন মিষ্টি তেমনি অনেক দ্রুত রস পড়তে থাকতো। তবে আমি সবসময় অল্পতেই সন্তুষ্ট থাকতাম এবং সব সময় সতর্কতার সাথে চলাফেরা করার চেষ্টা করতাম আসলে আমার একটু এক্সিডেন্ট বেশি হয়তো এই জন্য সবকিছুতে ই দেখে শুনে চলতে হয়। গল্পটি কেমন লেগেছে আপনারা অবশ্যই জানাবেন পরবর্তী পোস্টের জন্য অগ্রিম দাওয়াত রইল দেখা হচ্ছে তাহলে পরবর্তী পোস্টের যতক্ষণ সবাই সুস্থ থাকুন ভালো থাকুন আল্লাহ হাফেজ।
ব্লগার | @emonv |
---|---|
ডিভাইস | Infinix note 11 pro |
শ্রেণী | ক্রিয়েটিভ রাইটিং |
আমার নাম মোঃ ইউনুস আলী ইমন। বর্তমানে আমি সিরাজগঞ্জ মৎস ইনস্টিটিউট এর একজন ছাত্র হিসেবে পড়াশোনা করছি। এছাড়া পরিচয় দেওয়ার মতো এখনো কিছু করে উঠতে পারেনি তবে নিজের ব্যক্তিত্ব এবং ক্যারিয়ারের উপরে কাজ চলমান......। আমি নিজেকে ভেঙে চুড়ে নতুন করে আবিষ্কার করতে অনেক পছন্দ করি এবং আমি মানুষকে সাহায্য করতে অনেক ভালোবাসি। আমি প্রায়শই নিজেকে আবিস্কার করি। কেননা এটা আমার কথায় এবং লিখাতে নতুন স্বাদ যুক্ত করে, যার ফলে আমি নিজের সবথেকে ভালো টুকু আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করতে পারি। আমি প্রতিদিন একবার নিজের সাথে কথা বলি, কারণ এটা আমার নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস আরো বাড়িয়ে দেয়। আমি ভ্রমণ করতে এবং ফটোগ্রাফি করতে অনেক পছন্দ করি। আমি প্রতিনিয়ত নতুন ,নতুন মানুষদের সাথে মিশে তাদের জীবনের অভিজ্ঞতার ভালোটুকু আমার জীবনে বাস্তবায়িত করতে পছন্দ করি। আপনাকে স্বাগতম আমার সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হওয়ার জন্য। ভালোবাসা রইলো অবিরাম সবাইকে 💝।
VOTE @bangla.witness as witness
OR
SET @rme as your proxy
![]()
অনেক ভালো লাগলো এত সুন্দর একটি গল্প জেনে। কারণ এই খেজুর খাওয়ার মধ্যে আমারও বেশ দারুন অনুভূতি রয়েছে। একদম ছোট থেকে এভাবে অনেক খেজুর খেয়েছি জীবনে। এত সুন্দর ভাবে একটি বিষয় আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আমারও মনে পড়ে গেল ছোটবেলার অনেক কথা।
সেদিন আমারও অনেক ছোটবেলার কথা মনে পড়ছিল তাই গল্পটি শেয়ার করলাম ধন্যবাদ আপনাকে ❤️❤️
আপনি খুব সুন্দর বর্ণনা দিলেন অনেক কিছু জানতে পারলাম। তবে লবণ দিয়ে খেজুর পাকার বিষয়টি আমার বেশ অভিজ্ঞতা আছে। যখন ছোট ছিলাম তখন গ্রামে অনেক খেজুর পাওয়া যেত। বাজারে যদি কোন কাজে যেতাম তাহলে খেজুর এনে লবন পানিতে দিয়ে খেজুর সেখানে রেখে দিতাম। এভাবে হয়তো একদিন বা দুইদিন পর আস্তে আস্তে খেজুর পেকে যায়। এখান থেকে পাকা খেজুর নিয়ে খাওয়া শুরু করে দিতাম। সেই আলাদা রকমের ভালো লাগতো খেতে। অনেক ভালো লাগলো আপনার পুরো পোস্ট পড়ে।
তখনকার ছবিগুলো খেতে অনেক মজা যাচ্ছিল, এখন আর সময় দিতে পারি না যাই হোক পুরো পোস্টটা পড়ার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।
আরে ভাই আপনার পোস্টি পড়ে ছোটবেলার স্মৃতি স্মরণ হয়ে গেল। এরকম খেজুর কেটে নিতাম, কাঁচা কাঁচা খেচরগুলোকে লবণের পানিতে ভিজিয়ে রাখতাম রাতে। সকালে উঠলে এগুলো পেকে যেত। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে এমন একটি স্মৃতিময় পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই এমন সুন্দর একটি মতামত শেয়ার করার জন্য। আসলে পুরনো স্মৃতিগুলো অনেক মনে পড়ে এখন।
খেজুরের গুড়ের নইটানা জিনিসটাই তো প্রথমবার শুনলাম, খাওয়া তো দূরের কথা। তবে ভাই, আমি কখনো খেজুর গাছে উঠে খেজুরের রস খাওয়ার সাহস পাইনি। যাইহোক, লবণ দিয়ে খেজুর পাকানোর গল্পটা শুনে অনেক বেশি ভালো লাগলো। কারণ আমিও ছোটবেলায় এরকম অনেক পাকিয়েছি লবণ দিয়ে খেজুর। তারপর সেগুলো বন্ধুরা মিলে ভাগ করে খেতাম।
খেজুরের গুড়ের নই টানা খেতে বেশ মজা হয়ে থাকে, চাইলে শীতের সময় ট্রাই করতে পারেন আশা করি মজা পাবেন।
সামনের বার শীত আসলে তাহলে এই জিনিসটা ট্রাই করে দেখবো ভাই।
আপনার এই ঘটনা পড়ে একেবারে ছোটবেলার কথা মনে পড়ে গেল৷ আসলে ছোটবেলায় আমরা এরকম কাচা খেজুর নিয়ে চলে আসতাম৷ ভাবতাম যে এগুলো কিভাবে খাব। দুই একটি খাবার পরে আর খেতে ইচ্ছে করতো না৷ তখন লবণ দিয়ে ভিজিয়ে রাখতাম৷ পরদিন দেখতাম যে এটি একেবারে পেকে গিয়েছে৷ ধন্যবাদ এরকম সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য৷
আমার ছেলেবেলার সঙ্গে আপনার ছেলেবেলার মিল রয়েছে কথাটা শুনে খুব ভালো লাগলো। ধন্যবাদ আপনাকে আপনার মূল্যবান মতামত শেয়ার করার জন্য।