প্রতিজ্ঞা( শেষ পর্ব )।
আমার বাংলা ব্লগে,সবাইকে স্বাগতম।
আমি @emon42.
বাংলাদেশ🇧🇩 থেকে
শামিম এবং সুলতানা কে প্রথমে স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়। এবং শামিম ও সুলতানার দুই মেয়ে শামিমের বড় ভাইয়ের কাছে থাকে। কিছুদিন যেতেই শামিম এবং সুলতানা উভয়ের অবস্থা বেশ খারাপ হয়ে যায়। করোনা আক্রান্ত হয়ে দুজনের অবস্থা শরণাপন্ন। দুজনকে দ্রুত আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে নিতে হবে বলে জানিয়ে দেয় ডাক্তার। কিন্তু এই উপজেলা হাসপাতালে সেরকম ব্যবস্থা ছিল না। তারপর ডাক্তার পরামর্শ দেয় দুজনকে ঢাকা নিয়ে গিয়ে আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে রাখতে। যথারীতি দুজনকে ঢাকা নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করে বাড়ির লোকজন। খুব দ্রুতই একই অ্যাম্বুলেন্সে দুজনকে ঢাকা নিয়ে যাওয়া হয়। ঐ শহর থেকে ঢাকা যেতে মোটামুটি ৫-৬ ঘন্টা সময় লাগে। কিন্তু অর্ধেক পথ যাওয়ার পরেই এক অঘটন ঘটে যায় অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যেই।
সুলতানা করোনা আক্রান্ত হয়ে অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যেই মৃত্যুবরণ করে।সেটা দেখে শামিম নিজেকে ঠিক রাখতে পারে না। সুলতানা দুনিয়া থেকে চলে গেছে শামিমও যেন বেঁচে থাকার সব আশা হারিয়ে ফেলে। এখন সুলতানা কে আর ঢাকা নিয়ে গিয়ে লাভ নেই তার শেষযাএার প্রস্তুতি নিতে হবে। কিন্তু শামিম কে তো লাইফ সাপোর্টে নিতে হবে। কিন্তু শামিম বলে না সুলতানা চলে গেছে আমি ওর শেষ যাএার স্বাক্ষী হবো। শামিমের জীবনের ঝুঁকি হয়ে যায় তারপরও পরিবার শেষ পযর্ন্ত শামিমের কথা মেনে নেয়। তারপর সুলতানার মৃতদেহ নিয়ে এসে তাকে কবরস্থ করা হয়। সেদিন শামিম হয়তো অন্যদের থেকে কিছুটা দূরে ছিল। কিন্তু তারপর শামিম যেন একেবারেই একা হয়ে যায়। শামিমার মৃত্যুর জন্য শামিম নিজেকে দায়ী করে। সে বলে আমা জন্য সুলতানা করোনা আক্রান্ত হয়েছে। অন্যদিকে সুলতানার দুই মেয়ে লুবাবা এবং তুবা মা হারা হয়ে যায়।
সুলতানার বড় বোনের বিয়ে হয়েছে শামিমের বড় ভাইয়ের সঙ্গে। সেজন্য সুলতানা চলে যাবার পর তার বড় বোন নিজের মেয়ের মতো মানুষ করতে থাকে লুবাবা এবং তুবা কে। এরই মধ্যে শামিমও করোনা মুক্ত হয়ে বাড়ি ফিরে আসে। কিন্তু তার মধ্যে থেকে আর সেই খুশি আনন্দ উচ্ছাস বিলীন হয়ে যায়। এভাবে প্রায় ছয় মাস কেটে যায়। শামিম নিজেই তার মেয়েকে দেখাশোনা করে। নিজেই মেয়েদের লালন পালন করতে থাকে সুলতানার অবর্তমানে। শামিমের বয়স তখন মাএ ৩৬ বছর। বাড়ি থেকে ঠিক করে শামিমকে আবার বিয়ে দেবে। এভাবে তো কারো জীবন চলতে পারে না। কিন্তু শামিম বলে দেয় না আমি বিয়ে করব না। পরিবারের সবাই বুঝিয়ে বলে যে ভালো মেয়ে নিয়ে আসব যেন লুবাবা এবং তুবা কেউ দেখাশোনা করে। কিন্তু শামিম একেবারে পরিষ্কার করে বলে দেয় আমি বিয়ে করব না। সবাই মিলে বুঝিয়ে কোনো লাভ হয় নাই।।
শামিম বলে সুলতানা হয়তো নেই। কিন্তু সুলতানা ছাড়া আমি আর কাউকে আমার স্ত্রী হিসেবে মেনে নিতে পারব না। সারাজীবন আমি আমার মেয়ে এবং সুলতানার স্মৃতি নিয়ে থেকে যাব। এই কথা শুনে সবাই বুঝে যায় শামিম সুলতানা কে কতটা ভালোবাসে। শামিম যেন ভালোবাসার দৃষ্ঠান্ত স্থাপন করে। এভাবেই চলতে থাকে। প্রায় প্রতিদিন বিকেলে শামিম তার মেয়ে লুবাব এবং তুবা কে নিয়ে ঘুরতে বের হয়। সপ্তাহে একাধিকবার শামিম সুলতানার কবরের কাছে গিয়ে একা দাঁড়িয়ে থাকে শামিম। এ যেন ভালোবাসার এক অনন্য ইতিহাস। শামিমের জীবনে সুলতানা না থেকেও যেন আছে। হয়তো সুলতানার কাছে করা সেই প্রতিজ্ঞা পালন করে চলেছে শামিম। এদের জন্যই ভালোবাসা টা এতো সুন্দর। শামিম এবং সুলতানার ভালোবাসা টা আজীবন উদাহরণ হিসেবে থেকে যাবে।।
সবাইকে ধন্যবাদ💖💖💖।
অনন্ত মহাকালে মোর যাএা অসীম মহাকাশের অন্তে। যারা আমাদের পাশে আছে তারা একটা সময় চলে যাবেই, এটা তাদের দোষ না। আমাদের জীবনে তাদের পার্ট ওইটুকুই। আমাদের প্রকৃত চিরশখা আমরা নিজেই, তাই নিজেই যদি নিজের বন্ধু হতে পারেন, তাহলে দেখবেন জীবন অনেক মধুর।তখন আর একা হয়ে যাওয়ার ভয় থাকবে না।
আপনার গল্পটা পড়ে অনেক খারাপ লাগল। আসলে অর্ধেক পথ যাওয়ার পরেই যে অঘটন ঘটে গিয়েছে,তা মেনে নেওয়া অনেক কষ্টের।ভাঙা গড়া নিয়েই মানুষের জীবন। সত্যি শামীম সুলতানাকে অনেক ভালোবাসতো।তাই সে দ্বিতীয় বিবাহ করার জন্য রাজি হয়নি।তবে অন্য দিকে দুই মেয়ে লুবাবা তুবা মা হারা হয়ে যাওয়া অনেক ।শাশীম তার মেয়েকে অনেক ভালো বাসে।ধন্যবাদ
গল্পটা পড়ে ভীষণ মন খারাপ হলো কারন এই করোনা যে কত মানুষের প্রান নিয়ে যাচ্ছে, ভাবতেই কষ্ট লাগে। তবে শামিম তার স্ত্রীকে ভীষণ ভালোবাসে তা স্পষ্ট বোঝা গেলো। এ এক কৃত্রিম ভালোবাসা। তবে স্ত্রী হারিয়ে সে তবুও অন্য কাউকে আপন করতে পারেনি এটা কিন্তু অনেক বড় বিষয়।
সবমিলিয়ে ভালো গল্পের বিষয়বস্তু ছিল 👌